ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

প্রিমিয়ার ক্রিকেট লীগ ॥ কলাবাগান কেসির কাছে শেখ জামালের হার, জিতল ব্রাদার্স ও গাজী গ্রুপ

দ্রুততম শতকের রেকর্ড মাশরাফির

প্রকাশিত: ০৬:৩৫, ১৫ মে ২০১৬

দ্রুততম শতকের রেকর্ড মাশরাফির

স্পোর্টস রিপোর্টার ॥ একের পর এক ম্যাচ হারলে কি আর অধিনায়কের ভাল লাগে। মনে জেদ ধরে যায়। সেই জেদ থেকেই কিনা কলাবাগান ক্রীড়া চক্রের (কেসি) অধিনায়ক মাশরাফি বিন মর্তুজা ব্যাটিংটাও করে দেখালেন। ব্যাটসম্যানদের বুঝিয়ে দিলেন, চাইলে তিনিও পারেন। তাও আবার ‘যেন-তেনভাবে শতক! বাংলাদেশের ঘরোয়া ক্রিকেটে সবচেয়ে কম বলে শতক করলেন। একের পর এক ছক্কা হাঁকালেন। ৫০ বলে শতক করে দ্রুততম শতকের রেকর্ডও গড়লেন মাশরাফি। ৫১ বলে ২ চার ও ১১ ছক্কায় ১০৪ রান করে কলাবাগান কেসিকে দ্বিতীয় জয়ও এনে দিলেন। শেখ জামালকে ২১ রানে হারাল কলাবাগান কেসি। ক্রিকেট কোচিং স্কুলকে (সিসিএস) যে ব্রাদার্স হারাবে তা অনুমিতই ছিল। তাই ঘটল। শাহরিয়ার নাফীসের শতকে ৩৮ রানে জিতল ব্রাদার্স। কলাবাগান ক্রিকেট একাডেমি (সিএ) আবারও হারল। এবার গাজী গ্রুপের কাছে ৮ উইকেটের বড় ব্যবধানে হার হলো কলাবাগান সিএ’র। গাজী গ্রুপের অলক কাপালী একাই ৫ উইকেট তুলে নিলেন। মাশরাফির ঝড়ো ইনিংসে বাজিমাত কলাবাগান কেসির প্রথম শ্রেণীর ক্রিকেটে একটি শতক রয়েছে মাশরাফির। তবে লিস্ট এ ম্যাচে কেন, আর কোন ফরমেটের খেলাতেই শনিবারের আগে কোন শতক ছিল না। ক্যারিয়ারের আরেকটি শতক যুক্ত হলো। লিস্ট এ ম্যাচে প্রথম শতক করলেন। সেই শতকটিই কিনা আবার দ্রুততম শতকের রেকর্ড গড়েই হলো। ছক্কার ঝড় এনে হলো। ফতুল্লার খান সাহেব ওসমান আলী স্টেডিয়ামে কলাবাগান কেসির ইনিংস শেষ হতেই আসলে ম্যাচ শেষ হয়ে যায় বলা চলে। মাশরাফির দ্রুততম শতকে যে কলাবাগান কেসি ৫০ ওভারে ৭ উইকেট হারিয়ে ৩১৬ রান করে ফেলে। কলাবাগান কেসির ইনিংস শেষ হওয়ার পর আর ম্যাচ নিয়ে যেন কোন আলোচনাই নেই। শুধু ‘মাশরাফি, মাশরাফি’ সবার মুখে। কি দুর্দান্ত ব্যাটিং করলেন! এমন আশ্চর্য ভঙ্গি সবার মুখে! এরপর শেখ জামালও তিনশ রানের কাছাকাছি চলে যায়। তবে মাশরাফির এমন দানবীয় ইনিংসের পর আসলে শেখ জামালের ইনিংস কতদূর গেল, তা নিয়ে তেমন আলোচনা জোগাতে পারেনি। ৫০ ওভারে ২৯৫ রান করতেই অলআউটও হয়ে যায় শেখ জামাল। দলের পক্ষে জাবিদ হাসান সর্বোচ্চ অপরাজিত ৫১ রান করতে সক্ষম হন। কিন্তু শেখ জামালের কে কত রান করল, তা নিয়ে আর কারও মাথাব্যথা থাকার কথাই না। মাশরাফি যে দ্রুততম শতকটি করে আলোড়ন জাগিয়ে দিয়েছেন। শাহরিয়ারের শতকে ব্রাদার্সের জয় মিরপুর শেরেবাংলা স্টেডিয়ামে শাহরিয়ার নাফীস ব্যাটিং ঝলক দেখালেন। গত ম্যাচেই অপরাজিত ৮৪ রানের ইনিংস খেলেন। এবার শতকই করে ফেলেন। সিসিএসের বিপক্ষে ১৪৭ বলে ১৪ চার ও ৫ ছক্কায় ১৩৪ রান করেন শাহরিয়ার। তার এ শতকে সহজেই ম্যাচ জিতে নেয় ব্রাদার্স। আগে ব্যাট করে শাহরিয়ারের শতকে ৬ উইকেট হারিয়ে ৫০ ওভারে ২৫৩ রান করে ব্রাদার্স। জবাব দিতে নেমে ৪৭.