ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ১৬ এপ্রিল ২০২৪, ৩ বৈশাখ ১৪৩১

আবাসিক রূপ বদলে গেছে

প্রকাশিত: ০৫:৪৬, ১৬ মে ২০১৬

আবাসিক রূপ বদলে গেছে

রাজন ভট্টাচার্য ॥ ‘কলাবাগান বাসস্ট্যান্ডের পাশেই চার নম্বর প্লটের একটি ভবনের নিচতলার গাড়ি রাখার জায়গায় মরণচাঁদ গ্র্যান্ড সন্স নামের মিষ্টির দোকান। সঙ্গেই লাজ ফার্মা নামের ওষুধের দোকানও রয়েছে। যথাযথ অনুমোদন না থাকায় এসব প্রতিষ্ঠানে উচ্ছেদ অভিযান চালায় রাজউকের ভ্রাম্যমাণ আদালত। পাশেই আরেকটি ভবনের নিচে একটি বিউটি পারলার সিলগালা করে দেয়ার পাশাপাশি কুপারস নামের একটি বেকারি প্রতিষ্ঠান গুঁড়িয়ে দেয়া হয় চার ফেব্রুয়ারি। অভিযানের পর সেখানে গিয়ে দেখা গেছে, প্রতিটি জায়গায় আবারও স্থাপনা গড়ে উঠেছে। একই দৃশ্য দেখা যায় গ্রীন রোড ও পান্থপথের আরও অন্তত ১৫টির বেশি জায়গায়। এই অভিযানগুলো পরিচালনায় যুক্ত ছিলেন রাজউকের জোন-৫ এর অথরাইজড অফিসার এ জেড এম শফিউল হান্নান। তিনি বলেন, ‘এ জায়গাগুলো আমরা আবার উচ্ছেদ করব। উচ্ছেদের পর পরিস্থিতি তদারকের জন্য নতুন পরিকল্পনা করা হচ্ছে। উচ্ছেদ করা জায়গা কেউ আবার দখল করলে তা পুরোপুরি গুঁড়িয়ে দেয়ার নির্দেশ আছে।’ বাস্তবতা হলো কোন রকম নিয়ম নীতির তোয়াক্কা না করে বৃহত্তর ধানম-ি এলাকায় গড়ে উঠেছে এরকম হাজারো স্থাপনা। অভিযান চালিয়েও যা কোনভাবে নিয়ন্ত্রণে নানা সম্ভব হচ্ছে না। নাগরিক যন্ত্রণায় অতিষ্ঠ এলাকার মানুষ। নগরবিদ ও স্থানীয় বাসিন্দাদের অভিযোগ, ধানম-ি আবাসিক এলাকায় নতুন উপদ্রব হলো ইংলিশ মিডিয়াম স্কুল। যত্রতত্র রাতারাতি রাস্তার উপর এসব শিক্ষা প্রতিষ্ঠান হচ্ছে। অর্থের বিনিময়ে এসব প্রতিষ্ঠানগুলো অনুমোদন দেয়ার অভিযোগ তাদের। সুশাসনের অভাবেই এরকম পরিস্থিতি উল্লেখ করে সংশ্লিষ্টরা বলছেন, যত বাঁধাই আসুক প্রয়োজনে আইন পরিবর্তন ও সংশোধন করে সরকারকে এগিয়ে যেতে হবে। যে কোন মূল্যে গড়ে তুলতে হবে বাসযোগ্য নগরী। গবেষণা বলছে, ধানম-িতে শতকরা ৫২ ভাগ ভবন আবাসিক হিসেবে ব্যবহৃত হচ্ছে। এরমধ্যে ৪৮ ভাগ ভবনে গড়ে উঠেছে বিভিন্ন বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠান, অফিস, দোকান ও শপিং মল, যা দিন দিন আরও বৃদ্ধি পাচ্ছে। জরিপে দেখা যায়, ১ হাজার ৫৯২টি ভবনের মধ্যে আবাসিক হিসেবে ব্যবহৃত হচ্ছে ৮২৩টি ভবন। আবাসিক কাম বাণিজ্যিক ৫৩২টি এবং শুধুমাত্র বাণিজ্যিক হিসেবে ব্যবহৃত হচ্ছে ২৩৭টি ভবন। বুয়েটের গবেষণা ॥ উচ্চবিত্তদের বসবাসের জন্য ১৯৫০ সালের শুরুতে পাবলিক ওয়ার্কস ডিপার্টমেন্টের আওতায় ঢাকার ধানম-িকে আবাসিক এলাকা হিসেবে গড়ে তোলার উদ্যোগ নেয়া হয়। তবে সে সময়ের ধানম-ি আর আজকের ধানম-ির মধ্যে আকাশ-পাতাল পার্থক্য। ধানম-ির সেই সবুজ ও খোলামেলা পরিবেশ এখন আর নেই। সবুজ হারিয়ে ধানম-ি এখন এক ধাতব এলাকায় পরিণত হয়েছে। যেখানে চোখে পড়ে সারি সারি সুউচ্চ সব দালান ও যানবাহনের দীর্ঘ জট। আর এ সবই হয়েছে কয়েক বছর ধরে ধানম-িতে লাগাতার বাণিজ্যিক স্থাপনা গড়ে তোলার কারণে। ধানম-ির দ্বিতল বাড়িগুলো নব্বইয়ের দশকের পর সব সুউচ্চ ভবনে রূপ নিতে শুরু করে। আর এ সময়ের মধ্যে প্লট মালিকরা ধানম-ির আবাসিক প্লটগুলো ভাড়াটেদের কাছে ঘরভাড়ার চেয়ে ব্যবসায়িক উদ্দেশ্যে বেশি ভাড়া দেয়া শুরু করেন। কারণ ব্যবসায়িক উদ্দেশ্যে ভাড়া দিলে লাভ বেশি। বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) নগর ও অঞ্চল পরিকল্পনা বিভাগের এক গবেষণায় এ তথ্য উঠে আসে। গত কয়েক বছরের মধ্যে ধানম-ি আবাসিক এলাকায় ব্যাঙের ছাতার মতো গড়ে উঠেছে বেসরকারী বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, হাসপাতাল-ক্লিনিক, বাণিজ্যিক অফিস, ব্যাংক, রেস্টুরেন্ট, বিউটি পার্লার, বিপণিবিতান ইত্যাদি। জানা যায়, ধানম-িজুড়ে গড়ে উঠেছে দুই শতাধিক স্কুল, কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়। ধানম-ির ২ নম্বর থেকে জিগাতলা হয়ে ২৭ নম্বর পর্যন্ত সড়কেই নয়টি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় গড়ে উঠেছে। এ ছাড়া সাত মসজিদ সড়কের পুরোটি এখন ব্যস্থতম বাণিজ্যিক এলাকা। এখানে রেস্টুরেন্ট, হাসপাতাল, শপিং কমপ্লেক্স, ব্যাংকসহ অন্যান্য বাণিজ্যিক ভবন গড়ে উঠেছে। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, মূলত কর্তৃপক্ষের নজরদারির অভাবে ধানম-ি ক্রমেই বাণিজ্যিক এলাকায় পরিণত হচ্ছে। আর অব্যবস্থাপনার কারণে ধানম-িজুড়ে দিন ও রাতে তৈরি হয় দীর্ঘ যানজট। এতে একই সঙ্গে পরিবেশ দূষণ (শব্দ, বায়ু) হচ্ছে। ১৪ মার্চ রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (রাজউক) রাজধানীর বিভিন্ন স্থানে অভিযান চালিয়ে বেশ কয়েকটি স্থাপনা উচ্ছেদ করে। নির্বাহী মেজিস্ট্রেট মোঃ নাসিরউদ্দিন ও অথরাইজড্ অফিসার আ জ ম শফিউল হান্নানের নেতৃত্বে রাজধানীর পান্থপথ এলাকায় উচ্ছেদে অভিযান পরিচালনা করা হয়। পশ্চিম পান্থপথের ‘হক টাওয়ার’ এর চারদিকে সেট ব্যাক না রাখায় এবং আটতলা ভবনের অনুমোদন নিয়ে বারোতলা নির্মাণ করায় ভ্রাম্যাণ আদালত ভবনের মালিককে ৬ লাখ টাকা জরিমানা করে। এ সময় রঙ্গন টাওয়ারের নিচ তলাতে ল’ চেম্বার হিসেবে ব্যবহৃত দু’টি কক্ষ উচ্ছেদ করা হয়। একই সাথে ভবন মালিককে সাড়ে ৩ লাখ টাকা জরিমানা করা হয়। পার্কিং এরিয়াকে বাণিজ্যিক হিসেবে ব্যবহারের জন্য বাংলাদেশ স্পাইনাল এন্ড অর্থোপেডিক হাসপাতাল কর্তৃপক্ষকে ৩ লাখ টাকা জরিমানা করা হয়। উক্ত ভবনের গ্রাউন্ড ফ্লোর ও বেজমেন্টে অপারেশন