ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

মহেশখালীতে বিদ্যুত কেন্দ্র নির্মাণে মূলধনী কোম্পানি হচ্ছে

প্রকাশিত: ০৭:৩৩, ১১ মে ২০১৬

মহেশখালীতে বিদ্যুত কেন্দ্র নির্মাণে মূলধনী কোম্পানি হচ্ছে

স্টাফ রিপোর্টার ॥ মালয়েশিয়ার সঙ্গে আরও একটি বৃহৎ বিদ্যুত কেন্দ্র নির্মাণে যৌথ মূলধনী কোম্পানি গঠন করতে যাচ্ছে বিদ্যুত উন্নয়ন বোর্ড (পিডিবি)। যৌথ মূলধনী কোম্পানি গঠনে মন্ত্রিসভার অনুমোদন চেয়েছে বিদ্যুত বিভাগ। মহেশখালীতে বাংলাদেশ-মালয়েশিয়ার যৌথ উদ্যোগে এক হাজার ৩২০ মেগাওয়াটের একটি কয়লাচালিত বিদ্যুত কেন্দ্র নির্মাণ করবে। মালয়েশিয়ার রাষ্ট্রায়ত্ত কোম্পানি তেনেগা ন্যাশনাল বারহেড এবং পাওয়ারটেক বারহেড সমন্বয়ে গঠিত কনসোর্টিয়ামের সঙ্গে পিডিবির এই চুক্তি হতে যাচ্ছে। ওই কোম্পানিটি মহেশখালী প্রস্তাবিত বিদ্যুত হাবে কেন্দ্রটি নির্মাণ করবে, যাতে বাংলাদেশ এবং মালয়েশিয়ার সমান অংশীদারিত্ব থাকবে। বিদ্যুত বিভাগ সূত্র জানায়, এর আগে তেনেগা এবং পাওয়ারটেকের মধ্যে একটি জেভিএ স্বাক্ষর হয়। স্বাক্ষরিত জেভিএ অনুমোদনের জন্য উপ-সচিব মোঃ শওকত আলী স্বাক্ষরিত প্রস্তাবটি মন্ত্রিসভায় গত রবিবার পাঠানো হয়েছে। শীঘ্রই মন্ত্রিসভায় প্রস্তাবটি উত্থাপন করা হবে। সরকারের অনুমোদন পেলে দ্রুত চুক্তি স্বাক্ষর করে কার্যক্রম চালানো হবে। যৌথ উদ্যোগে রাষ্ট্রীয় কোম্পানির বিদ্যুত কেন্দ্র নির্মাণের তৃতীয় উদ্যোগ এটি। এছাড়াও পায়রায় নর্থওয়েস্ট পাওয়ার জেনারেশন কোম্পানি চীনা প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে এবং রামরালে পিডিবি ভারতের সঙ্গে আরও একটি বিদ্যুত কেন্দ্র নির্মাণের জন্য যৌথ মূলধনী কোম্পানি গঠন করছে। এর মধ্যে পায়রায় বিদ্যুত কেন্দ্রটি নির্মাণ শুরু হয়েছে। আর রামপাল বিদ্যুত কেন্দ্র নির্মাণ চুক্তির অপেক্ষায় রয়েছে। শীঘ্রই চুক্তিটি স্বাক্ষর হবে। পিডিবির একজন কর্মকর্তা জানান, আগের দুটি কোম্পানির মতোই হবে এ কোম্পানিটি। বাংলাদেশ এবং মালয়েশিয়ার সমানসংখ্যক সদস্য পরিচালনা পর্ষদে থাকবেন। কোম্পানির চেয়ারম্যান এবং ব্যবস্থাপনা পরিচালকের পদে দুই দেশের প্রতিনিধি ভাগাভাগি করে দায়িত্ব পালন করবেন। সমঝোতার আলোকে গঠিত যৌথ মূলধনী কোম্পানি বিদ্যুত কেন্দ্রটি নির্মাণের জন্য অর্থায়ন এবং দরপত্র আহ্বান করবে। সর্বনিম্ন দরদাতা