ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১০ বৈশাখ ১৪৩১

চট্টগ্রাম আবাহনী চ্যাম্পিয়ন

প্রকাশিত: ০৬:১৪, ৮ মে ২০১৬

চট্টগ্রাম আবাহনী চ্যাম্পিয়ন

রুমেল খান ॥ ‘অল আবাহনী’ দ্বৈরথে জয়ের হাসি হাসলো চট্টগ্রাম আবাহনীই। বন্দরনগরীর দলটি তাদের ক্লাব ইতিহাসের প্রথম ঘরোয়া শিরোপাটি জিতলো শনিবার বঙ্গবন্ধু জাতীয় স্টেডিয়ামে। কেএফসি স্বাধীনতা কাপ ফুটবল টুর্নামেন্টের ফাইনালে তারা ২-০ গোলে হারিয়েছে ঢাকা আবাহনীকে। সার্বিকভাবে এটা চট্টলার ক্লাবটির দ্বিতীয় বড় কোন শিরোপা। এর আগে গত বছরের অক্টোবরে শেখ কামাল আন্তর্জাতিক ক্লাব কাপ ফুটবল টুর্নামেন্টেও চ্যাম্পিয়ন হয়েছিল তারা। এই আসরের শিরোপা ঢাকা আবাহনী সর্বশেষ জিতেছিল সেই ১৯৮৯-৯০ মৌসুমে। আর সার্বিকভাবে সর্বশেষ শিরোপা জিতেছিল ২০১১ সালের সুপার কাপে। এই আসরের নতুন চ্যাম্পিয়ন দল হিসেবে নাম লেখালো চট্টগ্রাম আবাহনী। প্রথমার্ধে কোন গোল না পেয়েই বিরতিতে যায় দুই আবাহনী। উভয় দলই পরস্পরের বিরুদ্ধে আক্রমণ-পাল্টা আক্রমণ শানায়। কিন্তু তাতে সফলতা আসেনি। গোল করার তাড়নায় দ্বিতীয়ার্ধে অন্য রূপে মাঠে নামে চট্টগ্রাম আবাহনী। ৫৫ মিনিটে সফলও হয় তারা। রুবেল মিয়ার পাস থেকে বল পান হাইতিয়ান ফরোয়ার্ড লিওনেল প্রিয়ক্স। বল আয়ত্তে নিতে এগিয়ে এসেছিলেন ঢাকা আবাহনীর গোলরক্ষক শাকিল। কিন্তু তাকে কাটিয়ে ডানপ্রান্ত দিয়ে পোস্টের খুব কাছে পৌঁছে যান প্রিয়ক্স। নিশ্চিত গোল জেনে আয়েশী ভঙ্গিতে ডান পায়ে বল জালে ঠেলে দেন এই হাইতিয়ান (১-০)। ৬১ মিনিটে ব্যবধান দ্বিগুণ করে বন্দর নগরীর দলটি। কৌশিক বড়ুয়ার পাসে বল পেয়ে এক চমৎকার বাইসাইকেল কিকে দারুণ এক গোল করেন রুবেল মিয়া (২-০)। ৮৮ মিনিটে বক্সের বাইরে থেকে ওয়ালী ফয়সালের শট ক্লিয়ার করেন চট্টগ্রাম আবাহনীর এক ডিফেন্ডার। শেষ পর্যন্ত আর ম্যাচে ফেরা হয়নি ঢাকা আবাহনীর। ফলে ২-০ গোলের জয়ে প্রথমবারের মতো স্বাধীনতা কাপের শিরোপা জেতে চট্টগ্রাম আবাহনী। খেলা শুরুর আগে এক ফুটবলপ্রেমী মজা করে বলেন, চূড়ান্ত মহারণে যেই জিতুক, শিরোপা যাচ্ছে আবাহনীর ঘরেই! স্বাধীনতা কাপে এবার অংশ নেয় ১২ দল। টুর্নামেন্টে