ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪৩১

বিউটি পারভীন

ঘরোয়া ক্রিকেট ॥ ব্যাটসম্যান মুশফিকের ফেরা

প্রকাশিত: ০৪:২১, ১৮ মে ২০১৬

ঘরোয়া ক্রিকেট ॥ ব্যাটসম্যান মুশফিকের ফেরা

কোন ভুলই খুঁজে পাচ্ছিলেন না। বার বারই চেষ্টা করেই যাচ্ছিলেন। কিন্তু ভাগ্যটাই খারাপ, না হলে এমনটা হবে কেন? অনুশীলনের ক্ষেত্রে এবং চেষ্টার ক্ষেত্রে বাংলাদেশ ক্রিকেটে পরিচিত মুখদের মধ্যে সবচেয়ে সিরিয়াস মুশফিকুর রহীম। সেটার সুফলও দেখা গেছে তার ব্যাটে। জাতীয় দলের হয়ে কিংবা ঘরোয়া ক্রিকেটে দলের বিপদের মুহূর্তে ত্রাণকর্তার ভূমিকায় বার বারই নিজেকে অবতীর্ণ করেছেন। এর সঙ্গে দারুণ ধারাবাহিকতার জন্য ‘মিস্টার ডিপেন্ডেবল’ নামটাও নিজের সঙ্গে জুড়ে গিয়েছিল তার। কিন্তু সেই মুশফিকই ক্রমশ হারিয়ে যাচ্ছিলেন। ব্যাটসম্যান মুশফিক, উইকেটরক্ষক মুশফিক এবং অধিনায়ক মুশফিক কোনটাকেই ঠিকভাবে পাওয়া যাচ্ছিল না। হয়ে পড়েছিলেন ছন্দহীন এবং চরম ব্যর্থতায় পরিপূর্ণ। তবে এবার বাংলাদেশের অন্যতম জনপ্রিয় ঘরোয়া ক্রিকেট আসর ঢাকা প্রিমিয়ার ডিভিশন ক্রিকেট লীগে (ডিপিএল) আবারও যেন ছন্দটা ফিরে পেয়েছেন। নতুন দল হিসেবে পেয়েছেন ঐতিহ্যবাহী মোহামেডান স্পোর্টিং ক্লাব লিমিটেডের নেতৃত্ব। এবার ‘প্লেয়ার বাই চয়েস’ পদ্ধতিতে আহামরি কোন দল গড়েনি মোহামেডান। কিন্তু মুশফিক দলকে দারুণ নেতৃত্বই শুধু দিয়ে যাচ্ছেন না, পাশাপাশি ব্যাটসম্যান মুশফিকেরও প্রত্যাবর্তন ঘটেছে এবার প্রিমিয়ার লীগ দিয়ে। হাঁকিয়েছেন একটি দারুণ সেঞ্চুরিও। তার নেতৃত্বে মোহামেডান এখন পর্যন্ত আছে পয়েন্ট টেবিলের শীর্ষে। এশিয়া কাপ থেকে শুরু করে এবার টি২০ বিশ্বকাপের সব ম্যাচ খেলেও দলকে কিছুই উপহার দিতে পারেননি মুশফিক। উল্টো ভারতের বিপক্ষে চরম হতাশার ও বাংলাদেশের জন্য চিরকালীন অসহনীয় যন্ত্রণার ম্যাচে ১ রানে হারের দিন শেষ ওভারে উইকেট বিলিয়ে এসেছেন! ব্যর্থতার ষোলোকলা সেদিনই পূর্ণ হয়েছে। টানা দীর্ঘদিন সুযোগ পেয়েও সেটা কাজে লাগিয়ে নিজেকে ফিরে পাননি। তবে অপরিহার্য মুশফিক দুর্দান্ত হয়ে ওঠা বাংলাদেশ দলের জন্য অকেজো প্রমাণ হয়ে যাওয়াতেই নির্বাচকরা বিকল্প রাস্তায় হাঁটা শুরু করে দিয়েছেন অনেক আগেই। তরুণ উইকেটরক্ষক ব্যাটসম্যান নুরুল হাসান সোহান এবার বিশ্বকাপ স্কোয়াডে ছিলেন। মুশফিকের টানা ব্যর্থতার পরও সেই সোহানকে খেলানো হয়নি। এর একটাই কারণ, মুশফিক অতীতে যা করেছেন সেটার জন্যই তার ওপর আস্থা রেখেছিল দলের কোচ, অধিনায়ক এবং টিম ম্যানেজমেন্টের অন্যরা। ভয়াবহ বাজে সময়ের মধ্যে দিয়ে যাওয়া মুশফিক যেখান থেকে কোনভাবেই বেরোতে পারেননি। ওয়ানডে ও টি২০ ক্রিকেটে নিজের ব্যর্থতা এবং দলের নৈপুণ্যে উন্নতি করতে না পারায় অধিনায়কত্ব থেকেও অব্যাহতি পেয়েছেন। টেস্ট ক্রিকেটের নেতৃত্ব এখনও আছে। তবে সেখানেও তার বিকল্প খোঁজা শুরু হয়ে গেছে। তরুণ লিটন কুমার দাসকে পরীক্ষা করা হয়েছে। এত কিছুর পরও মুশফিকের সেই পুরনো ধারাবাহিক নির্ভরতাপূর্ণ ব্যাটিং ফিরে আসেনি। ক্রিকেট পরাশক্তিদের ক্ষেত্রে এসব পরিস্থিতিতে দেখা যায় অপরিহার্য