ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

শেখ হাসিনার স্বদেশ প্রত্যাবর্তন মুক্তিযুদ্ধের চেতনা পুনঃপ্রতিষ্ঠার সময় ॥ মুনতাসীর মামুন

প্রকাশিত: ০৬:২৮, ১৮ মে ২০১৬

শেখ হাসিনার স্বদেশ প্রত্যাবর্তন মুক্তিযুদ্ধের চেতনা পুনঃপ্রতিষ্ঠার সময় ॥ মুনতাসীর মামুন

স্টাফ রিপোর্টার, খুলনা অফিস ॥ ১৯৭১ : গণহত্যা-নির্যাতন আর্কাইভ ও জাদুঘর ট্রাস্টের সভাপতি বিশিষ্ট ইতিহাসবিদ প্রফেসর ড. মুনতাসীর মামুন বলেছেন, আওয়ামী লীগের সভানেত্রী প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ১৯৮১ সালের ১৭ মে স্বদেশ প্রত্যাবর্তন করেন। সেই সময়ে দেশে মুক্তিযুদ্ধবিরোধীদের শাসন চলছিল। শেখ হাসিনার স্বদেশ প্রত্যাবর্তনকে বলা যেতে পারে মুক্তিযুদ্ধের চেতনা পুনঃপ্রতিষ্ঠার সময়। শেখ হাসিনার ফিরে আসার দিনটিকেই মনে রেখে ২০১৪ সালের ১৭ মে খুলনাতে দেশের একমাত্র ১৯৭১ : গণহত্যা-নির্যাতন আর্কাইভ ও জাদুঘর প্রতিষ্ঠা করা হয়। আজ (মঙ্গলবার) তার দ্বিতীয় প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী। মুনতাসীর মামুন আরও বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কারণে আজকে মুক্তিযুদ্ধের প্রতিষ্ঠানগুলো সক্রিয় হচ্ছে। তাঁর দৃঢ়তায় একাত্তরের ঘাতক যুদ্ধাপরাধীদের বিচার করা হচ্ছে। ১৯৭১ : গণহত্যা-নির্যাতন আর্কাইভ ও জাদুঘরকে তিনি সার্বিক সহযোগিতা করে যাচ্ছেন। তিনি খুলনা মহানগরীর ২৬, সাউথ সেন্ট্রাল রোডের একটি বাড়ি জাদুঘরকে দান করেছেন। প্রধানমন্ত্রীর বাড়ি দান ও সহযোগিতা চিরস্মরণীয় হয়ে থাকবে। তিনি এ জন্য প্রধানমন্ত্রীর প্রতি আবারও কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন। ড. মুনতাসীর মামুন আরও বলেন, ১৯৭১ : গণহত্যা-নির্যাতন আর্কাইভ ও জাদুঘর ট্রাস্টের দ্বিতীয় প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর দিনে ডাকবিভাগ মঙ্গলবার একটি স্পেশাল খাম প্রকাশ করেছে। একাত্তরের গণহত্যা নিয়ে এটাই প্রথম খাম প্রকাশ করা হলো। এ জন্য তিনি সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী তারানা হালিমকে ধন্যবাদ জানান। ড. মামুন বলেন, প্রতিষ্ঠার দুই বছরে ১৯৭১ : গণহত্যা-নির্যাতন আর্কাইভ ও জাদুঘর ট্রাস্টের পক্ষ থেকে বহু গণহত্যাস্থল চিহ্নিতকরণ ও সেখানে পরিচিতি ফলক স্থাপন, প্রকাশনা, আলোচনা সভা, শহীদ স্মারক বক্তৃতাসহ নানা কর্মসূচী পালন করা হচ্ছে। ইতোমধ্যে অনেক মানুষের কাছ থেকে আমরা সাড়া পেয়েছি। স্কুলের শিক্ষার্থীরাও মুক্তিযুদ্ধ সম্পর্কে জানা বোঝার চেষ্টা করছে। স্থানীয় বিভিন্ন স্কুলের ছাত্রছাত্রীরা টিফিনের সময় ২ টাকা দিয়ে টিকেট কেটে জাদুঘর পরিদর্শন করছে। এটি একটি ভাল লক্ষণ। তিনি আর্কাইভ ও জাদুঘরকে সার্বিক সহায়তা দানের জন্য মুক্তিযুদ্ধের সপক্ষের লোকদের প্রতি আহ্বান জানান। ১৯৭১ : গণহত্যা-নির্যাতন আর্কাইভ ও জাদুঘর ট্রাস্টের দ্বিতীয় প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে দিনব্যাপী কর্মসূচীর অংশ হিসেবে