থিয়েটার, এক্স-রে কক্ষ, স্টোর রুম ও জেনারেটর কক্ষ ছিল। একই এলাকার নির্মাণাধীন আটতলা ভবন স্কাই টাচ টাওয়ারের পার্কিং-এ নির্মিত জেনারেটর রাখার কক্ষ ও গ্রীন জোনে নির্মিত কয়কটি কক্ষ ভেঙ্গে ফেলা হয়। অভিযান চালানো হলেও এর সবকিছুই আগের চেহারায় ফিরিয়ে আনার চেষ্টা চলছে। জানা যায়, আবাসিক এলাকায় অবৈধভাবে গড়ে ওঠা বাণিজ্যিক এলাকার আবাসিক রূপ ফিরিয়ে আনতে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন (ডিএনসিসি) গত বছর বিশেষ উদ্যোগ নেয়। সে সময় সরকারী সিদ্ধান্ত অনুযায়ী আবাসিক এলাকায় সব ধরনের বাণিজ্যিক কার্যক্রম বা ব্যবসা বন্ধ করতে সিটি করপোরেশন নতুন করে ট্রেড লাইন্সেস প্রদান বন্ধ করে। এ জন্য সে সময় যাতে অবৈধরা লাইন্সেস ছাড়া ব্যবসা চালিয়ে যেতে না পারে সে জন্য ভ্রাম্যমাণ আদালতও পরিচালনা করে। বাড়ির মালিকদের আবাসিক কাজ ছাড়া অন্য ব্যবসায়িক কাজে বাড়িভাড়া না দিতে বিশেষভাবে সতর্ক করা হয়। ধানম-ি থেকে সব ধরনের বাণিজ্যিক স্থাপনা সরিয়ে নিতে উচ্চ আদালত ২০১২ সালে রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষকে (রাজউক) নির্দেশ দেন। তবে তা কার্যকর হয়নি। রাজউকের নগর পরিকল্পনা বিভাগের এক কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, অভিজাত এলাকায় যেসব অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদের জন্য রাজউককে নির্দেশ দেয়া হয় তা প্রাতিষ্ঠানিক কিছু দুর্বলতার কারণেই সম্ভব হয় না। বিশেষ করে এ অবৈধ স্থাপনার মালিকরা এতই প্রভাবশালী যে, আমাদের ইন্সপেক্টররা দায়িত্ব পালন করতে গেলে তাদের ক্ষমতার কাছে কিছুই করতে পারেন না। ২০০৭ সালে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সময় আন্তঃমন্ত্রণালয়ের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী ঢাকার আবাসিক এলাকাগুলোকে বসবাসের উপযোগী করার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠানের দাপটে আবাসিক রূপ হারাচ্ছে ধানম-ি ॥ জানা গেছে, ১৯৫২ সালে সুবিশাল পাঁচ শ’ একর জমিতে ১ হাজার ৮৩টি প্লট নিয়ে ‘ধানম-ি’ আবাসিক এলাকা হিসেবে যাত্রা শুরু করে। শুধুমাত্র আবাসিক প্লট হিসেবে ব্যবহারের শর্তে প্রতিটি প্লট ৯৯ বছরের জন্য লিজ দিয়েছিল তৎকালীন সরকার। তবে দীর্ঘ মেয়াদের পরিকল্পনার (মাস্টার প্ল্যান) অভাব, সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের নজরদারির দুর্বলতা এবং বিদ্যমান আইনের কড়াকড়ি প্রয়োগ না থাকায় এলাকাটি দ্রুত গতিতে বাণিজ্যিকে রূপান্তর হয়ে যাচ্ছে। ফলে অভিজাত এলাকা ধানম-ির আবাসিক ঐতিহ্য দিন দিন বিলুপ্তের পথে। ইংরেজী প্রোব নিউজ ম্যাগাজিনের মাঠ পর্যায়ের এক গবেষণায় এমনই তথ্য উঠে এসেছে। গত মে থেকে অক্টোবরে পরিচালিত