ব্যাটসম্যানদেরও বিশ্রাম দিতে। কিন্তু মুশফিকের ক্ষেত্রে সেই চেষ্টাও করা হয়নি। এশিয়া কাপ থেকে শুরু করে মুশফিকের ব্যাটিং চিত্রটা ছিল টেলএন্ডার ব্যাটসম্যানের মতো। সেটা নির্দিষ্ট এক ছন্দে এগিয়ে গেছে। মুশফিকের ব্যাটিং নৈপুণ্যের তালিকাটায় দুই অঙ্কে যাওয়া ইনিংসের সংখ্যাটাও খুব কম! এশিয়া কাপে ভারতের বিপক্ষে ১৬*, আরব আমিরাত ৪, শ্রীলঙ্কা ৪, পাকিস্তান ১২, ভারত ৪ এবং বিশ্বকাপে হল্যান্ডের বিপক্ষে ০, পাকিস্তান ১৮, অস্ট্রেলিয়া ১৫*, ভারত ১১ ও নিউজিল্যান্ড ০। অর্থাৎ ১০ ইনিংসে ১০.৫ গড়ে তার রান মাত্র ৮৪! টি২০ ফরমেটে উন্নয়নশীল একটি দলের নির্ভরযোগ্য ব্যাটসম্যান এত ব্যর্থতার পরেও দলে টিকে থাকাটা কতটা যৌক্তিক সেটাও এখন প্রশ্নের কারণ হয়ে দেখা দেয়। এমনকি এশিয়া কাপ ও বিশ্বকাপের আগেও খুব বড় কোন ইনিংস খেলতে পারেননি তিনি। জিম্বাবুইয়ের বিপক্ষে ৪ ম্যাচের সিরিজে ৫৭। টি২০ ম্যাচে একটিই মাত্র অর্ধশতক হাঁকিয়েছেন ২০১৩ সালের ৬ নবেম্বর নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে ঢাকায়। মোট ৪৯ ইনিংস ব্যাট করেছেন যার মধ্যে ২০ রানের বেশি করতে পেরেছেন ১৩ ইনিংসে! টি২০ ক্যারিয়ারে মুশফিকের রান ১৭.৫৭ গড়ে ৭০৩! অথচ বাংলাদেশের অন্যতম সেরা ব্যাটসম্যান মুশফিক একটা সময় ছিলেন মিস্টার ডিপেন্ডেবল। এখনও তিনি টেস্ট দলের অধিনায়ক। ছিলেন ওয়ানডে ও টি২০ দলের নেতৃত্বেও। ২৮ বছর বয়সী এ মেধাবী ব্যাটসম্যানের কাছ থেকে এখনও বাংলাদেশ ক্রিকেটের অনেক কিছুই পাওয়ার আছে। অবশ্য, এবার তার জন্য দারুণ সুযোগ নিজেকে ফিরে পাওয়ার। কারণ আপাতত আন্তর্জাতিক ক্রিকেটের ব্যস্ততা নেই বাংলাদেশের। আছে ঘরোয়া ক্রিকেট। এখানে খেলেই নিজেকে শুধরে পুরনো রূপে ফেরার মোক্ষম সুযোগ। সেই সুযোগটা অবশ্য ভালভাবেই কাজে লাগাচ্ছেন মুশফিক। এবার মোহামেডানের জার্সি গায়ে এখন পর্যন্ত ৭ ম্যাচের ৬ ইনিংস ব্যাট হাতে নেমেছেন। ১ সেঞ্চুরি ও ২ অর্ধশতক হাঁকিয়ে ৫৫.০০ গড়ে করেছেন ২৭৫ রান! এর মধ্যে টানা তিন ম্যাচে ব্রাদার্স ইউনিয়নের বিপক্ষে ৭২, ভিক্টোরিয়া স্পোর্টিং ক্লাবের বিপক্ষে ১০৪ এবং লিজেন্ডস অব রূপগঞ্জের বিপক্ষে অপরাজিত ৫১ রানের ইনিংস চেহারা দেখাচ্ছিল পুরনো সেই ‘মিস্টার ডিপেন্ডেবল’ মুশফিকেরই। এমন ধারাবাহিকতা ৫০ ওভারের ম্যাচে দেখাতে পারেননি তিনি দীর্ঘ সময়। অবশ্য প্রিমিয়ার লীগ শুরুর মাত্র দুই ম্যাচ আগেই জিম্বাবুইয়ের বিপক্ষে ওয়ানডেতে ১০৭ রানের একটি ইনিংস খেলে নিজেকে ফিরে পাওয়ার ইঙ্গিত দিয়েছিলেন। টেস্ট ও টি২০ ক্রিকেটের চেয়ে তাই এ ফরমেটে কিছুটা ভালই কাটছিল মুশফিকের। মোটামুটি রান করেছেন ঠিকই তবে ধারাবাহিকভাবে দলের অপরিহার্য ব্যাটসম্যান হিসেবে যতটা প্রাপ্তিযোগ থাকার কথা সেটা হয়নি। আর তিন ফরমেট মিলিয়ে সামগ্রিকভাবে ব্যর্থতার চিত্রটা হয়ে উঠেছিল ভয়াবহ। সেই মুশফিকের ব্যাটে এবার রান ফিরে আসাটা তার নিজের জন্যই স্বস্তির। এবার লীগ দিয়েই হয় তো নিজের বাজে সময় কাটিয়ে উঠবেন মুশফিক। প্রিমিয়ার লীগ এখন মাঝপথে। আরও উজ্জ্বলতা ছড়ানোর যথেষ্ট সুযোগ আছে বাংলাদেশ টেস্ট অধিনায়কের।
×