ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

মুক্তিযোদ্ধা-জনতার সন্তোষ

সাঁথিয়ায় নিজামীর লাশ প্রবেশে ছাত্রলীগের বাধা, আনন্দ মিছিল

প্রকাশিত: ০৬:০৫, ১২ মে ২০১৬

সাঁথিয়ায় নিজামীর লাশ প্রবেশে ছাত্রলীগের বাধা, আনন্দ মিছিল

নিজস্ব সংবাদদাতা, পাবনা, ১১ মে ॥ জামায়াতে ইসলামীর আমির একাত্তরের আল বদর নেতা যুদ্ধাপরাধী মতিউর রহমান নিজামীর ফাঁসির দ- কার্যকরের সঙ্গে সঙ্গে মুক্তিযোদ্ধা ও শহীদ পরিবারসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক দল শহরে শহরে আনন্দ মিছিল বের করে। সাঁথিয়া উপজেলায় আওয়ামী লীগ, ছাত্রলীগ ও শহীদ পরিবারের সদস্যরা তাৎক্ষণিক আনন্দ মিছিল বের করে। মিছিল শেষে মুক্তিযোদ্ধা ও শহীদ পরিবারের সন্তানরা আবেগে কান্নায় ভেঙ্গে পড়েন। নিজামীর বাড়ির পাশের সোনাতলা গ্রামের সাধারণ মানুষও ফাঁসির দ- কার্যকরের পর পরই রাস্তায় নেমে উল্লাসে মেতে ওঠে। এদিকে জেলা ছাত্রলীগের সভাপতি রুহুল আমিনের উদ্যোগে রাত ৩টা পর্যন্ত ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা সাঁথিয়া উপজেলার ইছামতি ব্রিজের কাছে নিজামীর লাশ সাঁথিয়ায় কবর না দেয়ার দাবিতে অবস্থান নেয়। এ সময় সাঁথিয়ার আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক তপন হায়দার সানসহ প্রশাসনের মধ্যস্থতায় তারা অবস্থান তুলে নেয়। পরবর্তীতে কড়া নিরাপত্তার মধ্য দিয়ে সাঁথিয়ার মন্মথপুর গ্রামের পারিবারিক গোরস্তানে বুধবার সকাল সোয়া ৭টায় যুদ্ধাপরাধী মতিউর রহমান নিজামীর দাফন সম্পন্ন হয়েছে। অন্যদিকে নিজামীর ফাঁসি কার্যকরের ফলে পাবনা, সাঁথিয়া ও বেড়া উপজেলায় নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করা হয়েছে। পুলিশ সুপার জানান, যাতে কোন নাশকতা বা অপ্রীতিকর ঘটনা না ঘটে, সেজন্য তিন স্তরের নিরাপত্তা ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে। স্ট্রাইকিং ফোর্স হিসেবে র‌্যাব রয়েছে। এলাকাবাসী জানিয়েছে, নিজামীর দাফনকে কেন্দ্র করে আগে থেকেই এলাকায় কড়া নিরাপত্তা ব্যবস্থা নেয়া হয়। সকাল সোয়া ছয়টার দিকে দুটি এ্যাম্বুলেন্সে করে র‌্যাব-পুলিশের ৬টি গাড়ির পাহারায় নিজামীর মরদেহ সাঁথিয়ায় পৌঁছায়। তার লাশ পৈত্রিক বাড়ির পাশের মন্মথপুর কবরস্থানে নেয়া হলে সেখানে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা শফিকুল ইসলাম ও নিজামীর ছেলে মোঃ নাজিব মোমিন পিতার মরদেহ গ্রহণ করেন। নিজামীর ছেলে ব্যারিস্টার আব্দুল মোমিনের ইমামতিতে জানাজায় জামায়াতের নির্বাহী পরিষদ সদস্যবৃন্দ এবং দলীয় নেতাকর্মীরা অংশ নেন। স্থানীয় জামায়াত সাঁথিয়ায় সকাল ১০টায় গায়েবানা জানাজা করেছে। শহীদ জননী ও মুক্তিযোদ্ধাদের প্রতিক্রিয়া ॥ সাঁথিয়া উপজেলার ধুলাউড়ি গ্রামের শহীদ আজমতের মা শাহেদা খাতুন (৮৪) জানান, আমার বাড়িতে আমার ছেলের সঙ্গে মুক্তিযোদ্ধারা থাকত। একদিন ভোর ৪টার দিকে নিজামীর নির্দেশে আর্মি এসে গুলি করে হত্যা করে আমার ছেলেসহ পাঁচ-ছয় জনকে। জীবদ্দশায় ছেলে হত্যার বিচার দেখে যেতে পারলাম, এটাই সান্ত¡না। ধুলাউড়ি গ্রামের শহীদ ডাঃ আবদুল আউয়ালের ছেলে লিয়াকত আলী তার প্রতিক্রিয়ায় জানান, আমার বাবার হত্যার সঠিক বিচার পেয়েছি। একজন যুদ্ধাপরাধীকে ফাঁসিতে ঝুলিয়ে রায় কার্যকর করা গেছে। এতে আমরা আনন্দিত। ধুলাউড়ির হত্যাকা-ে শহীদ আবুল কাশেমের ছেলে আবদুর রউফ মন্টু বলেন, নিজামীর ফাঁসির রায় কার্যকর হওয়ার মধ্য দিয়ে আমরা শহীদ পরিবারের সন্তানরা স্বস্তি পেয়েছি। পাবনা জেলা মুক্তিযোদ্ধা সংসদের ডেপুটি কমান্ডার আবদুল বাতেন জানান, নিজামীর মৃত্যুদ- কার্যকর হওয়ায় আমরা খুশি। নিজামী হত্যা, ধর্ষণের মতো যেসব জঘন্য ঘটনায় জড়িত তাতে তিনি উচিত শিক্ষা পেয়েছেন। মুক্তিযোদ্ধা তোফাজ্জল হোসেন, লিয়াকত আলী, আবু সামা, আব্দুল করিম, জহুরুল হক বলেন, মুক্তিযোদ্ধাদের এতদিনের বোবা কান্নার আজ অবসান হলো।
×