ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

এমপিসহ জড়িতদের বিরুদ্ধে কেন আইনী ব্যবস্থা নয়- হাইকোর্টের রুল;###;হাইকোর্টের আদেশ অনুযায়ীই ব্যবস্থা- স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী

সারাদেশ লজ্জিত ॥ শিক্ষক লাঞ্ছনার ঘটনায় বাড়ছে ক্ষোভ, বিক্ষোভ প্রতিবাদ

প্রকাশিত: ০৫:৪৮, ১৯ মে ২০১৬

সারাদেশ লজ্জিত ॥ শিক্ষক লাঞ্ছনার ঘটনায় বাড়ছে ক্ষোভ, বিক্ষোভ প্রতিবাদ

স্টাফ রিপোর্টার ॥ নারায়ণগঞ্জে এক প্রধান শিক্ষককে লাঞ্ছনার প্রতিবাদে সারাদেশে বিক্ষোভ ও প্রতিবাদ অব্যাহত রয়েছে। নিন্দনীয় অমানবিক ওই ঘটনায় সংশ্লিষ্টদের শাস্তির দাবি তুলে রাজধানীসহ সারাদেশেই চলছে মানবন্ধন ও বিক্ষোভ। প্রতিবাদের সুরে কথা বলতে শুরু করেছেন সরকারের একাধিক মন্ত্রী এমপি, অনেকেই সাংসদ সেলিম ওসমানের বিচার দাবি করেছেন। শিক্ষককে অবমাননাকর ওই ঘটনায় সংসদ সদস্য সেলিম ওসমানসহ জড়িতদের বিরুদ্ধে কেন আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে না, তা জানতে চেয়ে রুল জারি করেছে হাইকোর্ট। একই সঙ্গে ওই ঘটনায় কী আইনগত পদক্ষেপ নেয়া হয়েছে, তা তিন দিনের মধ্যে প্রতিবেদন আকারে আদালতে দাখিল করতে বলা হয়েছে স্থানীয় প্রশাসনকে। নারায়ণগঞ্জে শিক্ষক লাঞ্ছনার ঘটনায় সরকার বিচলতি বলে মন্তব্য করে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল বলেছেন, অপরাধ যেই করুক তাদের আইনের আওতায় নিয়ে আসা হবে। এদিকে ওই ঘটনাকে ‘কলঙ্কজনক’ মন্তব্য করে শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ জানিয়েছেন, ঘটনার তদন্ত প্রতিবেদন পেলেই দোষীদের বিরুদ্ধে পদক্ষেপ নেয়া হবে। আর শিক্ষক লাঞ্ছনার ওই ঘটনাকে চরম অসভ্যতা বলে মন্তব্য করে তথ্যমন্ত্রী হাসানুল হক ইনু জানিয়েছেন, ঘটনায় সংশ্লিষ্টদের সরকার এক চুলও ছাড় দেবে না। এদিকে সারাদেশে প্রতিবাদ ও নিন্দা অব্যাহত থাকলেও মঙ্গলবার স্কুল কর্তৃপক্ষ উল্টো লাঞ্ছনার শিকার শিক্ষককেই বরখাস্ত করে। শিক্ষককে বরখাস্তের খবরে প্রতিবাদের ঝড় ভিন্ন মাত্রা পায়। মঙ্গলবার রাতে ফেসবুকে সাংসদ সেলিম ওসমানের কানে ধরা একটি ব্যঙ্গচিত্র ছড়িয়ে পড়ে। ওই ছবি শেয়ার দিয়ে অনেকেই বলতে শুরু করেছেনÑ ‘সারা দেশের মানুষ নয়, কানে ধরতে হবে শিক্ষককে অপমান করা সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিবর্গের।’ শিক্ষক লাঞ্ছনার ওই ঘটনায় ক্ষোভ জানিয়েছে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ। বুধবার এক অনুষ্ঠানে ওই স্কুলশিক্ষককে চাকরিতে পুনর্বহালের দাবি জানিয়েছে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন ১৪ দল। আর বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকরা সেলিম ওসমানসহ জড়িতদের প্রকাশ্যে ক্ষমা চাওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন। প্রধান শিক্ষক শ্যামল কান্তি ভক্তকে লাঞ্ছিত ও সময়িক বরখাস্তের প্রতিবাদে আজ সারা দেশে আধা ঘণ্টা কর্মরিতির ডাক দিয়েছে বাংলাদেশ প্রাথমিক শিক্ষক সমিতি ও প্রাথমিক শিক্ষক অধিকার অধিকার সুরক্ষা ফোরাম। এদিকে শিক্ষক লাঞ্ছনার ঘটনায় আজ ৩৭টি পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে একযোগে মানববন্ধন কর্মসূচী অনুষ্ঠিত হবে। একইভাবে সকাল ১১টা থেকে ১২টা পর্যন্ত অপরাজেয় বাংলার পাদদেশে মানববন্ধন কর্মসূচী পালন করবে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতি। হাইকোর্টের রুল ॥ শিক্ষক শ্যামল কান্তি ভক্তকে কান ধরিয়ে উঠবস করানোর ঘটনায় সংসদ সদস্য সেলিম ওসমানসহ জড়িতদের বিরুদ্ধে কেন আইনী ব্যবস্থা নেয়া হবে না তা জানতে চেয়ে রুল জারি করেছে হাইকোর্ট। বুধবার বিচারপতি মইনুল ইসলাম চৌধুরী ও বিচারপতি মোঃ ইকবাল কবিরের সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চ স্বতঃপ্রণোদিত হয়ে এই আদেশ দেয়। আদেশে স্বরাষ্ট্র সচিব, নারায়ণগঞ্জের জেলা প্রশাসক, পুলিশ সুপার, বন্দর থানার অফিসার ইনচার্জ এবং উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাসহ সংশ্লিষ্টদের দুই সপ্তাহের মধ্যে রুলের জবাব দিতে বলা হয়েছে। একই সঙ্গে ওই ঘটনায় আইনগত কী পদক্ষেপ নেয়া হয়েছে, তাও তিন দিনের মধ্যে প্রতিবেদন আকারে আদালতে দাখিল করতে নির্দেশ দিয়েছেন হাইকোর্ট। স্থানীয় প্রশাসনকে এই আদেশ বাস্তবায়ন করতে বলা হয়েছে। এই আদেশের অনুলিপি দ্রুত সংশ্লিষ্টদের পাঠানোর নির্দেশও দিয়েছে আদালত। এর আগে শিক্ষক লাঞ্ছনার ওই ঘটনায় বিভিন্ন জাতীয় দৈনিকে প্রকাশিত প্রতিবেদন আদালতের নজরে আনেন সুপ্রীমকোর্টের জ্যেষ্ঠ আইনজীবী এমকে রহমান ও মহসীন রশিদ। এ সময় রাষ্ট্রপক্ষে আদালতে উপস্থিত ছিলেন ডেপুটি এ্যাটর্নি জেনারেল মোতাহার হোসেন সাজু। সরকার বিচলিত-স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ॥ সেলিম ওসমান কর্তৃক শিক্ষক লাঞ্ছনার ওই ঘটনায় সরকার বিচলিত বলে মন্তব্য করেছেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল। হাইকোর্টের রুলের বিষয়টি মন্ত্রীর দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলে তিনি বলেন, কোন শিক্ষককেই অসম্মান করা উচিত নয়। এ ঘটনায় আমরা বিচলিত। বুধবার রাজধানীতে এক অনুষ্ঠান শেষে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে তিনি এ কথা বলেন। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, নারায়ণগঞ্জের শিক্ষক লাঞ্ছনার ঘটনায় জড়িত অপরাধীদের হাইকোর্টের নিদের্শনা অনুযায়ী অবশ্যই ধরা হবে। অপরাধ যেই করুক তাদের আইনের আওতায় নিয়ে আসা হবে। চরম অসভ্যতা-তথ্যমন্ত্রী ॥ শিক্ষক লাঞ্ছনার ওই ঘটনাকে চরম অসভ্যতা মন্তব্য করে জড়িতদের সরকার এক চুলও ছাড় দেবে না বলে জানিয়েছেন তথ্যমন্ত্রী হাসানুল হক ইনু। বুধবার সকালে সিলেটে হযরত শাহজালাল (রহ.) এর মাজার জিয়ারত শেষে উপস্থিত সাংবাদিকদের তিনি এ কথা বলেন। এ ঘটনায় আইনমন্ত্রীর বক্তব্যের সঙ্গে সহমত পোষণ করে এ সময় তথ্যমন্ত্রী বলেন, নিজের হাতে আইন তোলার অধিকার কারও নেই। সুতরাং আমি নারায়ণগঞ্জের ওই শিক্ষক লাঞ্ছনার ঘটনায় তীব্র নিন্দ জ্ঞাপন করছি। যারা আইন নিজের হাতে তুলে নিয়ে এই অপকর্ম করেছে, তাদের সরকার এক চুলও ছাড় দেবে না। কলঙ্কজনক-শিক্ষামন্ত্রী ॥ নারায়ণগঞ্জে শিক্ষক লাঞ্ছনার ওই ঘটনাকে ‘কলঙ্কজনক’ মন্তব্য করে শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ বলেছেন, এ ঘটনার তদন্ত প্রতিবেদন পেলেই দোষীদের বিরুদ্ধে পদক্ষেপ নেবেন তারা। বুধবার শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সভাকক্ষে শিক্ষামন্ত্রী সাংবাদিকদের বলেন, শিক্ষা মন্ত্রণালয় এবং মাউশি মিলে আমরা একটা কমিটি করে দিয়েছি। সেই কমিটি গত রাতে সমস্ত রাত কাজ করে ফিরে এসেছে। ফিরে এসে রিপোর্ট দেয়ার সাথে সাথে আমরা বসব। রিপোর্ট দেয়ার সাথে সাথে আমরা আমাদের সিদ্ধান্ত জানিয়ে দেব। ওই শিক্ষককে চাকরিচ্যুত করার বিষয় নিয়ে করা এক প্রশ্নের জবাবে শিক্ষামন্ত্রী সাংবাদিকদের বলেন, আমরা করি নাই, করতেও বলি নাই, না করতেও বলি নাই। তদন্ত (কমিটি) এই জন্যই করা হলো। যে কোন বিষয়ে পদক্ষেপ নিতে গেলে আমাদের নিয়মনীতি, বিধিবিধান অনুসরণ করে না করলে সেটা আপনারাই চ্যালেঞ্জ করবেন। তদন্ত কমিটির রিপোর্ট দ্রুতই চলে আসবে বলে আমরা আশা করছি। আসার সাথে সাথে পদক্ষেপ নেব। আবার বললাম, রিপোর্টটা আসলে আমরা এ্যাকশন নিব। এ ঘটনায় যারা জড়িত তাদের সবার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়ার ঘোষণা দিয়ে শিক্ষামন্ত্রী বলেন, এখানে কে কী করেছে, সেটাও আমরা ধরব। এ ঘটনার পর শিক্ষা মন্ত্রণালয় ‘জোড়ালো ভূমিকা নেয়নি’ বলে যে অভিযোগ করা হচ্ছে তা নাকচ করেন নাহিদ। তিনি বলেন, আমরা জোড়ালো বক্তব্য দিয়েছি। আমি এখনও উল্লেখ করছি, অতি নিন্দনীয়, সম্পূর্ণ অগ্রহণযোগ্য, আমাদের সকলের জন্য এটা একটা কলঙ্কজনক ঘটনা। একজন শিক্ষকের