ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠান নিয়ে অশোভন মন্তব্য অপরাধ বলে গণ্য

প্রকাশিত: ০৬:০৭, ১৯ মে ২০১৬

সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠান নিয়ে অশোভন মন্তব্য অপরাধ বলে গণ্য

সংসদ রিপোর্টার ॥ সংবিধান বা সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠান নিয়ে কোন এনজিও বিরূপ, অশালীন ও অশোভন মন্তব্য করলে তা অপরাধ হিসেবে গণ্য হবে। সরকার চাইলে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে পারবে। বেসরকারী উন্নয়ন সংস্থার (এনজিও) ওপর এ বিষয়টিসহ নিয়ন্ত্রণ আরোপের বিধান রেখে ‘বৈদেশিক অনুদান (স্বেচ্ছাসেবকমূলক কার্যক্রম) রেগুলেশন বিল-২০১৬’ চূড়ান্ত করেছে আইন, বিচার ও সংসদবিষয়ক মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটি। বুধবার জাতীয় সংসদ ভবনে অনুষ্ঠিত কমিটির বৈঠকে বিলটি চূড়ান্ত করা হয়। কমিটির সভাপতি সুরঞ্জিত সেনগুপ্তের সভাপতিত্বে বৈঠকে কমিটির সদস্য আইনমন্ত্রী আনিসুল হক, আবদুল মতিন খসরু, বেগম সাহারা খাতুন, মোঃ শামসুল হক টুকু, তালুকদার মোঃ ইউনুস, এ্যাডভোকেট মোঃ জিয়াউল হক মৃধা ও সফুরা বেগম অংশ নেন। বৈঠকে বিশেষ আমন্ত্রণে মহিলা ও শিশুবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি ও বাল্যবিবাহ প্রতিরোধ সাব-কমিটির আহ্বায়ক রেবেকা মমিন ও সাব-কমিটির সদস্য হুইপ মাহবুব আরা বেগম গিনি এবং বিভিন্ন এনজিও’র প্রতিনিধিরা উপস্থিত ছিলেন। বৈঠকে শেষে জাতীয় সংসদের মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে কমিটির সভাপতি সুরঞ্জিত সেনগুপ্ত বলেন, সংবিধান বা সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠান নিয়ে বিরূপ মন্তব্য করা যাবে না। কোন এনজিও সেটা করতে পারবে না। কেউ সংবিধান বা সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠান নিয়ে অশালীন বা অশোভন মন্তব্য করলে তা অপরাধ হিসেবে গণ্য হবে। তাদের বিরুদ্ধে সরকার চাইলে ব্যবস্থা নিতে পারবে। এ বিল পাস হলে টিআইবিসহ অন্যান্য বেসরকারী উন্নয়ন সংস্থা সংবিধান বা বিচার বিভাগ নিয়ে তাদের পর্যবেক্ষণ দিতে পারবে কিনাÑ সাংবাদিকদের এমন প্রশ্নের জবাবে কমিটির সভাপতি বলেন, সমালোচনা করা যাবে, তবে গালিগালাজ করা যাবে না। সংসদ সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠান। তাকে সম্মান দিতে হবে। মর্যদা রক্ষা করতে হবে। সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে বললে রাষ্ট্র যায় কোথায়? তিনি আরও বলেন, ‘টিআইবি বিষয়টি নিয়ে আমার কাছে এসেছিল। আমি বলেছিলাম ক্ষমা চাইতে। কিন্তু তারা আর এলো না।’ তিনি বলেন, সংসদ নিয়ে মন্তব্য করেন। কিন্তু পুতুল নাচের নাট্যশালা তো বলতে পারে না। কেউ আইনের উর্ধে নয়। তাই সংবিধান বা সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠান নিয়ে যা ইচ্ছা তাই মন্তব্য করা যাবে না। উল্লেখ্য, এনজিও কার্যক্রম বর্তমানে পরিচালিত হয় ১৯৭৮ ও ১৯৮২ সালের দুটি অধ্যাদেশ দিয়ে। সামরিক শাসনামলের অধ্যাদেশ দুটি একত্র করে নতুন আইন করতে বিলটি উত্থাপন করা হয়। পরে তা অধিকতর পরীক্ষা-নিরীক্ষার জন্য সংসদীয় স্থায়ী কমিটিতে পাঠানো হয়। বিলটি উত্থাপনের পর থেকেই এ বিলের একাধিক ধারা নিয়ে আপত্তি জানায় বেসরকারী সংস্থাগুলো। বিভিন্ন সংস্থার প্রতিনিধিদের পাশাপাশি বিশেষজ্ঞদের নিয়ে একাধিক বৈঠক করে সংসদীয় কমিটি। সর্বশেষ বৈঠকে বিলটি পাসের সুপারিশ করে সংসদে প্রতিবেদন উত্থাপনের সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। আগামী সংসদ অধিবেশনে প্রতিবেদন উত্থাপনের পর বিলটি পাস হবে বলে সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন। বিলে বলা হয়েছে, একটি এনজিও ১০ বছরের জন্য নিবন্ধন পাবে। তবে আইন অমান্য করলে যে কোন সময় নিবন্ধন বাতিল বা স্থগিত করা যাবে। এনজিওতে বিদেশী উপদেষ্টা নিয়োগের ক্ষেত্রেও স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের নিরাপত্তার ছাড় নিতে হবে। বিদেশী অনুদান একটি নির্দিষ্ট ব্যাংক হিসাবে (মাদার এ্যাকাউন্ট) থাকতে হবে। ব্যয়ের হিসাব অডিট করার পর এনজিওবিষয়ক ব্যুরোর মহাপরিচালকের কাছে দিতে হবে। এনজিওবিষয়ক ব্যুরো এসব বেসরকারী উন্নয়ন সংস্থার কার্যক্রম পরিদর্শন, পর্যবেক্ষণ ও মূল্যায়ন করবে। আইন না মানলে প্রথমে সতর্ক করা হবে। নিবন্ধন বাতিল ও জরিমানার বিধানও আইনে রাখা হয়েছে। প্রস্তাবিত আইনে বলা হয়েছে, জাতীয় সংসদ বা স্থানীয় সরকার নির্বাচনে অংশগ্রহণকারী প্রার্থী, সংসদ সদস্য, স্থানীয় সরকারের নির্বাচিত জনপ্রতিনিধি, রাজনৈতিক দল, সুপ্রীমকোর্টের বিচারকসহ সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠানে অধিষ্ঠিত ব্যক্তি, সরকারী, আধা-সরকারী, স্বায়ত্তশাসিত বা সংবিধিবদ্ধ প্রতিষ্ঠানে কর্মরত কর্মকর্তা বা কর্মচারী, এ আইনের অধীন নিবন্ধিত এনজিও বা সংস্থার কোন কর্মকর্তা বা কর্মচারী বৈদেশিক অনুদান গ্রহণ করতে পারবে না। সন্ত্রাসবিরোধী আইনে তালিকাভুক্ত কিংবা নিষিদ্ধ ব্যক্তি বা সংগঠন বিদেশী অনুদান নিতে পারবে না বলেও প্রস্তাবিত আইনে বলা হয়েছে।
×