ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

কমলাপুর থেকে টঙ্গী হয়ে জয়দেবপুর পর্যন্ত পাতাল রেল হচ্ছে

প্রকাশিত: ০৬:০৭, ১৯ মে ২০১৬

কমলাপুর থেকে টঙ্গী হয়ে জয়দেবপুর পর্যন্ত পাতাল রেল হচ্ছে

মশিউর রহমান ॥ রাজধানীতে নিত্য সৃষ্ট যানজট ভোগান্তি কমাতে এবার আন্ডারগ্রাউন্ড রেল যোগাযোগ বা সাবওয়ে (পাতাল রেল) নির্মাণের উদ্যোগ নিয়েছে বাংলাদেশ রেলওয়ে। প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশে উন্নত বিশ্বের সকল দেশের ন্যায় রাজধানীর যানজট কমাতে ও যোগাযোগ ব্যবস্থায় আধুনিকীকরণের জন্য সাবওয়ে তৈরি করতেই বাংলাদেশ রেলওয়ে বিষয়টি গুরুত্বের সঙ্গে ভাবছে বলে নিশ্চিত করেছেন বাংলাদেশ রেলওয়ের মহাপরিচালক মোঃ আমজাদ হোসেন। এ সাবওয়েটি প্রাথমিকভাবে কমলাপুর থেকে বিমানবন্দর, টঙ্গী হয়ে জয়দেবপুর পর্যন্ত তৈরি করা হবে। পরবর্তীতে কমলাপুর থেকে নারায়ণগঞ্জ পর্যন্ত সম্প্রসারণের পরিকল্পনা রয়েছে বলে সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে। এই সাবওয়ে তৈরি করতে সরকারের অন্য যে কোন বড় প্রকল্প বাস্তবায়নের চেয়ে অনেক কম খরচ হবে। কারণ, বিদ্যমান রেলপথের নিচ দিয়েই এটি নির্মাণ করা হবে। ফলে পাতাল রেল সাবওয়ে তৈরির জন্য কোন ভূমি অধিগ্রহণ করতে হবে না। ফলে প্রকল্প বাস্তবায়ন ব্যয় ও সময় অত্যন্ত কম হবে। সূত্র জানায়, এ রেলওয়ে তৈরির প্রাথমিক অংশ হিসেবে প্রায় ৬৭ কোটি ২০ লাখ টাকা ব্যয়ে সম্ভাব্যতা যাচাই প্রস্তাব চূড়ান্ত করেছে রেলওয়ে। যার ব্যয় বহন করবে সরকার। সূত্র জানায়, অধিক পরিমাণ যাত্রী বহন করতে প্রতি ২ মিনিট পরপর এ সাবওয়ে দিয়ে ট্রেন ছাড়া হবে। সাবওয়েটিতে কমপক্ষে ২টি লাইন (ডাবল লাইন) থাকবে। কোন প্রকার সিগনাল ছাড়াই নির্বিঘেœ ট্রেন চলাচল নিশ্চিত করতেই এ পদ্ধতি রাখা হচ্ছে। এ রেল সাবওয়েটি চালু করা গেলে ঢাকা থেকে টঙ্গী হয়ে জয়দেবপুর যেতে সময় লাগবে মাত্র ৩০ মিনিট। সম্ভাব্যতা যাচাই প্রস্তাবে বলা হয়েছে, ঢাকার যানজট নিরসনে উপায় ও কৌশল নির্ধারণে সড়ক ও সেতু বিভাগ এবং রেলপথ মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তাদের অংশগ্রহণে গত ১৩ মার্চ প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে একটি বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। বৈঠকে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ঢাকার যানজট হ্রাসে সাবওয়ে নির্মাণের সুপারিশ করেন। এর ভিত্তিতে কমলাপুর-জয়দেবপুর রুটে বিদ্যমান রেলপথের নিচ দিয়ে সাবওয়ে নির্মাণের সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়। আর বিদ্যমান রেলপথের নিচে কোন ধরনের