অংশ নেয়ার জন্য প্রতিটি দল পায় এক লাখ টাকা করে। চ্যাম্পিয়ন দল পায় পাঁচ লাখ টাকা ও ট্রফি। রানার্সআপ দল পায় তিন লাখ টাকা ও ট্রফি। ম্যাচসেরার পুরস্কারটি পান শিরোপা জয়ী দলের ফরোয়ার্ড রুবেল মিয়া। তিনি পান ২৫ হাজার টাকা। মোস্ট ভ্যালুয়েবল ফুটবলারও চট্টগ্রাম আবাহনীর। তিনি হাইতিয়ান ফরোয়ার্ড লিওনেল সেইন্ট প্রিয়ক্স (২৫ হজার টাকা)। শিরোপা জেতায় ক্লাবের ফুটবলারদের দশ লাখ টাকা বোনাস দেন চট্টগ্রাম আবাহনীর ফুটবল কমিটির চেয়ারম্যান তরফদার মোঃ রুহুল আমিন। শনিবার পুরস্কার বিতরণী অনুষ্ঠানে তিনি বলেন, ‘বোনাস ঘোষণাটা গত রাতেই (শুক্রবার) দিয়েছি। শিরোপা জেতায় দলকে দশ লাখ টাকা বোনাস দেয়া হবে।’ ২০১৪ সালের সর্বশেষ আসরে চ্যাম্পিয়ন হয়েছিল মোহামেডান। ফাইনালে তারা হারিয়েছিল ফেনী সকার ক্লাবকে। ফাইনাল শেষে পুরস্কার বিতরণ করেন যুব ও ক্রীড়া প্রতিমন্ত্রী বীরেন শিকদার। আরও উপস্থিত ছিলেন বাফুফের সিনিয়র সহ-সভাপতি সালাম মুর্শেদী, সাধারণ সম্পাদক আবু নাইম সোহাগ প্রমুখ। এবারের এই টুর্নামেন্টে যে দুটি দল ফাইনালে ওঠে, তারা নিজ নিজ গ্রুপের রানার্সআপ দল (‘এ’ গ্রুপের চট্টগ্রাম আবাহনী, ‘বি’ গ্রুপের ঢাকা আবাহনী)! এক্ষেত্রে ‘এ’ এবং ‘বি’ গ্রুপের দুই চ্যাম্পিয়ন দল শেখ জামাল ধানম-ি ক্লাব লিমিটেড এবং শেখ রাসেল ক্রীড়া চক্র লিমিটেড সেমিফাইনালে হেরে বিদায় নেয়। ঢাকা আবাহনী ৬-০ গোলে হারায় শেখ জামালকে। টাইব্রেকারে চট্টগ্রাম আবাহনী ৪-২ (১-১) গোলে হারায় শেখ রাসেলকে। দুই আবাহনীর সাম্প্রতিক লড়াইয়ের হেড হেড টু এরকম : ২০১৪ সালে নিটল টাটা বাংলাদেশ প্রিমিয়ার ফুটবল লীগে দুবারই ঢাকা আবাহনীকে রুখে দেয় চট্টগ্রাম আবাহনী (১-১ এবং ০-০)। ২০১৫ সালের ২২ অক্টোবর সর্বশেষ দু’দল মুখোমুখি হয়েছিল চট্টগ্রামে। শেখ কামাল আন্তর্জাতিক ক্লাব কাপ ফুটবল টুর্নামেন্টে গ্রুপ ম্যাচে চট্টগ্রাম ১-০ গোলে হারিয়েছিল ঢাকা আবাহনীকে। তার মানে সর্বশেষ তিনবারের মোকাবেলায় ঢাকা একবারও হারাতে পারেনি চট্টলার দলটিকে। শনিবারও পারল না। এই আসরে ফাইনালের আগ পর্যন্ত ঢাকা আবাহনী ছিল অপরাজিত। ফাইনাল শেষে এই গৌরব আর ধরে রাখতে পারেনি আবাহনী।
×