ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

রায় কার্যকর উপলক্ষে নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার

প্রকাশিত: ০৭:২০, ১১ মে ২০১৬

রায় কার্যকর উপলক্ষে নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার

গাফফার খান চৌধুরী ॥ যুদ্ধাপরাধ মামলায় জামায়াতে ইসলামীর আমির ও বদর বাহিনীর প্রধান মাওলানা মতিউর রহমান নিজামীর ফাঁসির রায় কার্যকর উপলক্ষে সারাদেশে নিরাপত্তা জোরদার করা হয়েছে। বিশেষ নিরাপত্তা বলয়ের মধ্যে রাখা হয়েছে ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগার ও তার আশপাশের এলাকাসহ নিজামীর বাড়ি পাবনা জেলার গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনাগুলো। নিরাপত্তার কারণে কারাগারের বেশ কিছু জায়গায় মোবাইল ফোন নেটওয়ার্ক বন্ধ থাকছে। ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারের চারদিকে প্রায় এক কিলোমিটার এলাকাজুড়ে অলিখিত ১৪৪ ধারা জারি করা হয়েছে। এছাড়াও জামায়াত-শিবিবের প্রভাব থাকা জেলাগুলোতে মোতায়েন করা হয়েছে অতিরিক্ত পুলিশ ও র‌্যাব। অত্যন্ত সতর্কতার সঙ্গে বিশেষভাবে প্রস্তুত রাখা হয়েছে বিজিবি ও র‌্যাবের হেলিকপ্টার, ভারী আগ্নেয়াস্ত্রসহ নানা সাজসরঞ্জাম। নজরদারিতে রাখা হয়েছে জামায়াত-শিবিরের শীর্ষ নেতাদের। সোমবার গাজীপুরের কাশিমপুর কারাগার থেকে মতিউর রহমান নিজামীকে ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে স্থানান্তর করা হয়। এরপর থেকেই ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারের নিরাপত্তার চিত্র পাল্টাতে থাকে। মঙ্গলবার ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারের চারদিক ঘুরে দেখা গেছে ভিন্ন চিত্র। দুপুর গড়িয়ে সময় যত পার হতে থাকে কারাগারের চারদিকের নিরাপত্তা ব্যবস্থা তত বাড়তে থাকে। বিকেলে ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারের চারদিকে প্রায় আধকিলোমিটার এলাকাজুড়ে কঠোর নিরাপত্তা বলয় গড়ে তোলা হয়। বকশীবাজার মোড়ে পুলিশ কাঁটাতারের ব্যারিকেড দেয়। এর খানিক সামনেই নব কুমার ইনস্টিটিউটের সামনে তিন রাস্তার মোড়ে কাঁটাতারের কয়েকটি ব্যারিকেড দিয়ে রাস্তা অনেকটাই বন্ধ করে দেয়া হয়। কারা অধিদফতরের যাওয়ার রাস্তায় যানবাহন চলাচল অনেকটাই বন্ধ করে দেয়া হয়েছে। কারাগারের পেছনে চকবাজারের রাস্তা থেকে তুলে দেয়া হয়েছে সব ধরনের ভাসমান দোকান। ওইসব এলাকায় রাতে দোকানপাট বন্ধ রাখার আগাম বার্তা দেয়া হয়েছে। এদিকে ব্যারিকেড বসানো হয়েছে চাঁনখারপুল এলাকায়। এছাড়া কারাগারের সামনেও বসানো হয়েছে ব্যারিকেড। পুরো এলাকায় প্রতিটি ব্যারিকেডে বসানো হয়েছে পুলিশ ও র‌্যাবের আলাদা আলাদা চেকপোস্ট। সেখানে সন্দেহভাজনদের দেহ ও বস্তুতে তল্লাশি চালানো হচ্ছে। এছাড়া কারাগারের চারদিকে থাকা সব উঁচু ভবনে বসানো হয়েছে ওয়াচ টাওয়ার। সেখান থেকে শক্তিশালী বাইন্যুকুলারের সাহায্যে পুরো এলাকার ওপর নজরদারি করা হচ্ছে। আর ওয়াচ টাওয়ারে দায়িত্বরত আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যদের