পরিবেশ লাইন না থাকায় সাবওয়ে নির্মাণে সমীক্ষা প্রস্তাব করা হচ্ছে। সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, বর্তমানে ঢাকা-টঙ্গী রুটে কমিউটার, ইন্টারসিটি, লোকাল, মেইলসহ সারাদেশের বিভিন্ন স্থানে প্রতিদিন ৭২ জোড়া ট্রেন চলাচল করে। এতে প্রায়ই সড়কগুলো সিগনাল দিয়ে বন্ধ রাখতে হয়। ফলে প্রতিদিনই এ থেকে সৃষ্ট যানজট ব্যাপক আকার ধারণ করে। এর ফলে অধিক সংখ্যক ট্রেন চালু করে যানজট কমাতে সরকারের ইচ্ছা থাকা সত্ত্বেও ঢাকা-জয়দেবপুর রুটে নতুন করে কমিউটার বা লোকাল ট্রেন চালানো সম্ভব নয়। ফলে বাধ্য হয়ে সাবওয়ে দিয়ে এ ধরনের লাইন নির্মাণের চিন্তা করা হচ্ছে। এতে মাটির নিচের রেলপথ দিয়ে কমিউটার বা লোকাল ট্রেন চলাচল করতে পারবে। সড়ক পথে যানবাহনের চাপ কমবে এবং সিগনালে রাস্তা বন্ধও রাখতে হবে না। ফলে নাগরিক দুর্ভোগ অনেকাংশে কমে আসবে। এছাড়া রাজধানীর আশপাশের জেলা শহর থেকে যাত্রীরা খুব সহজেই অফিস করতে সক্ষম হবেন। এর ফলে নাগরিক জীবন ব্যয় অনেকাংশে কমবে। এছাড়া উক্ত রুটে বর্তমানের চেয়ে কমপক্ষে দ্বিগুণ বেশি ট্রেন চলাচল করা সম্ভব হবে। স্বল্প ব্যয়, সময় কম লাগা ও যানজট ছাড়াই যাতায়াত ব্যবস্থার সুবিধা থাকায় রাজধানীতে আগত যাত্রীরা রেলপথে চলাচলে অধিক আগ্রহী হবে। সূত্র আরও জানায়, ৩২ কিলোমিটার দীর্ঘ ওই সাবওয়ের সম্ভাব্যতা যাচাইয়ে সরকারের তহবিল থেকে ৬৭ কোটি ২০ লাখ টাকা বরাদ্দের প্রস্তাব করা হয়। সম্প্রতি প্রস্তাবটি রেলপথ মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়েছে। সেখানে অনুমোদনের পর পরিকল্পনা কমিশন হয়ে চূড়ান্ত অনুমোদনের জন্য তা একনেকে পাঠানো হবে। প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত ১৩ মার্চের বৈঠকের পরিপ্রেক্ষিতে এ-সংক্রান্ত একটি প্রস্তাব প্রণয়ন করেছে যোগাযোগ মন্ত্রণালয়ের সেতু বিভাগ। প্রস্তাব অনুযায়ী রাজধানীতে দুই পর্বে আরও চারটি সাবওয়ে নির্মাণের প্রস্তাব করেছে। এর মধ্যে প্রথম ধাপে দুটি সাবওয়ে নির্মাণ করা হবে। এটির প্রস্তাবিত রুট হলো টঙ্গী থেকে বিমানবন্দর সড়ক হয়ে মহাখালী, মগবাজার, সায়েদাবাদ, যাত্রাবাড়ী, শনিরআখড়া পর্যন্ত। পরবর্তীতে তা নারায়ণগঞ্জ পর্যন্ত সম্প্রসারণ হবে। দ্বিতীয় সাবওয়েটির রুট প্রস্তাব করা হয়েছে আমিন বাজার থেকে কল্যাণপুর, শ্যামলী, আসাদগেট, নিউমার্কেট হয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভেতর দিয়ে সায়েদাবাদ পর্যন্ত যাবে। দ্বিতীয় ধাপে অন্য দুটি সাবওয়ে নির্মাণ করা হবে। এর মধ্যে একটি গাবতলী থেকে শুরু হয়ে মিরপুর-১০, নেভী কলোনি, কাকলী, গুলশান-২, রামপুরা, খিলগাঁও, মতিঝিল হয়ে সদরঘাট