ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

মধুমাসে শুরু হলো মধুমেলা

নানা জাতের ফুল থেকে সংগ্রহ, প্রকৃত স্বাদ

প্রকাশিত: ০৫:৪৪, ১৬ মে ২০১৬

নানা জাতের ফুল থেকে সংগ্রহ, প্রকৃত স্বাদ

মোরসালিন মিজান ॥ বাড়তি চাকচিক্য নেই। সাদামাটা উপস্থাপনা। বয়ামগুলোও আর সব বয়ামের মতো। তবে ভেতরে যে মধু রাখা, যারপর নাই মিষ্টি! মধুর প্রকৃত স্বাদটি পাওয়া যায়। ভেজাল নেই একদম। আর দাম? খুব সহনীয়। সব মিলিয়ে মধুমেলা ২০১৬। মধুমাস জ্যৈষ্ঠের একেবারে শুরুতেই শুরু হলো বিশেষ এই আয়োজন। গত কয়েক বছরের ধারাবাহিকতায় মেলার আয়োজন করেছে বাংলাদেশ ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্প কর্পোরেশন বিসিক। মতিঝিলে নিজস্ব ভবনের সামনের খোলা জায়গায় রবিবার এর আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করা হয়। মেলা ঘুরে দেখা যায়, বাইরে মোট ২০টি স্টল। ভেতরের অংশে আরও ৫টি। প্রতিটি স্টলের সামনেই বয়াম ভর্তি মধু। বিসিকের প্রশিক্ষণ নেয়া চাষীরা দেশের বিভিন্ন প্রান্ত ঘুরে মধু সংগ্রহ করেন। বিভিন্ন জাতের ফুল সারা বাংলায়, সেইসব ফুল থেকে সময়মতো মধু সংগ্রহ করেন তারা। তারপর প্রক্রিয়াজাত করে বাজারে ছাড়েন। শতভাগ খাঁটি মধু নিয়েই মধুমেলা। মধুর জাতপাত খুঁজতে গিয়ে পাওয়া গেল কয়েকটি নাম। যে ফুল থেকে সংগ্রহ, সে ফুলের নামে মধুর নামকরণ করা হয়েছে। মেলায় আছে লিচু, সরিষা, কালোজিরা ও বরইয়ের ফুল থেকে সংগ্রহ করা মধু। চাষীদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, লিচু ফুলের মধু সংগ্রহ করা হয় লিচু প্রধান অঞ্চলগুলো থেকে। রাজশাহী, দিনাজপুর, গাজীপুর, পাবনাসহ কয়েকটি এলাকায় ফুলের মৌসুমে ছুটে যান চাষীরা। সরিষা ভাল হয় মানিকগঞ্জ, সিরাজগঞ্জ, টাঙ্গাইল এলাকায়। এসব এলাকা থকে সরিষা ফুলের মধু সংগ্রহ করা হয়। ধনিয়া বা কালোজিরার ফুলের মধু সংগ্রহ করা হয় মাদারীপুর, শরীয়তপুর, ফরিদপুর এলাকা থেকে। সবচেয়ে বেশি চাহিদা সুন্দরবনের মধুর। ম্যানগ্রোব বনের খলিসা, গড়ান, কেওড়া, পাইন ইত্যাদি ফুল থেকে সংগ্রহ করা মধু আছে বেশ কয়েকটি স্টলে। মেলায় কথা হয় মৌ চাষী বজলুর রহমানের সঙ্গে। জনকণ্ঠকে তিনি বলেন, এটা এখন আমার পেশা। পেশার প্রতি সৎ ও আন্তরিক থেকে কাজ করছি। মধু ঋতুতে জামালপুর ধামরাই চলে যাই। সেসব স্থান থেকে সরিষা ফুলের মধু সংগ্রহ করি। মাদারীপুর থেকে সংগ্রহ করি কালোজিরা ও ধনিয়া ফুলের মধু। আর লিচু ফুলের মধু সংগ্রহ করি সোনারগাঁ থেকে। প্রক্রিয়াজাত করে নিয়ে মেলায় নিয়ে এসেছি। এর চেয়ে খাঁটি মধু হয় না, জোর দিয়েই বলেন তিনি। নারী উদ্যোক্তারাও এসেছেন মেলায়। তাদের একজন সালেহা খাতুন। টেবিলে সাজিয়ে রাখা বয়াম দেখিয়ে তিনি বলেন, মোট সাত জাতের মধু আছে আমার স্টলে। কয়েকটি ফুলের মধু একত্রিক করে নতুন স্বাদ দেয়ার চেষ্টা করেছি। বরই ফুল থেকেও সংগ্রহ করেছি মধু। এভাবে বিভিন্ন ফুল থেকে সংগ্রহ করা মধু একবার মুখে নিলে, বার বার কিনতে হবে বলে জানান আত্মবিশ্বাসী উদ্যোক্তা। প্রকৃত মধু হলেও দাম অপেক্ষাকৃত কম বলে মনে হয়েছে। আদা কেজি সরিষা ফুলের মধু ১৫০ থেকে ২০০ টাকায়, একই পরিমাণ লিচু ফুলের মধু ১৭০ থেকে ২৫০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। আগেই বলা হয়েছে, চাহিদা বেশি সুন্দরবনের মধুর। দামও তাই একটু বেশি। আদা কেজি মধু বিক্রি হচ্ছে ২০০ থেকে ৩০০ টাকায়। এমনকি বিনা টাকায় দু’-এক চামচ মধু খেয়ে ফেলা যাচ্ছে। পছন্দ হলে তবেই কেনা! প্রথম দিন মেলা উদ্বোধন করতে এসেছিলেন শিল্প সচিব মোশারফ হোসেন ভূঁইয়া। বেশ মুগ্ধ মনে হলো তাঁকেও। বললেন, এই মধুর সঙ্গে পরিচিত তিনি। নিজে কিনে খান। বাইরের মধুর যে স্বাদ তা থেকে দেশে উৎপাদিত মধুর স্বাদ সম্পূর্ণ আলাদা। মৌ চাষের সম্ভাবনার কথা তুলে ধরে তিনি বলেন, বিসিক চাষীদের নানাভাবে সাহায্য সহায়তা করে আসছে। এ সংক্রান্ত যে প্রকল্প চালু আছে, সেটির মেয়াদ আরও বৃদ্ধিরও আশ্বাস দেন তিনি। সেইসঙ্গে কোন চাষী যেন লোভে পড়ে কখনও মধুতে ভেজাল না মেশান সেদিকে সকলকে লক্ষ্য রাখার পরামর্শ দেন তিনি। অনুষ্ঠানে অন্যান্যের মধ্যে বিসিকের চেয়ারম্যান হজরত আলী উপস্থিত ছিলেন। পাঁচ দিনব্যাপী মেলা শুক্রবার পর্যন্ত চলবে।
×