ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

বিচ্ছিন্ন সহিংসতা

প্রকাশিত: ০৪:১৬, ১০ মে ২০১৬

বিচ্ছিন্ন সহিংসতা

ইউনিয়ন পরিষদ (ইউপি) নির্বাচনে আধিপত্যকে কেন্দ্র করে সংঘাত-সংঘর্ষের ঘটনা নতুন নয়। বিগত সময়ে বিভিন্ন ইউপিতে ভোটের দিন কেন্দ্র দখল নিয়ে সংঘর্ষে ব্যাপক হতাহতের ঘটনা ঘটেছে। প্রকাশ্যে অস্ত্র প্রদর্শনের দৃশ্যও দেখা গেছে। মূলত গ্রামে শান্তিশৃঙ্খলা রক্ষার লক্ষ্যে দীর্ঘ ঐতিহ্যের ধারক যে ইউপি গঠিত, সেই ইউপি নির্বাচনে অশান্তির আগুন দাউ দাউ করে জ্বলার ঘটনাও নতুন নয়। নির্বাচন সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণভাবে সম্পন্ন করা নির্বাচন কমিশনের জন্য একটি বড় চ্যালেঞ্জ সব সময়। সে ক্ষেত্রে কমিশনের কাঠামো, নেতৃত্বদান, পরিকল্পনা ও দক্ষতায় ঘাটতি থাকলে স্বাভাবিক পরিস্থিতি ক্ষুণœ হতে বাধ্য। এবারই প্রথম দেশে দলীয় প্রতীকে ইউপি নির্বাচন হচ্ছে এবং তা কেবল চেয়ারম্যান পদে। দলীয়ভাবে নির্বাচন হওয়ার কারণে তৃণমূল পর্যায়ে রাজনৈতিক দলগুলোর অবস্থা ও সাংগঠনিক অবস্থান কোন্ পর্যায়ে তা স্পষ্ট হয়েছে। দলের কেন্দ্রীয় ছায়া তৃণমূল নেতাকর্মীদের ওপর প্রভাব বিস্তার করেছে যেমন, তেমনি আবার দলে সৃষ্টি করেছে বিভেদ বিভক্তি। নিয়ন্ত্রণহীনতার দিকটিও উন্মোচিত হয়েছে প্রকটভাবে। মনোনয়ন বাণিজ্য নিয়ে কেন্দ্রীয় নেতাদের বিরুদ্ধে অভিযোগের সুরাহা না হওয়ায় দলের তৃণমূল পর্যায়ে পর্যন্ত দুর্নীতির বিস্তার ঘটার সম্ভাবনাকে উড়িয়ে দেয়া যায় না। বিগত সময় নির্বাচনে অর্থ ও পেশীশক্তি ব্যবহৃত হয়েছে। অনেক সময় নির্বাচনী দায়িত্বে থাকা প্রশাসনিক ও পুলিশ কর্মকর্তারা প্রার্থীদের অর্থ দ্বারা প্রভাবিত হয়েছেন। এবার দলীয় প্রার্থী হওয়ার কারণে দলীয় কর্মী-সমর্থকরা নির্বাচনী তৎপরতায় ব্যাপক অংশ নিচ্ছে। অনেক স্থানে ভোটারদের ভয়ভীতি প্রদর্শন করার খবরও প্রকাশ হচ্ছে। মনোনয়নপত্র জমাদানে বাধাদান, মনোনয়নপত্র কেড়ে নেয়া বা ছিঁড়ে ফেলার কারণে অনেক প্রার্থী মনোনয়নপত্র জমা দিতে পারেননি। অনেকে ভয়ভীতি ও চাপের কারণে তা প্রত্যাহার করতে বাধ্য হয়েছেন। নির্বাচনে নারী প্রার্থীর সংখ্যা ব্যাপক ছিল না। দলগুলো এক্ষেত্রে নারীদের উপেক্ষা করেছে বলা যায়। নির্বাচনে সহিংসতা ও অনিয়মের পাশাপাশি ভোটারদের হুমকি প্রদান, প্রকাশ্যে অস্ত্রের ব্যবহার, ব্যালট বাক্স ছিনিয়ে নেয়ার চেষ্টাÑএ সবই নির্বাচন কমিশনের যোগ্যতা, দক্ষতা এবং প্রস্তুতিহীনতাকেই তুলে ধরে। ছয় ধাপে অনুষ্ঠেয় এ নির্বাচনের চারটি ধাপ শেষ হয়েছে। নির্বাচন ও নির্বাচন-পরবর্তী সহিংসতায় ৭৪ জনের প্রাণহানি ও ছয় সহস্রাধিক আহত হয়েছে। এলাকায় প্রভাব বিস্তারকে কেন্দ্র করে দলীয় নেতাকর্মীদের দ্বন্দ্ব, লড়াই. সংঘাত-সংঘর্ষের যে পরিস্থিতি সৃষ্টি করেছে, তা নিরসনে কমিশন রাজনৈতিক দলগুলোর ওপর চাপ প্রয়োগ করতে পারত। নির্বাচনী এলাকায় প্রচার চালানোর জন্য আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখার দায়িত্বটাও কমিশনের পালন করা সংগত। কেননা কমিশন দায়িত্ব পালনের ক্ষেত্রে স্বাধীন। তৃণমূল পর্যায়ে নির্বাচন পরিচালনায় কমিশন রাজনৈতিক দলগুলোর স্থানীয় পর্যায়ের নেতৃবৃন্দের সঙ্গে বৈঠক করে সুষ্ঠু নির্বাচনের পদক্ষেপ নেয়ার বিষয়টি এড়িয়ে গেছে। নির্বাচনে কোথাও কোথাও উদাসীনতা ও শৈথিল্যের মাত্রা এমনই ছিল যে, কমিশনের ওপর মানুষের আস্থাহীনতা তৈরি হতে বাধ্য। নির্বাচনী আইন সঠিকভাবে পালনে রাজনৈতিক দলগুলোও অবিবেচনামূলক আচরণ করেছে। দলীয়ভাবে স্থানীয় সরকার নির্বাচন করার ক্ষেত্রে দলগুলো সঠিক ভূমিকা নিতে পারত। কিন্তু স্থানীয় আধিপত্য বজায় রাখার লড়াইয়ে জানমাল যেখানে তুচ্ছ হয়ে যায়, সেখানে নির্বাচন-পরবর্তী স্বাভাবিক পরিস্থিতি ফিরে আনা সহজসাধ্য নয়। সরকার ও বিরোধী দল কেউই কমিশনের কার্যক্রমে সন্তুষ্ট নয়। আর কমিশনও তাদের মেয়াদ শেষ হয়ে আসায় সম্ভবত দায়সারাগোছের তৎপরতা চালিয়েছে। তৃণমূল পর্যায়ে রাজনৈতিক মতাদর্শ, সাংগঠনিক শৃঙ্খলা যে পৌঁছাতে পারেনি, দলীয় পদ্ধতির নির্বাচনে তা প্রমাণিত হলো। চার ধাপের নির্বাচনের ব্যর্থতা থেকে শিক্ষা নিয়ে কমিশন আগামী দুই ধাপের নির্বাচন শান্তিপূর্ণ ও সুষ্ঠু করার জন্য সর্বাত্মক প্রচেষ্টা চালালে দেশ ও জাতি উপকৃত হবে। রক্ষা পাবে নির্বাচনীবিধি ব্যবস্থা।
×