ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

পাকিস্তান ও তুরস্ক বিপক্ষে অবস্থান নিয়ে সরকারকে চাপে ফেলতে চাইলেও সেটা আর সম্ভব হচ্ছে না ;###;তুরস্কের রাষ্ট্রদূত প্রত্যাহার নিয়েও ধূম্রজাল সৃষ্টি

মার্কিন-ভারত সমর্থন

প্রকাশিত: ০৫:৫৫, ১৪ মে ২০১৬

মার্কিন-ভারত সমর্থন

কূটনৈতিক রিপোর্টার ॥ ১৯৭১ সালের যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের বিরুদ্ধে পাকিস্তান ও তুরস্ক অবস্থান নিলেও এই বিচারের পক্ষে অবস্থান নিয়েছে প্রভাবশালী দেশ মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও ভারত। সন্ত্রাস ও জঙ্গীবাদের পাশাপাশি যুদ্ধাপরাধের বিচারের পক্ষে বরাবরই মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও ভারত একই অবস্থান নিয়েছে। এদিকে ঢাকা থেকে তুরস্কের রাষ্ট্রদূত প্রত্যাহার নিয়ে ধূম্রজাল সৃষ্টি হয়েছে। ঢাকায় তুরস্ক দূতাবাসের ওয়েবসাইটে এখনও ডেভরিম ওসতুর্ককে রাষ্ট্রদূত হিসেবে অভিহিত করা হচ্ছে। সূত্র জানায়, বাংলাদেশে যুদ্ধাপরাধ বিচার প্রক্রিয়া শুরুর পর থেকেই এই বিচারের পক্ষে বিশ্বের প্রভাবশালী প্রায় প্রতিটি দেশেরই সমর্থন রয়েছে। বিশেষ করে প্রভাবশালী দেশ হিসেবে পরিচিত মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, ভারত, যুক্তরাজ্যসহ বিভিন্ন দেশ বাংলাদেশের যুদ্ধাপরাধ বিচারের পক্ষেই অবস্থান নিয়েছে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র বলে আসছে, এই বিচারের প্রতি তাদের সমর্থন রয়েছে। তবে এই বিচার নিরপেক্ষভাবে সম্পন্ন হওয়াটাকে প্রত্যাশা করে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র। জামায়াতে ইসলামীর আমির মতিউর রহমান নিজামীর ফাঁসির আগে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের মধ্য ও দক্ষিণ এশিয়া বিষয়ক সহকারী পররাষ্ট্র মন্ত্রী নিশা দেশাই ঢাকা সফর করেন। আর নিজামীর ফাঁসির পরদিনই ঢাকা সফরে আসেন ভারতের পররাষ্ট্র সচিব ড. এস জয়শঙ্কর। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও ভারতের এই শীর্ষ পর্যায়ের দুই কূটনীতিক ঢাকা সফরের সময় নিজামীর ফাঁসির বিষয়টিও পর্যবেক্ষণ করেছেন। নিজামীর ফাঁসি নিয়ে এই দুই কূটনীতিকের সঙ্গে সরকারের শীর্ষ পর্যায়ে আলোচনাও হয়েছে। যুদ্ধাপরাধের বিচার নিয়ে তাদের সমর্থনও ব্যক্ত করেছেন। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও ভারতের দুই কূটনীতিকের ঢাকা সফরের সময় সন্ত্রাস ও জঙ্গী প্রতিরোধের বিষয়টিই ছিল মুখ্য। দুই দেশই জঙ্গীবাদ প্রতিরোধে বাংলাদেশের পাশে থাকবে। দুই দেশই এ বিষয়ে বাংলাদেশকে সব ধরনের সহযোগিতা দেবে বলে জানিয়েছে। তবে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও ভারত যুদ্ধাপরাধের বিচারেও সমর্থন দিয়ে আসছে। সে কারণে তুরস্ক ও পাকিস্তান যুদ্ধাপরাধ বিচার নিয়ে সরকারকে চাপে ফেলতে চাইলেও সেটা আর সম্ভব হচ্ছে না। তুরস্ক ও পাকিস্তান যখন একই সুরে বাংলাদেশের যুদ্ধাপরাধ বিচারের বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েছে, তখন প্রকাশ্যেই যুদ্ধাপরাধের বিচারের বিষয়ে সমর্থন প্রকাশ করেছে ভারত। বৃহস্পতিবার রাতে দেশটির পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র বিকাশ স্বরূপ বলেছেন, ‘যুদ্ধাপরাধের বিচার বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ ইস্যু। এতে ব্যাপক জনসমর্থন রয়েছে। ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধের সময় সংঘটিত যুদ্ধাপরাধের ঝুলে থাকা বিচার প্রক্রিয়ায় ভারতেরও সমর্থন আছে।’ নিজামীর ফাঁসির পর যখন যুদ্ধাপরাধ বিচার নিয়ে পরিস্থিতি উত্তপ্ত করার চেষ্টা চলছে, ঠিক তখনই ভারত এ বিষয়ে প্রকাশ্যে তাদের অবস্থান প্রকাশ করলো। এদিকে ঢাকা থেকে তুরস্কের রাষ্ট্রদূত প্রত্যাহার নিয়ে ধূম্রজাল সৃষ্টি হয়েছে। ঢাকার তুরস্ক দূতাবাসের ওয়েবসাইটে এখনও ডেভরিম ওসতুর্ককে রাষ্ট্রদূত হিসেবে অভিহিত করা হচ্ছে। শুক্রবার ঢাকার তুরস্ক দূতাবাসের ওয়েবসাইটে গিয়ে দেখা যায়, সেখানে ডেভরিম ওসতুর্ককে ঢাকায় নিযুক্ত রাষ্ট্রদূত হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে। পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের একজন কর্মকর্তা জনকণ্ঠকে বলেন, তুরস্ক রাষ্ট্রদূত প্রত্যাহার করলে প্রকাশ্যেই ঘোষণা দিত। ওয়েবসাইট থেকে তার নামও সরিয়ে নিত। তবে সেটা করেনি। এছাড়া তুরস্ক আনুষ্ঠানিকভাবে এ বিষয়ে বাংলাদেশকে এখনও কিছু জানায়নি। সূত্র জানায়, যুদ্ধাপরাধের বিচার নিয়ে বর্তমান অবস্থা আরও ভালভাবে বোঝার জন্য ঢাকায় নিযুক্ত দেশটির রাষ্ট্রদূতকে ডেকে পাঠিয়েছে আঙ্কারা। তিনি বাংলাদেশের পরিস্থিতি সেখানে আলোচনা করবেন। তাকে ডেকে পাঠালেও প্রত্যাহারের বিষয়টি এখনও স্পষ্ট নয়। কেননা কোনও দেশের রাষ্ট্রদূতকে প্রত্যাহার করে নিলে সে দেশকে জানিয়েই প্রত্যাহার করা হয়। তবে রাষ্ট্রদূত প্রত্যাহারের বিষয়ে তুরস্ক এখনও আনুষ্ঠানিকভাবে সরকারকে জানায়নি। এদিকে নিজামীর ফাঁসি নিয়ে তুরস্ক সরকারের দেয়া বিবৃতি ঢাকার তুরস্ক দূতবাসের ওয়েবসাইটেও প্রকাশ করা হয়েছে। সেখানে নিজামীর ফাঁসির খবরে গভীর দুঃখ প্রকাশ করে উল্লেখ করা হয়, তার এ ধরনের শাস্তি প্রাপ্য ছিল বলে তুরস্ক মনে করে না। যুদ্ধাপরাধ ট্রাইব্যুনালে দ-িতদের ফাঁসি কার্যকর ঠেকাতে গত তিন বছরে বার বার বাংলাদেশের প্রতি আহ্বান জানানোর বিষয়টি তুলে ধরে বিবৃতিতে বলা হয়, তুরস্ক মনে করে, এ ধরনের পদ্ধতিতে অতীতের ক্ষত নিরাময় সম্ভব নয়, বরং তা আমাদের বাংলাদেশী ভাইদের মধ্যে ঘৃণা ও শত্রুতা আরও বাড়িয়ে দেবে। যুদ্ধাপরাধ বিচারের শুরু থেকেই পাকিস্তান ও তুরস্ক এই বিচারের বিরুদ্ধে অবস্থান নেয়। বিশেষ করে পাকিস্তান ও বাংলাদেশের জামায়াতে ইসলামীর সঙ্গে তুরস্কের ক্ষমতাসীন জাস্টিস ও ডেভেলপমেন্ট পার্টির (একে) গভীর সম্পর্কের কারণেই দেশটি এই অবস্থান নেয়। তবে তুরস্ক সরকারের এই অবস্থানের সঙ্গে দেশটির সাধারণ জনগণের কোন সম্পর্ক নেই। তুরস্কের সাধারণ জনগণ বাংলাদেশের যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের পক্ষেই রয়েছেন। তুরস্কের সংবিধান ধর্মনিরেপক্ষ হলেও ক্ষমতাসীন একে পার্টি তা লঙ্ঘন করেছে। এই পার্টিকে নিষিদ্ধ করার জন্য আদালতে ইতোমধ্যে মামলাও হয়েছে। একে পার্টি তুরস্কে প্রতিক্রিয়াশীল রাজনৈতিক দল হিসেবে পরিচিত। আর এই রাজনৈতিক দলটির সঙ্গে পাকিস্তান ও বাংলাদেশের জামায়াতে ইসলামীর গভীর সম্পর্ক রয়েছে। এর আগে বাংলাদেশে যুদ্ধাপরাধ বিচার শুরু হলে তুরস্ক থেকে একটি আইনজীবী প্রতিনিধি দলও ঢাকায় এসেছিল। তবে অন এ্যারাইভাল ভিসা নীতি লঙ্ঘন করায় তাদের ঢাকা থেকে তুরস্কে ফেরত পাঠানো হয়। যুদ্ধাপরাধের অভিযোগে জামায়াত নেতা গোলাম আযমের বিচার প্রক্রিয়া শুরু হলে এই বিচার প্রক্রিয়া বন্ধ করতে তুরস্ক আনুষ্ঠানিকভাবে চিঠি দিয়েছিল। এছাড়া ২০১১ সালে সাবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রী দীপু মনির সঙ্গে পররাষ্ট্রমন্ত্রীর এক বৈঠকেও যুদ্ধাপরাধ বিচার বন্ধ করার জন্য আহ্বান জানিয়েছিল দেশটি। তবে বাংলাদেশ তার অবস্থান থেকে সরে আসবে না বলেও তুরস্ককে জানানো হয়েছিল।
×