ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

সিলিকন ভ্যালির প্রযুক্তি কাজে লাগাতে মরিয়া পেন্টাগন

নয়া অস্ত্র কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা

প্রকাশিত: ০৪:২৬, ১৩ মে ২০১৬

নয়া অস্ত্র কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা

মার্কিন সেনাবাহিনীর সুবিধাজনক অবস্থান বজায় রাখতে পেন্টাগন সিলিকন ভ্যালির সবচেয়ে জটিল প্রযুক্তি কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তাকে (আর্টিফিসিয়াল ইন্টেলিজেন্স-এআই) কাজে লাগাতে উঠেপড়ে লেগেছে। প্রতিরক্ষামন্ত্রী এ্যাশ কার্টার বুধবার প্রযুক্তিশিল্পের কেন্দ্রস্থল পরিদর্শন করেন। গত বছর তার ওই পদে যোগ দেয়ার পর তিনি চতুর্থবারের মতো সেখানে যান। এর আগে কোন প্রতিরক্ষামন্ত্রীর ওউ এলাকা পরিদর্শনের পর ২০ বছর কেটে যায়। কার্টার গুগলের সদর দফতরের কাছে প্রতিরক্ষা দফতরের এক গবেষণা স্থাপনায় দেয়া এক ভাষণে এ কথা উল্লেখ করেন। গত শরৎকালে কার্টারের ঘোষিত ‘থার্ড অফসেট’ কৌশলের তাগিদেই পেন্টাগন কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার (এআই) বিষয়ে গভীর উৎসাহ দেখাচ্ছে। আর এর সঙ্গে যুক্ত হয়ে সিলিকন ভ্যালি কোম্পানিগুলোও ওই প্রযুক্তিতে বিশেষ দক্ষতা অর্জন করছে। সামরিক প্রতিদ্বন্দ্বী হিসেবে চীন ও রাশিয়ার পুনরুত্থানে উদ্বিগ্ন কার্টার বলেন, কম্পিউটারভিত্তিক, উচ্চ প্রযুক্তির অস্ত্র ভবিষ্যতে মার্কিন সেনাবাহিনীকে বাড়তি সুবিধা দেবে। থার্ড অফসেট সেনাবাহিনীর ক্ষুদ্র আকৃতিজনিত অসুবিধা কাটিয়ে উঠতে পেন্টাগনের প্রযুক্তি ব্যবহারের আগের দুটি পরিকল্পনার কথা মনে করিয়ে দেয়। ১৯৫০-এর দশকে প্রেসিডেন্ট ডুইট আইজেন হাওয়ার ওয়ারশ প্যাক্টের বৃহত্তর সেনাবাহিনীকে নিবৃত্ত রাখার এক উপায় হিসেবে পরমাণু অস্ত্র তৈরির ওপর জোর দেন। ১৯৭০ ও ৮০’র দশকে ‘সেকেন্ড অফসেট’ কৌশল অবলম্বন করা হয়। তখন সামরিক পরিকল্পনাবিদরা আবারও ক্ষুদ্র সেনাবাহিনীজনিত দুর্বলতা কাটিয়ে উঠতে প্রচলিত অস্ত্রশস্ত্রের ক্ষেত্রে উন্নততর প্রযুক্তি ব্যবহারের দিকে দৃষ্টি দেন। এবার যুক্তরাষ্ট্র বেসামরিক আবিষ্কারকে কোন সামরিক উদ্দেশ্যে রূপান্তরিত করার বড় চ্যালেঞ্জের মুখে পড়ছে বলে কার্টার স্বীকার করেন। কারণ দেশটি কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার গতিধারা নিয়ন্ত্রণ বা নির্ধারণ করতে পারবে না। তিনি পেন্টাগনের ডিফেন্স ইনোভেশন ইউনিট এক্সপেরিমেন্টাল স্থাপনায় বুধবার এক ভাষণে বলেন, এটি ৩০ বা ৪০ বছর আগেকার সময়ের তুলনায় ভিন্ন, যখন আমরা প্রযুক্তির গতিধারা নিয়ন্ত্রণের প্রত্যাশা করতাম। সে কথা আর সত্য নয়, কিন্তু আমরা এখনও এআই প্রয়োগের দিক দিয়ে সর্বোত্তম সেনাবাহিনী থাকতে পারি। সাম্প্রতিক সপ্তাহগুলোতে প্রতিরক্ষা উপমন্ত্রী বরার্ট ও ওয়ার্ক বারবার এআই সম্পৃক্ত প্রযুক্তির গুরুত্ব তুলে ধরেন। এরূপ প্রযুক্তি ক্রমশ স্মার্ট অস্ত্রসজ্জিত এক নতুন শ্রেণীর ‘আয়রনম্যান’ স্টাইলের যোদ্ধা গড়ে তুলতে সহায়ক হবে বলে তিনি বিশ্বাস করেন। প্রতিরক্ষা দফতরের ওই প্রযুক্তির জন্য সিলিকন ভ্যালির সাহায্যের দরকার হবে। আর কার্টার আভাস দেন যে, স্থানীয় কোম্পানিগুলোর সঙ্গে সম্পর্ক স্থাপনের স্বার্থে তার বুধবার দেখতে যাওয়া নয়া পেন্টাগন অফিস এখনও তার কাছে সরাসরি রিপোর্ট পেশ করবে। প্রতিরক্ষা দফতর কয়েকটি বড় প্রযুক্তি কোম্পানির সঙ্গে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক সব সময়েই বজায় রেখেছে। অনেকগুলো কোম্পানি পেন্টাগন ও গোয়েন্দা সংস্থাগুলোকে তাদের অন্যতম বড় গ্রাহক বলে মনে করে। কিন্তু সিলিকন ভ্যালির তরুণ নির্বাহীরা বিশেষত এআই গবেষণায় নিয়োজিতরা তাদের নতুন প্রযুক্তিকে সেনাবাহিনীর হাতে ব্যবহৃত হতে দেখে সামান্য উৎসাহ বোধ করছেন। কোন মানুষের নির্দেশনা ছড়া প্রতিরক্ষা অস্ত্রশস্ত্রের গোলা ছোড়ার ধারণা অস্ত্র নিয়ন্ত্রণের সমর্থক এবং কোন কোন সামরিক কৌশললবিদের মনে আশঙ্কার সৃষ্টি করেছে। স্মার্ট অস্ত্রশস্ত্রের আক্রমণাত্মক ও আত্মরক্ষামূলক ব্যবহারের মধ্যে পার্থক্য বজায় রাখা কঠিন হয়ে পড়বে বলে তারা চিন্তিত। বস্তুত মানুষ হত্যা করার সিদ্ধান্ত নেয়ার কাজটি যন্ত্রের ওপর ছেড়ে দেয়া হলে এক নতুন ও সম্ভবত অস্থিরতাপূর্ণ অস্ত্র প্রতিযোগিতা ডেকে আনা হবে বলে কোন কোন প্রযুক্তিবিদ ও সামরিক কৌশলবিদ মনে করেন। -নিউইয়র্ক টাইমস
×