ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ১৯ মার্চ ২০২৪, ৫ চৈত্র ১৪৩০

ঘাটতি বাজেট ৯৭ হাজার কোটি টাকা

প্রকাশিত: ০৪:০২, ১১ মে ২০১৬

ঘাটতি বাজেট ৯৭ হাজার কোটি টাকা

অর্থনৈতিক রিপোর্টার ॥ আসন্ন ২০১৬-১৭ অর্থবছরের বাজেটে ঘাটতি ধরা হয়েছে ৯৭ হাজার ২৫৪ কোটি টাকা। যা চলতি অর্থবছরের বাজেট ঘাটতির চেয়ে ১০ হাজার ৮৯ কোটি টাকা বেশি। ঘাটতি মেটাতে আগামী অর্থবছর ৪৩ হাজার ৭৭৪ কোটি টাকা ঋণ নেয়া হবে। বর্তমানে ব্যাংকগুলোর নাজুক পরিস্থিতির মধ্যে এই বিশাল ঘাটতি বাজেটকে নেতিবাচক হিসেবে দেখছেন অর্থনীতিবিদরা। অর্থ মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, আসন্ন বাজেটে ঘাটতি মোকাবিলা করতে তিনটি নীতি অনুসরণ করবে সরকার। এর মধ্যে রয়েছে সরকারের ঋণ ও জিডিপির অনুপাত ক্রমান্বয়ে কমাতে বাজেট ঘাটতি জিডিপির ৫ শতাংশের মধ্যে রাখা; সামষ্টিক অর্থনীতির স্থিতিশীলতা বজায় রাখা ও বেসরকারী খাতে ঋণপ্রবাহ নিশ্চিত করতে সরকারের ব্যাংক ঋণ গ্রহণের পরিমাণ সহনীয় পর্যায়ে রাখা এবং সঞ্চয়পত্রের সুদের হার সমন্বয়ের উদ্যোগ নেয়া। এ প্রসঙ্গে অর্থ মন্ত্রণালয়ের উর্ধতন এক কর্মকর্তা বলেন, ব্যাংকবহির্ভূত উৎস থেকে অর্থায়ন অত্যাধিক বেড়ে যাওয়ায় সুদ পরিশোধের চাপ বাড়বে। এ চাপ এড়াতে এবং ব্যাংকিং খাতের সুদের হার হ্রাসের ফলে সঞ্চয়পত্রের সুদের হার সমন্বয়ের উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। জানা গেছে, বাজেট ঘাটতি মেটাতে সরকার সবচেয়ে বেশি নির্ভরশীল ব্যাংক ঋণ ব্যবস্থার ওপর। বাজেট ঘাটতি পূরণে আগামী অর্থবছর অভ্যন্তরীণ উৎস থেকে ৬৬ হাজার ৩৮৪ কোটি টাকা সংগ্রহ করা হবে। এর মধ্যে শুধু ব্যাংক থেকে নেয়া হবে ৪৩ হাজার ৭৭৪ কোটি টাকা। ব্যাংক ঋণের পরিমাণ জিডিপির ২ দশমিক ২ শতাংশ। চলতি অর্থবছরে সরকার ব্যাংকিং খাত থেকে ঋণ গ্রহণের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছিল ৩১ হাজার ৪৯৮ কোটি টাকা। নতুন বাজেটে ১২ হাজার ২৭৬ কোটি টাকা বেশি লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। এ প্রসঙ্গে বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গবর্নর ড. সালেহ উদ্দিন আহমেদ বলেন, ঘাটতি বাজেট মেটাতে অতিরিক্ত ব্যাংক ঋণ নির্ভরশীল হলে সমস্যা তৈরি হবে। কোনভাবেই বিপুল অংকের ঋণ নেয়া উচিত নয়। কারণ ব্যাংকগুলোর অবস্থা এমনিতেই খুবই খারাপ। বিশেষ করে নানা কেলেঙ্কারির কারণে এ খাতে একটি অস্থিরতা তৈরি হয়েছে। এরপরও সরকার বেশি মাত্রায় ব্যাংক ঋণ নিলে বেসরকারী খাতে ঋণপ্রবাহ কমে যাবে। বাজেটের ঘাটতি মেটাতে আগামী অর্থবছর বৈদেশিক উৎস থেকে ৪৩ হাজার ৮৭০ কোটি টাকা সংগ্রহ করবে সরকার, যা জিডিপির ১ দশমিক ৬ শতাংশ। চলতি বাজেটের ঘাটতি মেটাতে সরকার বিদেশী উৎস থেকে ২৫ হাজার ১৬৭ কোটি টাকা সংগ্রহ করে। বৈদেশিক উৎসের মধ্যে রয়েছে বিদেশী ঋণ, অনুদান ও ঋণ পরিশোধ। নতুন বাজেটে বিদেশী ঋণ নেয়া হবে ৩৪ হাজার ২৪০ কোটি টাকার। চলতি অর্থবছরে এ ঋণের পরিমাণ ছিল ২৭ হাজার ৪৭ কোটি টাকা। বিদেশী ঋণের পরিমাণ বাড়ছে ৭ হাজার ১৯৩ কোটি টাকা। এছাড়া আন্তর্জাতিক পর্যায় থেকে আগামী অর্থবছর অনুদান পাওয়ার লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে ৭ হাজার ২৪০ কোটি টাকা, যা চলতি অর্থবছরের তুলনায় ২ হাজার ১২০ কোটি টাকা বেশি। নতুন বাজেটে বিদেশী ঋণ পরিশোধের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে ১০ হাজার ৬১০ কোটি টাকা। সূত্রে জানা গেছে, নতুন বাজেটের ঘাটতি মেটাতে সঞ্চয়পত্র খাত থেকে সরকার ২২ হাজার ৬১০ কোটি টাকা সংগ্রহের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছে। এটি জিডিপির ১ দশমিক ২ শতাংশ। অবশ্য চলতি বাজেটে সঞ্চয়পত্র থেকে অর্থ সংগ্রহের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছিল ৩০ হাজার ৫০০ কোটি টাকা, যা জিডিপির ১ দশমিক ৮ শতাংশ। অবশ্য চলতি অর্থবছরের প্রথম তিন মাসেই সঞ্চয়পত্র থেকে অর্থ সংগ্রহের লক্ষ্যমাত্রা পূরণ হয়।
×