ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ১৬ এপ্রিল ২০২৪, ৩ বৈশাখ ১৪৩১

ঢাকা আবাহনী ৫-১ ঊষা ক্রীড়া চক্র

ফাইনালে ঊষাকে হারিয়ে চ্যাম্পিয়ন আবাহনী

প্রকাশিত: ০৬:২৮, ১০ মে ২০১৬

ফাইনালে ঊষাকে হারিয়ে চ্যাম্পিয়ন আবাহনী

রুমেল খান ॥ ম্যাচ শুরুর আগে সবচেয়ে মূল্যবান প্রশ্নটা ছিলÑ আবাহনীর তৃতীয়, না ঊষার পঞ্চম? ৭০ মিনিটের চূড়ান্ত দ্বৈরথ শেষে উত্তর পাওয়া গেল (অবশ্য ম্যাচ শেষ হবার অনেক আগেই উত্তরটা কি হতে পারে, সেটা পরিষ্কার জানা হয়ে গিয়েছিল)। আবাহনীর তৃতীয়। ‘মার্সেল ক্লাব কাপ হকি’র শিরোপাটা নিজেদের করে নিল ‘দ্য স্কাই ব্লু ব্রিগেড’রা। সোমবার মওলানা ভাসানী জাতীয় হকি স্টেডিয়ামে অনুষ্ঠিত একপেশে ফাইনালে তারা ৫-১ গোলে হারায় দেশীয় হকির অন্যতম পরাশক্তি ঊষা ক্রীড়া চক্রকে। ঊষার কাছে হারটা কিঞ্চিৎ আক্ষেপের হতে পারে, কেননা ম্যাচের প্রথম গোলটিই করেছিল তারা! এর আগে ২০০৪ এবং ২০০৮ সালে এ আসরের শিরোপা জিতেছিল আবাহনী। তবে তাদের রানার্সআপ হওয়ার তালিকা দীর্ঘ। এ পর্যন্ত তারা পাঁচবার রানার্সআপ হয়েছে। পক্ষান্তরে দশটি ক্লাব কাপের আসরে চারবার করে শিরোপা জিতেছে ঊষা ক্রীড়া চক্র (১৯৯৮, ২০০০, ২০১২ ও ২০১৪)। রানার্সআপ হয়েছে দু’বার। মজার ব্যাপারÑ ২০১২ ও ২০১৪ সালের ফাইনালে এই ঊষার কাছেই হেরেছিল আবাহনী। ফলে সোমবারের ফাইনালে জিতে বদলাটা কড়ায়-গ-ায় নিয়ে নিল আবাহনী! ক্লাব কাপের ইতিহাসে হ্যাটট্রিক শিরোপা কারও নেই। সোমবার ফাইনালে জিতলে সেটাও করে ফেলতো ঊষা। কিন্তু তাদের সেই স্বপ্ন ধূলিসাত করে দেয় আবাহনী। মজার ব্যাপার, ফাইনাল যতটা না হয়েছে এই দুই দলের মধ্যে, তার চেয়েও বেশি হয়েছে দুই দলের দুই কোচের মধ্যে। সেটা কিভাবে? ঢাকা আবাহনীর কোচ মাহবুব হারুন, ঊষার মামুন উর রশীদ। গত ২৫ দিন আগে একই ভেন্যুতে অনুষ্ঠিত হয়েছিল ‘স্বাধীনতা কাপ হকি’র ফাইনাল। যাতে বিমানবাহিনীকে হারিয়ে চ্যাম্পিয়ন হয়েছিল নৌবাহিনী। বিমানবাহিনীর কোচ ছিলেন মামুন, আর নৌবাহিনীর মাহবুব। আরও মজার ব্যাপার, ফাইনালের স্কোর ছিল ৫-১! সোমবারের ফাইনালে খেলার শুরুতে ঊষা বেশ গুছিয়েই খেলে। প্রথম গোলটিও আদায় করে নেয় তারাই। কিন্তু সময় গড়ানোর সঙ্গে সঙ্গে ক্রমেই নিজেদের খোলস ছেড়ে বেরিয়ে আসে আবাহনী। প্রাধান্য বিস্তার করে খেলে তারা। করতে থাকে একের পর এক গোল। ভঙ্গুর হয়ে পড়ে ঊষার রক্ষণভাগ। আক্রমণভাগও হারিয়ে ফেলে খেই। এমনকি তাদের শরীরী ভাষাও ছিল হাল ছেড়ে দেয়ার মতোই। এ ব্যাপারগুলোই কাজে লাগায় আবাহনী। মূলত ম্যাচে লড়াই হয়েছে আবাহনীর চার পাকিস্তানী খেলোয়াড়ের সঙ্গে ঊষার চার মালয়েশিয়ান খেলোয়াড়ের। পাকিস্তানীরাই মূলত গড়ে দিয়েছেন ম্যাচের ভাগ্য। ঊষা মেরিনারের