ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

রিজার্ভ হ্যাক ॥ শীঘ্রই অর্থ ফেরত পাচ্ছে না বাংলাদেশ

প্রকাশিত: ০৫:৫০, ২০ মে ২০১৬

রিজার্ভ হ্যাক ॥ শীঘ্রই অর্থ ফেরত পাচ্ছে না বাংলাদেশ

নিখিল মানখিন, ম্যানিলা থেকে ॥ বাংলাদেশ ব্যাংকের চুরি যাওয়া টাকা ফেরত পাওয়া নিয়ে দীর্ঘসূত্রতা দেখা দিয়েছে। শীঘ্রই টাকা পাচ্ছে না বাংলাদেশ। টাকা ফেরত প্রক্রিয়া শুরু হতেই আরও তিন থেকে পাঁচ মাস সময় লাগবে। ফিলিপিন্সে বিদ্যমান আইনের কারণে টাকা পাঠানো যাচ্ছে না। টাকা পাঠানোর আইনী উপায় খুঁজে বের করার চেষ্টা করছেন সংশ্লিষ্টরা। বাংলাদেশ ব্যাংকের টাকা চুরির ঘটনা নিয়ে ফিলিপিন্স সিনেট কমিটির শুনানির শেষ দিনে বৃহস্পতিবার এ্যান্টি মানি লন্ডারিং কমিশনের কর্মকর্তা এ কথা জানিয়েছেন। তবে আগামী এক সপ্তাহের মধ্যে কমিটি এ বিষয়ে চূড়ান্ত প্রতিবেদন দেবে। বাংলাদেশের চুরি যাওয়া টাকা নিয়ে ফিলিপিন্সের সিনেট ব্লু-রিবন কমিটির চেয়ারম্যান থিউফিসতো গিংগোনার সভাপতিত্বে স্থানীয় সময় বেলা এগারোটায় বেভিউ পার্ক হোটেলে এই শুনানি হয়। ফিলিপিন্সে নিযুক্ত বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত জন গমেজের নেতৃত্বে দূতাবাসের পাঁচ প্রতিনিধি সেখানে উপস্থিত ছিলেন। শুনানির এক পর্যায়ে সিনেটর এ্যাকিউনো এ্যান্টি মানিলন্ডারিং কমিশনের কর্মকর্তাদের কাছে বাংলাদেশের টাকা ফেরত দেয়ার প্রক্রিয়া শুরু করা সম্পর্কে জানতে চান। কমিশনের কর্মকর্তা জুলিয়া বাইয়া আবাদ বলেন, ৩ থেকে ৫ মাস সময় লাগবে। শুনানিতে উপস্থিত রাষ্ট্রদূত জন গমেজ জুলিয়া বাইয়া আবাদের বক্তব্যের তীব্র প্রতিবাদ জানান। তিনি বলেন, আমরা এ ধরনের অনিশ্চয়তার মধ্যে থাকতে পারি না। বাংলাদেশের চুরি হওয়া টাকার পুরোটাই ফিলিপিন্সে এসেছে। উদ্ধার করা টাকা ফিলিপিন্স কেন্দ্রীয় ব্যাংকের ভল্টে রাখা হয়েছে। আইনী প্রক্রিয়ার কথা বলে উদ্ধার করা টাকা ফেরত না দেয়ার বিষয়টি দুঃখজনক। এ সময় কমিটির সভাপতি থিউফিসতো গিংগোনা বলেন, এ্যান্টি মানিলন্ডারিং কমিশিনসহ সমস্ত সংশ্লিষ্ট নির্বাহী বিভাগ এ বিষয়ে কাজ করবে। একই সঙ্গে আগামী এক সপ্তাহের মধ্যে কমিটি রিপোর্ট চূড়ান্ত করবে বলেও প্রতিশ্রুতি দেন তিনি। রাষ্ট্রদূত অত্যন্ত দৃঢ়তার সঙ্গে বলেন, চুরি হওয়া টাকার পুরোটাই ফিলিপিন্সে এসেছে এবং তা আরসিবিসি ব্যাংকের এ্যাকাউন্টে জমা পড়েছে। টাকা চুরির সঙ্গে জড়িয়ে ফিলিপিন্স কিছুটা অস্বস্তিতে পড়লেও দুই দেশের সম্পর্ক নষ্ট হয়নি। দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কও