২ ওভারে ২১৫ রান করতেই অলআউট হয়ে যায় সিসিএস। তবে সাইফ হাসান (৮৬) ও সালমান হোসেন (৬৮) দুর্দান্ত ব্যাটিং করেন। তাদের দুজনের অর্ধশতকে ও দুইজন মিলে যে তৃতীয় উইকেটে ১৩৯ রানের জুটি গড়েন; তাতেই এতদূর যায় সিসিএস। না হলে আরও আগেই গুটিয়ে যেত। কাপালীর ঝলক, শুভর আফসোস বিকেএসপিতে কি দারুণ বোলিংই না করলেন গাজী গ্রুপের অলক কাপালী। একাই ৫ উইকেট তুলে নিলেন। তাতে করে কলাবাগান সিএ দলটিও ৪৭.৩ ওভারে ১৮৬ রানের বেশি করতে পারল না। অলআউট হয়ে গেল। এরপর একই দলের ওপেনার শামসুর রহমান শুভও অসাধারণ ব্যাটিং করলেন। ৯৫ রান করে ফেলেন। জিততে যখন ১ রানের দরকার, তার শতক হতে লাগে ছক্কা। সেই ছক্কাই হাঁকালেন শুভ। ১০১ রান হলো। শতকও হলো। কিন্তু ক্রিকেট আইনের মারপ্যাঁচে সেই শতকটি আর হলো না। বলটি যে ‘নো’ হয়ে গেছে। ক্রিকেট আইন অনুযায়ী, বোলার বল ছোড়ার পর আম্পায়ার যদি নো ডেকে দেন। সেই ‘নো’ সবার আগে রানের খাতায় যুক্ত হয়ে যায়। যদি জিততে ১ রান লাগে, সেটি ‘নো’ থেকেই সবার আগে যুক্ত হয়। তাই জিততে ১ রান লাগার মুহূর্তে ‘নো’ ডাকার পর যাই ঘটুক, যত রানই সেই বল থেকে আসুক; আর গণ্য হয় না। তাতে করে শুভকে আফসোসেই পুড়তে হয়। ছক্কা মেরে শতক করার পরও যে অপরাজিত ৯৫ রানেই থাকতে হয় শুভকে। তবে আনন্দও আছে সাথে। তার এ রানেই যে ৪০.২ ওভারে ২ উইকেট হারিয়ে ১৮৭ রান করে গাজী গ্রুপ। জয়ও আসে বড় ব্যবধানেই। স্কোর ॥ কলাবাগান কেসি-শেখ জামাল ম্যাচ- কলাবাগান কেসি ইনিংস ৩১৬/৭; ৫০ ওভার (মাশরাফি ১০৪, জসিমুদ্দিন ৬৪, মাসাকাদজা ৪৫; সোহাগ ২/৩৯)। শেখ জামাল ইনিংস ২৯৫/১০; ৫০ ওভার (জাবিদ ৫২*, মুক্তার ৫১, সোহাগ ৪৭, মামুন ৪০; মাসাকাদজা ৪/৩৭)। ফল ॥ কলাবাগান কেসি ২১ রানে জয়ী। ম্যাচসেরা ॥ মাশরাফি বিন মর্তুজা (কলাবাগান কেসি)। ব্রাদার্স-সিসিএস ম্যাচ- ব্রাদার্স ইনিংস ২৫৩/৬; ৫০ ওভার (শাহরিয়ার ১৩৪, ইমরুল ৪৯, জাকির ২৯; শাওন ৪/৪৫)। সিসিএস ইনিংস ২১৫/১০; ৪৭.২ ওভার (সাইফ ৮৬, সালমান ৬৮, রাজিন ২৬; মিলিন্দ ২/২৭)। ফল ॥ ব্রাদার্স ৩৮ রানে জয়ী। ম্যাচসেরা ॥ শাহরিয়ার নাফীস (ব্রাদার্স)। গাজী গ্রুপ-কলাবাগান সিএ কলাবাগান সিএ ইনিংস ১৮৬/১০; ৪৭.৩ ওভার (সাকসেনা ৪৪, মাহমুদুল ৪১, নুরুজ্জামান ২৫; কাপালী ৫/৪৪)। গাজী গ্রুপ ইনিংস ১৮৭/২; ৪০.২ ওভার (শুভ ৯৫*, মেহেদী ৩৯, বিজয় ২৯, সাঈদ আনোয়ার জুনিয়র ১৮*)। ফল ॥ গাজী গ্রুপ ৮ উইকেটে জয়ী। ম্যাচসেরা ॥ অলক কাপালী (গাজী গ্রুপ)।
×