ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪৩১

১৬ কেন্দ্রের কারিগরি জরিপ

জরিপ না হওয়ায় বিদ্যুত কেন্দ্রগুলো নাজুক অবস্থায়

প্রকাশিত: ০৬:১৯, ১৯ মে ২০১৬

জরিপ না হওয়ায় বিদ্যুত কেন্দ্রগুলো নাজুক অবস্থায়

স্টাফ রিপোর্টার ॥ নিয়মিত জরিপ না হওয়ায় দেশের বিদ্যুত কেন্দ্রগুলো নাজুক অবস্থার মধ্যে রয়েছে। দেশের ১৬টি বিদ্যুত কেন্দ্রের কারিগরি জরিপ চালিয়ে ভারতীয় কোম্পানি স্টেগ এ্যানার্জি সার্ভিসেস সরকারের কাছে এ তথ্য তুলে ধরেছে। কোম্পানিটি জরিপের পর বলছে, সময়মতো ওভারহোলিং না করায় উৎপাদন কমে যাওয়ার পাশাপাশি বেড়েছে উৎপাদন ব্যয়। বিদ্যুত উৎপাদনে জ্বালানি খরচ বেড়ে গেছে। এতে মূল্যবান প্রাকৃতিক গ্যাসের অপচয় হচ্ছে, যা সামগ্রিকভাবে বিদ্যুত এবং জ্বালানি খাতকে ক্ষতিগ্রস্ত করছে। দেশে বিদ্যুত কেন্দ্রর ওপর কারিগরি জরিপ করার কার্যক্রম একেবারেই নতুন। এই প্রথম সরকার ১৬টি সরকারী বিদ্যুত কেন্দ্রর ওপর জরিপ পরিচালনা করল। বুধবার বিদ্যুত বিভাগ স্টেগ এ্যানার্জির জরিপের ফলাফল নিয়ে একটি কর্মশালার আয়োজন করে। ওই কর্মশালায় কেন্দ্রগুলোর দৈন্যদশার কথা উঠে আসে। কর্মশালায় প্রধান অতিথির বক্তৃতায় বিদ্যুত, জ্বালানি এবং খনিজসম্পদ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ বলেন, বিদ্যুত ও জ্বালানি খাতে কারিগরি অডিট নিয়মিত করা প্রয়োজন। এতে আমাদের উৎপাদন বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে এ খাত আরও আধুনিক ও যুগপোযোগী করতে পারব। কর্মশালায় এ সময় স্টেগ পিডিবির ১৬টি বিদ্যুত কেন্দ্রের বিষয়ে আলোকপাত করেন এবং কোনটির কী ব্যবস্থা নিলে আরও ভাল উৎপাদন হবে সে বিষয়েও ধারণা দেন তাঁরা। দেশে নতুন নতুন বিদ্যুত কেন্দ্র স্থাপন করা হচ্ছে। এর সঙ্গে পুরাতন কেন্দ্রগুলোতেও উৎপাদন করা হচ্ছে। বিদ্যুত কেন্দ্রের সংখ্যা ১০০ ছাড়িয়ে যাওয়ার মধ্যে নতুন এ উদ্যোগ নিল সরকার। যদিও উন্নত দেশে কারিগরি জরিপ একটি গ্রহণযোগ্য বিষয়। বিদ্যুত বিভাগ মনে করছে, এতে বিদ্যুত খাতে শৃঙ্খলা প্রতিষ্ঠিত হবে। শতভাগ বাণ্যিজ্যিক রূপ পাবে এ খাত, যাতে সেবার মান বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে কেন্দ্র পরিচালনা লাভজনক হবে। প্রতিমন্ত্রী বলেন, কারিগরি সমীক্ষার মাধ্যমে আমরা সিদ্ধান্ত নিতে পারব কোন্ বিদ্যুত কেন্দ্র অবসরে যাবে, কোন্টি ডুয়েল-ফুয়েল (দ্বৈত জ্বালানি) বা কোন্টি রি-পাওয়ারিং করতে হবে বা কোন্টি পুনর্বাসন করা লাভজনক। তিনি মানবসম্পদ উন্নয়নের ওপর এ সময় গুরুত্বারোপ করেন। প্রতিবেদন থেকে দেখা যায়, দেশের বিদ্যুত কেন্দ্রগুলো ঠিকমতো রক্ষণাবেক্ষণ করা হয় না। সময়মতো ওভারহোলিং না করায় অনেক কেন্দ্রের উৎপাদন ক্ষমতা কমে গেছে। আবার অর্থনৈতিক বয়স পেরিয়ে গেলেও অনেক কেন্দ্র এখনও অবসরে যায়নি। জ্বালানি খরচ বেড়ে গেছে। স্টেগের প্রতিবেদনে বলা হচ্ছে, সময়মতো কারিগরি অডিট করলে কেন্দ্রগুলোর প্রকৃত সমস্যা ও সমাধানের উপায় জানা যেত। প্রতিবেদনে নিয়মিত কারিগরি অডিট করার ওপর গুরুত্বারোপ করেছে কোম্পানিটি। প্রতিবেদন থেকে দেখা গেছে, অনেক বিদ্যুত কেন্দ্রের বয়স ৩০ বছর পেরিয়ে গেছে। কোন কোন কেন্দ্রের বয়স ৪০ বছর পেরিয়ে গেছে। পুরনো বলে কেন্দ্রগুলোর উৎপাদন দক্ষতা কমে গেছে। এতে জ্বালানি খরচ বেড়ে গেছে। কোন কোন কেন্দ্রের দক্ষতা মাত্র ২০ থেকে ২৫ শতাংশে নেমে এসেছে। এর বিপরীতে দেশে ৫৫ শতাংশ উৎপাদন দক্ষতার কেন্দ্র রয়েছে। এসব কেন্দ্রের প্রতি ইউনিট বিদ্যুতের উৎপাদন খরচ পড়ছে ৩০ থেকে ৪০ টাকা। প্রতিবেদনে এসব কেন্দ্র বন্ধ করার পরামর্শ দেয়া হয়েছে। স্টেগ বলছে, বড়পুকুরিয়া কয়লাভিত্তিক বিদ্যুত কেন্দ্র বছরের অধিকাংশ সময় বন্ধ থাকে। পিডিবির মতে কারিগরি ত্রুটির কারণে কেন্দ্রটির উৎপাদন ক্ষমতা কমেছে। তবে এর প্রতিদবেদনে বলা হচ্ছে, বড়পুকুরিয়ায় ব্যবহƒত কয়লায় আর্দ্রতা বেশি থাকায় বিদ্যুত উৎপাদন ব্যাহত হচ্ছে। কারিগরি অডিট না করায় সমস্যা ধরা পড়েনি। অনুষ্ঠানে অন্যান্যের মাধ্যে বিদ্যুত সচিব মনোয়ার ইসলাম, পিডিবির চেয়ারম্যান মোঃ শামসুল হাসান মিয়া ও পাওয়ার সেলের মহাপরিচালক মোহাম্মদ হোসাইন বক্তব্য রাখেন।
×