ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ১৮ এপ্রিল ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪৩১

মোঃ নুরুজ্জামান

যেখানে এগিয়ে ব্যাঙ্গালুরু

প্রকাশিত: ০৪:২১, ১৮ মে ২০১৬

যেখানে এগিয়ে ব্যাঙ্গালুরু

তারকাখচিত দল নিয়েও এবারের আইপিলে ভক্তদের মন ভরাতে পারছে না রয়্যাল চ্যালেঞ্জার্স ব্যাঙ্গালুরু। অথচ বিরাট কোহিল নেতৃত্বে ফ্র্যাঞ্চাইজিটিতে রয়েছেন ক্রিস গেইল, এবি ডি ভিলিয়ার্স, শেন ওয়াটসনের মতো তুখোড় সব উইলোবাজ। ব্যাটিং-শক্তির বিচারে আসরের সেরা শক্তি তারাই। এরপরও শেষ চারের দৌড়ে কঠিন সমীকরণ সামনে রেখে লড়তে হচ্ছে কোহলিদের (এ লেখা পড়ার সময় বাদ পড়ে গিয়েছে কি না, সেটিই প্রশ্ন!)। অবশ্য একটি জায়গায় আর সবাইকে ছাড়িয়ে রয়্যাল চ্যালেঞ্জার্স। সেটি রান সংগ্রহে, চার-ছক্কার ফুলঝুড়ি ছুটিয়ে দেয়ার দৌড়ে। কি ব্যক্তিগত, কি দলীয়, ব্যাটিংয়ে আইপিএল-রেকর্ডে কেবলই ব্যাঙ্গালুরুর জয় জয়কার! দলীয় সঙ্কটের মাঝে এবারও ব্যতিক্রম নয়। এই তো সেদিন (১৪ মে ২০১৬) ঝড়টা উঠল ব্যাঙ্গালুরুর এম চিন্মাস্বামীতে, আর তাতে উড়ে গেল গুজরাট! আইপিএলে এমন ‘বিস্ময়কর’ ঘটনার জন্ম দিলেন সময়ের দুই আলোচিত ব্যাটসম্যান বিরাট কোহলি ও এবি ডি ভিলিয়ার্স। কোহলি ৫৫ বলে ১০৯, এবি ৫২ বলে অপরাজিত ১২৯Ñ দুজনে মিলে ২২৯, স্বীকৃত টি২০ ম্যাচে জুটিতে যা সর্বোচ্চ রানের নতুন রেকর্ড। সৌজন্যে আইপিএল ইতিহাসে রেকর্ড দ্বিতীয় সর্বোচ্চ ২৪৮ রানের (৩ উইকেট, ২০ ওভার) ইনিংস গড়ে রয়্যাল চ্যালেঞ্জার্স ব্যাঙ্গালুরু জিতল ১৪৪ রানের বড় ব্যবধানে। রানের হিসাবে আইপিএল ইতিহাসের বড় জয় এটিই। পাহাড় ডিঙাতে গিয়ে ১৮.৪ ওভারে ১০৪ রানে অলআউট গুজরাট লায়ন্স। চিন্মাস্বামীতে কাল ব্যাঙ্গালুরু অধিনায়কের সঙ্গে ঝড় তুললেন ডি ভিলিয়ার্সও। ৪৩ বলেই তিন অঙ্কের দেখা পেয়েছেন আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে দ্রুততম সেঞ্চুরির মালিক। আইপিএলে যা পঞ্চম দ্রুততম। ভারত টেস্ট অধিনায়কের বল লাগে ১১টি বেশি, ৫৪। দুজনে মিলে দ্বিতীয় উইকেটে যোগ করেন ২২৯ রান। আগের রেকর্ডটিও ছিল তাদেরই দখলে, গতবার মুম্বাই ইন্ডিয়ান্সের বিপক্ষে করেছিলেন ২১৩! এর আগে টি২০তে এক ইনিংসে দুই সেঞ্চুরির ঘটনা ঘটেছে মাত্র একবারই, ২০১১Ñএ কাউন্টিতে মিডলসেক্সের বিপক্ষে করেছিলেন গ্লুস্টাশায়ারের কেভিন ও ব্রায়েন ও হাসিম আমলা। অথচ ম্যাচের শুরুতে ওপেনিংয়ে যথারীতি ব্যর্থ ‘দানব’ ক্রিস গেইল। টি২০ বিশ্বকাপে সেই যে প্রথম ম্যাচে সেঞ্চুরি পেয়েছিলেন, এরপর থেকে আর দুই অঙ্ক ছুঁতে পারেননি! তিনে নামা ডি ভিলিয়ার্স শুরু থেকেই ঝড় তোলেন। মুখোমুখি তৃতীয় বলে ছক্কা দিয়ে শুরু, এরপর গুজরাট বোলারদের ওপর দিয়ে রীতিমতো রোলার চালিয়েছেন। শেষ পর্যন্ত ৫২ বলে অপরাজিত ১২৯। তাতে চারের (১০) চেয়ে ছক্কাই (১২) বেশি! সেই তুলনায় কোহলি দেখে শুনে শুরু করেন। ইনিংস যত গড়িয়েছে, তত রুদ্রমূর্তি ধারণ করেছেন তিনি। একপর্যায়ে ৪০ বলে ৫১, এরপর যেদিকে মেরেছেন বল বাউন্ডারি ছাড়িয়েছে। সেঞ্চুরি পূরণের পথে পরের ৫৩ রান করেছেন মাত্র ১৩ বলে! ১০৯ রানের ইনিংসে চার ৫ ও ছক্কা ৮টি। ব্যাঙ্গালুরুকে ২৪৮ রানের পাহাড়ে চড়িয়েছেন দুই তারকা। আইপিএলে এটি দলীয় দ্বিতীয় সর্বোচ্চ রানের নজির। সর্বোচ্চ রানের রেকর্ডটাও তাদেরই দখলে, ২০১৩ সালে পুনের বিপক্ষে ২৬৩/৫! মনে আছে? এই ‘ফ্লপ’ গেইল ওই ম্যাচে ১৭৫ রানের অতিমানবীয় ইনিংস খেলেছিলেন। এবারের আসরে দলীয় সর্বোচ্চ পাঁচ ইনিংসের তিনটিই ব্যাঙ্গালুরুর। এর আগে ১২ এপ্রিল সানরাইজার্স হায়দরাবাদের বিপক্ষে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ ২২৭ রান (৪ উইকেটে) করে কোহলির দল জিতেছিল ৪৫ রানে। সেদিন ৭৫ রান করেছিলেন কোহলি। আসরে দুই শতাধিক রানের তিনটি স্কোরের দুটিই ব্যাঙ্গালুরুরা। তার আগে ৭ মে রাইজিং পুনে সুপারজায়ান্টসের বিপক্ষে ১৯৫/৩ (পঞ্চম সর্বোচ্চ)। গেইল পুরোপুরি ফ্লপ। তবে দুরন্ত ব্যাটিং করে চলেছেন কোহলি। ‘দুইজন (কোহলি-এবি) সত্যিকারের চ্যাম্পিয়নের কাছ থেকেই এল শীর্ষ দুটি নক’ টুইটারে লিখেছেন ক্যারিবিয়ান ব্যাটিং-দৈত্য। অস্ট্রেলিয়া তারকা ডেভিড ওয়ার্নার (সানরাইজার্স হায়দরাবাদ অধিনায়ক) বলেছেন, ‘সহজেই বলায় যায় এই মুহূর্তে এরাই বিশ্বের সেরা দুই ব্যাটসম্যান।’ আর ইংল্যান্ডের জস বাটলারের মন্তব্য, ‘দেখে মনে হচ্ছে মেসি ও রোনাল্ডো একই দলে খেলছে!’ ইনিংসে দুজনে মিলে করেছেন ২২৯, স্বীকৃত টি২০ ম্যাচে জুটিতে যা সর্বোচ্চ রানের নতুন রেকর্ড। রেকর্ড দ্বিতীয় সর্বোচ্চ ২৪৮ রানের (৩ উইকেট, ২০ ওভার) ইনিংস গড়ে রয়্যাল চ্যালেঞ্জার্স ব্যাঙ্গালুরু জেতে ১৪৪ রানের বড় ব্যবধানে। ক্রেজি কোহলি বলেন, ‘এবি-ই আমার আত্মবিশ্বাস বাড়িয়ে দিয়েছে। সে একজন সত্যিকারের লিজেন্ড। আমি ধীরে খেলা শুরু করলেও তার সঙ্গে দ্রুতই নিজেকে মানিয়ে নেই। ও আমার প্রিয় ব্যাটসম্যান।’ অন্যদিকে দক্ষিণ আফ্রিকান তারকা ডি ভিলিয়ার্স পুরো কৃতিত্বই তার স্ত্রীকে দিয়েছেন। জানিয়েছেন, যেদিন তার স্ত্রী গ্যালারিতে (স্ট্যান্ডে) থাকেন সেদিনই তিনি ভাল খেলার উদ্দীপনা পান! কোহলির জন্য কোন প্রশংসাই যথেষ্ট নয়। টুর্নামেন্টে চ্যালেঞ্জার্স অধিনায়কের ইনিংসগুলো দেখুন- ৭৫, ৭৯, ৩৩, ৮০, ১০০*, ১৪ ও ৫২ ও ১০৮*, ২০ , ৭ ও ১০৯! ৩ সেঞ্চুরি ও ৪ হাফ সেঞ্চুরিতে ৭৫.২২ গড়ে টুর্নামেন্টের সর্বোচ্চ ৬৭৭ রান (সকল পরিসংখ্যান সোমবারের ম্যাচের আগ পর্যন্ত)। এর চেয়ে ভাল আর কি করে সম্ভব? অনেকে কোহলির মাঝে গ্রেট শচীন টেন্ডুলকরের ছাঁয়া দেখেন। আইপিএলে মুম্বাই ইন্ডিয়ান্সের অধিনায়ক হিসেবে এক আসরে ৫০০Ñর বেশি রান করেছিলেন শচীন। সেটি ভেঙে দেন কোহলি। কেবল তাই নয়, আইপিএলের একমাত্র অধিনায়ক হিসেবে তিন আসরে ৫০০-র বেশি রানের অনন্য রেকর্ডও গড়েন ‘সুপার’ উইলোবাজ। ২০১৩ আইপিএলে করেছিলেন ৬৩৪, যেটি অধিনায়ক হিসেবে এক আসরে সবচেয়ে বেশি রান তোলার রেকর্ডও। এবার নিজের সেই রেকর্ড নিজেই ভেঙেছেন! গত আইপিএলেও করেছিলেন ৫০৫। এক মৌসুমে ৫০০-এর বেশি রান তোলা বাকি দুই অধিনায়ক গৌতম গম্ভীর ও ডেভিড ওয়ার্নার। দুজনই সেটি করেছিলেন একবার করে। অধিনায়ক কোহলি এবার প্রথম ব্যাটসম্যান হিসেবে এক আসরে ৩টি সেঞ্চুরির অনন্য রেকর্ড গড়েন।
×