ক্ষতিগ্রস্ত হয়নি। টাকা পুরোটাই বাংলাদেশ ফেরত পাবে বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেন তিনি। সিনেটর ওসমান আরসিবিসি ব্যাংক কর্মকর্তাদের কাছে কখন কত টাকা ব্যাংকের এ্যাকাউন্টে জমা পড়েছিল সে সম্পর্কে সুনির্দিষ্ট করে তথ্য চান। ব্যাংকটির সংশ্লিষ্ট শাখার কর্মকর্তা মায়া স্যান্তোসও শুনানিতে উপস্থিত ছিলেন। শুনানিতে ফিলিপিন্সের আরেক সিনেটর হুয়ান পনসে এনরিকে বলেন, বাংলাদেশের টাকা চুরি হলেও ফিলিপিন্স তার সঙ্গে জড়িয়ে পড়েছে। তিনি রাষ্ট্রদূত জন গোমেজের কাছে টাকা চুরির ঘটনা নিয়ে বাংলাদেশ সরকারের পদক্ষেপ সম্পর্কে জানতে চান। জবাবে রাষ্ট্রদূত বলেন, বাংলাদেশ ব্যাংক ঘটনা জানার পরপরই যুক্তরাষ্ট্রের ফেডারেল রিজার্ভ ব্যাংকে ঘটনা অবহিত করে। একই সঙ্গে টাকা চুরি যাওয়ার ঘটনায় মামলা হয়েছে এবং ব্যাংকের গবর্নর ও দু’ ডেপুটি গবর্নর দায়িত্ব স্বীকার করে পদত্যাগ করেছেন। এছাড়া যুক্তরাষ্ট্রের এফবিআইয়ের তদন্ত কাজে বাংলাদেশ সহায়তা করছে। বাংলাদেশের গোয়েন্দা সংস্থা সিআইডি ঘটনা তদন্ত করছে। ঘটনার তদন্তে সিআইডি কর্মকর্তারা ফিলিপিন্সে এসেছিলেন। তারা এখানকার বিভিন্ন পর্যায়ের কর্মকর্তা ও সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে কথা বলেছেন। ফেডারেল ব্যাংকের প্রেসিডেন্ট, বাংলাদেশ ব্যাংকের গবর্নর ও সুইফটের প্রধান কয়েকদিন আগে সুইজারল্যান্ডে একটি বৈঠক করেছেন। সেখানে তারা টাকা উদ্ধারের চেষ্টা অব্যাহত রাখার প্রতিশ্রুতি ব্যক্ত করেছেন। ৬ কোটি ৪০ লাখ ডলারের সন্ধান ॥ বাংলাদেশ ব্যাংকের রিজার্ভ চুরির ৬ কোটি ৪০ লাখ ডলারের সন্ধান পেয়েছে ফিলিপিন্স কর্তৃপক্ষ। এছাড়া অবশিষ্ট এক কোটি ৭০ লাখ ডলারের সন্ধানে কাজ করছে দেশটির এ্যান্টি মানি লন্ডারিং কাউন্সিল। রিজার্ভ চুরির ঘটনায় ফিলিপিন্স সিনেট আয়োজিত ধারাবাহিক শুনানিতে এসব তথ্য দিয়েছে এএমএলসি। এ্যান্টি মানি লন্ডারিং কাউন্সিলের ধারণা, অবশিষ্ট অর্থ ফিলরেমের কাছেই আছে, যা শীঘ্রই উদ্ধার করা যাবে বলেও শুনানিতে আশা প্রকাশ করা হয়। ফিলিপিনো প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের কারণে কয়েক সপ্তাহ স্থগিত থাকার পর রিজার্ভের অর্থ উদ্ধারে আবারও শুনানি শুরু করেছে দেশটির সিনেট। শুনানিতে, টাকার পরিমাণ বেশি হওয়ায় তা একসঙ্গে উদ্ধার করা কঠিন বলে জানিয়েছেন ফিলিপিন্স সিনেটের ভাইস চেয়ারম্যান সার্জিও অসমেনা। এর আগে অভিযুক্ত ব্যবসায়ী কিম অংয়ের কাছে থাকা এক কোটি ডলারের বেশি উদ্ধার করেছে ফিলিপিন্স সিনেট।
×