ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

আম বাজারজাতে শঙ্কা

প্রকাশিত: ০৫:১৯, ১১ মে ২০১৬

আম বাজারজাতে শঙ্কা

মামুন-অর-রশিদ, রাজশাহী ॥ মধুমাস জ্যৈষ্ঠের শুরুতেই রাজশাহীর বাজারে আম তোলার প্রস্তুতি নিচ্ছেন এ অঞ্চলের চাষী ও ব্যবসায়ীরা। তবে চলতি মৌসুমে বাজারজাত নিয়ে শঙ্কায় রয়েছেন তারা। গত মৌসুমের মতো এবারও গাছ থেকে আম নামানোর নির্ধারিত সময় বেঁধে দেয়া নিয়েই তাদের শঙ্কা। এখনও জেলা প্রশাসন থেকে এ বিষয়ে কোন সিদ্ধান্ত না হলেও গতবারের কথা মনে করে চিন্তিত আমচাষী ও ব্যবসায়ীরা। এরই মধ্যে আমে কেমিক্যাল ব্যবহার রোধে উপজেলা পর্যায়ে তদারকি কমিটি গঠন করেছে জেলা প্রশাসন। আমচাষীরা বলছেন, এবারও গত বছরের মতো আম নামানোর সময় বেঁধে দেয়া হলে তাদের নিশ্চিত ক্ষতির মুখে পড়তে হবে। তারা বলেন, গত বছরের লোকসানের কারণে এবার অধিকাংশ আমবাগানই বিক্রি হয়নি। এবার এখনও সময়সীমা বেঁধে না দেয়া হলেও ইতোমধ্যে স্বল্প পরিসরে আম বাজারজাতের চিন্তা করছেন কৃষকরা। এরই মধ্যে কোন কোন এলাকায় আগাম আম বাজারে তোলার জন্য গাছ থেকে নামাতে দেখা গেছে। তবে এবারও যদি আম নামানোর সময় নির্ধারণ করা হয় তবে সমন্বিত উদ্যোগ নেয়ার আহ্বান জানান চাষী ও ফল গবেষকরা। অবশ্য জেলা প্রশাসন বলছে, জনস্বার্থেই চাষীদের সঙ্গে কথা বলে সিদ্ধান্ত নেয়া হবে। তবে তারপরও আতঙ্ক কাটছে না চাষীদের। জেলার পুঠিয়া উপজেলার ঝলমলিয়া গ্রামের আম ব্যবসায়ী সাবের আলী জানান, গত বছর ২২ দিন ছিল আম নামানোর নিষেধাজ্ঞা। ওই বছর আগাম জাতের আম গাছেই পেকে মাটিতে পড়েছে। তবু নিষেধাজ্ঞার কারণে আম নামানো যায়নি। তাই লোকসান গুনতে হয়েছে। এবারও সে পরিস্থিতি দাঁড়ালে আম বাজারজাত নিয়ে ঝামেলায় পড়তে হবে। রাজশাহীর নওদাপাড়া এলাকার আম ব্যবসায়ী নাসির উদ্দীন বলেন, গত বছর সঠিক সময় আম না পাড়তে পেরে তাদের লোকসান গুনতে হয়েছে। তাই এ বছর তারা বাগান কিনতে ভয় পাচ্ছেন। যদি এবারও গত বছরের মতো নিয়ম জারি করা হয়! এখন প্রশাসনের নিয়মের অপেক্ষায় রয়েছেন তারা। রাজশাহী ও চাঁপাইনবাবগঞ্জের বিস্তীর্ণ এলাকাজুড়ে রয়েছে আম বাগান। চলতি মে থেকে আগস্ট মাস পর্যন্ত তিন ভাগে শতাধিক জাতের আম থাকে রাজশাহীর এসব বাগানে। এ সময় চাষীরা জেলার বাইরের ব্যবসায়ীদের সঙ্গে বাগান বেচাকেনা করেন। কিন্তু গত বছর নির্দিষ্ট সময় আম নামানোর নিয়মে বহু বাগানে আম নষ্ট হওয়ায় ক্ষতিগ্রস্ত হন ব্যবসায়ীরা। এ শঙ্কায় এ বছর এখন পর্যন্ত কোন পর্যায়েই তেমন বাগান বিক্রি করতে পারেননি চাষীরা। এ কারণে চাষীরা পড়েছেন দুশ্চিন্তায়। রাজশাহী ফল গবেষণা ইনস্টিটিউটের প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা আলীম উদ্দীন বলেন, আবহাওয়া ও মাটির গুণগত কারণে আগেভাগে পাকে রাজশাহীর আম। এ কারণে এ অঞ্চলে আম পাড়ার বিষয়ে সময় বেঁধে দেয়ার কোন যৌক্তিকতা নেই। তাই বাজার মনিটরিং করার বিষয়েই পরামর্শ দেন তিনি। তবে রাজশাহীর জেলা প্রশাসক কাজী আশরাফ উদ্দীন বলেন, ইতোমধ্যে আম নিয়ে প্রতিটি উপজেলা কর্মকর্তার সঙ্গে আলোচনা করা হয়েছে। আমে যাতে কোনভাবেই কেমিক্যালের ব্যবহার না হয় সে বিষয়েও তদারকির জন্য মনিটরিং কমিটি করা হয়েছে। এলাকার চাষীদের সঙ্গে কথা বলা হয়েছে। তাদের স্বার্থকে সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব দেয়া হচ্ছে। তারা যাতে কোনভাবে ক্ষতিগ্রস্ত না হয় সে বিষয়েও পরামর্শ দেয়া হয়েছে। তবে আম নামানোর বিষয়ে সময় বেঁধে দেয়ার মতো কোন সিদ্ধান্ত এখনও হয়নি বলে জানান তিনি।
×