পর্যন্ত পরবর্তীতে যা ঝিলমিল পর্যন্ত সম্প্রসারণ করা হবে। এটি সাবওয়ে-৩ নামে পরিচিত হবে। চতুর্থ সাবওয়েটি হবে রামপুরা থেকে নিকেতন, তেজগাঁও, সোনারগাঁও হোটেল, পান্থপথ, রাসেল স্কয়ার, ধানম-ি-২৭, রায়ের বাজার, জিগাতলা, আজিমপুর, লালবাগ হয়ে সদরঘাট পর্যন্ত। এ বিষয়ে জানতে চাইলে বাংলাদেশ রেলওয়ের মহাপরিচালক মোঃ আমজাদ হোসেন জনকণ্ঠকে বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নাগরিক কষ্ট লাঘবে রাজধানীর যানজট কমাতে দৃঢ়প্রতিজ্ঞ। এরই অংশ হিসেবে সরকার এমআরটি, বিআরটি, এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে নির্মাণ, ফ্লাইওভার নির্মাণসহ বিভিন্ন উন্নয়নমূলক প্রকল্প হাতে নিয়েছে। কিন্তু কমলাপুর থেকে জয়দেবপুর পর্যন্ত আন্ডারগ্রাউন্ড রেলওয়ে বা রেল সাবওয়ে নির্মাণ করে ঢাকার বর্তমান যানজট অনেকাংশে নিরসন করা যায় কি না গুরুত্বের সঙ্গে তার সম্ভাব্যতা যাচাই করতে প্রধানমন্ত্রী নির্দেশ দিয়েছেন। এরই প্রেক্ষিতে গত মার্চে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত হওয়া বৈঠকের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী আমরা রেল সাবওয়ে নির্মাণের সম্ভাব্যতা যাচাই প্রকল্প প্রস্তাব চূড়ান্ত করেছি। এতে ব্যয় ধরা হয়েছে ৬৭ কোটি ২০ লাখ টাকা। যার ব্যয় বহন করবে সরকার। মূলত ঢাকার যানজট কমাতেই এ সাবওয়ে নির্মাণ করা হবে। এ সাবওয়েতে মূলত কমিউটার ট্রেন চলবে। বর্তমানের রেললাইনের নিচ দিয়েই এ সাবওয়ে তৈরি করা হবে। এ সাবওয়েটি নির্মাণ হলে প্রতি ২ মিনিট পরপর কমলাপুর থেকে কমিউটার ট্রেন ছাড়বে। এতে ৩০ মিনিটে কমলাপুর থেকে জয়দেবপুর যাওয়া যাবে। আর ওপরের রেলপথগুলো বিদ্যমান সার্ভিস প্রদানে ব্যবহার করা হবে। এছাড়া পরবর্তীতে কমলাপুর থেকে টঙ্গী হয়ে নারায়ণগঞ্জ পর্যন্ত এ সাবওয়ে নির্মাণেরও পরিকল্পনা রয়েছে। এ সাবওয়ে নির্মাণ করতে অন্য যে কোন প্রকল্প বাস্তবায়নের চেয়ে কম অর্থ ব্যয় হবে। প্রকল্প বাস্তবায়নে নতুন করে কোন প্রকার জমি অধিগ্রহণ করার প্রয়োজন হবে না এবং ইউটিলিটি ব্যয়ও তেমন খরচ হবে না। ফলে কম সময়ে প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করা সম্ভব হবে। রেলওয়ে মহাপরিচালক বলেন, উন্নত বিশ্বের প্রতিটি দেশেই রাজধানীসহ বড় বড় শহরে আন্ডারগ্রাউন্ড দিয়ে ট্রেন চলাচল করে। রাজধানী ও আশপাশের জেলাগুলো থেকে ঢাকায় নিয়মিত চলাচলকারীদের সুবিধার্থে যানজট কমাতে ও সময় বাঁচানোর পাশাপাশি অর্থ সাশ্রয়ের জন্য সাবওয়ে নির্মাণ করা জরুরী। যানজট কমাতে এটি যে কোন প্রকল্পের চেয়ে অধিক কার্যকর। সম্ভাব্যতা যাচাই শেষে আমরা এ বিষয়ে পরবর্তী প্রকল্প গ্রহণ করব।
×