ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১০ বৈশাখ ১৪৩১

বাগমারায় নির্বাচনকে ঘিরে সংঘর্ষে হত ২ আহত অর্ধশতাধিক

প্রকাশিত: ০৫:৫০, ৮ মে ২০১৬

বাগমারায় নির্বাচনকে ঘিরে সংঘর্ষে হত ২ আহত অর্ধশতাধিক

স্টাফ রিপোর্টার, রাজশাহী ॥ রাজশাহীর বাগমারা উপজেলার আউচপাড়া ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনকে ঘিরে আওয়ামী লীগের মনোনীত ও বিদ্রোহী প্রার্থীর কর্মী-সমর্থকদের মধ্যে রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষে ঝরল দুইজনের প্রাণ। শনিবার বিকেলে ব্যাপক রক্তক্ষয়ী এ সংঘর্ষে আরও অন্তত অর্ধশতাধিক আহত হয়েছে। নিহতের সংখ্যা বাড়তে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। নিহতরা হলেন, মমতাজ আলী (১৮) ও সিদ্দিকুর রহমান (২৮)। এরা আওয়ামী লীগের কর্মী-সমর্থক। এ ঘটনায় গুরুতর আহত অবস্থায় এক নারীসহ ৮ জনকে রাজশাহী মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। অন্যদের বাগমারা ও মোহনপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কেন্দ্র এবং বিভিন্ন ক্লিনিকে ভর্তি করা হয়েছে। এ ঘটনায় ওই এলাকায় ব্যাপক উত্তেজনা বিরাজ করছে। খবর পেয়ে রাজশাহী পুলিশের এসপি নিসারুল আরিফ ও উর্ধতন কর্মকর্তারা ঘটনাস্থলে গেছেন। বিপুল পরিমাণ পুলিশ ঘটনাস্থলে পৌঁছে পরিস্থিত নিয়ন্ত্রণ করে। এলাকাবাসীর দাবি সংঘর্ষের ঘটনায় পুলিশের গুলিতে হতাহতের ঘটনা ঘটে। স্থানীয় সূত্র জানায়, শনিবার বিকেল সাড়ে ৫ দিকে আওয়ামী লীগের আউচপাড়া ইউনিয়ন চেয়ারম্যান পদপ্রার্থী সরদার জান মোহাম্মদের লোকজন বিদ্রোহী প্রার্থী শহিদুজ্জামান শহিদের বাড়িতে হামলা চালায়। এ সময় শহিদের লোকজন মোহাম্মদের লোকজনকে প্রতিহত করতে গেলে তাদের মধ্যে ব্যাপক সংঘর্ষ বেধে যায়। এ সময় পুলিশ পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে গুলি ছুড়লে হতাহতের ঘটনা ঘটে। স্থানীয় হাটগাঙ্গোপাড়া পুলিশ তদন্ত কেন্দ্রের দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা উপপরিদর্শক মাসুদ আলী জানান, পুলিশের গুলিতে হতাহতের ঘটনা ঘটেছে তবে কতজন মারা গেছে তা তিনি বলেননি। তিনি দাবি করেন, পুলিশের পাঁচ সদস্য আহত হয়েছে। প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, সন্ধ্যা ছয়টায় ঘটনাস্থলে দুইজনের লাশ পড়ে থাকতে দেখা যায়। পুলিশের দাবি তারা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে গুলি না ছুড়লে আরও অনেক হতাহতের ঘটনা ঘটতো। পুলিশ ও প্রত্যক্ষদর্শীদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, শনিবার বিকেলে আউচপাড়া ইউনিয়নের আওয়ামী লীগের চেয়ারম্যান প্রার্থী সরদার জান মোহাম্মদ ও দলের বিদ্রোহী প্রার্থী শহিদুল ইসলামের লোকজন মিছিলের প্রস্তুতি নেয়। বিকেল সাড়ে পাঁচটার দিকে হাটগাঙ্গোপাড়া বাজারে দু’পক্ষ ধারালো ও দেশীয় অস্ত্র নিয়ে মুখোমুখি অবস্থান নিয়ে তাদের মধ্যে উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে। এ নিয়ে ধাওয়া পাল্টাধাওয়া হয়। থানায় খবর দেয়া হলে পুলিশ ঘটনাস্থলে পৌঁছে। এ সময় আওয়ামী লীগের প্রার্থী জান মোহাম্মদের সমর্থকরা মিছিল করার চেষ্টা করলে পুলিশ তাদের ধাওয়া দেয়। একপর্যায়ে পুলিশ গুলি ছোড়ে। এতে আওয়ামী লীগ কর্মী জাহিদুল ইসলাম বুলু ও সিদ্দিকুর রহমান ঘটনাস্থলে গুলিবিদ্ধ হয়ে মারা যায়। এ সময় আরও অর্ধশত ব্যক্তি আহত হন। এ সময় ককটেলের বিস্ফোরণ ঘটানো হয়। রাতে এই প্রতিবেদন লেখা পর্যন্ত এলাকায় পুলিশ, র‌্যাবসহ আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা ঘটনাস্থল ঘিরে রেখেছে। এদিকে আহতদের মধ্যে ৮ জনকে রাজশাহী মেডিক্যাল কলেজ (রামেক) হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। এদের মধ্যে ৬ জন গুলিবিদ্ধ। গুলিবিদ্ধরা হলেন, স্বারন্দি গ্রামের সাবের আলীর ছেলে মমতাজ (৪০), কেন্দা গ্রামের সোরহার্দি গ্রামের জাহিদ (৩৫), স্বারন্দি গ্রামের নজর আলীর ছেলে ইসাহাক (৪০), এরশাদের ছেলে আলাউদ্দিন (৩৯), বয়েন উদ্দিনের ছেলে আলম (৪২) ও মহসিনের ছেলে মাইনুল ইসলাম (৩৫)। এছাড়া ধারালো অস্ত্রের আঘাতে দুইজন আহত হয়েছেন। এরা হলেন বারি গ্রামের মজিবরের ছেলে উজ্জল (২৫) ও হাট গাঙ্গোপাড়ার দীন ম-লের ছেলে মোসলেম (৩০)। আহতদের মধ্যে মমতাজ, উজ্জল, আলম ও মাইনুল ইসলামের অবস্থা আশঙ্কাজনক বলে মেডিক্যাল সূত্র জানিয়েছে। এ ব্যাপারে একাধিকবার যোগাযোগ করা হলেও রাজশাহী জেলা পুলিশ সুপার নিসারুল আরিফ তার মোবাইল ফোন রিসিভ করেননি। তবে পুলিশের একটি সূত্র জানায়, সন্ধ্যা সাড়ে সাতটার পর পুলিশ পুরো পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করেছে। এখন পরিস্থিতি পুলিশের নিয়ন্ত্রণে রয়েছে। প্রসঙ্গত, সহিংসতার শঙ্কায় তিনদিন আগে শনিবারের নির্ধারিত চতুর্থ দফায় জেলার বাগমারা উপজেলার ১৬ ইউনিয়নের ভোট স্থগিত করা হয়। ভোট বন্ধের পরও কয়েকদিন ধরে বিভিন্ন ইউনিয়নের সহিংসতার ঘটনা ঘটছিল।
×