ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১

শাস্তি মওকুফ হচ্ছে চার ফুটবলারের!

প্রকাশিত: ০৬:১৩, ৮ মে ২০১৬

শাস্তি মওকুফ হচ্ছে চার ফুটবলারের!

স্পোর্টস রিপোর্টার ॥ আদালতের রায়ে সাজাপ্রাপ্ত আসামি যদি কারাগারে ভদ্র বা সন্তোষজনক আচরণ করে, তাহলে তার শাস্তির মেয়াদ হ্রাস করা হয় বা মুক্তি দেয়া হয়। বাংলাদেশের ফুটবলেও তেমনটাই ঘটেছে, ঘটছে এবং হয়তোবা ভবিষ্যতেও ঘটবে। এখানে জাতীয় দলের হয়ে খেলার সময় কোন অপরাধ করলে শাস্তি দেয়া হয় ফুটবলারদের। কিন্তু শাস্তির মেয়াদ শেষ হওয়ার আগেই তার শাস্তি মাফ করে দেয়া হয়। ফুটবলবোদ্ধাদের মতেÑ এমনটা চলতে থাকলে ভবিষ্যতে জাতীয় দলে এরকম অপরাধ আরও করবে ফুটবলাররা। কারণ তারা তো জানেই, এই শাস্তি সাময়িক, মাফ তো পাওয়া যাবেই। অনেকটা ‘সাত খুন’ মাপের মতোই। ‘জাতীয় দলের শাস্তিপ্রাপ্ত চার ফুটবলার যদি আন্তরিকভাবে ক্ষমা চায়, তাহলে তাদের শাস্তি মওকুফ বিবেচনা করা হবে।’ শনিবার বাংলাদেশ ফুটবল ফেডারেশনের (বাফুফে) নবনির্বাচিত কমিটির সভা শেষে এমন মন্তব্য করেন ন্যাশনাল টিমস কমিটির চেয়ারম্যান ও বাফুফে সহ-সভাপতি কাজী নাবিল আহমেদ। কেন এই শাস্তি মওকুফ? ‘জাতীয় দলের স্বার্থে এবং দেশের স্বার্থেই এই খেলোয়াড়দের প্রয়োজন আমাদের। তাই আমরা এই সিদ্ধান্ত নিয়েছি। সামনের মাসেই জাতীয় দলের দুটি ম্যাচ আছে। এখানে তাদের দরকার।’ নাবিলের ব্যাখ্যা। উল্লেখ্য, এএফসি এশিয়ান কাপের প্লে-অফ রাউন্ডে খেলবে বাংলাদেশ জাতীয় ফুটবল দল। আগামী ২ ও ৭ জুন তাদের খেলতে হবে প্রতিপক্ষ তাজিকিস্তানের বিরুদ্ধে। এই ম্যাচকে কেন্দ্র করেই এখন চলছে জাতীয় দল গঠনের তোড়জোড়। ইতোমধ্যেই পুরনো ডাচ কোচ লোডভিক ডি ক্রুইফকে আবারও হেড কোচ হিসেবে ফিরিয়ে আনার সিদ্ধান্ত চূড়ান্ত করে ফেলেছে ন্যাশনাল টিমস ম্যানেজমেন্ট কমিটি। সাম্প্রতিক সময়ে জাতীয় দল সাফ ফুটবল ও বঙ্গবন্ধু গোল্ডকাপ টুর্নামেন্টে অংশ নিয়ে ব্যর্থ হয়। এ নিয়ে সমালোচনা হয় ব্যাপক। অভিযোগ ওঠে জাতীয় দলের ফুটবলারদের ইচ্ছে করে খারাপ খেলা, শৃঙ্খলাভঙ্গ, অনৈতিক কর্মকা-, দেশপ্রেম এবং দলের প্রতি দায়বদ্ধতার অভাব নিয়ে। ফলে নড়েচড়ে বসতে বাধ্য হয় বাফুফে। গঠিত হয় তদন্ত