জরিপটি সম্প্রতি প্রকাশ করা হয়। এতে বলা হয়, একতলা, দোতলা, তিনতলা ভবনগুলো এখন পর্যন্ত একক মালিকানায় রয়েছে। কিছু জমির মালিক নিজেরাই চার, পাঁচ, ছয়তলা ভবন তুলে শরিকদের মধ্যে ভাগাভাগি করে বসবাস করছেন। ধানম-িতে ছয়তলা ভবন রয়েছে সর্বাধিক। ছয়তলা এবং ততোধিক তলাবিশিষ্ট ভবনগুলো যৌথ মালিকানার। অর্থাৎ এসব ভবন ডেভেলপারের মাধ্যমে নির্মাণের পর ফ্ল্যাট অথবা স্পেস হিসেবে বিক্রি করা হয়েছে। এরপর ক্রেতারা কেউ আবাসিক হিসেবে, কেউ বা অফিস হিসেবে, কেউ বা বাণিজ্যিক ভিত্তিতে ফ্ল্যাট/স্পেস ব্যবহার করছে, অথবা ভাড়া দিয়েছে। গবেষণায় প্রাপ্ত তথ্য ॥ ধানম-ি ১ নম্বর সড়ক থেকে ২৭ (পুরাতন) নম্বর পর্যন্ত মোট সড়কের সংখ্যা ৩১টি। এই ৩১টি সড়কে মোট ভবনের সংখ্যা ১ হাজার ৫৯২টি। এর মধ্যে নির্মাণাধীন ভবন ১২০। জরিপে প্রাপ্ত তথ্যানুযায়ী ধানম-িতে বর্তমানে একতলা ভবন রয়েছে ৭৬টি, দোতলা ২৪১টি, তিনতলা ২০০টি, চারতলা ১০৪টি, পাঁচতলা ১২৬টি, ছয়তলা ৬৬৮টি, সাততলা ২৮টি, আটতলা ১৬টি, নয়তলা ২২টি, দশতলা ৪১টি, এগারোতলা ৭টি, বারোতলা ১৪টি, তেরোতলা ২২টি, চৌদ্দতলা ২২টি এবং পনেরো তলা ভবন রয়েছে ৫টি। শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ॥ ধানম-ি এলাকায় বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান এবং শিক্ষা সংশ্লিষ্ট সহযোগী প্রতিষ্ঠান রয়েছে মোট ১৩৩টি। এর মধ্যে স্কুল ৪৮টি, কলেজ ১৪টি, মেডিক্যাল কলেজ ৪টি, ডেন্টাল কলেজ ২টি, বিশ্ববিদ্যালয় ১৬টি, কোচিং সেন্টার ২০টি, ট্রেনিং ইনস্টিটিউট ৮টি, স্টুডেন্ট কনসাল্টেশন সেন্টার ১৭টি এবং ড্রাইভিং ট্রেনিং সেন্টার রয়েছে ৪টি। গোটা এলাকায় স্কুল, কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাস রয়েছে মোট ১৬৮টি। এছাড়াও ধানম-িতে প্রাইভেট হাসপাতাল, ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিক সেন্টার রয়েছে মোট ৯৯টি। এর মধ্যে হাসপাতাল ৩৫টি, ক্লিনিক ২২টি, ডেন্টাল ক্লিনিক ২৮টি এবং ডায়াগনস্টিক সেন্টার রয়েছে ১৪টি। খাবার ও খাবারজাত প্রতিষ্ঠান রয়েছে ২৭৩টি। এর মধ্যে রেস্টুরেন্ট ১২২টি, ফাস্ট ফুড ৮৪টি, মিষ্টির দোকান ৩১টি, বেকারি ২৫টি এবং বিরিয়ানির দোকান রয়েছে ১১টি। শপিং মল, মার্কেট, দোকান ও অন্যান্য ॥ জরিপে প্রাপ্ত তথ্যমতে, ধানম-িতে শপিং মল ও ছোট পরিসরের মার্কেটের সংখ্যা মোট ২২টি। শপিং মল, মার্কেট এবং বিভিন্ন সড়কে অবস্থিত মোট দোকানের সংখ্যা ১ হাজার ৩৬১টি। এর মধ্যে ওষুধের দোকান ৩৩টি, পোশাকের দোকান ৪২০টি, জুতার দোকান ৫৮টি, মোবাইল ফোনের দোকান ১১২টি, দর্জি দোকান ৯৩টি, লন্ড্রি ২৮টি, বুক স্টেশনারি ৪৩টি, সেলুন ২১টি, অন্যান্য দোকান রয়েছে ৪২৮টি। এছাড়া বিউটি পার্লার ৩২টি, ব্যাংকের শাখা ৬২টি, ফিনান্সিয়াল