ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

শিলাইদহে কুঠিবাড়ীর সম্প্রসারিত নক্সা চূড়ান্ত

প্রকাশিত: ০৫:৪৬, ৮ মে ২০১৬

শিলাইদহে কুঠিবাড়ীর সম্প্রসারিত নক্সা  চূড়ান্ত

মনোয়ার হোসেন ॥ রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের কল্যাণে কুষ্টিয়ার কুমারখালী উপজেলার শিলাইদহের কুঠিবাড়ী যেন সকলেরই চেনা। শুধু বাঙালী নয়, বিশ্বকবির স্মৃতিধন্য আঙিনাটি বিশ্ববাসীর কাছেও পেয়েছে বিশেষ পরিচিতি। পদ্মার কোলঘেঁষা সবুজে আবৃত এই কুঠিবাড়ীতে বসেই নোবেলজয়ী কাব্যগ্রন্থ গীতাঞ্জলির ভাবরস সঞ্চয় করেছিলেন কবিগুরু। এ তীর্থভূমিতে অবস্থান করেই লিখেছিলেন গীতাঞ্জলির বেশিরভাগ কবিতা। শিলাইদহের প্রতি কবি মুগ্ধতা প্রকাশ করেছিলেন এভাবেÑ বেলায় উঠে দেখলুম রোদ্দুর উঠেছে এবং শরতের পরিপূর্ণ নদীর জল তল তল থৈ থৈ করছে। নদীর জল ও তীর প্রায় সমতল, ধানের ক্ষেত সুন্দর সবুজ এবং গ্রামের গাছপালাগুলো বর্ষণে সতেজ ও নিবিড় হয়ে উঠেছে। ...পৃথিবী যে কী আশ্চর্য সুন্দরী এবং কী প্রশস্ত প্রাণে এবং গভীরভাবে পরিপূর্ণ তা এখানে না এলে মনে পড়ে না। তাই তো রবীন্দ্রনাথের ভাললাগার প্রাঙ্গণটিতে প্রতিদিনই ভিড় জমে রবীন্দ্রপ্রেমীদের। সেই সব দর্শনার্থীদের জন্য সুসংবাদ হচ্ছে, সম্প্রসারিত হচ্ছে শিলাইদহের কুঠিবাড়ী। ঐতিহাসিক স্থাপনাটির সৌন্দর্যের সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখেই সম্প্রসারিত হবে ৩৩ বিঘার প্রাচীর ঘেরা কুঠিবাড়ী। দুই পাশে ফুল ও পাতাযুক্ত বৃক্ষের সমন্বয়ে নির্মিত হবে কুঠিবাড়ীতে ঢোকার দৃষ্টিনন্দন মূল প্রবেশদ্বার। প্রবেশপথ পেরোলেই দর্শনার্থীদের জন্য বিশ্রাম বা বসার জন্য থাকবে গ্যাজিবো। সেই সঙ্গে যুক্ত হবে সুসজ্জিত অতিথি ভবন এবং নিয়মিত সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের জন্য নান্দনিক মুক্তমঞ্চ। এছাড়াও থাকছে গ্রন্থাগার ভবন ও ক্যাফেটিরিয়া। ভারত সরকারের আর্থিক সহযোগিতায় স্বল্পতম সময়ের মধ্যে শুরু হবে এ সম্প্রসারণের কাজ। ইতোমধ্যেই চূড়ান্ত হয়েছে সম্প্রসারিত ভবনের নক্সা ও কার্যপরিকল্পনা। কুঠিবাড়ী সম্প্রসারণ প্রকল্পের নক্সা করেছেন স্থপতি ও কবি রবিউল হুসাইন। এ প্রসঙ্গে তিনি জনকণ্ঠকে বলেন, ঐতিহ্যবাহী ভবনটির নক্সার সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখেই নতুন স্থাপনাগুলো নির্মিত হবে। পুরনো ভবনের আদলের সঙ্গে মিল রেখে এসব কাঠামোয় যুক্ত হবে আধুনিক স্থাপত্যশৈলী। কুঠিবাড়ীর মূল সৌন্দর্য অক্ষুণœ রাখতে নতুন ভবনগুলোর কোনটাই দোতলার বেশি হবে না। সদর দরজাটির সঙ্গে বৃক্ষ ও লতাপাতা জুড়ে এটিকে আকর্ষণীয় করে তোলা হবে। এরপর পাশাপাশি স্থান পাবে তিনটি ভবন। দুই পাশে দু’টি গ্রীন রুম রেখে নির্মিত হবে মুক্তমঞ্চ। এটির তিন পাশই খোলা থাকবে। উপরের অংশও থাকবে