কমিটি। গত মার্চের শুরুর দিকে সাফ চ্যাম্পিয়নশিপ এবং বঙ্গবন্ধু গোল্ডকাপে খারাপ পারফর্মেন্সের কারণ অনুসন্ধান করে দেয়া ফ্যাক্ট ফাইন্ডিং কমিটির রিপোর্টের সত্যতা পাওয়ায় বাফুফের ন্যাশনাল টিমস কমিটি (ইসি কমিটির অনুমোদনক্রমে) কমিটির সুপারিশে বাফুফে কিছু সিদ্ধান্ত বাস্তবায়ন করে। এগুলো হলো : বাংলাদেশ জাতীয় ফুটবল দল থেকে এক বছরের জন্য নিষিদ্ধ করা হয় সাবেক অধিনায়ক-মিডফিল্ডার মামুনুল ইসলাম এবং উইঙ্গার জাহিদ হোসেনকে। ছয় মাসের জন্য নিষিদ্ধ করা হয় ডিফেন্ডার ইয়াসিন খান ও ফরোয়ার্ড সোহেল রানাকে। এছাড়া সতর্ক করা হয় গোলরক্ষক শহীদুল আলম সোহেল, ডিফেন্ডার ইয়ামিন মুন্না এবং আতিকুর রহমান মিশুকে। ফুটবলারদের জাতীয় দল থেকে নিষেধাজ্ঞার সঙ্গে আর্থিক দ- দেয়ার পক্ষে ছিলেন কমিটির একাধিক সদস্য। তবে তাতে একমত হতে পারেননি নাবিল আহমেদ। এই শাস্তির জন্য আপীলের কোন সুযোগ নেই সাজাপ্রাপ্ত ফুটবলারদের। পরে অবশ্য তিনি জানান অভিযুক্তরা ইচ্ছে করলে বাফুফে সভাপতি বা বাফুফের ইসি কমিটির কাছে সাজা কমানোর জন্য আবেদন করতে পারবে। পরে অবশ্য অভিযুক্ত চার ফুটবলার কোন আপীল করেননি। অবস্থাদৃষ্টে মনে হচ্ছে ওই চার ফুটবলার যদি আন্তরিকভাবে ক্ষমা না-ও চান, তাহলেও তাদের জোর করে ‘মাফ’ করে দেবে ন্যাশনাল টিমস ম্যানেজমেন্ট কমিটি! গত মার্চে অনেকেই বিস্ময় প্রকাশ করে বলেছিলেন, জাতীয় দলে খেলে ফুটবলাররা যেহেতু কোন অর্থ পান না, সেহেতু তাদের শাস্তি হিসেবে মোটা অঙ্কের অর্থদ- দেয়া উচিত ছিল। তেমনটা করলে তবেই শাস্তির যৌক্তিকতা থাকতো। তাছাড়া ধরা যাক, আগামী এক বছরে জাতীয় দলের কোন ম্যাচ যদি না থাকে (যদিও আছে), তাহলে এই শাস্তির মানেটা কি! শুধু তাই নয়, খেলোয়াড়রা অপরাধ করেছে জাতীয় দলের ক্যাম্পে থেকে। তাদের ওপর নজরদারি করার জন্য টিম ম্যানেজমেন্ট বলে যে কিছু আছে, অভিভাবক হিসেবে তারা খেলোয়াড়দের নিয়ন্ত্রণ করতে ব্যর্থই হয়েছে। তাহলে কি খেলোয়াড়দের অধঃপতনের এই দায়ভার তাদের ওপরও বর্তায় না? এজন্য সচেতন ফুটবলপ্রেমীরা বলছিলেন, মামুনুলদের এই শাস্তি হচ্ছে হাস্যকর শাস্তি, এটা কোন শাস্তিই নয়! আর এবার তাদের শাস্তি মওকুফ করে আরেকটি হাস্যকর কাজ করতে যাচ্ছে কমিটি।
×