ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

মোঃ নুরুজ্জামান

আইপিএলেও অবিশ্বাস্য কোহলি

প্রকাশিত: ০৬:২০, ১১ মে ২০১৬

আইপিএলেও অবিশ্বাস্য কোহলি

বিরাট কোহলি যেভাবে ব্যাটিং করে যাচ্ছেন সেটিকে ‘অবিশ্বাস্য’ বললেও কম বলা হবে। চলতি আইপিএলে তার ইনিংসগুলো দেখুন - ৭৫, ৭৯, ৩৩, ৮০, ১০০*, ১৪ ও ৫২ ও ১০৮* (পরিসংখ্যান- ৮ মে রবিবার পর্যন্ত)! তার আগে টি২০ বিশ্বকাপে নিজের শেষ দুই ম্যাচে ৮২* ও ৮৯* রান!! মহেন্দ্র সিং ধোনির রাইজিং পুনে সুপারজায়ান্টসকে ৭ উইকেটের বড় ব্যবধানে হারায় ব্যাঙ্গালুরু। ৫৮ বলে অপরাজিত ১০৮ রানের দূরন্ত ইনিংস উপহার দেন কোহলি। সব ছাপিয়ে তাই আলোচনায় কেবলই তিনি। অবিশ্বাস্য ব্যাটিং করছেন ভারতীয় ক্রিকেটের ‘ক্রেজী বয়’। এ পর্যন্ত ৮ ইনিংসে ৯০.১৬ গড়ে করেছেন টুর্নামেন্টের সর্বোচ্চ ৫৪১ রান। সেঞ্চুরি ২ ও হাফ সেঞ্চুরি ৪টি! অনেকে কোহলির মাঝে গ্রেট শচীন টেন্ডুলকরের ছাঁয়া দেখেন। আইপিএলে মুম্বাই ইন্ডিয়ান্সের অধিনায়ক হিসেবে এক আসরে ৫০০Ñর বেশি রান করেছিলেন শচীন। সেটি ভেঙ্গে দেন কোহলি। কেবল তাই নয়, আইপিএলের একমাত্র অধিনায়ক হিসেবে তিন আসরে ৫০০-র বেশি রানের অনন্য রেকর্ডও গড়েন ‘সুপার’ উইলোবাজ। ২০১৩ আইপিএলে করেছিলেন ৬৩৪, যেটি অধিনায়ক হিসেবে এক আসরে সবচেয়ে বেশি রান তোলার রেকর্ডও। গত আইপিএলে করেছিলেন ৫০৫। এক মৌসুমে ৫০০-এর বেশি রান তোলা বাকি দুই অধিনায়ক গৌতম গম্ভীর ও ডেভিড ওয়ার্নার। দু-জনই সেটি করেছিলেন একবার করে। ব্যাঙ্গালুরু অধিনায়ক কোহলি এবার প্রথম ব্যাটসম্যান হিসেবে এক আসরে দুটি সেঞ্চুরির রেকর্ডও গড়লেন। আইপিএলে দুটি করে সেঞ্চুরি আর আছে ব্রেন্ডন ম্যাককুলাম, শেন ওয়াটসন, ওয়ার্নার, এবি ডি ?ভিলিয়ার্স, এ্যাডাম গিলক্রিস্ট ও বীরেন্দর শেবাগের। তারা অবশ্য সেটি এক আসরে করতে পারেননি। মজার বিষয়, টি২০তে এতদিন সেঞ্চুরিই ছিল না কোহলির, এবার যে ফর্মে আছেন, কে জানে, সামনের ম্যাচগুলোতে আরও সেঞ্চুরি আসছে কি না। সর্বোপরি আইপিএলে মোট সেঞ্চুরির রেকর্ডটি অবশ্য এখনও সবার নাগালের বাইরে। কোহলি-সতীর্থ ক্রিস গেইলের ঝুলিতে ৫টি সেঞ্চুরি। ব্যাটিংয়ের বিচারে ব্যাঙ্গালুরু আসরের সবচেয়ে শক্তিধর দল। এ দু-জনের সঙ্গে আছেন এবি ডি ভিলিয়ার্স, ওয়াটসন ও স্থানীয় লোকেশ রাহুল। তবে বরুণ এ্যারণ, যুবেন্দ্র চাহাল, স্টুয়ার্ট বিনিদের নিয়ে তাদের বোলিং আক্রমণ একেবারে সাদামাটা। মাঠে প্রতিটি ম্যাচেই সেটি ফুটে উঠেছে। এতগুলো হারের অন্যতম দায় বোলারদেরই। পুনের বিপক্ষে সেদিন ওয়াটসন ফেরার সময় চার ওভারে ৪৭ দরকার ছিল ব্যাঙ্গালুরুর। দায়িত্বটা পুরোপুরি এসে পড়ে তখন ৬৪ রানে থাকা বিরাটের ওপর। যিনি টিমকে জিতিয়ে শেষ করেন ৭টা ছক্কা আর ৮টা বাউন্ডারিতে ১০৮ রানে অপরাজিত থেকে। চাপের মধ্যে বড় রান তাড়ার সময় কী চলে তার মনে? বিরাট বলেন, বিপক্ষের স্ট্র্যাটেজি বা উল্টো দিকের ব্যাটসম্যানের দিকে না তাকিয়ে স্রেফ নিজের ওপর আস্থা রাখি। হরভজন সিং টুইটে কুর্নিশ করেছেন, কোহালির ব্যাপারটাই আলাদা। অন্য গ্রহের। রান চেজ মাস্টারের আরও একটা চ্যাম্পিয়ন ইনিংস! বিস্ময়ের ঘোর আন্তর্জাতিক ফুটবলারদের মধ্যেও। ইংল্যান্ড আর টটেনহাম হটস্পার্স তারকা, বিরাট ভক্ত হ্যারি কেন লিখেছেন, ‘চাপের মুখে বিরাট বার বার দেখাচ্ছে ও ঠিক কোন গোত্রের প্লেয়ার।’ কোহলিÑ আধুনিক ক্রিকেটে এক ‘বিস্ময়র’ নাম। অনেকে তার মাঝে গ্রেট শচীন টেন্ডুলকরের ছাঁয়া দেখেন। চলনে-বলনে হাজারো তরুণের ‘আইকন’। ক্রিকেট ও ফিক্সিং, ভবিষ্যত চাওয়া, নিজের স্টাইল, এমন আরও সব চিত্তাকর্ষক বিষয়ে কথা বললেন সময়ের সেরা এই ভারতীয় ব্যাটসম্যান। খেলাটি থেকে দুর্নীতি পুরোপুরি নির্মূল হওয়া কঠিন বলেই মনে করেন তিনি ‘ক্রিকেটকে পরিচ্ছন্ন রাখতে কর্তৃপক্ষ যথাসাধ্য চেষ্টা করছে। কারও পক্ষে রুমে রুমে গিয়ে বলা সম্ভব নয়, অমুকের সঙ্গে এভাবে কথা বলো না। তারা নিয়ম বানাতে পারে, প্রক্রিয়া ঠিক করতে পারে, এর বেশি কিছু নয়। শেষ পর্যন্ত প্রত্যেক খেলোয়াড়েরই ওপরই নির্ভর করে, কী করবে না করবে। কেউ যদি অন্যায় কিছু করতে চায়, আপনি তাদের যতই নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা করুন না কেন খুব একটা লাভ হবে না। বলেন কোহলি। অতীতে অনেক নামীদামী ক্রিকেটার ফিক্সিংয়ের মতো অনৈতিক কাজে জড়িয়ে পড়েছেন। তারকাদের প্রতি বাজিগরদের আগ্রহ বরাবরাই প্রবল। তবে দুষ্টরা এখন পর্যন্ত কোহলির কাছে ঘেঁষার সাহস দেখায়নি, ‘না, আমি কখনও এ ধরনের কিছুর মুখোমুখি হইনি। এটা আমার সৌভাগ্য। আমি খেলাটাকে ভীষণ ভালবাসি। এ ধরনের পরিস্থিতির মুখোমুখি হলে ক্রিকেটার হিসেবে আপনার খারাপ লাগবেই। সৌভাগ্যের বিষয় হলো, আমি এখনও এর মুখোমুখি হইনি, ঈশ্বর চাইলে ভবিষ্যতেও হবো না।’ ব্যাট হাতে রানের ফুলঝুড়ি ছোটালেও রেকর্ড নিয়ে একদমই ভাবেন না ২৭ বছর বয়সী উইলোবাজ, ‘রেকর্ড নিয়ে আমি আসলে অতটা ভাবি না। রেকর্ডের জন্য তো কখনও খেলি না, দলের জয়টা মুখ্য। খেলতে গিয়ে য?দি কোনও রেকর্ড হয়, ভাল।’ কোহলির লক্ষ্য একজন আদর্শ ক্রিকেটার হওয়া, খেলাটি ছেড়ে যাওয়ার পর সবাই যেন মনে রাখে, ভবিষ্যত প্রজন্ম যেন অনুসরণ করে। তিনি আরও বলেন, যখন ক্যারিয়ার শেষ করব, আশা করি অনেক তরুণকে খেলাটি খেলতে অনুপ্রাণিত করতে পারব। যদি কোন কিশোর বলে, আ?মরা ক্রিকেটটা খেলতে চেয়েছি কারণ আমরা কোহলির মতো হতে চেয়েছি, তখনই মনে করব কিছু অর্জন করতে পেরেছি।’ বেশ-ভুষা, হেয়ার স্টইল, মাঠের বাইরের জীবনাচরণ, প্রেম-প্রীতি এসব মিলিয়ে কোহলিকে ঠিক আদর্শ চরিত্র বলা যায় না। স্থনীয় মিডিয়া এমনটাই মনে করে। এ বিষয়ে তার বক্তব্য, ক্রীড়া জাতি হিসেবে আমাদের (ভারতীয়দের) একটু ধৈর্যের অভাব আছে, আমরা খুব দ্রুতই কারও সম্পর্কে রায় দিয়ে ফেলি। যখন খেলতে এলাম, আমার শরীরের উল্কি, পোশাক-আশাকের ধরন, আমি যেসব করতে ভালবাসি এতে হয়ত প্রথাগত টেস্ট ক্রিকেটারের যে প্রতিচ্ছবি, সেটা ছিল না। ধৈর্য ধরে ফলটাই গ্রহণ করা উচিত। সময়ের সঙ্গে তাল মেলানোয় অন্যায় তো কিছু দেখি না।
×