ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

পরিবারই আদর্শের ভিত্তিভূমি

প্রকাশিত: ০৩:৩৭, ১২ মে ২০১৬

পরিবারই আদর্শের ভিত্তিভূমি

এস এম মুকুল মানুষের নৈতিকতার বিকাশ শুরু হয় জšে§র পর থেকেই। নৈতিকতার চর্চা ও বিকাশের অন্যতম স্থান হলো পরিবার। মানবিক মূল্যবোধ, সহমর্মিতা, সহযোগিতার কেন্দ্রস্থলও পরিবার। মানুষের ভেতরে ক্রমশ বিকশিত হওয়া মৌলিক বিশ্বাস, অবিশ্বাস, চেতনার সূতিকাগার আমাদের পরিবার। কিন্তু সেই পরিবার থেকে কি শিখছে আমাদের প্রজন্ম? আমরা বাবা-মায়েরাই কি সন্তানের কাছে আদর্শের মডেল হতে পারছি? অনেক ক্ষেত্রেই দেখা যায়, আমাদের নিজেদের মূল্যবোধ ও চেতনার জায়গাগুলো নড়বড়ে। আমরা বাবা-মা হয়ে সন্তান মানুষ করব কিভাবে- যেখানে নিজেরাই নিজ নিজ মা-বাবার প্রতি দায়িত্ববোধের কথা ভুলে গেছি। আসলে নানা অজুহাতে আমাদের সুপরিসর সামাজিক সম্পর্কগুলোকে সুবিধাবাদের সম্পর্কে পরিণত করে এক ধরনের একক সমাজ ও পরিবারের অবয়বে একাকিত্বের ভোগ-বিলাসে মত্ত হয়ে পড়েছি যেন আমরা। আমাদের পরিবারগুলোতে বন্ধনের ঐতিহ্য ধ্বংস হতে চলেছে। দাদা-দাদী, নানা-নানী, বাবা-মা, চাচা-চাচি, মামা-মামি, খালা-খালু, ফুফা-ফুফুর চিরায়ত পারিবারিক সম্পর্কগুলো ঘনিষ্ঠতা হারাচ্ছে। বহু বাবা-মা সন্তানদের সঙ্গে শেয়ার করে না তাদের সংগ্রামী ব্যক্তি ও সংসার জীবনের গল্প। সন্তানের কাছে তাদের দাদা-নানাদের ঐতিহ্যের কাহিনী শোনানো হয় না। সন্তানকে বলা হয় না- সন্তানের কাছে পিতা-মাতা হিসেবে তারা কি চায়। তাদের সামাজিক মর্যাদা, পারিবারিক ঐহিত্য এবং সংস্কৃতির রীতিনীতির কথা অনেক বাবা-মায়ের সন্তানরাই জানে না। অর্থাৎ সন্তানের মাঝে আমরা স্বপ্নের বীজ বুনে দিতে পারছি না। সন্তানদের শেখাতে পারছি না যে- প্রতিটি জীবনের সঙ্গে জড়িয়ে আছে একটি পারিবারিক সংস্কৃতির ধারা এবং কিছু মূল্যবোধ। শেকড় গ্রামে হলেও গ্রামের সঙ্গে সম্পর্ক নেই- তাই প্রকৃতির আলিঙ্গন থেকে দূরে সরে যাচ্ছি আমরা। আমাদের পারিবারিক বিনোদনের জায়গাগুলোও ছোট হয়ে আসছে। বাবা-মা, ভাই-বোন মিলে একসঙ্গে টিভির অনুষ্ঠান দেখা হয় না। যাওয়া হয় না সিনেমা হলে, নাট্যমঞ্চে। পারিবারিক ভ্রমণ ব্যবস্থার সীমাবদ্ধতা তো আছেই। আত্মীয়দের বাসায় দাওয়াত খেতে যাওয়া এবং তাদেরকে দাওয়াত খাওয়ানোর রেওয়াজটাও এখন চাইনিজ রেস্টুরেন্টে আটকে গেছে। এ কারণে আত্মীয়তার সামাজিক বন্ধনগুলো কাছে টানছে না সন্তানদের। খোলা মাঠে শিশুদের সামাজিকীকরণ ঘটছে না। শিশুরা বাড়ি থেকে স্কুল, স্কুল থেকে কোচিং সেন্টারে যাচ্ছে। তারা কাদের সঙ্গে মিশছে, অভিভাবকরা জানতে পারছেন না। তা হলে কেমন হবে ভবিষ্যত? আমাদের সন্তানদের জীবন থেকে হারিয়ে যাচ্ছে দুরন্ত শৈশবের গল্প। শহুরে সন্তানেরা মাছের নাম জানলেও, সেই মাছটি চেনে না। ফল খায় ঠিকই কিন্তু গাছ চেনে না। গ্রামের সাথে সম্পর্ক না থাকার কারণে এরা গাছে চড়তে জানে না। গাছের ডালে বসে আম খাওয়ার তৃপ্তির এরা কি বুঝবে? তারা সাঁতার জানে না। সন্তানদের নদী বা পুকুরের জলে সাঁতার কাটার সুযোগ দিতে হবে। কৃষকের কৃষি কাজের নিপুণতা প্রত্যক্ষ করার সুযোগ দিতে হবে। আমাদের পারিবারিক, সমাজ এবং শিক্ষা জীবনে মানবিকতার বুনিয়াদি প্রশিক্ষণ খুবই জরুরী। সামাজিক সম্পর্কগুলো বাড়ানো দরকার। আধুনিক ফ্ল্যাট কালচারের অদ্ভুত এক পরিস্থিতি বিরাজ করছে। কেউ কারও খবর রাখে না। ফ্ল্যাটের বাসিন্দা ছোট্টমণিরা একসঙ্গে খেলতে পারে না। গল্প ও আড্ডায় মেতে উঠতে পারে না। কেমন যেন একটা রিজার্ভ সংস্কৃতির কবলে একক পরিবারের একাকীত্ব পেয়ে বসেছে শিশু-কিশোরদের জীবন। শিষ্টাচারের শিক্ষা পরিবার থেকেই পাওয়ার কথা। অপরাধ বিশেষজ্ঞ, সমাজ ও মনোবিজ্ঞানী এবং চিকিৎসকরা এমন মন্তব্যই করেছেন যে- দুর্বল পারিবারিক বন্ধন, সামাজিক ও নৈতিক শিক্ষার অভাব এবং ধর্মীয় মূল্যবোধের স্খলনের কারণেই সমাজে হত্যা-খুন বাড়ছে। ঢাকা থেকে
×