ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

সম্প্রীতির বন্ধনে স্বর্গ

সমাজ ভাবনা ॥ এবারের বিষয় ॥ পারিবারিক সম্প্রীতি

প্রকাশিত: ০৩:৩৬, ১২ মে ২০১৬

সমাজ ভাবনা ॥ এবারের বিষয় ॥ পারিবারিক সম্প্রীতি

গৌরব জি. পাথাং পরিবার সামাজিক ও নৈতিক শিক্ষা এবং ধর্মীয় মূল্যবোধের শিক্ষালয়। পৃথিবীতে সুন্দর করে বাঁচতে হলে, মিলে মিশে থাকতে হলে ভালবাসা ও সম্প্রীতির বন্ধনে মিলিত হতে হয়। সম্প্রীতির জন্য প্রয়োজন ভালবাসা। ভালবাসা ছাড়া সম্প্রীতির সমাজ হয় না। বর্তমানে বিশ্বে পরিবারগুলো প্রতিনিয়ত নানা রকম প্রতিকূলতার সম্মুখীন হচ্ছে ও বিভিন্নভাবে বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ছে। পারিবারিক সম্প্রীতির অভাবে যৌথ পরিবারের ঐতিহ্য আজ বিলুপ্তির পথে। প্রত্যেকেই নিজেকে নিয়ে ব্যস্ত, নিজের গ-ির মধ্যে আবদ্ধ। তাই ক্রমান্বয়ে ব্যক্তিকেন্দ্রিক হয়ে পড়ছে। পরিবারের সদস্যরা আলাদা হয়ে যাচ্ছে। পারস্পরিক যোগাযোগ হ্রাস পাচ্ছে। যৌথ পরিবারে থাকলে যে নিয়ম নীতিগুলো মানতে হতো, একক পরিবারে সেই নিয়ম নীতিগুলো পালন করতে হয় না। বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মানুষের যোগাযোগ ব্যবস্থাকে করেছে সহজতর। তবু মানুষ আজ স্বার্থপর হয়ে নিজের চারপাশে দেয়াল তৈরি করছে। নিজেই কারারুদ্ধ হয়ে একাকী জীবন যাপন করছে। এখানে অন্য কেউ প্রবেশ করতে পারছে না। তেমনি সে নিজেও অন্যের সঙ্গে মিলিত হতে পারছে না। মোবাইল ফোন, ইন্টারনেট, ফেসবুক, ই-মেইল প্রভৃতি ব্যবহারে মানুষ মানুষের সঙ্গে সম্পর্ক গড়ে তুলছে। আবার এই একই মাধ্যম ব্যবহারের কারণে মানুষে মানুষে দূরত্বও বেড়েও যাচ্ছে। অত্যধিক যন্ত্রের ব্যবহারের কারণে ভালবাসাও যেন যান্ত্রিক হয়ে যাচ্ছে। যন্ত্রের মতোই সম্পর্কগুলোও অল্পতেই ভেঙ্গে যাচ্ছে, হারিয়ে যাচ্ছে। মানুষে মানুষে যোগাযোগ ও সম্পর্ক তৈরি হয় ঠিকই কিন্তু সেই আবেগ অনুভূতি, ভালবাসা আর আগের মতো দেখা যায় না। সে কারণে প্রশ্ন উঠছে, যন্ত্র কি যন্ত্রণাই দেয়? ইলেকট্রনিক মিডিয়ায় খোলামেলা অনুষ্ঠান ও নিষিদ্ধ সম্পর্কের দেশী-বিদেশী বাংলা সিরিয়াল আমাদের পারিবারিক বন্ধন শিথিল হওয়ার অন্যতম কারণ। স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে সন্দেহ, বিচ্ছেদ ও ভাঙ্গন তৈরি করে মোবাইল ফোন, ফেসবুক প্রভৃতি। শুধু তাই নয়, দূরত্বও সৃষ্টি করে। এগুলো ব্যবহারে সময় দিতে হয় বলে স্বামী-স্ত্রী একে অপরকে সময় দেয় না। তাতে দূরত্ব বেড়ে যায়। মনে করুন আপনি পরিবারের সবাইকে নিয়ে এক সঙ্গে খাচ্ছেন, হঠাৎ আপনার ফোন বেজে উঠল আর আপনি ফোন ধরে কথা বলতে বলতে উঠে গেলেন। ফিরে আসার নাম নেই। তখন কি হবে? আপনার জন্য কতক্ষণ অপেক্ষা করবে? কিংবা এমনও হয়, আপনি কারও সঙ্গে আলাপ করছেন, ফোন বেজে উঠতেই ফোন ধরে চলে গেলেন। এমন পরিস্থিতিতে দূরত্ব বেড়ে যাওয়াটাই স্বাভাবিক। বর্তমানে জীবিকা নির্বাহের তাগিদে কিংবা পিতামাতাকে কাজে সময় দিতে হয় বলে সন্তানদের সঙ্গে তাদের দূরত্ব বেড়ে যাচ্ছে। সন্তানরাও পিতা মাতার অবাধ্য হয়ে দূরে চলে যাচ্ছে। আগের মতো পরিবারগুলোয় ভালবাসা, মিলন ও শান্তি দেখা যায় না। এগুলোর পরিবর্তে টিভি ও কম্পিউটারের আগমন ঘটেছে। আগে যাদের ঘরে টিভি ছিল, তারা সবাই একত্রে টিভি দেখত। আর এখন একত্রে টিভি দেখা সম্ভব হয় না। টিভি চ্যানেলের যেমন শেষ নেই, তেমনি পছন্দেরও শেষ নেই। কেউ ফুটবল, কেউ ক্রিকেট খেলা, কেউ নাটক, কেউ সিনেমা, কেউ রান্নাবান্না, কেউ গীতমালা পছন্দ করে। যার যার পছন্দের কারণে একেকজন একেক সময় বেছে নেয়। আগে পরিবারগুলোয় একসঙ্গে খাওয়া-দাওয়া হতো এবং খাওয়ার সময় ভালমন্দ আলাপ আলোচনা হতো। পরিবারগুলোয় খাওয়ার আগে সমবেত প্রার্থনা হতো, যা পেত তা-ই ভাগ করে খেত, সবার মধ্যেই সমবন্টন ও সহযোগিতার মনোভাব ছিল, ছিল সম্প্রীতির দৃঢ় বন্ধন। তা দেখে তখন মনে হতো এটাই বুঝি স্বর্গ। কবি যেমন বলেছিলেন, “প্রীতি ও প্রেমের পুণ্য বাঁধনে যবে মিলি পরস্পরে/ স্বর্গ আসিয়া দাঁড়ায় তখন আমাদেরই কুঁড়েঘরে।” আজ স্বপ্ন দেখি, এই স্বর্গ আবার আমাদের মাঝে প্রতিষ্ঠিত হোক। বনশ্রী, ঢাকা থেকে
×