ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ১৯ মার্চ ২০২৪, ৫ চৈত্র ১৪৩০

রেজা ফারুক

যতনে মাখা মায়ের প্রিয় মুখ

প্রকাশিত: ০৭:০১, ৯ মে ২০১৬

যতনে মাখা মায়ের প্রিয় মুখ

হৃদয়ের যত গভীরেই ডুব দিয়ে যাওয়া হোক না কেন। সেখানে-হৃৎস্পন্দনের প্রতিটি স্পন্দনে যে শব্দের অনুরণনটা গাঢ় আবেগ আর আকুলতা নিয়ে গুঞ্জরিত হবে সে শব্দটি হলো পৃথিবীর সবচেয়ে মধুর। সব থেকে কাছের এবং সবচেয়ে প্রিয় আশ্রয়স্থল আর এক বিশাল ছায়ার নামই মা। যার গহনে সন্তানের জন্যে রয়েছে এমন এক ধনসম্পদ, মনিরতœরাজি। যা আর কিছুতেই খুঁজে পাওয়া যাবে না। এমনকি এই মা’এর সঙ্গে কোন কিছুরই তুলনা হয় না। মা মানেই এক অন্য এক জগত। অন্য এক জীবন। যে জীবনে মায়ের কোন বিকল্প নেই। জন্ম থেকে জীবনের প্রতিটি বাঁকে বাঁকে মায়ের অবস্থান সন্তানের কাছে অসীম মূল্যবান। শুধু কী মূল্য বা সহামূল্যবান বলাই শ্রেয়। কেননা, শৈশব যে কৈশোর, তারুণ্য, যৌবন, পৌঢ়ত্বের সিঁড়ি পেরিয়ে এসেও সন্তানের কাছে মায়ের মতো কোন সৃজিত সম্পর্ক খুঁজে পাওয়া যাবে না পৃথিবীর কোন প্রান্তেই। মা মানেই একটা গোছানো-মোছানো সংসারের প্রতিচ্ছবি। যে কোন প্রয়োজনে, অপ্রয়োজনেও যেন মা-ই সন্তানের কাছে জাগতিক জীবনে সবচেয়ে বিশাল এক ভরসাস্থল। সৃষ্টির সূচনা থেকেই মায়ের সঙ্গে সন্তানের যে নাড়ির সম্পর্ক সৃষ্টিকর্তা রচনা করে দিয়েছেন। তার আর অন্য কোন দৃশ্যপট নেই। সন্তানের কাছে তাই মা হলো আনন্দ-বেদনার সর্বশ্রেষ্ঠ অংশীদার। পারিবারিক জীবনে একজন মায়ের যে ভূমিকা-তা আর অন্য কোন সম্পর্কের মধ্যে রচিত হয়নি। পৃথিবীর সবদেশে, সব জায়গায় সন্তানের কাছে অত্যন্ত কাছের মানুষটি হলেন জন্মদাত্রী মা। পৃথিবীর আলো দেখার আগেই সন্তান দেখে ফেলে মায়ের প্রিয় মানবিক দরদভরা মুখটি। যে মুখের ক্যানভাসে আঁকা হয়ে আছে সন্তানের জন্য রাজ্যের যত কল্যাণকর শুভকামনা, দোয়া, আশীর্বাদ, ভালবাসা মঙ্গলাকাক্সক্ষীসহ পৃথিবীর যাবতীয় ভাললাগাটাও যেন মা-সন্তানের জন্যই তুলে রাখেন পরম যতেœ। আদর, স্নেহের এক অফুরন্ত সমুদ্র যেন মা। আর তাই মাকে ঘিরেই পৃথিবীর সব ভাষায় রচিত হয়েছে এমন সব হৃদয়স্পর্শী, ক্ল্যাসিক কবিতা, উপন্যাস গল্প চলচ্চিত্র নাটক যা আর অন্য কাউকে নিয়ে হয়নি। পৃথিবীর সব ভাষার সঙ্গীতেই মা নিয়ে বন্দনার শেষ নেই। মা এ একটি শব্দের অরণ্যে যে সবুজের বিশালত্বÑ সেই বিশালত্বের প্রতিটি ছত্রে পল্লবিত হয়ে আছে মায়ের যত শান্তির নিগূঢ় বার্তা। আকাশ, পাহাড়, নদী, নিসর্গ, চাঁদ, সূর্য, নক্ষত্রের যত কাছেই যাওয়া হোক না কেন, সেখানেও অতি আবেগ আর আকুলতার তুলিতে অঙ্কিত হয়ে আছে মায়ের প্রিয় মুখচ্ছবিটিই। তুলনাহীন এক সম্পর্কের নাম