প্রতিষ্ঠান বিদ্যুত কেন্দ্রটি নির্মাণ করবে। রামপালের বিষয়ে পরিবেশবাদীদের আপত্তি থাকলেও মহেশখালীতে এখনও কোন আপত্তি তোলেনি। বিদ্যুত বিভাগ সম্প্রতি ওই এলাকায় জমি অধিগ্রহণ করছে। এছাড়া মহেশখালী দ্বীপে ৫০ হাজার টনের কয়লাবাহী জাহাজ প্রবেশ করার মতো গভীরতা থাকায় সেখানেই বিদ্যুত কেন্দ্র নির্মাণে কয়লা পরিবহনজনিত খরচ কম পড়বে। ইতোমধ্যে মহেশখালীকে কোল পাওয়ার জেনারেশন কোম্পানির জন্য একটি বড় বিদ্যুত কেন্দ্র, কয়লা খালাসের বন্দর এবং অবকাঠামো নির্মাণের জন্য প্রকল্পের অনুমোদন দিয়েছে সরকার। এখানে জাইকা অর্থায়ন করছে। মহেশখালীর সম্ভাব্যতা জরিপে বলা হয়েছে, প্রতিটি ২৪০ মিটার দীর্ঘ জাহাজে কয়লা আনা হবে, যার ধারণক্ষমতা ৮০ হাজার মেট্রিক টন। এজন্য সমুদ্রে ১৩ মিটার পানির গভীরতা থাকতে হবে। এক হাজার ২০০ মেগাওয়াট বিদ্যুত কেন্দ্রের জন্য বছরে ৫৩ বার কয়লা আনার প্রয়োজন হবে। সূত্র জানায়, চট্টগ্রাম ও কক্সবাজারের উপকূলীয় এলাকায় ১০ হাজার মেগাওয়াটের বিদ্যুত উৎপাদন অঞ্চল স্থাপনের পরিকল্পনা রয়েছে সরকারের। সবগুলো বিদ্যুত কেন্দ্র হবে ‘মেগা সাইজ’ প্রকল্প। বিদ্যুত কেন্দ্রগুলো আমদানি করা কয়লা দিয়ে চলবে। সরকার দীর্ঘমেয়াদী বিদ্যুত উৎপাদন পরিকল্পনা করছে তাতে এসব প্রকল্প অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। সরকারের পাওয়ার সিস্টেম মাস্টারপ্ল্যান প্রণয়নকারী প্রতিষ্ঠান জাইকাই চট্টগ্রাম এলাকার বিদ্যুত প্রকল্পের সম্ভাবত্যা যাচাই করছে। বিদ্যুত বিভাগ সূত্র জানায়, ২০১১ সালের ১৭ অক্টোবর বাংলাদেশে নিযুক্ত মালয়েশিয়ার হাইকমিশনার চট্টগ্রামে ১৩২০ মেগাওয়াট কয়লাভিত্তিক বিদ্যুত কেন্দ্রে বিনিয়োগের প্রস্তাব দেন। এর আগে দেশটির প্রধানমন্ত্রীর প্রেরিত এক বিশেষ দূত বাংলাদেশ সফর করে বিদ্যুত-জ্বালানিসহ বিভিন্ন খাতে বিনিয়োগের আগ্রহ প্রকাশ করেন। ওই আলোচনার সূত্র ধরে তেনেগা প্রতিনিধিরা বিভিন্ন সময়ে বাংলাদেশ সফর করেন। দেশের পিডিবি এবং বিদ্যুত বিভাগের কর্মকর্তারা মালয়েশিয়া সফর করে বিদ্যুত খাতে বিনিয়োগ এবং যৌথভাবে কাজ করার বিষয়ে আলোচনা করেন, যার প্রেক্ষিতে ২০১২ সালে একটি সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষর করে তেনেগা এবং পাওয়ারটেক। এবার যৌথ মূলধনী কোম্পানি গঠন করে বিদ্যুত কেন্দ্র নির্মাণের উদ্যোগ নেয়া হচ্ছে।
×