প্রতি এমন আচরণ কখনও হতে পারে না। এর আগেও বিভিন্ন সময় শিক্ষক লাঞ্ছনার অনেক ঘটনায় বিচার না হওয়ার বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করে প্রশ্ন করা হলে শিক্ষামন্ত্রী বলেন, এই সমাজে অপরাধ বা এই ধরনের কার্যক্রম আছে। আমরা সমাজ থেকে আলাদা দ্বীপ না। সমাজেই বসবাস করি। এই ধরনের বিষয়গুলো শিক্ষা পরিবারে নানাভাবে ঘটে। দেশজুড়ে আলোচিত ওই ঘটনা তদন্তে মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদফতর গঠিত তদন্ত কমিটি বুধবারের মধ্যে প্রতিবেদন দেবে বলে আশা প্রকাশ করেছেন অধিদফতরের মহাপরিচালক অধ্যাপক ফাহিমা খাতুন। তবে তদন্ত কমিটির প্রধান মাউশির ঢাকা অঞ্চলের পরিচালক মোঃ ইউসুফ আলী মঙ্গলবার কাজ শুরুর পর বলেছিলেন, তিন দিনের মধ্যে প্রতিবেদন দিতে বলা হলেও তাদের আরও সময়ের প্রয়োজন। সংসদ সদস্য এ কে এম সেলিম ওসমানের উপস্থিতিতে নারায়ণগঞ্জের বন্দর উপজেলার ওই প্রধান শিক্ষককে ধর্ম অবমাননার অভিযোগ তুলে কান ধরিয়ে উঠবস করার ঘটনাটি নিয়ে সমালোচনা চলছে সারাদেশে। নারায়ণগঞ্জের ঘটনায় ব্যবস্থা নেয়ার আশ্বাস দিয়ে মন্ত্রী বলেন, পোক্ত করে সিদ্ধান্ত নিতে যেটুকু দরকার, সেটুকু সময় নিয়েছি। বেশি সময় নিইনি। আমরা রিপোর্টের অপেক্ষায় আছি। পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রীর নিন্দা ॥ এদিকে এই ঘটনার নিন্দা জানিয়ে পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী মোহাম্মদ শাহরিয়ার আলম তার ফেসবুক ফ্যান পেজে লিখেছেন, ‘নারায়ণগঞ্জে শিক্ষককে অপমান করার তীব্র নিন্দা জানাই। মাননীয় শিক্ষামন্ত্রী তদন্ত করে ব্যবস্থা গ্রহণের নিশ্চয়তা দিয়েছেন। আশাকরি তা দ্রুত করা হবে।’ পুনর্বহালের দাবি ১৪ দলের ॥ এদিকে প্রবল সমালোচনার মুখেও মঙ্গলবার পিয়ার সাত্তার লতিফ উচ্চ বিদ্যালয়ের পরিচালনা পর্ষদ লাঞ্ছিত ওই শিক্ষককে বরাখাস্ত করে। আর এ ঘটনায় ক্ষোভ জানিয়ে লাঞ্ছিত ওই শিক্ষককে চাকরিতে পুনর্বহালের দাবি জানিয়েছে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন ১৪ দল। বুধবার আওয়ামী লীগ সভানেত্রীর রাজনৈতিক কার্যালয়ে ১৪ দলের সভার পর জোট মুখপাত্র ও আওয়ামী লীগের সভাপতিম-লীর সদস্য মোহাম্মদ নাসিম দলের পক্ষে এ দাবির কথা জানান। এ সময় তিনি সাংবাদিকদের বলেন, একটি অজুহাতকে কেন্দ্র করে শিক্ষককে অপমান-অপদস্থ করার পর চাকরিচ্যুত করে অন্যায় করা হয়েছে। আমি মনে করি সেই শিক্ষককে চাকরিতে পুনর্বহাল করা উচিত। সেলিম ওসমানের প্রবল সমালোচনা করে স্বাস্থ্যমন্ত্রী নাসিম বলেন, সংসদ সদস্য যে কাজটি করেছে তার মর্যাদা সে রক্ষা করতে পারে নাই। সংসদ সদস্য হিসেবে উনি যে ভূমিকা রেখেছেন তা কোনভাবে সমর্থনযোগ্য নয়। বরং অন্য সংসদ সদস্যদের মর্যাদ ক্ষুণœ করেছেন। ওই সংবাদ সম্মেলনে ১৪ দলের নেতাকর্মীরা উপস্থিত ছিলেন। বিভিন্ন সংগঠনের প্রতিবাদ ॥ অবমাননাকর ওই ঘটনার নিন্দা জানিয়ে বিভিন্ন সংগঠনের প্রতিবাদ অব্যাহত রয়েছে। সংশ্লিষ্টদের বিরুদ্ধে দ্রুত ব্যবস্থা গ্রহণের দাবি জানিয়ে গণমাধ্যমে প্রেরিত সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে প্রতিবাদ জানিয়েছে বাংলাদেশ মহিলা পরিষদ, সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোট, প্রাথমিক শিক্ষক অধিকার সুরক্ষা ফোরাম, সামাজিক প্রতিরোধ কমিটি, বাংলাদেশ কৃষি সমিতি, বাংলাদেশ কৃষক সমিতিসহ আরও নানা সংগঠন। এদিকে প্রধান শিক্ষক শ্যামল কান্তি ভক্তকে লাঞ্ছিত ও সময়িক বরখাস্তের প্রতিবাদে আজ সারা দেশে আধা ঘণ্টা কর্মরিতির ডাক দিয়েছে বাংলাদেশ প্রাথমিক শিক্ষক সমিতি ও প্রাথমিক শিক্ষক অধিকার অধিকার সুরক্ষা ফোরাম। এ ঘটনায় বুধবার বিকেলে রাজধানীর জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে বাংলাদেশ পূজা উদযাপন পরিষদ বিক্ষোভ সমাবেশ ও মানববন্ধন কর্মসূচী পালন করে। এদিকে শিক্ষক লাঞ্ছনার ঘটনায় আজ ৩৭টি পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে একযোগে মানববন্ধন কর্মসূচী অনুষ্ঠিত হবে। একই ভাবে সকাল ১১টা থেকে ১২টা পর্যন্ত অপরাজেয় বাংলার পাদদেশে মানববন্ধন কর্মসূচী পালন করবে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতি। ফেসবুকে চলছে নিন্দার ঝড় ॥ লাঞ্ছিত ওই শিক্ষককে বরখাস্তের খবরে প্রতিবাদের ঝড় ভিন্নমাত্রা পেয়েছে। ক্ষুব্ধ ফেসবুকারদের অনেকেই যেমন নিজের কানে ধরা ছবি আপ দিয়ে লিখেছেন-স্যরি স্যার, তেমনি কেউ কেউ বলেছেন, ‘আমরা নয়Ñকানে ধরতে হবে অবমাননাকর ওই ঘটনায় জড়িতদের।’ ফেসবুকে ইভেন্ট খুলেও ডাক দেয়া হয়েছ আন্দোলনের। ঢাকা থেকে শুক্রবার একদল সামাজ সচেতন ব্যক্তিবর্গ নারায়ণগঞ্জে ওই শিক্ষকের পাশে দাঁড়াতে চান। মিডিয়া ব্যক্তিত্ব সাংবাদিক অঞ্জন রায় লিখেছেন, ‘আগামী শুক্রবার সংহতি জানাতে চাই নারায়ণগঞ্জের অপমানিত শিক্ষকের কাছে। শুধু তার হাতটা ধরে বলবো- স্যার, বাংলাদেশ অপমানকে হেরে যেতে দেবে না। ইতিহাসের শিক্ষা-মিলিত মানুষই ইতিহাস তৈরি করে।’ আর সেই স্ট্যাটাসে অনেকেই সম্মতি জানিয়েছেন নারায়ণগঞ্জে গিয়ে ওই শিক্ষকের পাশে একটু দাঁড়াতে। এদিকে মঙ্গলবার রাতে ফেসবুকে সাংসদ সেলিম ওসমানের কানে ধরা একটি ব্যঙ্গচিত্র ছড়িয়ে পড়ে। ওই ছবি শেয়ার দিয়ে অনেকেই লিখেছেনÑ ‘সারা দেশের মানুষ নয়, কানে ধরতে হবে শিক্ষককে অপমান করা সংশ্লিষ্টদের।’ নারায়ণগঞ্জে সেলিম ওসমানের গ্রেফতার দাবি ॥ নারায়ণগঞ্জ থেকে আমাদের নিজস্ব সংবাদদাতা জানান, প্রধান শিক্ষক শ্যামল কান্তি ভক্তকে কান ধরে উঠবস করানোর ঘটনায় জাতীয়পার্টি দলীয় নারায়ণগঞ্জ-৫ আসনের সংসদ সদস্য সেলিম ওসমানের বিরুদ্ধে অপপ্রচারের প্রতিবাদ জানিয়ে সংবাদ সম্মেলন করেছে নারায়ণগঞ্জ চেম্বার অব কমার্স এন্ড ইন্ডাস্ট্রি। এদিকে গণসংহতি আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়ক জোনায়েদ সাকি প্রধান শিক্ষক নির্যাতনের ঘটনার জন্য সাংসদ সেলিম ওসমানকে দায়ী করে তার গ্রেফতারের দাবি করেছে। বুধবারও প্রধান শিক্ষক শ্যামল কান্তি ভক্ত শহরের খানপুরে অবস্থিত ৩শ’ শয্যা হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছে। বুধবার দুপুরে নারায়ণগঞ্জ শহরের চাষাঢ়া বালুর মাঠ এলাকায় অবস্থিত দলীয় কার্যালয়ে গণসংহতি আন্দোলনের কেন্দ্রীয় প্রধান সমন্বয়ক জোনায়েদ সাকি দলের সদস্য সংগ্রহ কার্যক্রমের উদ্বোধনী অনুষ্ঠান উপলক্ষে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে প্রধান শিক্ষক শ্যামল কান্তি ভক্তকে প্রকাশ্যে কান ধরে ওঠবস করানোর ঘটনায় নিন্দা জানিয়ে স্থানীয় এমপি সেলিম ওসমান ও তার সঙ্গে যুক্ত ব্যক্তিদের গ্রেফতারের দাবি জানান। গণসংহতি আন্দোলনের কেন্দ্রীয় প্রধান সমন্বয়ক জোনায়েদ সাকি বলেন, প্রধান শিক্ষক শ্যামল কান্তি ভক্তকে যেভাবে অপমান হেনস্থা করা হয়েছে-এটা আসলে খুনের চেয়ে কম বড় অপরাধ নয়। খুন করা যেমন অপরাধ, একজন হেনস্থা করা কম বড় অপরাধ নয়। আমরা এখন পর্যন্ত সেলিম ওসমানসহ তার সঙ্গে যুক্ত ব্যক্তিদের আইনের আওতায় আনতে দেখিনি। অথচ তিনি সংবাদ সম্মেলন করে তার নিজের পক্ষে সাফাই গাইছেন। আমরা দেখতে পাচ্ছি, যে সরাসরি অপরাধ করার পরও, খোদ আইনমন্ত্রী বলেছেন, যারা অপরাধ করেছেন তাদের শাস্তি পেতে হবে। কোথায় আপনাদের আইন? আমরা আইনমন্ত্রী, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ও প্রধানমন্ত্রীর কাছে প্রশ্ন করতে চাই, আপনার সরকার যদি থেকে থাকে আইন কেন কার্যকর হচ্ছে না। কেন তাদের গ্রেফতার করা হচ্ছে না। সারাদেশের মানুষ যেখানে প্রতিবাদ জানাচ্ছে, সেখানে তাদের গ্রেফতার করা হচ্ছে না। অবিলম্বে সেলিম ওসমান ও তার সঙ্গে যুক্ত ব্যক্তিদের গ্রেফতার ও শাস্তি দাবি করেন তিনি। পরে জোনায়েদ সাকী শহরের খানপুরে অবস্থিত ৩শ’ শয্যা হাসপাতালে চিকিৎসাধীন প্রধান শিক্ষক শ্যামল কান্তি ভক্তকে দেখতে চান এবং তার সঙ্গে কথা বলেন। অন্যদিকে ধর্মের