সঙ্গে ২-২ ড্র করে, সাধারণ বীমাকে ৮-০, অ্যাজাক্সকে ৫-০ গোলে হারিয়ে সেমিফাইনালে টাইব্রেকারে মোহামেডানকে ৭-৫ গোলে হারিয়ে ফাইনালে ওঠে। অপরদিকে আবাহনী সোনালী ব্যাংকের সঙ্গে ২-২ গোলে ড্র করে, বাংলাদেশ স্পোর্টিংকে ৫-০, ওয়ারীকে ১০-০ এবং মোহামেডানকে ৪-২ গোলে হারায়। সেমিফাইনালে মেরিনারকে ৩-২ গোলে হারিয়ে ফাইনালে ওঠে। ফাইনালসহ আবাহনী বিপক্ষের জালে বল পাঠিয়েছে ২৯ বার। আর হজম করেছে ৭টি। ঊষা গোল করেছে ২৩টি। হজম করেছে ১২ গোল। চ্যাম্পিয়ন দল হিসেবে আবাহনী পেয়েছে ৭০ হাজার টাকা প্রাইজমানি। রানার্সআপ ঊষা পায় ৩৫ হাজার টাকা। টুর্নামেন্টের সর্বোচ্চ গোলদাতা আবাহনীর মাকসুদ আলম হাবলু (৭ গোল) ও আসরের সেরা খেলোয়াড় আবাহনীর রুম্মান সরকারকে মার্সেলের পক্ষ থেকে হোম এ্যাপ্লায়েন্স দিয়ে উৎসাহিত করা হয়।খেলা শেষে প্রধান অতিথি হিসেবে বিজয়ী ও বিজিত দলকে পুরস্কৃত করেন প্রধান অতিথি বাংলাদেশ বিমানবাহিনী প্রধান ও বাংলাদেশ হকি ফেডারেশনের সভাপতি এয়ার চীফ মার্শাল আবু এসরার, বিবিপি, এনডিসি, এসিএসসি। বিশেষ অতিথি ছিলেন এটিএন বাংলা লিমিটেডের চেয়ারম্যান মাহফুজুর রহমান ও ওয়ালটনের সিনিয়র ডেপুটি ডিরেক্টর এফএম ইকবাল বিন আনোয়ার (ডন)। এ সময়ে বাংলাদেশ হকি ফেডারেশনের সহসভাপতি খাজা রহমতউল্লাহ, সাধারণ সম্পাদক আব্দুস সাদেক, লীগ কমিটির সম্পাদক কাজী মইনুজ্জামান ও ফেডারেশনের অন্য কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন। ম্যাচে ৮ মিনিটে মাঝমাঠ থেকে ইসমাইল আবুর এরিয়াল হিটে বক্সের ডানপ্রান্ত থেকে ফ্লিক করে ঊষাকে এগিয়ে দেন মালয়েশিয়ান ফরোয়ার্ড ফাইজাল বিন শারি (১-০)। ১৫ মিনিটে তৃতীয় পিসি থেকে সমতা আনে আবাহনী। শাফকাত রসুলের পুশ, রুম্মান সরকারের স্টপের পর তৌফিক আরশাদের মাটি কামড়ানো হিটে গোলের সন্ধান পায় আবাহনী (১-১)। ২৭ মিনিটে ২৫ গজ রেখার একটু সামনে থেকে নিখুঁত থ্রু দেন রুম্মান সরকার। পাকিস্তানী ফরোয়ার্ড ইরফান বক্সের মাঝামাঝি স্টিকের কারুকার্যে ঊষার দুই দুমার্কারকে পরাস্ত করে গোল করে এগিয়ে দেন আবাহনীকে (২-১)। ৩৯ মিনিটে একটি কাউন্টার এ্যাটাক থেকে গোল করে ব্যবধান আরেকটু বাড়িয়ে নেয় আবাহনী। মাঝমাঠ থেকে শাফকাত রসুলের কৌণিক হিট বক্সের ডানপ্রান্তে নিয়ন্ত্রণে নেন পাকিস্তানী শাকিল আব্বাসি। কৌণিক হিটে জালে বল পাঠান এই পাকিস্তানী ফরোয়ার্ড। ৪৮ মিনিটে পাকিস্তানী ডিফেন্ডার কাশিফ আলীর স্কুপ ঊষার ২৫ গজ রেখার সামনে আয়ত্তে নিয়ে রিভার্স হিটে দলের চতুর্থ গোল করেন পাকিস্তানী ফরোয়ার্ড শাফকাত রসুল (৪-১)। ৫৬ মিনিটে দলের পঞ্চম পেনাল্টি কর্নার থেকে শাফকাত রসুল পুশ করেন। রুম্মানের স্টপে দলের গোলসংখ্যা বৃদ্ধি করেন আবাহনীর তৌসিফ আরশাদ (৫-১)।
×