ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ১৬ এপ্রিল ২০২৪, ৩ বৈশাখ ১৪৩১

কেন্দ্রীয় ব্যাংকের বেশির ভাগ অডিট আপত্তিই বেতন-ভাতা নিয়ে

প্রকাশিত: ০৭:৩১, ১১ মে ২০১৬

কেন্দ্রীয় ব্যাংকের বেশির ভাগ অডিট আপত্তিই বেতন-ভাতা নিয়ে

নাজনীন আখতার ॥ বৈদেশিক মুদ্রা বিনিময়, ভাউচার না থাকা, বেতন-ভাতা, ইউটিলিটি বিলসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে আর্থিক বিধি অনুসরণ না করায় গত ৫ বছরে বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রায় ১২ হাজার কোটি টাকার হিসাবে গরমিল ধরা পড়েছে। এ বিপুল পরিমাণ অর্থের গরমিলের তথ্য প্রকাশ পেয়েছে অডিট রিপোর্টে। মঙ্গলবার জাতীয় সংসদে অনুষ্ঠিত সরকারী প্রতিষ্ঠান কমিটির বৈঠকে অডিট আপত্তির এ তথ্য তুলে ধরা হয়। কমিটি দ্রুত এসব অডিট আপত্তি নিষ্পত্তির তাগিদ দিয়েছে। এছাড়া কমিটি বাংলাদেশ ব্যাংকের রিজার্ভ থেকে সাম্প্রতিক চুরি হওয়া অর্থ ফেরত নিয়ে আসা এবং ভবিষ্যতে যেন এই ধরনের ঘটনার পুনরাবৃত্তি না ঘটে সেজন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়ার সুপারিশ করা হয়েছে। বিষয়টিকে দায়িত্বে অবহেলা হিসেবে উল্লেখ করে কমিটি জানিয়েছে, তারা মঙ্গলবার অনুষ্ঠিত সুইজারল্যান্ডে বাংলাদেশ ব্যাংক প্রতিনিধি দল, সুইফট আর ফেডারেল ব্যাংকের যৌথ বৈঠকের ফলাফল জানার অপেক্ষায় রয়েছে। কমিটি সভাপতি কর্নেল (অব) শওকত আলীর সভাপতিত্বে সংসদ ভবনে কমিটির বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। বৈঠকে কমিটির সদস্য মোঃ আব্দুল কুদ্দুস, মোহাম্মদ সুবিদ আলী ভূঁইয়া, মোঃ হাবিবর রহমান, মোঃ আব্দুল ওদুদ, আব্দুর রউফ এবং এ্যাডভোকেট নাভানা আক্তার উপস্থিত ছিলেন। বৈঠকে ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের অতিরিক্ত সচিব, বাংলাদেশ ব্যাংকের ডেপুটি গবর্নর এবং জাতীয় সংসদ সচিবালয়ের সংশ্লিষ্ট উর্ধতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন। সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, অর্থ মন্ত্রণালয়ের ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের উপসচিব নিয়াজ রহমান স্বাক্ষরিত প্রতিবেদনে বাংলাদেশ ব্যাংকের ২০১০ সাল থেকে ২০১৫ সাল পর্যন্ত ৫ বছরের অনিষ্পন্ন অডিট আপত্তির তথ্য তুলে ধরা হয়। এতে বলা হয়, ওই সময়ে অনিষ্পন্ন মোট অডিট আপত্তি রয়েছে ১ হাজার ২৯৪টি। এতে জড়িত মোট অর্থের পরিমাণ হচ্ছে ১১ হাজার ৯১৬ কোটি ৬৭ লাখ টাকা। প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, অধিকাংশ আপত্তি বেতন-ভাতা সংক্রান্ত। এর মধ্যে রয়েছে চিকিৎসা সুবিধা প্রদান, কর্মকর্তাদের ডরমিটরি ভাড়া ও ইউটিলিটি বিল পরিশোধ, কর্মচারীদের পোশাক ও ধোলাই ভাতা প্রদান, ভ্রমণ ভাতা, প্রেরণা বোনাস, শ্রান্তি বিনোদন