হলো মা। তাই পৃথিবী সৃষ্টির পর মানুষ সৃষ্টির মধ্য দিয়ে মাকে দেয়া হয়েছে এমন এক আসন, যে আসনটি সন্তানের কাছে স্বর্র্র্র্গীয় সুখে সঙ্গে তুলনীয়। শৈশবের মায়ের কোল, মাতৃশাসন, মাতৃস্নেহ সবকিছুতেই যে রয়েছে এক অলক্ষণীয় প্রতিবিম্ব। যা আর কিছুতে নেই। সন্তানের যে কোন প্রয়োজনে মা-ই হয়ে ওঠেন সব থেকে বড় অবলম্বন। অজান্তেই যেন সন্তানের বিশেষ মুহূর্তে মায়ের মুখটি সবার আগে মনে পড়ে। মা সন্তানের জীবনে এমন এক অস্তিত্ব ধারণ করে আছে, বাস্তবিক অর্থে তাই সন্তান জীবনের প্রতিটি স্তবকে এসে নিবিড়ভাবে অনুভব আর হৃদয় দিয়ে উপলব্ধি করে মাকে। মাকে নিয়ে গল্পের শেষ নেই। উপাখ্যান আর কিংবদন্তির সীমা- পরিসীমা নেই। আর ক’দিন বাদেই সমগ্র বিশ্বব্যাপী উদযাপতি হবে বিশ্ব ‘মা দিবস’। এই দিনে পৃথিবীর সব সন্তান তার মাকে গভীরভাবে স্মরণ করবে, সঙ্গ দেবে। যে-যে অবস্থানেই থাকুক মায়ের অবস্থান আর অস্তিত্বের প্রতি ব্যাকুল শ্রদ্ধা নিবেদন করবে। এই শ্রদ্ধা নিবেদনে থাকবে একেক দেশের একেক সংস্কৃতি। একেক রকম কৃষ্টি আর ধরন। বাঙালী মায়েদের জন্যও থাকবে তাদের প্রিয় সন্তানের অনিঃশেষ অন্তর নিঙড়ানো ভালবাসা। বিশ্ব মা দিবসে অন্যান্য বছরের মতো এবারেও থাকবে নানা আয়োজন। এই আয়োজনের একটা ধারা এসে ফোয়ারার মতো ঝরে পড়বে ফ্যাশন ধারার শৈল্পিক অঙ্গনেও। যে অঙ্গনটি এত ফুলে-ফলে সুশোভিত হয়ে উঠেছে। প্রতিষ্ঠিত বুটিকশপে মা দিবসকে উপলক্ষ করে ইতোমধ্যে মায়ের জন্য বিশেষ পোশাক, গিফট আইটেমের সমারোহ ঘটেছে। প্রিয় মাকে শুভেচ্ছা জানানোর লক্ষ্যে ফ্যাশন হাউসগুলোর উদ্যোগ নগরজীবনে এরই মধ্যে বেশ জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে। এই শুভ মুহূর্তটিকে আনন্দময় করে তুলতে। মায়ের মুখে এক টুকরো উচ্ছ্বাসময় হাসি ফুটিয়ে তুলতে তাই সন্তাদের দিক থেকেও প্রস্তুতির যেন শেষ নেই। এদিক থেকে মা’র জন্য একটা উপযোগী শাড়ি, সালোয়ার কামিজ, বই, কলম শোপিস কিংবা মা যা পছন্দ করেনÑ তা দিয়ে তাঁকে খুশি করার জন্য সাধ্য মতো চেষ্টার কী কোন কমতি থাকতে পারে? বিশ্ব মা দিবসে মাকে ঘিরে কত না গল্প রচিত হবে। পৃথিবীর সর্বশ্রেষ্ঠ নিরাপদ মায়ের কোলে মাথা রেখে এই দিনে অনেকেই হয়ত শুনবে শৈশব-কৈশোরের গল্প। দূরে থাকা মাকে এই দিনে কেউ ফোনে উইশ করতে গিয়ে আবেগাপ্লুত হয়ে উঠবে হয়ত এক পশলা কান্নায়ও ডুবে যেতে পারে। কেউ কেউ কান্না সংবরণ করলেও গলার ভেজা স্বরটাকে লুকাতে পারবে না। কণ্ঠে ঝরে পড়বে মায়ের জন্য দিগন্তবিস্তৃত আকুতি। আনন্দ-আবেগ-ভালবাসায় বিশ্ব মা দিবসটি পৃথিবীর সব দেশেই সিক্ত হবে আর সন্তানের শ্রদ্ধায় ভরে উঠবে মায়ের প্রসন্ন করতল। ছবি :আরিফ আহমেদ মডেল : বাঁধন ও তার মেয়ে
×