ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১

রিজার্ভের অর্থ উদ্ধারে ফিলিপিন্সের ওপর চাপ সৃষ্টির তাগিদ

প্রকাশিত: ০৫:৪৫, ১৬ মে ২০১৬

রিজার্ভের অর্থ উদ্ধারে ফিলিপিন্সের ওপর চাপ সৃষ্টির তাগিদ

সংসদ রিপোর্টার ॥ বাংলাদেশ ব্যাংকের রিজার্ভের চুরি যাওয়া অর্থ আদায়ে ফিলিপিন্সের ওপর আন্তর্জাতিক চাপ সৃষ্টির সুপারিশ করেছে অর্থ মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটি। এ লক্ষ্যে বাংলাদেশ ব্যাংককে বিশ্ব ব্যাংক ও আইএফএমসহ বিভিন্ন আন্তর্জাতিক প্রভাবশালী সংস্থার সঙ্গে যোগাযোগ করাসহ প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিতে বলেছে কমিটি। অফশোর ইউনিটের মাধ্যমে অর্থ পাচারের অভিযোগ তদন্তে বেসরকারী খাতের ব্যাংক এবি ব্যাংকে কমিটিতে তলব করার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। এছাড়া পানামা কেলেঙ্কারির সঙ্গে জড়িতদের সম্পর্কে বিস্তারিত তথ্য চাওয়া হয়েছে। রবিবার জাতীয় সংসদে অনুষ্ঠিত সংসদীয় কমিটির বৈঠকে এসব বিষয়ে আলোচনা করা হয়। বৈঠকে বাংলাদেশ ব্যাংক জানিয়েছে, রিজার্ভ থেকে চুরি যাওয়া ৮১ মিলিয়ন ডলারের আরও ১৬ মিলিয়ন ডলার ফেরত পাওয়ার আশ্বাস পাওয়া গেছে। ইতোমধ্যে ফেরত পাওয়া গেছে ১৫ দশমিক ২৫ মিলিয়ন ডলার। কমিটি চুরি হওয়ার ঘটনায় বাংলাদেশ ব্যাংকের নিরাপত্তা ব্যবস্থায় ত্রুটি ছিল উল্লেখ করে ভবিষ্যতে এ ধরনের ঘটনা যেন না ঘটে সে বিষয়ে সতর্ক থাকতে পরামর্শ দিয়েছে। বৈঠকে সভাপতিত্ব করেন কমিটির সভাপতি ড. মোঃ আব্দুর রাজ্জাক। এতে অংশ নেন কমিটি সদস্য অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আব্দুল মুহিত, মোঃ আব্দুল ওয়াদুদ, টিপু মুন্সী, ফরহাদ হোসেন, মোস্তাফিজুর রহমান চৌধুরী, এবং আখতার জাহান। এছাড়া বাংলাদেশ ব্যাংকের গবর্নর ফজলে কবিরসহ মন্ত্রণালয় ও সংসদ সচিবালয়ের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা বৈঠকে অংশ নেন। বৈঠকে শেষে কমিটির সভাপতি ড. আব্দুর রাজ্জাক সাংবাদিকদের বলেন, রিজার্ভের অর্থ চুরির ঘটনায় কমিটি নিশ্চিত বাংলাদেশ ব্যাংকের নিরাপত্তা ব্যবস্থায় ত্রুটি ছিল। সেক্ষেত্রে কর্মকর্তাদের গাফিলতি ছিল। ফেডারেল ব্যাংকও চাইলে আরও দ্রুত ব্যবস্থা নিতে পারত। আর ফিলিপিন্সের রিজাল ব্যাংকের টাকা আটকানোর সুযোগ ছিল। কিন্তু তারা সেটা করেনি। তিনি আরও বলেন, কিছু টাকা উদ্ধার হয়েছে। বাকি টাকা উদ্ধারের জন্য আন্তর্জাতিকভাবে ফিলিপিন্সের ওপর চাপ সৃষ্টি করতে হবে। সেক্ষেত্রে