ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১

দুই শিশুকন্যার শিক্ষার যুদ্ধ

প্রকাশিত: ০৩:৫৫, ৮ মে ২০১৬

দুই শিশুকন্যার শিক্ষার যুদ্ধ

নিজস্ব সংবাদদাতা, কলাপাড়া, ৭ মে ॥ এ যেন গল্পের মতো। প্রতিবন্ধী বাবা দুলাল হাওলাদারকে (৫০) হুইল চেয়ারে বসিয়ে ভিক্ষায় নামিয়ে রেখে নিজের দৌড় স্কুলের পরীক্ষায় অংশগ্রহণের। খেয়াঘাটে কিংবা একটি স্পটে বাবাকে এভাবে রেখে স্কুলে ছুটতে হয় ছোট্ট কচিমুখের সোনামনি ইমাকে। নিত্যদিনের এ কর্মটি তাদের পুরো সংসারের ভরণ-পোষণের অবলম্বন। জীবন-জীবিকার যোগান দেয় বাবার করা ভিক্ষায়। ইমা দ্বিতীয় শ্রেণীর শিক্ষার্থী। ধানখালী যেতে লোন্দা খেয়াঘাটে দেখা মেলে ইমাসহ তার প্রতিবন্ধী বাবার। একই দশা মীমের। ক্লাস ফোরের ছাত্রী। লোন্দা আবাসন প্রকল্পের একটি ঘরে দুই মেয়ে মীম, ইমা, ছেলে রাহাত ও স্ত্রী মর্জিনাকে নিয়ে দুলাল হাওলাদারের সংসার। এমনটি ছিলেন না দুলাল। শক্ত-সমর্থ তামাটে রঙের শরীরটাই ছিল পুঁজি শ্রমজীবী এ মানুষটির। নিজের শ্রমের আয়ে চলত সংসার। ২০০৯ সালে এক সড়ক দুর্ঘটনায় তার দুটি পা ভেঙ্গে যায়। এরপর বহু চিকিৎসা। কিন্তু পা আর সচল হয়নি। এরপর থেকে এখন পর্যন্ত ভরসা হুইল চেয়ারের ভিক্ষাবৃত্তি। তারপরও চোখেমুখে স্বপ্ন দুই মেয়েকে উচ্চ শিক্ষায় শিক্ষিত করার। জানেন না তার এ স্বপ্ন বাস্তবে কতটুকু সফল হয়। মধ্য টিয়াখালী সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ে পড়ছে ইমা। জন্মের পরই বাবার অসহায়ত্ব দেখছে, ঠেলছে বোঝাপড়ার বয়স থেকে হুইল চেয়ার। স্কুলে ইমার সহপাঠীরা যখন নতুন জামা, নতুন স্কুল ড্রেস কিংবা নতুন খেলনা নিয়ে খেলা করে তখন এক কোণে বসে ইমা তা শুধু চোখ দিয়েই উপভোগ করে। বাবা ভিক্ষা করেন। তাই, স্কুল ড্রেসটি খাটো হয়ে গেছে। নতুন শিক্ষাবর্ষের চার মাস পরও নতুন ড্রেস বানাতে পারেনি। আফসোস নেই, ক্ষোভ রয়েছে। ভাগ্য কেন তার এমন! স্কুলের সামনে বসে গল্পের ছলে কষ্টের এসব কথা হয় ইমার সঙ্গে। ছোট্ট এ মানুষটির ভাষ্য ‘আব্বায় যে বাইচ্যা আছে হ্যাতেই আমি খুশি। কোন কাজ করতে পারে না। ভিক্ষা কইর‌্যা আমাগো খাওয়ায়। অন্যের মতো চলমু ক্যামনে।’ ইমার বড় বোন মীম একই স্কুলের ক্লাস ফোরের শিক্ষার্থী, রোল নং ৩। মীমেরও একই দশা। যেন কষ্টের কশাঘাত সইছে।
×