ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

উত্তরাঞ্চলে বোরো ধানের বাজারে সিন্ডিকেট ব্যবসায়ীরা ফায়দা লুটছে

প্রকাশিত: ১৯:৩২, ৮ মে ২০১৬

উত্তরাঞ্চলে বোরো ধানের  বাজারে সিন্ডিকেট ব্যবসায়ীরা ফায়দা লুটছে

স্টফ রিপোর্টার ,নীলফামারী ॥ শস্যভান্ডার হিসাবে খ্যাত রংপুর ও দিনাজপুর কৃষি অঞ্চলের আট জেলায় এবার বোরো ধানের বা¤পার ফলন হয়েছে। ফলন বাম্পার হলেও হাট বাজারে ধানের চরম দরপতন ঘটিয়ে সিন্ডিকেট ব্যবসায়ীরা ফায়দা লুটছে বলে বোরোচাষীরা অভিযোগ তুলেছে। তাদের দাবি সিন্ডিকেটদের না দমালে তারা ধানের সঠিক মুল্য হতে বঞ্চিত হবে। কৃষি বিভাগের তথ্য অনুযায়ী, প্রতি কেজি ধানের উৎপাদন খরচ পড়েছে সাড়ে ১৭ টাকা, যা প্রতি মণে দাঁড়ায় প্রায় ৭০০ টাকা। আর এই ধান হাটে এখন বিক্রি হচ্ছে ৪৮০ থেকে ৫০০ টাকায়। রংপুরের পাঁচ জেলা রংপুর, কুড়িগ্রাম, লালমনিরহাট, নীলফামারী ও গাইবান্ধায় এবার বোরো ধান চাষ হয়েছে ৫ লাখ ১ হাজার ৯৬৪ হেক্টর জমিতে। এরমধ্যে ১ লাখ ৪২ হাজার ১১০ হেক্টর জমিতে হাইব্রিড, ৩ লাখ ৫৭ হাজার ৬৩২ হেক্টর জমিতে উফশী জাতের ও ২ হাজার ২২২ হেক্টর জমিতে স্থানীয় জাতের বোরো ধানের চাষ করা হয়। অপরদিকে দিনাজপুর কৃষি অঞ্চলের তিন জেলা দিনাজুপুর, ঠাকুরগাঁও ও পঞ্চগড়ে এবার বোরো ধান চাষ হয়েছে দুই লাখ ৬৯ হাজার ৭২৫ হেক্টরে। এরমধ্যে ৪০ হাজার ৭২৫ হেক্টর জমিতে হাইব্রিড, ২ লাখ ২৯ হাজার হেক্টর জমিতে উফশী জাতের বোরো ধানের চাষ করা হয়। ফলনও হয় বাম্পার। চলতি মাসের ১৫ তারিখের মধ্যে ধান কাটা শেষ হয়ে যাবে। কৃষকরা বলছে বোরো ধানের শুরতেই বাজারে দরপতন ঘটেছে। যখন হাট বাজার ধানে ধানে সয়লাব হয়ে যাবে তখন চারশত টাকা মন দরে ধান বিক্রি করা যাবে কিনা এ নিয়ে সন্দেহ রয়েছে। কৃষকদের সাথে কথা বলে জানা গেছে, এক বিঘা জমিতে বোরো আবাদে এ বছর খরচ হয়েছে কমপক্ষে ১২ হাজার ৫৫০ টাকা। এর মধ্যে বীজসহ বীজতলা তৈরিতে ৫০০ টাকা, জমি তৈরিতে ১ হাজার টাকা, চারা রোপনে ১ হাজার টাকা, রাসায়নিক সার ১ হাজার ৩৫০ টাকা, নিড়ানী খরচ ১ হাজার ৫০০ টাকা, সেচ প্রদান ২ হাজার টাকা, কীটনাশক ২০০ টাকা, গোবর সার ৫০০ টাকা, কর্তন ৮০০ টাকা, মাড়াই ও পরিবহন খরচ ১ হাজার ২০০ টাকা এবং জমির ভাড়া বাবদ ২ হাজার টাকা। চাষিরা জানান, প্রতি বিঘা জমিতে গড় ফলন ১৮ মণ ধরা হলেও ৫০০ টাকা মণ ধরে যার মূল্য দাঁড়ায় নয় হাজার টাকা। এতে প্রতি বিঘা জমির ধান উৎপাদনে তিন হাজার ৫০ টাকা লোকসান গুণতে হবে। সিন্ডিকেট ব্যবসায়ীরা বোরো ধানের শুরুতেই দরপতনের খেলায় মেতে উঠে ফায়দা লুটছে। গত ৫ মে থেকে সরকারীভাবে বোরোধান ক্রয় অভিযান শুরু হলেও সেখানে কৃষকরা ধান দিতে পারছেনা। অভিযোগ ধান ব্যবসয়ীরা সেখানেও সিন্ডিকেট শুরু করেছে। তবে বিভিন্ন অটো রাইচ মিলের মালিকরা জানায় তারা হাটবাজার থেকে কমিশনের মাধ্যমে ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে ধান ক্রয় করেন। তাদের হাতে সিন্ডিকেট নেই। সিন্ডিকেট হাট বাজারের আড়ৎখানায়। কৃষক রিয়াজ মিয়া বলেন, রবিবার সকালে তিনি এক মণ ধান নীলফামারীর হাটে এনেছিলেন, দাম না থাকায় ফেরত নিয়ে যাচ্ছেন। তবে ক্ষতি হলেও হাটে আধা মণ ধান বিক্রি করে কৃষক অলিউর মিয়া। তিনি বলেন, আধা মণ ধান বেচেয়া (বিক্রি) ২৪০ টাকা পাইছি। বোরো কৃষক আমিনুর রহমান বলেন, তিনি প্রায় এক একর জমির ধান কেটে ঘরে তুলেছেন। প্রতি মণ ধানের উৎপাদন খরচ পড়েছে প্রায় ৬৮০ টাকা। এই ধান বাজারে বিক্রি হচ্ছে ৪৭০-৪৮০ টাকায়। এখন ধান বিক্রি করলে অনেক ক্ষতি। তাই বিক্রি না করে রেখে দিয়েছেন। হাটবাজারে সিন্ডিকেট ব্যবসায়ীরা ধানের বাজার মূল্য ধ্বস নামিয়েছে। এদের দমানো জরুরী হয়ে পড়েছে। তা না হলে কৃষকরা সঠিক ধানের মূল্য হতে বঞ্চিত হবে। কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের এক হিসাবমতে এ বছর প্রতি কেজি বোরো ধান উৎপাদনে খরচ পড়েছে ১৭ টাকা ৫২ পয়সা। এ হিসাবে মণপ্রতি খরচ দাঁড়ায় ৭০০ টাকা ।
×