বিশ্বব্যাংক, আইএমএফসহ অন্যান্য আন্তর্জাতিক প্রতিষ্ঠানের সহায়তা চাওয়ার পরামর্শ দেয়া হয়েছে। এদিকে বৈঠকে জানানো হয়, চুরি যাওয়া বাকি অর্থ ফেরত পাওয়ার জন্য বাংলাদেশ ব্যাংক চেষ্টা অব্যাহত রেখেছে। কিন্তু বাকি অর্থ কিভাবে আসবে, আদৌ আসবে কিনা সে বিষয়ে সংশয় প্রকাশ করেছেন কমিটির সদস্যরা। কমিটি বিষয়টি নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশের পাশাপাশি দেশের জনগণের কষ্টার্জিত অর্থ ফেরত আনার সর্বাত্মক চেষ্টা অব্যাহত রাখার তাগিদ দিয়েছে। এছাড়া ঘটনায় জড়িতদের খুঁজে বের করে শাস্তির আওতায় আনার জোর সুপারিশ করা হয়েছে। এদিকে সংসদীয় কমিটির বৈঠকে অফশোর ইউনিটের মাধ্যমে অর্থ পাচারের অভিযোগ তদন্তে এবি ব্যাংককে তলবের সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। একইসঙ্গে বৈদেশিক মুদ্রায় পরিচালিত অফশোর ব্যাংকিং-এর সার্বিক ঝুঁকি হ্রাস এবং তুলনামূলকভাবে মুক্ত ও সহজ অফশোর ব্যাকিং সুবিধার সার্বিক সুফল নিশ্চিত করতে বিদ্যমান অফশোর ব্যাকিং নীতিমালা সময়োপযোগী করার জন্য বাংলাদেশ ব্যাংককে উদ্যোগ গ্রহণের জন্য বলা হয়েছে। অফশোর ইউনিট থেকে চার বিদেশী কোম্পানির নামে ৪ কোটি ২৫ লাখ ৪০ হাজার ডলার (বাংলাদেশী টাকায় ৩৪০ কোটি) বের করে নেয়া হয়েছে। ঋণের অর্থ অন্য হিসাবে পাচার করা হয়েছে। অর্থ পাচার হয়েছে সিঙ্গাপুর ও সংযুক্ত আরব আমিরাতে। এই প্রতিষ্ঠান চারটি হলো সংযুক্ত আরব আমিরাতের গ্লোবাল এমই জেনারেল ট্রেডিং ও সেমাট সিটি জেনারেল ট্রেডিং, সিঙ্গাপুরের এটিজেড কমিউনিকেশনস পিটিই লিমিটেড ও ইউরোকারস হোল্ডিংস পিটিই লিমিটেড। এ ঋণের অন্যতম সুবিধাভোগী সাবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রী মোরশেদ খানের মালিকানাধীন প্যাসিফিক মোটরস। তিনি এবি ব্যাংকেরও সাবেক চেয়ারম্যান বলে সংশ্লিষ্টরা জানান। এছাড়া বৈঠকে বাংলাদেশ ব্যাংক জানিয়েছে, পানামা পেপার্স কেলেঙ্কারির ঘটনায় নথিতে নাম থাকা বাংলাদেশীদের বিষয়ে অনুসন্ধান করা হচ্ছে। এ বিষয়ে আগামী বৈঠকে সংসদীয় কমিটি বিস্তারিত তথ্য দিতে বলেছে। উল্লেখ্য, চলতি মাসের শুরুতে পানামা পেপার্স নিয়ে প্রকাশিত একটি তথ্যভা-ারে অন্তত ১৮ বাংলাদেশীর নাম পাওয়া যায়। যারা বিদেশী ঠিকানা ব্যবহার করে শেল কোম্পানির শেয়ার হোল্ডার হয়েছেন। দি ইন্টারন্যাশনাল কনসোর্টিয়াম অব ইনভেস্টিগেটিং জার্নালিস্টস (আইসিআইজে) ফাঁস করা পানামা পেপার্স থেকে দুই লাখের বেশি অফশোর কোম্পানি, ট্রাস্ট ও ফাউন্ডেশনের তথ্য প্রকাশ পায়।
×