ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪৩১

এনামুল হক

অপ্রতিরোধ্য হিলারি

প্রকাশিত: ০৬:৩২, ১১ মে ২০১৬

অপ্রতিরোধ্য হিলারি

হিলারি ক্লিনটন আমেরিকানদের কাছে কতটা জনপ্রিয় তা প্রশ্ন সাপেক্ষ। এক জরিপে দেখা যায় যে, প্রায় দুই তৃতীয়াংশ আমেরিকান তাঁকে অবিশ্বাস করে। তথাপি প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে দলীয় প্রার্থিতা লাভের লড়াইয়ে তিনি যে অপ্রতিরোধ্যভাবে এগিয়ে আছেন সে ব্যাপারে কোন সন্দেহ নেই। হিলারির এই অবস্থানে আসা অত সহজে হয়নি। তাঁর তিন দশকের জনজীবনে অনেক স্ক্যান্ডালের ঘটনা তাঁকে তাড়া করেছে। তিনি বারাক ওবামা বা বিল ক্লিনটনের মতো অত তুখোর বক্তা নন যিনি শ্রোতাদের সম্মোহিত করতে পারেন। বক্তব্যের দিক দিয়ে তিনি স্বচ্ছন্দ, সাবলীল। তবে প্রতিটি উক্তি সুনিয়ন্ত্রিত। তথাপি তাঁর প্রকাশভঙ্গিই এমন যে যতই তিনি বাস্তব হওয়ার চেষ্টা করুন না কেন সেটা মেকি বলে মনে হয়। বাগ্মী হিসেবে দুর্বলতার কারণে তার মধ্যে এক জাতীয় কাঠিন্য কাজ করে। ওবামা যেখানে উন্নত বিশ্বের স্বপ্ন দেখিয়ে মানুষকে অনুপ্রাণিত করতেন হিলারি সেটা পারেন না। তাঁর বক্তব্য ও যুক্তিগুলো বিচারকালীন আদালতের আইনজীবীর মতো শোনায়। তাছাড়া কিছু কিছু ব্যাপারে অবস্থান পরিবর্তনের কারণে তাঁর ভূমিকাকে ভ-ামি বলে মনে হয়। এসব সমস্যা হিলারির ক্ষতির কারণ হিসেবে কাজ করেছে সন্দেহ নেই। তথাপি ৫৮ বছর বয়স্ক সাবেক ফার্স্টলেডি, সিনেটর ও পররাষ্ট্রমন্ত্রী ডেমোক্রেটিক দলের প্রার্থিতা লাভের লড়াইয়ে বহুদূর এগিয়ে আছেন। তবে ৭৪ বছর বয়স্ক স্বঘোষিত সোশালিস্ট বার্নি স্যান্ডার্সের কারণে তাঁকে এই পর্যায়ে আসতে যতটা বেগ পেতে হয়েছে অন্য আর কারোর কারণে ততটা হয়নি। স্যান্ডার্স তার প্রার্থিতা ঘোষণা করার সময় তাঁকে প্রতিযোগী বলেই মনে হয়নি। সেই মানুষটি পরে ১৭টি রাজ্যে বিজয়ী হন। সম্প্রতি তঁাঁর প্রচারাভিযানে যে অর্থ সংগৃহীত হয়েছে সেটা হিলারির চেয়েও বেশি। যেমন গত মাসে হয়েছে ৪ কোটি ৪০ লাখ ডলার। এর বেশিরভাগই ছোট ছোট অংকের চাঁদা যা লাখ লাখ ভক্ত অনুরাগী যুগিয়েছে। এদের অধিকাংশই শ্বেতাঙ্গ, তরুণ, সুশিক্ষিত বামপন্থী ও ৩৫ বছরের নিচের মহিলারা। কিন্তু জনসমর্থন লাভের প্রতিযোগিতায় হিলারি স্যান্ডার্সকে ছাড়িয়ে গেছেন বয়স্ক শ্বেতাঙ্গ হিসপানিক ও সকল বয়সের কৃষ্ণাঙ্গদের কারণে। তারাও বিপুল সংখ্যায় তবে কম উদ্দীপনা নিয়ে হিলারিকে সমর্থন যুগিয়েছে। ওবামার সময় যে ধরনের উৎসাহ উদ্দীপনার জোয়ার ছিল হিলারির সময় তা নেই। এই নিস্পৃহতা সাধারণত নির্বাচনে হিলারির জয় লাভের ক্ষেত্রে ভাল লক্ষণ নয়। ডেমোক্রেট দলের মনোনয়ন তিনি যে পাবেন সেটা অবধারিত। নিউইয়র্কে বিজয়ের ফলে নির্বাচিত প্রতিনিধি ২৩৭ জনকে নিয়ে এগিয়ে আছেন। সুপার ডেলিগেটদের ক্ষেত্রেও তিনি এগিয়ে আছেন বেশ বড়সড় আকারে। সুপার-ডেলিগেট হলো পার্টির শীর্ষ নেতারা যাদের আগামী জুলাই মাসে দলের মনোনয়ন সম্মেলনে ভোট দেয়ার ক্ষমতা আছে। হিলারির সমপর্যায়ে আসতে হলে স্যান্ডার্সকে বাদবাকি প্রতিনিধিদের প্রায় ৬০ শতাংশকে জয় করতে হবে যা প্রায় অকল্পনীয়। অন্যদিকে ক্যালিফোর্নিয়া ও পেনসিলভানিয়াসহ অবশিষ্ট তিনটি বড় রাজ্যের সবগুলোতে হিলারি এগিয়ে