ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ১৮ এপ্রিল ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪৩১

ব্রাজিলে সঙ্কট ঘনীভূত হচ্ছে

প্রকাশিত: ০৩:৪৫, ১৪ মে ২০১৬

ব্রাজিলে সঙ্কট ঘনীভূত হচ্ছে

ব্রাজিলে সিনেটররা প্রেসিডেন্ট দিলমা রুসেফকে আর্থিক অপকৌশল অবলম্বনের অভিযোগে বিচারে দাঁড় করানোর পক্ষে ব্যাপক সংখ্যাগরিষ্ঠ। ভোট দেয়ার কয়েক ঘণ্টা পর রুসেফ তাকে ইমপিচ করার এ প্রয়াসকে অভ্যুত্থান বলে নিন্দা জানান। রুসেফ বলেন, আমি ভুল করে থাকতে পারি, কিন্তু আমি কখনও অপরাধ করিনি। বিষয়টি বিতর্কিত, কিন্তু রুসেফকে ক্ষমতাচ্যুত করতে চাচ্ছেন এমন রাজনীতিকদের অভিসন্ধি ও নৈতিক কর্তৃত্ব নিয়ে প্রশ্ন তোলার অধিকার তার রয়েছে। রুসেফ ২০১৪ সালে চার বছরের জন্য পুনঃনির্বাচিত হন। কিন্তু তিনি ব্যক্তিগত স্বার্থে তার ক্ষমতার অপব্যবহার করেছিলেন বলে কোন প্রমাণ নেই। আর তাকে হটাতে সহযোগিতা করছেন এমন রাজনীতিকদের অনেকেই এক বড় ধরনের ঘুষ লেনদেনের ঘটনা ও অন্যান্য কেলেঙ্কারিতে জড়িত বলে অভিযোগ রয়েছে। ব্রাজিলের সুপ্রীমকোর্ট গত সপ্তাহে রুলিং দেয় যে, রুসেফকে ক্ষমতা থেকে সরানোর চেষ্টায় নেতৃত্বদানকারী প্রবীণ আইন প্রণেতা এদুয়ার্দো কুবাকে দুর্নীতির অভিযোগের বিচারের সম্মুখীন হতে অবশ্যই তার পদ ছাড়তে হবে। ভাইস প্রেসিডেন্ট মিশেল তেমের বৃহস্পতিবার দেশের দায়িত্বভার গ্রহণ করেছেন, অথচ তিনি সরকারী পদের জন্য প্রতিদ্বন্দ্বিতা করার ক্ষেত্রে আট বছরের জন্য অযোগ্য হতে পারেন। কারণ, নির্বাচন কর্তৃপক্ষ সম্প্রতি নির্বাচনী ব্যয় সম্পর্কিত আইন লঙ্ঘনের দায়ে তাকে শাস্তি দিয়েছে। বাজেট ঘাটতি ধামাচাপা দিতে রুসেফ জাতীয় ব্যাংকগুলো থেকে অর্থ নিয়েছিলেন বলে তার বিরুদ্ধে অভিযোগ আনা হয়। ব্রাজিলের অন্য নেতারাও অতীতে একই কৌশল অবলম্বন করেছিলেন, কিন্তু তখন সেদিকে তেমন একটা দৃষ্টি পড়েনি। তবে অনেকের সন্দেহ, রুসেফকে হটানোর চেষ্টার সঙ্গে রাষ্ট্রীয় তেল কোম্পানি পেট্রোবাসে সংঘটিত দুর্নীতির ঘটনা নিয়ে তার প্রসিকিউটরদের তদন্ত চালাতে দেয়ার সিদ্ধান্তের বেশি সম্পর্ক রয়েছে। রুসেফের ওয়ার্কার্স পার্টির সিনিয়র নেতারাসহ ৪০ জনেরও বেশি রাজনীতিক ওই কেলেঙ্কারিতে জড়িত বলে অভিযোগ রয়েছে। যদি সিনেট রুসেফকে আর্থিক অন্যায় করার দায়ে দোষী সাব্যস্ত করে তা হলে ব্রাজিলীয় নেতারা স্বাভাবিকভাবেই আরও অর্থের বিনিময়ে রাজনীতি করার সুযোগ পাওয়া সহজতর বলে দেখতে পাবেন। এটি নৈতিক দিক দিয়ে গ্রহণযোগ্য হবে না। ব্রাজিল ১৯৩০ সাল থেকেই এর শোচনীয় মন্দাজনিত দুরবস্থা ভোগ করছে। আর এখন এ রাজনৈতিক সঙ্কটের নতুন গণতান্ত্রিক ব্যবস্থার ওপর আস্থাবোধকে ক্ষুন্ন করছে। রিও ডি জেনিরোতে গ্রীষ্মকালীন অলিম্পিক খেলা শুরু হওয়ার ঠিক আগে সরকারকে জিকা ভাইরাসের প্রাদুর্ভাব মোকাবেলা করতে হচ্ছে বলে এসব সমস্যা আরও জটিল রূপ নিচ্ছে। দুর্নীতি নিয়ে সম্প্রতি চালানো তদন্তে পচন ধরা ক্ষমতাসীন শ্রেণীরই স্বরূপ উদ্ঘাটিত হয়েছে। এতে ক্ষুব্ধ হয়েছে ব্রাজিলীয়রা। যদি রুসেফের মেয়াদ সংক্ষিপ্ত করে দেয়া হয় তা হলে ব্রাজিলীয়দের দ্রুত নতুন কোন নেতা নির্বাচন করতে দেয়া উচিত। কোন নতুন নির্বাচন শীঘ্রই অনুষ্ঠিত হতে পারে, যদি কোন নির্বাচনী আদালত রুসেফের সর্বশেষ বিজয়কে বাতিল বলে ঘোষণা করে। এ আদালত পেট্রোবাস কেলেঙ্কারি থেকে আত্মসাত করা অর্থ রুসেফের ২০১৪ সালের নির্বাচনী অভিযানে লাগানো হয়েছিল এমন অভিযোগের তদন্ত করছে। আর বিকল্প উপায় হলো, কংগ্রেস শীঘ্রই নির্বাচন আহ্বান করে কোন আইন পাস করতে পারে।
×