মঙ্গলবার বিকেলে খুলনা বিভাগীয় জাদুঘর অডিটরিয়ামে শহীদ স্মারক বক্তৃতা অনুষ্ঠানে সভাপতির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন। অনুষ্ঠানে স্মারক বক্তা ছিলেন লে. কর্নেল (অব) কাজী সাজ্জাদ আলী জহির বীরপ্রতীক। অতিথি ছিলেন আর্কাইভ ও জাদুঘর ট্রাস্টের সহসভাপতি দেশবরেণ্য চিত্রশিল্পী হাশেম খান। স্বাগত বক্তব্য রাখেন ট্রাস্টি সম্পাদক ডাঃ শেখ বাহারুল আলম। অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করেন ট্রাস্টি কোষাধ্যক্ষ অধ্যাপক শংকর কুমার মল্লিক। অনুষ্ঠানে কুয়েটের উপাচার্য প্রফেসর ড. মুহাম্মদ আলমগীর, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক মেসবাহ কামাল, আর্কাইভ ও জাদুঘরের ট্রাস্টি অধ্যাপক চৌধুরী শহীদ কাদেরসহ অনেকে উপস্থিত ছিলেন। অনুষ্ঠানে স্মারক বক্তা বলেন, বাংলাদেশের আনাচে-কানাচে ছড়িয়ে রয়েছে অসংখ্য বধ্যভূমি। যেগুলোর কথা এখনও দলিলবদ্ধ হয়নি। তিনি বলেন, পরিকল্পিতভাবে অনেক বধ্যভূমির অস্তিত্ব মুছে ফেলা হয়েছে। মানুষের বিচরণক্ষেত্রের নিচে যে কত মানুষ শায়িত আছে তার কোন হিসেব নেই। বধ্যভূমি ও গণকবরগুলো সংরক্ষণ করে সেখানে স্মৃতিসৌধ নির্মাণ করা প্রয়োজন। তিনি বলেন, পাকিস্তানী সেনাবাহিনী ও তাদের এ দেশীয় দোসরা যেসব গণহত্যা ঘটিয়েছে সেসব স্থান চিহ্নিত করে স্মৃতিচিহ্ন হিসেবে তা ভবিষ্যত প্রজন্মের জন্য সংরক্ষণ করা দরকার। এটা করা না হলে ভবিষ্যত প্রজন্মের কাছে এসব তথ্য অজানাই থেকে যাবে। তিনি আরও বলেন, গণহত্যার কর্ণধারদের বিচার করা হচ্ছে। আর এই বিচারকার্যকে ব্যাহত করার জন্য মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাসকে বিকৃতকরণের চেষ্টা চালানো হচ্ছে। এই অপচেষ্টাকারীদের সম্পর্কে সজাগ থাকার আহ্বান জানান তিনি। এর আগে সকাল ১০টায় খুলনা বিভাগীয় জাদুঘর অডিটরিয়ামে শিশু চিত্রাঙ্কন প্রতিযোগিতা অনুষ্ঠিত হয়। ২য় শ্রেণী থেকে ষষ্ঠ এবং ৭ম শ্রেণী থেকে ১০ম শ্রেণী পর্যন্ত দুই ক্যাটাগরিতে মোট ৭০ শিক্ষার্থী প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণ করেন। এ চিত্রাঙ্কন প্রতিযোগিতার উদ্বোধন করেন ১৯৭১ : গণহত্যা-নির্যাতন আর্কাইভ ও জাদুঘর ট্রাস্টের সহসভাপিত বরেণ্য চিত্রশিল্পী হাশেম খান। তিনি শিশুদের উদ্দেশে বলেন, তোমরা সুন্দর ছবি আঁকবে। সুন্দর মনের অধিকারী হবে। বাংলাদেশকে ভালবাসবে। তোমরা মনে রেখ মুক্তিযুদ্ধ করে বাংলাদেশ স্বাধীন করা হয়েছে। মুক্তিযুদ্ধ হঠাৎ করে হয়নি। এসব ইতিহাস তোমাদের জানতে হবে। বাঙালী বীরের জাতি। বীরের জাতি হিসেবে গৌরবের সঙ্গে তোমাদের বড় হতে হবে। পরে শিল্পী হাশেম খানের সঙ্গে কণ্ঠ মিলিয়ে শিক্ষার্থীসহ উপস্থিত সকলে জয় বাংলা, জয় বঙ্গবন্ধু সেøাগান দেন। এদিকে শহীদ স্মারক বক্তৃতা অনুষ্ঠান শেষে সকালে চিত্রাঙ্কন প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণকারী শিক্ষার্থীদের মধ্যে পুরস্কার ও সনদ বিতরণ করেন প্রফেসর ড. মুনতাসীর মামুন ও বরেণ্য চিত্রশিল্পী হাশেম খান।
×