উন্মুক্ত। ফলে অনুষ্ঠান চলাকালে এখানে বসেই দেখা যাবে মূল কুঠিবাড়ী। এছাড়া ঝড়-বৃষ্টি হলে এটিকে ঢেকে রাখার ব্যবস্থা থাকবে। ভবন তিনটির মধ্যে রয়েছে ক্যাফেটিরিয়া ও স্যুভেনিুর শপ, অতিথি ভবন এবং লাইব্রেরী। এই ভবনগুলো হবে দোচালা আকৃতির। এসব ভবনের পাশাপাশি নিরাপত্তার জন্য আনসার ক্যাম্প এবং দর্শনার্থীদের জন্য নির্মিত হবে গণশৌচাগার । শিলাইদহের রবীন্দ্র কুঠিবাড়ীর সম্প্রসারণ প্রসঙ্গে সংস্কৃতিমন্ত্রী আসাদুজ্জামান নূর বলেন, কুঠিবাড়ী সম্প্রসারণের জন্য ইতোমধ্যেই নক্সা চূড়ান্ত হয়েছে। কাজ শুরুর জন্য শীঘ্রই দরপত্র আহ্বান করা হবে। এরপরই শুরু হবে নির্মাণ কাজ। প্রকল্পের সার্বিক দিক নিয়ে বলেন, কুঠিবাড়ীর সৌন্দর্য অপরিবর্তিত রেখেই এর সম্প্রসারণ করা হবে। কুঠিবাড়ীর সামনের উন্মুক্ত স্থানে দর্শনার্থীদের জন্য বাড়তি আর্কষণ হিসেবে বিভিন্ন অবকাঠামো তৈরি করা হবে। এ প্রকল্পের জন্য ভারত সরকার ১৩ কোটি টাকা দিচ্ছে। বাড়তি অর্থের প্রয়োজন হলে সেটা মন্ত্রণালয় বহন করবে। বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে বিদ্যমান দ্বিপাক্ষিক সাংস্কৃতিক বিনিময় চুক্তির আওতায় রবীন্দ্র কুঠিবাড়ী সম্প্রসারণের জন্য ১৩ কোটি টাকা অনুদান দিয়েছিল। সে অর্থ দিয়েই শুরু হবে কুঠিবাড়ী সম্প্রসারণের কাজ। অতিরিক্ত অর্থের প্রয়োজন হলে সেটা সংস্কৃতিবিষয়ক মন্ত্রণালয় থেকে বরাদ্দ দেয়া হবে। সংস্কৃতি মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা যায়, ২০১৩ সালে ভারতের রাষ্ট্রপতি প্রণব মুখোপাধ্যায়ের বাংলাদেশ সফরের সময় রবীন্দ্র কুঠিবাড়ী সংস্কারের বিষয়ে আলোচনা হয়। এরপর ২০১৪ সালের ১৬ মার্চ সংস্কৃতিমন্ত্রী আসাদুজ্জামান নূরের সঙ্গে তৎকালীন ভারতীয় হাইকমিশনার পঙ্কজ শরণের বৈঠকে বিষয়টি চূড়ান্ত হয়। এরপর ভূমি জরিপসহ বিভিন্ন কাজ শেষ করে গত মাসে ভবনটির নক্সা চূড়ান্ত করেছে। গত ১২ এপ্রিল সংস্কৃতিমন্ত্রীর সঙ্গে দেখা করেন ভারতের বর্তমান হাইকমিশনার হর্ষ বর্ধন শ্রিংলা। এ সময় তিনি রবীন্দ্র কুঠিবাড়ী ভবন ও সংলগ্ন অবকাঠামোর নক্সা দেখে বলেন, এটি নির্মাণের বিষয়ে অর্থসহ সার্বিক সহযোগিতা প্রদানে তার দেশ প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। অচিরেই এর নির্মাণ কাজ শুরু হবে বলে তিনি আশা করেন। সংস্কৃতি মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, রবীন্দ্র কুঠিবাড়ীকে একটি পূর্ণাঙ্গ সাংস্কৃতিক কেন্দ্র হিসেবে তৈরি করা হবে। যেখানে দ্বিতল একটি অতিথিশালার পাশাপাশি গ্রিক এম্পিথিয়েটারের আদলে মুক্তমঞ্চ নির্মাণ করা হবে। সেখানে নিয়মিতভাবে সাংস্কৃতিক কর্মকা- পরিচালিত হবে। রবীন্দ্র স্মৃতিবহ নানা স্মারক নিয়ে একটি প্রদর্শনী কেন্দ্রও নির্মাণ করা হবে। এছাড়াও নতুন করে নির্মিত হবে সুদৃশ্য প্রবেশদ্বার।
×