ইনস্টিটিউট রয়েছে ৭টি। কমিউনিটি সেন্টার রয়েছে ১৩টি, আর্ট গ্যালারি ৬টি, পুলিশ স্টেশন ও পুলিশ বক্স ৩টি, ডিপ্লোমেটিক অফিস ৬টি, মসজিদ ৯টি এবং খেলার মাঠ রয়েছে ৫টি। ডেভেলপার প্রতিষ্ঠানের সংখ্যা রয়েছে ১৩১টি। জরিপের বলা হয়, দীর্ঘমেয়াদী পরিকল্পনার অভাব, কর্তৃপক্ষের উদাসীনতা ও আইনের প্রয়োগ না থাকায় এভাবে অচিরেই ঐতিহ্যবাহী আবাসিক এলাকাটি বসবাসের অযোগ্য হয়ে পড়বে। বাণিজ্যিকীকরণের ফলে দুর্ভোগে পড়েছেন অন্তত ৫৭ হাজার অধিবাসী। এরকম বাস্তবতায় ক্ষুব্ধ এলাকাবাসীও। তারাও বিভিন্ন সময়ে আবাসিক ধানম-ির দাবিতে বিভিন্ন কর্মসূচী পালন করে আসছেন। বিভিন্ন সামাজিক ও পেশাজীবী সংগঠনও এগিয়ে এসেছে। এ বিষয়ে দীর্ঘদিন কাজ করছে পরিবেশ বাঁচাও আন্দোলন পবা। সংগঠনের চেয়ারম্যান আবু নাসের খান জনকণ্ঠকে বলেন, শুধু ধানম-ি নয়, গোটা রাজধানীকে বাসযোগ্য করতে আমরা আন্দোলন করে আসছি। আমরা মনে করি রাজনৈতিক স্বদিচ্ছা ও দল-মতের উর্ধে উঠে কাজ করলে ঢাকাকে অনেকটাই পরিকল্পিত নগরী হিসেবে গড়ে তোলা সম্ভব। জানতে চাইলে সাবেক সচিব ও নগর বিশেষজ্ঞ ধীরাজ কুমার নাথ জনকণ্ঠকে বলেন, সুশাসনের অভাবে শহরের মাঝখানে বাঁধাহীনভাবে অনেক স্থাপনা গড়ে উঠেছে। অথচ এর বেশিরভাগের অনুমোদন রয়েছে। কথা হলো, যারা এসব বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠানের অনুমোদন দেন তারা মাঠ পর্যায়ে একবারও গিয়ে চোখের দেখা দেখেন না। দুর্নীতি এমন পর্যায়ে পৌঁছেছে যে, সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা আবাসিক এলাকায় বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠান অনুমোন দেয়ার সময় একবারও ভাবেন না এর ফলাফল কি। আমরা নিজেদের ক্ষতি করছি এই ভাবনাটুকু আসা উচিত বলে মনে করেন তিনি। আবাসিক এলাকায় বাণিজ্যিক স্থাপনা উচ্ছেদে সরকারী সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানিয়ে তিনি বলেন, যতই বাঁধা আসুক প্রয়োজনে আইন পরিবর্তন ও সংশোধন করে সিদ্ধান্ত কার্যকর করতে হবে। অপ্রতিরোধ বাণিজ্যে ও ব্যবসায়ীদের লাগাম টেনে ধরতে হবে। নইলে ঢাকা বাসযোগ্য থাকবে না। যত্রতত্র ইংলিশ মিডিয়াম স্কুল গোটা ধানম-ি এলাকার নতুন উপদ্রব উল্লেখ করে তিনি বলেন, রাস্তার উপর আবাসিক ভবনে এসব প্রতিষ্ঠান হচ্ছে। ফলে যানজটের ভোগান্তি প্রতিদিনের। তিনি বলেন, লন্ডনসহ উন্নত দেশগুলোতে কতটুকু আয়তন শহর থাকবে তা নির্দিষ্ট করা থাকে। এর বাইরে হবে শহরতলি। অর্থাৎ শহরের নিয়ন্ত্রণে নয়, তবে যোগাযোগসহ সব ধরনের নাগরিক সুবিধা নিশ্চিত করার ব্যবস্থা থাকে আশপাশের এলাকাগুলোতে। ঢাকা শহর দিন দিন বাড়ানো হচ্ছে। সেবার মান কমছে। বাড়ছে নাগরিক দুর্ভোগ। এ বিষয়টি চিন্তা করার সময় এসেছে বলেও মনে করেন তিনি।
×