ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ১৯ মার্চ ২০২৪, ৫ চৈত্র ১৪৩০

শোকের দিন আজ

মুন্সীগঞ্জে ১৪ জনকে ব্রাশফায়ারে হত্যা

প্রকাশিত: ০৪:২৪, ১৪ মে ২০১৬

মুন্সীগঞ্জে ১৪ জনকে ব্রাশফায়ারে  হত্যা

মীর নাসিরউদ্দিন উজ্জ্বল, মুন্সীগঞ্জ ॥ মুন্সীগঞ্জবাসীর শোকের দিন আজ ১৪ মে। ১৯৭১ সালের এই দিনে বুদ্ধিজীবীসহ ২২ জনকে ধরে নিয়ে যায় পাক বাহিনী। ১৬ জনকে লাইনে দাঁড় করিয়ে ব্রাশফায়ার করে। ঘটনাস্থলেই মারা যান ১৪ জন। কিন্তু ক্ষতিগ্রস্ত সেই পরিবারেগুলো কেমন আছেন? বেঁচে যাওয়া শহীদ পরিবারের সদস্য মুক্তিযোদ্ধা সুভাষ চন্দ্র সাহার সার্টিফিকেট নিয়ে বিড়ম্বনা। ভাতা পাচ্ছেন না, ওষুধ কেনার টাকা নেই। চারজনের পরিবার এখন কষ্টে দিনাতিপাত করছে। অথচ মুক্তিযুদ্ধের সময় স্নাতকের ছাত্র জনাব সাহা জীবনবাজি রেখে পাকি পতাকা পুড়িয়ে স্বাধীন বাংলার পতাকা উড়ান করেন মুন্সীগঞ্জ থানায়। জীবনবাজি রেখে দেশকে মুক্ত করতে অবদান রাখেন। মুক্তিযুদ্ধে তার বড় দুই ভাই এবং পিতাকে হারিয়েছেন। তিনি বেঁচে থাকলেও জীবন উৎসর্গ করেছেন মানবকল্যাণে। এখন বয়সের ভারে নুব্জ। কিন্তু তাঁর নানান কষ্ট এখন জগ¦দল পাথরের মতো চেপে ধরেছে। মুন্সীগঞ্জ শহর থেকে ৬ কিলোমিটার দূরে মহাকালী ইউপির কেওয়ার চৌধুরী বাজারের গ্রামের চৌধুরী বাড়িটি ভোর ৪টায় ঘিরে ফেরে পাকিবাহিনী। বিশাল বাড়িটি ৭০ সদস্যের পাকবাহিনী ও রাজাকার অবস্থান নেয়। চিরুনি অভিযান চালিয়ে হিন্দু সম্প্রদায়ের ২২ পুরুষকে ধরে নিয়ে যায়। পৌন এক কিলোমিটার দূরের সাতানিখিল খালের পাশে সকাল ৮টায় ১৬ জনকে লাইনে দাঁড় করিয়ে ব্রাশফায়ার করে। ঘটনাস্থলেই ১৪ জন শহীদ হন। গুলিবিদ্ধ অবস্থায় ভাগ্যক্রমে বেঁচে যান জিতু ভৌমিকসহ দুজন। বাকি ৬ জনের মধ্যে আইনজীবী কেদারেশ্বর চৌধুরী ও চিকিৎসক ডা. সুরেন্দ্র চন্দ্র সাহাকে নিয়ে আসে হরগঙ্গা কলেজের পাক বাহিনীর ক্যাম্পে। অমানুষিক নির্যাতন করে এ ক্যাম্পে হত্যার পর লাশ পাশের বিলে ফেলে রাখে। লাশটি দেখতে যাওয়ায় আরও দুই রিক্সাচালককে হত্যা করে হানাদাররা। আইনজীবী কেদারেশ্বর চৌধুরীকে ক্যাম্প থেকে প্রথমে ছেড়ে দিলেও পরে আবার ধরে এনে হত্যা করে। বাকি চারজন ভাগ্যক্রমে রক্ষা পান। এদের মধ্যে হিন্দু সম্প্রদায়ের যুবক চন্দন মুসলমান বলে নিজেকে রক্ষা করেন। বাকি আরও ৩ জন রক্ষা পান নানা কৌশলে। এ ঘটনায় পিতা চিকৎসক ডা. সুরেন্দ্র চন্দ্র সাহা ও দুই ভাই শিক্ষক সুনীল কুমার সাহা ও শিক্ষক অজয় কুমার সাহাকে হারিয়ে শোকে পাথর সুভাষ চন্দ্র সাহা। তিনি কান্না জড়িত কণ্ঠে বলেন, আমার দাবি শহীদ বুদ্ধিজীবীদের স্মরণে স্মৃতিস্তম্ভ করা হোক, মর্যাদা দেয়া হোক শহীদ বুদ্ধিজীবীর। তিনি সেই দিনের স্মৃতি বলতে গিয়ে কান্নায় ভেঙ্গে পড়েন। তার বর্তমান অবস্থার বিবরণ দিয়ে বলেন, আগে ভাতা পেতেন এখন রহস্যজনক কারণে তাও বন্ধ। অস্ত্র জমার কাগজ এবং যাবতীয় কাগজাদি থাকা সত্ত্বেও পুনঃনিবন্ধন করার পরও পাচ্ছেন না মুক্তিযুদ্ধের সনদ। তার অবর্ণনীয় কষ্টের কথা কথা উল্লেখ করে বলেন, তারপরও ভাল লাগছে যুদ্ধাপরাধীদের বিচার দেখে যেতে পারছেন। তিনি বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের সোনার বাংলা দেখে যেতে চান।
×