দেয়া হয়েছে স্নাইপার রাইফেল। এসব রাইফেল দিয়ে বহু দূর থেকে লক্ষ্যবস্তুতে আঘাত হানা সম্ভব। কারাগারসহ আশপাশের এলাকা আলোকিত রাখতে বাড়তি জেনারেটর বসানো হয়েছে। এছাড়া শাহবাগ থেকে কারাগারে প্রবেশের সব রাস্তায় ব্যারিকেড দেয়া হয়েছে। বিশেষ করে শাহবাগ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এলাকার টিএসসি, দোয়েল চত্বর, পলাশী মোড়, জগন্নাথ হলের সামনে, কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার, হোসেনী দালান, ওয়াটার ওয়ার্কস রোড, ঢাকা আলিয়া মাদ্রাসা রোডসহ আশপাশের সকল অলিগলিতে যানবাহন চলাচল বন্ধ করে দেয়া হয়। এসব এলাকায় আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর অতিরিক্ত ফোর্সের পাশাপাশি মোতায়েন করা হয়েছে এপিসি (আর্মার পার্সোন্যাল কেরিয়ার) ও জলকামান। ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারসহ আশপাশের প্রায় এক কিলোমিটার এলাকাজুড়ে অলিখিত ১৪৪ ধারা জারিসহ আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর অস্ত্রগোলাবারুদ ব্যতিত যে কোন ধরনের অস্ত্রগোলাবারুদ বহন নিষিদ্ধ করা হয়েছে। আইনশৃঙ্খলা বাহিনী সূত্রে জানা গেছে, লাশ যে রাস্তা দিয়ে যাবে তার দুই পাশের এলাকার নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে বলা হয়েছে। ওইসব এলাকাগুলোতে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী আগাম নজরদারি করছে। নিজামীর লাশের সঙ্গে এবার অতিরিক্ত নিরাপত্তা থাকছে। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর অতিরিক্ত সদস্য মোতায়েনের পাশাপাশি প্রস্তুত রাখা হচ্ছে পুলিশের বিশেষায়িত টিম সোয়াট, ক্রাইসিস রেসপন্স টিম, বম্ব ডিসপোজাল ইউনিট, সাদা পোশাকে পুলিশ ও র‌্যাবের গোয়েন্দারা প্রস্তুত থাকছে। আপদকালীন মুহূর্ত মোকাবেলা করতে প্রস্তুত রাখা হয়েছে র‌্যাবের হেলিকপ্টার। সন্ধ্যা নামার সঙ্গে সঙ্গে ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারসহ আশপাশের এলাকায় সর্বসাধারণের প্রবেশের ক্ষেত্রে কড়াকড়ি আরোপ করা হয়। নিরাপত্তার বিষয়ে লালবাগ বিভাগের অতিরিক্ত উপ-কমিশনার সঞ্জীব কুমার রায় জনকণ্ঠকে বলেন, ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারসহ আশপাশের এলাকার নিরাপত্তা বাড়ানো হয়েছে। এছাড়া পুরো এলাকার ওপর বাড়তি নজরদারি করা হচ্ছে। চারদিকের চারদিকে থাকা উঁচু দেয়ালের আশপাশে অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন রয়েছে। নিরাপত্তার বিষয়ে বিজিবি মহাপরিচালক মেজর জেনারেল আজিজ আহমেদ জনকণ্ঠকে বলেন, নিজামীর ফাঁসি কার্যকরের বিষয়টি গুরুত্বের সঙ্গে দেখা হচ্ছে। নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে অন্যান্য আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে সহায়তা করতে বিজিবিকে বিশেষভাবে প্রস্তুত রাখা হয়েছে। যে কোন ধরনের পরিস্থিতিতে বিজিবি সব ধরনের সহায়তা করতে প্রস্তুত রয়েছে। দেশের প্রতিটি জেলায় বিজিবিকে বিশেষ সতকর্তার সঙ্গে প্রস্তুত থাকতে নির্দেশ দেয়া হয়েছে।
×