ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

গরিব ঘরে চাঁদের আলো

প্রকাশিত: ০৪:১৫, ১৮ মে ২০১৬

গরিব ঘরে চাঁদের আলো

স্টাফ রিপোর্টার, পঞ্চগড় ॥ অজপাড়াগাঁয়ের গরিব ঘরের হারুন ও আব্দুল বাকী। এরা রিক্সা-ভ্যানচালক ও ক্ষুদ্র কৃষকের সন্তান। অভাব তাদের চিরসঙ্গী। এরপরও তারা দমে থাকেনি। নিজেদের চেষ্টায় সব বাধা পেরিয়ে এ বছর এসএসসিতে জিপিএ-৫ পেয়ে সবাইকে তাক লাগিয়ে দিয়েছে। এখন তাদের স্বপ্ন এগিয়ে চলা। কিন্তু দারিদ্র্য যেন সবকিছুকেই বিলীন করে দিয়েছে। উচ্চশিক্ষা নিয়ে এখন তাদের দুশ্চিন্তায় দিন কাটছে। হারুণ-অর-রশিদ জেলা সদরের দেওয়ানহাট উচ্চ বিদ্যালয় থেকে এসএসসি পরীক্ষায় বিজ্ঞান বিভাগে অংশগ্রহণ করে জিপিএ-৫ পেয়েছে হারুণ-অর-রশিদ। বাড়ি পঞ্চগড় সদর ইউনিয়নের শুড়িভিটা গ্রামে। বাবা ইউসুফ আলী একজন রিক্সা-ভ্যানচালক। মাত্র ৩ শতক জমিতে মাথা গোঁজার ঠাঁই করেছেন তিনি। কোন আবাদী জমি নেই। সারাদিন রিক্সা-ভ্যান চালিয়ে যা আয় হয় তা দিয়েই কোনমতে সংসার চলে। দুই ভাই-বোনের মধ্যে হারুণ বড়। একমাত্র মেয়ে রোকসানা নবম শ্রেণীতে পড়ছে। হারুণের বাবা ইউসুফ জানান, কোন প্রাইভেট না পড়িয়ে আমার ছেলে জিপিএ-৫ পেয়েছে। অভাবের কারণে আমি তাদের লেখাপড়ার খরচ চালাতে পারি না। তার মা হাঁস-মুরগি ও ছাগল পালন করে সন্তানদের লেখাপড়ার খরচ চালায়। হারুণকে উচ্চ মাধ্যমিকে ভর্তি করতে হবে। এখন আমার রিক্সা-ভ্যানটিই একমাত্র সম্বল। ছেলের উচ্চশিক্ষার জন্য বাধ্য হয়ে ভ্যানটি বিক্রয় করে তার ভর্তির খরচ দিতে হবে। আর ভ্যানটি বিক্রয় করলে আমি বেকার হয়ে যাব। আব্দুল বাকী পঞ্চগড় সদর ইউনিয়নের শুড়িভিটা গ্রামের ক্ষুদ্র কৃষক আব্দুল বাতেন। নিজের দুই বিঘার জমির সঙ্গে মানুষের কাছে আরও দুই বিঘা জমি বর্গা নিয়ে কৃষিকাজ করেন। কৃষির আয় দিয়েই ৫ মেয়ে ও ৩ ছেলেকে মানুষ করছেন। বড় ছেলে ও বড় মেয়ের বিয়ে দিয়েছেন। এখন ৪ মেয়ে ও এক ছেলেকে লেখাপড়া করাতে তার ত্রাহি অবস্থা। ৪ মেয়ে সবাই কলেজে পড়ছে। ৮ ছেলেমেয়ের মধ্যে সবার ছোট আব্দুল বাকী এবার দেওয়ান হাট উচ্চ বিদ্যালয় থেকে বিজ্ঞান বিভাগে এসএসসি পরীক্ষায় জিপিএ-৫ পেয়েছে। আব্দুল বাকীর বাবা আব্দুল মতিন জানান, কৃষিতে এখন কী অবস্থা তা সবাই জানে। এভাবেই নিজে খেয়ে না খেয়ে ছেলেমেয়েদের লেখাপড়া শেখাচ্ছি। তাদের লেখাপড়ার খরচ যোগানো আমার পক্ষে অসম্ভব হয়ে পড়েছে। লিমন নিজস্ব সংবাদদাতা, আমতলী, বরগুনা থেকে জানান, বরগুনা আমতলী একে পাইলট মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের কারিগরি শাখা থেকে এসএসসিতে লিমন এ বছর জিপিএ-৫ পেয়েছে। তার অদম্য বাসনা উচ্চশিক্ষা গ্রহণ করে দেশ সেবার জন্য প্রকৌশলী হতে চায়। আমতলী পৌরসভার ৩নং ওয়ার্ডের খোন্তাকাটা গ্রামের হতদরিদ্র রিক্সাচালক মোঃ মোতাহার গাজীর ছেলে লিমন। লেখাপাড়ার ফাঁকে লিমন নিজেও রিক্সা চালিয়ে লেখাপড়ার খরচ উপার্জন করত। সে এ বছর বাংলাদেশ কারিগরি শিক্ষা বোর্ডের আওতায় এসএসসি (ভোকেশনাল) পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করে জিপিএ-৫ পেয়েছে। লিমন ৪ ভাইদের মধ্যে তৃতীয়। লিমনের দিনমজুর বাবা মোতাহার গাজী জানান, ‘মুই গরিব মানু, পোয়ারে ল্যাহাপড়া করাইয়া বড় হরার ক্ষমতা মোর নাই।’ প্রতিভাবান লিমনের স্বপ্ন শুধুই স্বপ্ন হয়ে থাকবে? অঞ্জন স্টাফ রিপোর্টার, কুড়িগ্রাম ॥ বাবা মারা গেছেন দ্বিতীয় শ্রেণীতে পড়ার সময়। যমজ দুই ভাই, বড় দুই বোন ও মাসহ পাঁচজনের সংসার জীবনে তখন কঠিন দুর্যোগ। এ অবস্থায় বড় দুই বোন টিউশনি করে সংসারের হাল ধরার পাশাপাশি তাদের দুই ভাইয়ের লেখাপড়ায় সাহায্য করেছেন। পঞ্চম শ্রেণীতে পড়ার সময় বাম চোখের রেটিনা নষ্ট হওয়ার পর লাগানো হয়েছে নকল রেটিনা। এভাবে অনেক প্রতিকূলতার মধ্যে গোল্ডেন এ প্লাস পেয়ে সবাইকে চমকে দিয়েছে অঞ্জন কুমার দেব। সে চলতি বছর কুড়িগ্রাম সরকারী উচ্চ বিদ্যালয় থেকে বিজ্ঞান বিভাগে গোল্ডেন জিপিএ-৫ পেয়েছে। অঞ্জন পঞ্চম শ্রেণীতেও ট্যালেন্টপুলে বৃত্তি আর জেএসসিতে গোল্ডেন এ প্লাস পায়। মা আলো রাণী দেব বলেন, ‘ছোটবেলা থেকে অনেক কষ্টে লেখাপড়া করেছে অঞ্জন। আমি তার লেখাপড়ার খরচ কিভাবে দেব সে চিন্তা করলে দুই চোখে অন্ধকার দেখি। সমাজে এমন কি কেউ নেই, অঞ্জনের দায়িত্ব নেয়।’
×