আছেন। দলের মনোনয়ন পেলে হিলারিকে আগামী নবেম্বর মাসে সম্ভবত ডোনাল্ড ট্রাম্প নয়ত ট্রেড ক্রুজকে মোকাবেলা করতে হবে। জনমত জরিপে এই দুই ব্যক্তি বরাবরই হিলারির কাছে হেরেছেন। বাজিকররাও হিলারির প্রেসিডেন্ট হবার সম্ভাবনা দেখছে ৭০ শতাংশেরও বেশি। একমাত্র একটা ব্যাপারই তাকে থামাতে পারে সেটা হলো পররাষ্ট্রমন্ত্রী থাকাকালে তাঁর একটা প্রাইভেট ই-মেইল সার্ভারের ব্যবহার নিয়ে যে তদন্ত চলছে তার পরিণতিতে যদি তিনি অভিযুক্ত হন। তাঁর রিপাবলিকান প্রতিপক্ষরা আশা করেন যে এমনটাই ঘটবে। ট্রাম্প তো এমনও বলেছেন যে তাঁকে ২০ বছর পর্যন্ত কারাগারে থাকতে হতে পারে। আগামী কয়েক সপ্তাহের মধ্যে এফবিআই হিলারি ও তাঁর দু’একজন সহকর্মীকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য ডাকতে পারে। তারা জ্ঞাত সারে ‘গোপন তথ্যাবলী ওই প্রাইভেট সার্ভারে আনা নেয়া করেছিলেন নাকি চরম অবহেলার মাধ্যমে সেটা ঘটতে দিয়েছিলেন সে ব্যাপারে নিশ্চিত হওয়াই এফবিআইয়ের এই পদক্ষেপের উদ্দেশ্য। হিলারি যদি অভিযুক্ত হন তাহলে ধরে নিতে হবে যে তিনি প্রতিদ্বন্দ্বিতা থেকে সরে দাঁড়াবেন। সে অবস্থায় স্যান্ডার্সের মনোনয়ন লাভ ঠেকানোর ভার ডেমোক্রেট নেতাদের ওপর পড়বে ঠিক যেমন রিপাবলিকান নেতারা ট্রাম্পের মনোনয়ন ঠেকানোর চেষ্টা করছেন। তবে এ জাতীয় ঘটনায় বেশ কয়েক ডজন ফেডারেল তদন্ত পর্যালোচনা করে ‘পলিটিকো’ নামে একটি পত্রিকা উপসংহার টেনেছে যে হিলারির অভিযুক্ত হওয়ার সম্ভাবনা খুবই কম। তাই যদি হয় তাহলে তাঁর প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হবার সম্ভাবনাও বেশি। সত্যিই যদি হিলারি হোয়াইট হাউসে ফিরে আসতে পারেন সেটা হবে প্রধান তিনটি কারণের জন্য। প্রথমত, স্যান্ডার্স তাঁর যতটা না ক্ষতি করেছেন তার চেয়ে ভাল করেছেন বেশি। দ্বিতীয়ত, ডেমোক্রেটরা বাহ্যত যতটা দেখায় তার চেয়েও বেশি ঐক্যবদ্ধ এবং তৃতীয়ত, রিপাবলিকানরা পদে পদে বিভক্ত। স্যান্ডার্সের উত্থানের ফলে হিলারি তার প্রচারাভিযানকে আরও বেশি আক্রমণাত্মক করে তুলতে বাধ্য হয়েছেন। এক্ষেত্রে তিনি ওবামার কৌশলকে অনুসরণ করেছেন। স্যান্ডার্স আন্দোলন তাঁকে তাঁর অগ্রাধিকার পুনর্বিবেচনা করার এবং অবস্থান পরিবর্তন করার কারণ ঘটিয়েছে। দ্বিতীয়ত মতবিরোধ সত্ত্বেও নির্বাচন প্রশ্নে ডেমোক্রেটরা মূলত ঐক্যবদ্ধ। তাদের অনেকে হয়ত হিলারিকে পছন্দ করেন না। তাই বলে নির্বাচনে তাঁকে ভোট না দিয়ে অন্য প্রার্থীকে ভোট দেবেন এমন নয়। সম্প্রতি ফেøারিডার এক কংগ্রেসসদস্য এলানগ্রেসন অনলাইনে ৪ লাখ ডেমোক্রেট ভোটারের ওপর জরিপ চালিয়ে এমনই চিত্র পেয়েছেন। তৃতীয়ত, রিপাবলিকানরা গৃহযুদ্ধের জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছে। এক সমীক্ষায় দেখা যায় এক তৃতীয়াংশেরও বেশি রিপাবলিকান ভোটার সাধারণ নির্বাচনে ট্রাম্পকে ভোট দেবে না। আশ্চর্যের কিছু নেই রিপাবলিকান নেতারাও তাকে ঠেকানোর চেষ্টা করছেন। মডারেট রিপাবলিকানদের কিছু অংশের দলীয় প্রার্থীকে বাদ দিয়ে হিলারিকে ভোট দেয়া বিচিত্র কিছু নয়। সবকিছু মিলিয়ে রিপাবলিকান শিবিরের বেহাল অবস্থা এখন হিলারির অনুকূলে। হোয়াইট হাউসে ফিরে যাওয়া তাঁর শেষ পর্যন্ত হয়ে উঠে কি না সেটাই এখন দেখার বিষয়। সূত্র : দি ইকোনমিস্ট
×