ভাতা, যাতায়াত খরচ ও অধিকাল ভাতা প্রদান, কর্মকর্তাদের আয়কর ব্যাংকের খরচে প্রদান, বিশেষ ইনক্রিমেন্ট প্রদান, ভেহিক্যাল এ্যালাউন্স প্রদান, গোষ্ঠী বীমা ও কল্যাণ তহবিলে চাঁদা কর্তন না করা, প্রভিডেন্ট ফান্ডের সুদ সংক্রান্ত, বকেয়া বোনাস প্রদান, ফ্রিঞ্জ বেনিফিট বা বেতনের সঙ্গে প্রদত্ত প্রান্তিক সুযোগ-সুবিধা প্রদান, টেলিফোন ও মোবাইল বিল প্রদান ইত্যাদি। প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, অনিষ্পন্ন আপত্তিগুলোর মধ্যে বৈদেশিক মুদ্রা বিনিময় যেমন- রফতানিকৃত পণ্যের মূল্য প্রত্যাবাসন, আমদানির বিপরীতে বিল অব এন্ট্রি বকেয়া থাকা এবং ইনডেন্টিং কমিশনের অর্থ প্রত্যাবাসন ইত্যাদি সংক্রান্ত আপত্তিগুলো বাণিজ্যিক ব্যাংকের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট। এইসব আপত্তির অর্থ বাংলাদেশ ব্যাংকের হিসাব বিবরণীতে প্রতিফলিত হয় না। আপত্তিকৃত অর্থ আদায়ের কার্যক্রম বাংলাদেশ ব্যাংক নিয়মিত তদারকি করে থাকে। বাংলাদেশ ব্যাংকের অডিট আপত্তি প্রসঙ্গে কমিটির সদস্য আব্দুর রউফ জনকণ্ঠকে বলেন, কমিটি যত দ্রুত সম্ভব তা নিষ্পত্তি করতে বলেছে। খুব শীগ্রই মহাহিসাব নিরীক্ষকের কার্যালয়, বাংলাদেশ ব্যাংক আর আপত্তির সঙ্গে জড়িত পক্ষগুলোর মধ্যে ত্রিপক্ষীয় বৈঠক অনুষ্ঠিত হবে। পরবর্তী বৈঠকে এ বিষয়টি কতটুকু অগ্রগতি হলো তা জানার পাশাপাশি হলমার্ক ও বেসিক ব্যাংক কেলেংকারি নিয়েও অগ্রগতি জানতে চাওয়া হবে। বাংলাদেশ ব্যাংক এ বিষয়ে যথাযথ তদারকি করছে না বলে মনে করছে কমিটি। এদিকে সম্প্রতি বাংলাদেশের রিজার্ভ থেকে অর্থ চুরি যাওয়াকে দায়িত্বে অবহেলা হিসেবে দেখছে সংসদীয় কমিটি। এদিকে রিজার্ভ চুরির পর দীর্ঘ সময় পার হয়ে গেলেও এখনও একজন হ্যাকারকেও শনাক্ত করতে না পারায় বৈঠকে ক্ষোভ প্রকাশ করেন কমিটির সদস্যরা। এ বিষয়ে কমিটি সদস্য আব্দুর রউফ জনকণ্ঠকে বলেন, যেহেতু আজ ১০ মে সুইজারল্যান্ডে গর্বনরের নেতৃত্বে বাংলাদেশ ব্যাংক প্রতিনিধি দল, সুইফট আর ফেডারেল ব্যাংক যৌথভাবে বৈঠক করছে। তাই কমিটি থেকে এখনও কোন সিদ্ধান্ত নেয়া হয়নি। আশা করা যায়, কালকের মধ্যেই এ বিষয়ে বিস্তারিত জানা যাবে। পরবর্তী বৈঠকে এর ফলাফল নিয়ে আলোচনা করা হবে। তিনি বলেন, ফেডারেল ব্যাংক আর সুইফট কেউই দায়িত্ব এড়াতে পারে না। তারা কিভাবে ভুয়া মেসেজে অর্থ ছাড় করল? তিনি আরও বলেন, বাংলাদেশ ব্যাংক জোর পদক্ষেপ নিয়ে এই বৈঠক করতে পারছে। তারা বৈঠকে কোন আগ্রহ পর্যন্ত দেখাচ্ছিল না। এছাড়া এখন পর্যন্ত কোন হ্যাকার চূড়ান্তভাবে চিহ্নিত না হওয়ায় অসন্তোষ প্রকাশ করেছে কমিটি। উল্লেখ্য, গত ৫ ফেব্রুয়ারি ‘সুইফট মেসেজ হ্যাকিংয়ের মাধ্যমে বাংলাদেশ ব্যাংকের রিজার্ভের ১০১ মিলিয়ন ডলার বা বাংলাদেশী মুদ্রায় ৮০০ কোটি টাকা অর্থ লোপাটের ঘটনা ঘটে।
×