ঢাকায় অনুষ্ঠিত বাংলাদেশ ও নেপালের বাণিজ্য সচিব পর্যায়ের বৈঠকটি নানা দিক থেকে গুরুত্বপূর্ণ। এতে দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্য বৃদ্ধিতে সব ধরনের শুল্ক ও অশুল্কজনিত বাধা দূর করাসহ ট্রানজিট কার্গো পরিবহনের বিষয়টি প্রাধান্য পেয়েছে। তবে এসব ছাপিয়ে উঠে এসেছে নেপালে জলবিদ্যুত খাতে বাংলাদেশের বিনিয়োগের আগ্রহের বিষয়টি। এতে একদিকে যেমন নেপালে বাংলাদেশের বিনিয়োগ বাড়বে, অন্যদিকে উৎপাদিত বিদ্যুত আমদানি করে দেশের চাহিদাও মেটানো যাবে। এক্ষেত্রে ভুটানের বিভিন্ন জলবিদ্যুত প্রকল্পে বিনিয়োগের বিষয়টিও সক্রিয়ভাবে বিবেচনা করতে পারে বাংলাদেশ।
বাংলাদেশ সাম্প্রতিককালে সবিশেষ গুরুত্ব আরোপ করেছে বিদ্যুত উৎপাদন ও বিনিয়োগে। আপাতত বিদ্যুত উৎপাদনে সর্বাধিক গুরুত্বারোপ করেছে কয়লাভিত্তিক বিদ্যুত উৎপাদন কেন্দ্র স্থাপনে। তবে কয়লা নিয়ে পরিবেশগত ঝুঁকিও আছে, যা মোকাবেলা করতে হচ্ছে বাংলাদেশকে। দীর্ঘদিন সংস্কার না হওয়ায় ২৩০ মেগাওয়াট ক্ষমতাসম্পন্ন কাপ্তাই জলবিদ্যুত কেন্দ্রটি তেমন অবদান রাখতে পারছে না জাতীয় অর্থনীতিতে। সে অবস্থায় জলবিদ্যুত প্রকল্পে বিনিয়োগ ও উৎপাদিত বিদ্যুত দেশে এনে ব্যবহারের ক্ষেত্রে বিরাট এক সুযোগ হয়ে দেখা দিয়েছে প্রতিবেশী দেশ নেপাল ও ভুটান।
দুটো দেশই হিমালয় এলাকায় সুউঁচ্চে অবস্থিত হওয়ায় সেখানে জলবিদ্যুতের অপার ও অসীম সম্ভাবনা বিদ্যমান। নেপালে কম করে হলেও ৮০ হাজার মেগাওয়াট জলবিদ্যুত উৎপাদনের সম্ভাবনা রয়েছে। ভুটানেও অনুরূপ, প্রায় ৪০ হাজার মেগাওয়াট। অথচ, দুটো দেশই দরিদ্র ও অনগ্রসর, পশ্চাৎপদ ও স্থলবেষ্টিত। ফলে তাদের সুযোগ ও সাধ্য সীমিত। এক হিসাবে জানা যায়, নেপাল বর্তমানে মাত্র ৮০০ মেগাওয়াট জলবিদ্যুত উৎপাদন করছে। দেশটির রাজধানী কাঠম-ুতে দৈনিক ১৪ ঘণ্টা লোডশেডিং হয়। ভুটানের অবস্থাও এর চেয়ে ভাল নয়। অর্থাৎ অপার সম্ভাবনা থাকা সত্ত্বেও দুটো দেশই জলবিদ্যুতের অধিকাংশ উৎসই ব্যবহার করতে পারছে না। বাংলাদেশের সামনে এ এক অসীম সম্ভাবনা ও সুযোগ হতে পারে, যদি তা যথাযথভাবে কাজে লাগানো যায়।
বাংলাদেশের কিছুসংখ্যক ব্যবসায়ী ইতোমধ্যে দেশের পাশাপাশি বিদেশেও বিনিয়োগ সক্ষমতা অর্জন করেছেন। দু’-একটি গ্রুপ ভুটানে বিশ্বব্যাংকের সহায়তায় জলবিদ্যুত প্রকল্পে বিনিয়োগও করেছে। নেপালও এক্ষেত্রে অগ্রাধিকার পেতে পারে বৈকি। বাণিজ্য সচিব পর্যায়ের বৈঠকে এমন আভাস মিলেছে যে, যত দ্রুত সম্ভব বিদ্যুত প্রকল্পগুলোর কাজ এগিয়ে নিতে চায় নেপাল। ইতোমধ্যে তারা ভারতের সঙ্গে দুটো বিদ্যুত কেন্দ্র নির্মাণের চুক্তিও করেছে বেসরকারী খাতে। নেপাল বাংলাদেশের সঙ্গেও যৌথ বিদ্যুত কেন্দ্র নির্মাণের সক্রিয় চিন্তাভাবনা করছে। নেপাল ও ভুটান থেকে বিদ্যুত আমদানিতে প্রতিবন্ধকতা দূর করতে ভারত সম্মত হয়েছে বাংলাদেশের সঙ্গে আনুষ্ঠানিক বৈঠকে বসতে। দক্ষিণ এশিয়ার সঙ্গে নেপাল, ভুটান, ভারত ও বাংলাদেশ মিলে শীঘ্রই দিল্লীতে একটি চতুর্দেশীয় বৈঠক হওয়ার কথা রয়েছে। সার্ক চেতনার আলোকে ভারত যদি এক্ষেত্রে ইতিবাচক মনোভাব দেখায়, তাহলে খুব দ্রুতই নেপাল-ভুটান-বাংলাদেশ মিলে জলবিদ্যুত খাতে বাংলাদেশী বিনিয়োগ ও উৎপাদিত বিদ্যুত আমদানির বিষয়টি বাস্তবে রূপ নিতে পারে।