ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

ফেসবুকে অভিযোগ পেয়ে মাঠে মন্ত্রী

প্রকাশিত: ০৫:৩৭, ৮ মে ২০১৬

ফেসবুকে অভিযোগ পেয়ে মাঠে মন্ত্রী

স্টাফ রিপোর্টার ॥ এবার ফেসবুক ম্যাসেজে সাধারণ মানুষের অভিযোগ পেয়ে ঘটনার সত্যতা যাচাইয়ে মাঠে নামলেন সড়ক পরিবহনমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের। শেষমেশ অভিযোগের প্রমাণও পেলেন মন্ত্রী। সঙ্গে সঙ্গে ব্যবস্থা নিলেন সংশ্লিষ্টদের বিরুদ্ধে। জানা গেছে, মন্ত্রীর ফেসবুক ম্যাসেজে অভিযোগ আসে বৃহস্পতিবার কোন এক সময়ে। এর পরের দিন শুক্রবার রাস্তায় ব্যস্ত ছিলেন সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের। এ ব্যস্ততা কোন আয়োজন করে ছিল না। আচমকা ছুটে গিয়ে রাস্তা থেকে ব্যাটারিচালিত অটোরিক্সা সরিয়ে দিতে ‘জিরো টলারেন্স’ দেখালেন। এ সিদ্ধান্ত ছিল অনেক আগের। অর্থাৎ গত বছরের আগস্ট মাসের। বাস্তবায়ন পুরোপুরি না হওয়ায় সড়ক মহাসড়ক নিরাপদ করতে নিজেই রাস্তায় নামেন শুক্রবার ছুটির দিনে। তখন মন্ত্রী বলেন, সারাদেশে বিআরটিএ কর্মকর্তাদের এ ব্যাপারে সচেতন করা হয়েছে। সবখানেই চলবে এরকম অভিযান। এর পরের দিন শনিবার। সকালে মন্ত্রী ছুটলেন রাজধানীর বিমানবন্দর সড়কের দিকে। সড়ক খাতের বিভিন্ন অনিয়ম ঠেকাতে আচমকা হানা দিতে চাইলেন খোদ সরকারী পরিবহন সংস্থা বিআরটিসিরই জোয়ারসাহারা ডিপোতে। সকাল ৮টার পর মন্ত্রী পৌঁছে যান বিআরটিসির জোয়ারসাহারা বাসডিপোর অদূরে। অভিযোগ ছিল, বাস নোংরা, ফ্যান চলে না। সিট ভাঙা, বসা যায় না ইত্যাদি। যাত্রীদের ফেসবুক অভিযোগের প্রমাণ পেতে আর বেশি দূর পা বাড়াতে হয়নি মন্ত্রীকে। সঙ্গে নিতে হয়নি পুলিশ। ডাকা লাগেনি সরকারী কোন কর্মকর্তাকে। সাধারণ একজন পথচারীর বেশে বিমানবন্দর সড়কের পাশে রাখা সিঙ্গেল ডেকার, ডাবল ডেকার ও আর্টিকুলেটেড ৮টি বাসে একের পর এক উঠে পড়লেন মন্ত্রী। উঠেই তিনি দেখতে পান, যাত্রী নেই, কিন্তু আছে মশার ভাগাড়। এর মধ্যে তিনটি বাসে মশার দীর্ঘদিনের আস্তানা গেড়ে রাখা বলে মনে হচ্ছে- এমন অবস্থা। এ অবস্থা দেখে আর দেরি করেননি তিনি। সকাল সাড়ে ৮টা থেকে সাড়ে ৯টার এ আচমকা অভিযানের মধ্যেই জোয়ারসাহারা বাস ডিপোর ম্যানেজার নায়েব আলীকে ‘সাময়িক বরখাস্ত’ করে দিয়েছেন মন্ত্রী। বাসগুলোর সংরক্ষণ ও রক্ষণাবেক্ষণের দায়িত্বে থাকা নায়েব আলী অবহেলার দায়েই বরখাস্ত হন। ওবায়দুল কাদেরের একান্ত সূত্র জানায়, ফেসবুকে বৃহস্পতিবার বিআরটিসি বাসে নানা অনিয়মের বেশ কিছু অভিযোগ পান তিনি। এছাড়াও টেলিফোনে অনেকে অভিযোগ করেছিলেন। এরপর এ্যাকশনে নেমে যান মন্ত্রী। এর সূত্র ধরেই শনিবার কাউকে না জানিয়ে বিআরটিসি বাস ডিপোর দিকে ছুটে যান তিনি। ডিপোতে যাওয়ার আগেই রাস্তায় বাস দেখে সেসব বাসে উঠে ‘ডাইরেক্ট এ্যাকশন’ দেখালেন মন্ত্রী। এ সময় মন্ত্রী চালকসহ যাত্রীদের সঙ্গেও কথা বলেন। বাড়তি ভাড়া নেয়া হচ্ছে কিনা, সেবার মান সম্পর্কে যাত্রীদের কাছে জানতে চান। গাড়ি চুক্তিতে নাকি সরাসরি ডিপো থেকে নিয়ে চালানো হচ্ছে এ ব্যাপারেও চালকের কাছে তথ্য চান সড়ক মন্ত্রী। অন্যদিন মিডিয়াকে খবর দিয়ে মন্ত্রী অভিযানে নামলেও গেল দু’দিন ধরে অনেকটাই ব্যতিক্রম তিনি। একেবারেই নিজের মতো করে অভিযানে নামছেন। গত বছরের এক আগস্ট থেকে দেশের সকল সড়ক মহাসড়কে তিন চাকার অটোরিক্সা নসিমন, করিমন, ভটভটিসহ সব ধরনের অযান্ত্রিক যানবাহন চলাচল নিষিদ্ধ করে সরকার। এ নিয়ে সারাদেশে তীব্র প্রতিক্রিয়া দেখা দেয়। বিশেষ করে পরিবহন মালিক শ্রমিকদের অব্যাহত চাপের মুখে অনেকটাই পিছু হটতে শুরু করে সরকার। একপর্যায়ে মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে ঘোষণা দেয়া হয়, এসব পরিবহন সকালে দুই ঘণ্টা সিএনজি সরবরাহের জন্য মহাসড়কে উঠতে পারবে। পরবর্তীতে বলা হয়, দেশের ২২টি মহাসড়কে এসব পরিবহন চলাচল করতে পারবে না। পরিসংখ্যান বলছে, ১৮ লাখ নসিমন, করিমন, ভটভটি বিভিন্ন সড়কে চলাচল করছে। যার একটিও সরকারীভাবে অনুমোদিত নয়। ৩ লক্ষাধিক ব্যাটারিচালিত রিক্সা ও ইজিবাইক মহাসড়কে চলতে দিয়ে কোন অবস্থাতেই নিরাপদ সড়ক বাস্তবায়ন সম্ভব নয়। বিশ্বস্বাস্থ্য সংস্থার প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, আমাদের দেশে প্রতি ১০ হাজার যানবাহনের মধ্যে ৮৬ দশমিক ৬টি যানবাহন প্রতিবছর মারাত্মক দুর্ঘটনায় পড়ছে। এই পরিসংখ্যানে নিহতের সংখ্যা এশিয়ার মধ্যে বাংলাদেশে সর্বোচ্চ ১৬৯ জন। দুর্ঘটনার কারণে দেশের ২ শতাংশ জিডিপি ক্ষতি হচ্ছে।
×