বিরুদ্ধে কটূক্তির অভিযোগে শিক্ষক শ্যামল কান্তি ভক্তের ফাঁসির দাবিতে বুধবার বিকেলে শহরের বঙ্গবন্ধু রোডে বিক্ষোভ মিছিল ও চাষাঢ়ায় শহীদ মিনারের সামনে মানববন্ধন করেছে তাহেরিকে খতম্ েনবুয়্যতে বাংলাদেশ নামের একটি সংগঠন। মানববন্ধনে বক্তারা বলেন, শিক্ষক শ্যামল কান্তি ভক্ত আল্লাহ রাসূল ও ইসলাম ধর্মকে নিয়ে কটূক্তি করেছে। আমরা তার বিচার দাবি করি। একই সাথে যারা এমপি সেলিম ওসমানের বিরুদ্ধে যারা ষড়যন্ত করছে তাদেরও বিচার দাবি করছি। বন্দর উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার আ খ ম নুরুল আলম সাংবাদিকদের জানান, শিক্ষককে লাঞ্ছিত করার ঘটনারা দিন তাকে প্রধান করে স্থানীয়ভাবে তিন সদস্যের যে তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছিল তা বিলুপ্ত করে শিক্ষা মন্ত্রণালয় থেকে ৫ সদস্যের নতুন একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। ওই তদন্ত কমিটি তাদের কাজ করে যাচ্ছে। রাজশাহীতে শিক্ষক লাঞ্ছনাকারীদের বিচার দাবি ॥ রাজশাহী থেকে আমাদের নিজস্ব প্রতিনিধি জানান, শিক্ষক অবমাননাকর ওই ঘটনায় জড়িতদের গ্রেফতার ও বিচারের দাবিতে রাজশাহীতে মানববন্ধন কর্মসূচী পালিত হয়েছে। সুশাসনের জন্য নাগরিক-রাজশাহী ও স্বেচ্ছাব্রতী সংগঠন ইয়ুথ এন্ডিং হাঙ্গার রাজশাহী ইউনিটের সদস্যরা বুধবার রাজশাহী নগরীর সাহেব বাজার জিরো পয়েন্টে এই কর্মসূচী থেকে অবিলম্বে জড়িতদের বিচারের আওতায় নিয়ে আসার দাবি জানান। মানববন্ধনে বক্তারা বলেন, এ ধরনের ন্যক্কারজনক ঘটনা সামাজিক মূল্যবোধের অবক্ষয়কে ত্বরান্বিত করবে। তাই তারা অবিলম্বে প্রধান শিক্ষক শ্যামল কান্তি ভক্তের উপর নির্যাতনকারীদের গ্রেফতার ও দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দাবি করেন। নীলফামারীতে শিক্ষার্থীদের কান ধরে প্রতিবাদ ॥ নারায়ণগঞ্জে শিক্ষককে অপমান করার ওই ঘটনায় সিলেটের পর এবার নীলফামারীতে একটি মাদ্রাসার শিক্ষার্থীরা কান ধরে উঠবস কর্মসূচী পালন করে। নীলফামারী থেকে আমাদের নিজস্ব প্রতিনিধি জানান, নীলফামারীর জলঢাকা উপজেলার কাজীরহাট পান্থাপাড়া আদর্শ আলিম মাদ্রাসার সকল শিক্ষক ও শিক্ষার্থীরা বুধবার বেলা দুইটায় সারিবদ্ধভাবে কান ধরে দাঁড়িয়ে ব্যতিক্রমী এ প্রতিবাদ কর্মসূচী পালন করে । এসময় প্রতিষ্ঠানের ভাইস প্রিন্সিপাল হেমায়েত আলমের নেতৃত্বে ১১ জন শিক্ষক ও আড়াইশত শিক্ষার্থী এই প্রতিবাদ কর্মসূচীতে অংশ নেয়। প্রায় আধা ঘণ্টা ধরে চলে এ কর্মসূচী। সর্বোপরি সারা দেশেই চলছে এখন বিক্ষোভ আর প্রতিবাদ। শিক্ষক অপমানের ঘটনায় ক্ষোভে উত্তাল পুরো দেশ।
×