ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪৩১

ঢাকাবাসীর খবর নিতে এবার পুলিশ যাবে ঘরে ঘরে ॥ কমিশনার

প্রকাশিত: ০৫:৩৯, ৮ মে ২০১৬

ঢাকাবাসীর খবর নিতে এবার পুলিশ যাবে ঘরে ঘরে ॥ কমিশনার

স্টাফ রিপোর্টার ॥ রাজধানীবাসীর নিরাপত্তায় আরও একধাপ এগিয়ে আসছে মহানগর পুলিশ। এবার পুলিশই ঘরে ঘরে গিয়ে খোঁজখবর নেবে নগরবাসীর। হঠাৎ ঘরের দরজায় কড়া নেড়ে জানতে চাইবে- আমরা ডিএমপি থেকে এসেছি। কেমন আছেন? কোন সমস্যা? আপনাকে কোন সাহায্য করতে পারি? পুুলিশের কাছ থেকে এমন সেবা পাওয়া অবিশ্বাস্য হলেও তেমন সুখবরের ঘোষণা দিয়েছেন ডিএমপি কমিশনার মোঃ আছাদুজ্জামান মিয়া। সুস্পষ্ট করেই তিনি বলেছেন, চলতি বছরের ৩১ ডিসেম্বরের মধ্যে প্রতিটি মহল্লায় প্রতিটি ঘরে ডিএমপির পুলিশ গিয়ে দরজায় কড়া নেড়ে বলবে, আপনি ভাল আছেন তো, আপনাকে কোন সাহায্য করতে পারি? রাজধানীর সিরডাপ মিলনায়তনে শনিবার অপরাজেয় বাংলাদেশ আয়োজিত ‘ইমপ্রুভ ইনস্টিটিউশন রেসপন্সেস টু চিলড্রেন কনফ্লিক্ট কন্টাক্ট উইথ ল’ কর্মসূচীর উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথির বক্তব্যে তিনি এ কথা বলেন। তিনি এ বিষয়ে বিস্তারিত ব্যাখ্যা দিয়ে বলেন, ঢাকা মহানগরীতে এর আগে উঠান বৈঠক শুরু করেছি। ইতোমধ্যে মন্ত্রী ও আমাদের কর্মকর্তারা এভাবে যাওয়া শুরু করেছেন। এজন্য সামাজিক আন্দোলন করতে হবে। আজ রাস্তায় ট্রাফিক আইনের কথা বলছি। কেউ মানে না। একদিনে এটি মানাতে পারবে না। আমি শুরু করেছি, উল্টোপথে গাড়ি চালানো যাবে না। স্টিকার দিয়ে, হাইড্রলিক হর্ন দিয়ে গাড়ি চালানো বন্ধসহ সবকিছু একসঙ্গে সমাধান করা যাবে না। আসাদুজ্জামান মিয়া শিশুদের অধিকার সর্বক্ষেত্রে আন্তরিকভাবে দেখা প্রসঙ্গে ঐশীর উদাহরণ টেনে বলেন, ইদানীং শিশুরা অনেক ধরনের বড় অপরাধে জড়িয়ে পড়েছে। তাদের অপরাধ থেকে ফিরিয়ে আনতে কাউন্সেলিং করা দরকার। এজন্য সবার সহযোগিতা দরকার। প্রয়োজনে সামাজিক, রাজনৈতিক ও ধর্মীয় নেতাকর্মীকে ঐক্যবদ্ধ হতে হবে। আমরা যদি প্রতিটি এলাকাকে কাউন্সেলিংয়ের মধ্যে নিয়ে আসতে পারি তাহলে বিভিন্ন ধরনের অপরাধ কমে যাবে। এ অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি সুপ্রীমকোর্টের আপীল বিভাগের বিচারপতি ঈমান আলী বলেন, তিন বছর আগে শিশু আইন প্রণয়ন করলেও রুলস না হওয়ায় বাস্তবায়ন হয়নি। বাস্তবায়নের জন্য কোন সংস্থাও এগিয়ে আসেনি। অনেক ভুলের কারণেও আইন কার্যকর হচ্ছে না। তিনি বলেন, দেশের প্রতিটি থানায় শিশু হেফাজত কেন্দ্র, শিশুবান্ধব কর্মকর্তা থাকার কথা, নেই কোথাও। সমাজে অনেক হিংস্রতা হচ্ছে। ছোটখাটো জিনিস নিয়ে শিশুদের মেরে ফেলছে। তাছাড়া সুবিধাবঞ্চিত শিশুরা অপরাধে জড়িয়ে যাচ্ছে। সমাজের পুলিশ-ম্যাজিস্ট্রেটদের ধারণা, যারা ওনাদের সামনে আসে তারাই চোর, বদমাশ, খারাপ। বিচারপতি ঈমান আলী বলেন, শিশুদের প্রতি তাদের এ ধরনের মনোভাব দূর করতে সমাজের মানুষকে সচেতন হতে হবে। সরকার জনগণকে চাহিদার যোগান দিতে পারছে না। শিশুরা পারিবারিক কলহ, মা-বাবার বিচ্ছেদ, সৎ মায়ের অত্যাচারে অতিষ্ঠ হয়ে বাড়ি থেকে পালিয়ে গিয়ে অপরাধ করছে। কোন শিশু চোর-অপরাধী হয়ে জন্মায় না। আমাদের মনোভাব পরিবর্তন করতে হবে। সবাইকে সচেতন হতে হবে। অপরাজেয় বাংলাদেশের উপদেষ্টা ড. ইনামুল হকের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে আরও বক্তব্য রাখেনÑ সংসদ সদস্য এ্যাডভোকেট উম্মে কুলসুম স্মৃতি, দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের যুগ্ম-সচিব আবু তাহের। অনুষ্ঠানে কর্মসূচীর ওপর মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন অপরাজেয় বাংলাদেশের নির্বাহী পরিচালক ওয়াহিদা বানু। এ প্রবন্ধে জানানো হয়, সংঘাতে জড়ানো শিশুদের আইনের সংস্পর্শে আইনী সহায়তা, কিশোর বিচার ব্যবস্থার মাধ্যমে প্রতিষ্ঠানের ব্যবহারিক আচরণ, কর্মপন্থার উন্নয়ন, শক্তিশালীকরণের মাধ্যমে শিশুদের উন্নয়ন ও সুরক্ষা নিশ্চিত করা, এর মাধ্যমে থানায় শিশুকল্যাণ ডেস্ক স্থাপন, বিকল্পভাবে শিশুদের গ্রেফতার, আটক, আদালতে বিচারের সময় শিশুদের অধিকার সুনিশ্চিত করা; শিশুদের আটক, গ্রেফতার, কারাবদ্ধকরণ ইত্যাদি থেকে দূরে রাখা, শিশুকল্যাণ কমিটির মাধ্যমে সালিশি ব্যবস্থা জোরদার করা, জামিনে খালাস করা, সুশৃঙ্খল তত্ত্বাবধান প্রতিষ্ঠা করা, পরিবারে পুনর্মিলন ও পুর্নবাসন কার্যক্রম জোরালো করাই প্রকল্পের মূল উদ্দেশ্য। আন্তর্জাতিক দাতা সংস্থার সহায়তায় অপরাজেয় বাংলাদেশ চার বছর মেয়াদী এই প্রকল্প বাস্তবায়ন করবে ঢাকা, ময়মনসিংহ, কুড়িগ্রাম, চট্টগ্রাম, খুলনা, বরিশাল, রংপুর ও জামালপুরে।
×