ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

ব্রিটেনের গণভোটে ইইউ ত্যাগ নিয়ে হুঁশিয়ারি ক্যামেরনের ॥ হতাশার বহির্প্রকাশ বলল ব্রেক্সিট পরীক্ষা

যুদ্ধের মুখে পড়বে ইউরোপ

প্রকাশিত: ০৪:২৫, ১০ মে ২০১৬

যুদ্ধের মুখে পড়বে ইউরোপ

ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী ডেভিড ক্যামেরন বলেছেন, ইউরোপকে যুদ্ধের মুখে ঠেলে দেয়ার ঝুঁকি বাড়িয়ে দেবে ব্রিটেনের ইইউ ত্যাগ ব্রেক্সিট। তিনি হুঁশিয়ার করে বলেন, আমরা যদি ইউরোপীয় ইউনিয়ন (ইইউ) থেকে প্রস্থান করি তাহলে ব্রিটেনকে চড়া মূল্য দিতে হবে। ক্যামেরন সোমবার স্থানীয় সময় সকাল আটটায় ব্রিটিশ জাদুঘরে ইইউ গণভোট নিয়ে ভাষণ দেন। তার ভাষণের তিন ঘণ্টা পরে লন্ডনের বিদায়ী মেয়র বরিস জনসনের ভাষণ দেয়ার কথা রয়েছে। ধারণা করা হচ্ছে তিনি ইইউ চুক্তি নিয়ে ক্যামেরনকে আক্রমণ করবেন। খবর গার্ডিয়ান ও এএফপির। ২৮টি দেশ নিয়ে গঠিত ইইউতে ব্রিটেনের থাকা বা না থাকা নিয়ে দেশটিতে ২৩ জুন এক গণভোট অনুষ্ঠিত হবে। তবে দেশটির মতামত জরিপগুলোতে দেখা গেছে, ব্রিটেনের বেশির ভাগ নাগরিক এখনও এ ইস্যুতে দ্বিধাবিভক্ত রয়েছে। ক্যামেরন স্যার উইনস্টন চার্চিলের উদ্ধৃতি দিয়ে বলেন, ইউরোপীয় ইউনিয়নের ভিত্তি ইউরোপীয় দেশগুলোকে একত্র হতে সহায়তা করেছে। যারা আগে দশকের পর দশক ধরে একে অপরের বিরুদ্ধে বিবাদে লিপ্ত থাকত। তিনি ভাষণে ট্রাফালগার, ওয়াটারলু ও দুটি বিশ্বযুদ্ধকে প্রমাণ হিসেবে উপস্থাপন করেন যে, ইউরোপের ঘটনার পরিণতি থেকে ব্রিটেন রেহাই পাবেÑ এ দাবি করতে পারে না। ক্যামেরন বলেন, অন্য ব্রিটিশ নির্বাচনের মতোই ২৩ জুন জনগণ ভোট দেবেন। তবে এবারের ভোট ভিন্ন। কারণ জনগণ যে সিদ্ধান্ত নেবেন তা হবে সারাজীবনের জন্য। যারা ইইউ ত্যাগ করতে চান তাদের মতামতের প্রতি তার শ্রদ্ধাও রয়েছে। তবে তিনি মনে করেন, ইইউ’র মধ্যে থাকলেই নিরাপদ, শক্তিশালী ও ভাল থাকবে ব্রিটেন। ক্যামেরন বলেন, ইইউয়ে থাকলে আমরা চার কারণে নিরাপদ। প্রথমত, আমরা ইইউতে থাকি বা না থাকি, ইউরোপে যাই ঘটুক তা আমাদের ওপর প্রভাব ফেলে। দ্বিতীয়ত, সংখ্যাই শক্তি। তাই ইইউ সহযোগীদের সঙ্গে আমরা নিরাপদ। তৃতীয়ত, সাইবার অপরাধের মতো জটিলতার অর্থ হলো, অন্যদের সঙ্গে আমাদের সহযোগিতা প্রয়োজন এবং চতুর্থত ইইউ আমাদের শক্তির যোগানদাতা। তিনি সতর্ক করে বলেন, সাম্প্রতিক বছরগুলোতে ইউরোপে যে শান্তি ও স্থিতিশীলতা রয়েছে, তা হুমকির মধ্যে পড়বে। জর্জিয়া ও ইউক্রেনে রাশিয়ার আগ্রাসনের কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, আমাদের উপমহাদেশে যে শান্তি ও স্থিতিশীলতা সন্দেহাতীতভাবে নিশ্চিত বজায় রয়েছে, এ বিষয়ে আমরা কি পুরোপুরি আশ্বস্ত থাকতে পারি? আমাদের কি সেই ঝুঁকি নেয়া ঠিক হবে? তবে আমি সেই ঝুঁকি নিতে প্রস্তুতি নই। ক্যামেরন বলেন, মাত্র ২০ বছর আগেও বলকান অঞ্চলে যুদ্ধ ছিল এবং ইইউ ওই অঞ্চলে শান্তি ফিরিয়ে আনতে ভূমিকা রাখে। তিনি আরও বলেন, ইইউ ত্যাগ করলে স্কটল্যান্ড স্বাধীন হয়ে যুক্তরাজ্য ভেঙ্গে যাবে এবং দুর্বল হয়ে পড়বে। ব্রিটেনের ইইউ ত্যাগের পক্ষ ‘লিভ ক্যাম্পেইন’ এর প্রতিক্রিয়ায় বলেছে, ক্যামরনের ভাষণে হতাশাই প্রকাশ পেয়েছে এবং তা ভোটারদের মনে ভয় সৃষ্টিরই আরেক দৃষ্টান্ত। এদিকে ব্রিটেনের ত্যাগের ইইউ থেকে প্রস্থানের ফলে ইউরোপীয় সহযোগিতার ক্ষেত্রে অচিন্তনীয় পরিনীতির সৃষ্টি হবে। ইউরোপীয় কমিশনের (ইসি) প্রধান জ্যাঁ ক্লদ জাঙ্কার জার্মান সংবাদমাধ্যম ফাঙ্ক মিডিয়ান গ্রুপকে দেয়া এক সাক্ষাতকারে এ কথা বলেছেন। সাক্ষাতকারটি সোমবার প্রকাশিত হয়েছে। সাক্ষাতকারে জাঙ্কার সতর্ক করে বলেন, তথাকথিত ব্রেক্সিট অবশ্যই ইউরোপীয় সহযোগিতার ক্ষেত্রে এমন অভাবনীয় পরিনীতি বয়ে আনতে পারে, যা নিয়ে আমি আঁচ অনুমানও ব্যক্ত করতে চাই না। কারণ আমি বিশ্বাস করি ব্রিটিশরা যুক্তিসঙ্গত সিদ্ধান্তই নেবে। সব ইউরোপীয়ই চায়, ব্রিটেন পরিবারের সঙ্গে থাকুক। ব্রিটেন প্রথম ১৯৭৩ সালে ইউরোপিয়ান ইকোনমিক কমিউনিটিতে (ইইসি) যোগ দেয়। এর দুই বছর পরে গণভোটে ৬৭ শতাংশ জনগণের সমর্থন নিয়ে ব্রিটেন ইইউর সদস্য হয়। কিন্তু ইউরো ও পাসপোর্ট-মুক্ত শেনঝেন জোনসহ গুরুত্বপূর্ণ ইস্যুতে ব্রাসেলসের সঙ্গে ব্রিটেনের টানাপোড়েন চলছে।
×