ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

মুহম্মদ শফিকুর রহমান

গণমাধ্যম রাষ্ট্র এবং জনগণ

প্রকাশিত: ০৭:০৬, ৭ মে ২০১৬

গণমাধ্যম রাষ্ট্র এবং জনগণ

ক’দিন আগে ‘বিশ্ব মুক্ত গণমাধ্যম দিবস’ উদযাপিত হলো। অন্যান্য দেশের মতো বাংলাদেশেও সেমিনার-সিম্পোজিয়াম, টকশো, পত্র-পত্রিকায় বিশেষ নিবন্ধ প্রকাশ ইত্যাদির মাধ্যমে দিবসটি উদযাপিত হয় বিশেষ গুরুত্ব দিয়ে। গণমাধ্যম রাষ্ট্রের প্রতিপক্ষ না সহযোগী প্রশ্নটি দীর্ঘদিনের। এর মীমাংসা কখন হবে বা আদৌ হতে পারবে কি-না, এর উত্তরও ভবিষ্যতের হাতে ছেড়ে দিতে হবে। সময় ও পরিস্থিতি পরিক্রমায় রাষ্ট্রের ধরন-ধারণ-চরিত্র যেমন বদলায় তেমনি প্রযুক্তির দ্রুত উন্নয়ন ও বিকাশের সঙ্গে সঙ্গে গণমাধ্যমেও বদলায়। বৃহস্পতিবার আমি যখন এই লেখাটি লিখছিলাম তখন টেলিভিশন চলছিল। বেলা তখন সাড়ে ১১টা। তাকিয়ে দেখলাম স্ক্রল চলছেÑ যুদ্ধাপরাধী মতিউর রহমান নিজামীর মৃত্যুদ-ের ওপর দায়েরকৃত রিভিউ পিটিশন বা রায় পুনর্বিবেচনার আবেদন খারিজ করে দেয়া হয়েছে এবং ইতোপূর্বে প্রদত্ত মৃত্যুদ- বহাল রাখা হয়েছে। এটাই স্বাভাবিক। রিভিউ আবেদন খারিজ বা প্রত্যাখ্যাত হওয়া মানেই দেশের সর্বোচ্চ আদালতের রায় বহাল রয়ে গেল। এইভাবে বিচারিক ট্রাইব্যুনাল থেকে সুপ্রীমকোর্টের আপিল বিভাগ হয়ে রিভিউ অর্থাৎ বিচার প্রক্রিয়ার সর্বশেষ ধাপটিও শেষ হলো। এখন পূর্ণাঙ্গ রায় প্রকাশ এবং মহামান্য রাষ্ট্রপতির কাছে প্রাণভিক্ষার পর্যায়টি বাকি রইল। অবশ্য নিজামী যদি প্রাণভিক্ষা চান তবে এ নিয়ে আর বেশি বলতে চাই না। কারণ এটাই হবার কথা ছিল, হয়েছে। যে কারণে প্রসঙ্গটি টানলাম তা হলোÑ ঘরে বসেই সব জানতে পারলাম, সে কেবল মিডিয়ার দ্রুত অগ্রগতির কারণেই। যখন একটি মাত্র বিটিভি বা একটি বেতার ছিল তখন আমরা যারা রিপোর্টার ছিলাম প্রতিটি ঘটনার খবর সংগ্রহে তাদের স্পটে যেতে হতো। টিভি বা বেতার তো কাঁধে করে বেড়াবার বস্তু নয়, সম্ভবও নয়। অথচ এখন ঘরে বসে বা ঘরে না থাকলেও গাড়িতে বসে সেলফোনের মাধ্যমে সব খবর যে কোন স্থান থেকে সংগ্রহ বা কর্মস্থলে প্রেরণ করা যায় অনায়াসে। মিডিয়ার ক্ষেত্রে বলা যায় একটি বিপ্লব ঘটে গেছে। সংবাদপত্র, টেলিভিশন, বেতার ছাড়াও ল্যাপটপ, ট্যাব, সেলফোন আসার পর এখন গণমাধ্যম সবই মুক্ত। অমুক্ত বলে কিছু নেই। রাষ্ট্র ইচ্ছে করলেও কোন তথ্য গোপন রাখতে পারে না। আজ সেলফোন বা ট্যাব-ল্যাপটপের ওপর বেজ করে যে সোশ্যাল মিডিয়া গড়ে উঠেছে তাকে ঠেকানো সম্ভব নয়। পত্রিকা বা টিভি-বেতারের ওপর সব নির্ভর করে না। অনলাইন মিডিয়া তো ২৪ ঘণ্টার সার্ভিস। ফেসবুক বা টুইটার বলে একটা পদ্ধতি উদ্ভাবিত হয়েছে, যার কোন টাইমটেবিল নেই, যখন-তখন সংবাদ তৈরি করে ছেড়ে দিলে সেকেন্ডের মধ্যে লাখ লাখ মানুষের কাছে পৌঁছে যাচ্ছে। তথ্যের আদান-প্রদান এখন খুবই সহজ ব্যাপার। তথ্য সংগ্রহেও তথ্য অধিকার আইন হয়েছে এবং এই আইনের বলে কেবল সাংবাদিক নয়, একজন সাধারণ নাগরিকও তথ্য অধিকারের ধারা উল্লেখ করে সরকারের মন্ত্রী, সচিব থেকে শুরু করে থানার ইউএনও, ওসি বা যে কোন সরকারি কর্মকর্তার কাছে ব্যক্তিগতভাবে বা ডাকযোগে বা কুরিয়ার সার্ভিসের মাধ্যমে দরখাস্ত পাঠালে নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে তাকে জানাতে বাধ্য। কোন সরকারি কর্মকর্তার তথ্য প্রদানে অনীহা প্রকাশ বা অযথা সময়ক্ষেপণ শাস্তিযোগ্য অপরাধ। আমাদের রাষ্ট্রীয় সংবিধানেও অবাধ তথ্য প্রবাহের অঙ্গীকার রয়েছে এবং তা বাস্তবায়নের জন্য বর্তমান সরকার তথ্য কমিশন গঠন করেছেন, যার চেয়ারম্যান এখন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের প্রফেসর ড. গোলাম রহমান। এই কমিশন নাগরিকদের মধ্যে সচেতনতা বৃদ্ধির জন্য কাজ করছে। দুর্ভাগ্য হলো সাধারণ মানুষ তো এই অধিকার সম্পর্কে এখনও জানে না, এমনকি অনেক সংবাদকর্মীও না। তাই তথ্য কমিশন ফিচার ফিল্ম করে গ্রামীণ জনপদে স্কুল-কলেজ মাঠে দেখাতে পারে। আমাদের ছোটবেলায় দেখেছি সিনেমা হলে ছবি শুরুর আগে ১৫ মিনিট ‘চিত্রে পাকিস্তানী খবর’ দেখানো হতো। তা আমাদের খুব আগ্রহ ছিল, আমরা মন দিয়ে দেখতাম হানিফ মোহাম্মদ কয়টা ছক্কা মারছেন। এখন অবশ্য সিনেমা হল নেই। তাই স্কুল-কলেজ মাঠে মাসে একবার করা যেতে পারে। এ সব পদক্ষেপের পেছনে প্রধানমন্ত্রী বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনা ও তার সরকারের যে নীতিটি কার্যকর তা হলো সরকার বিশ্বাস করে ‘গণমাধ্যমের স্বাধীনতা’ সরকার এবং বিরোধী দল উভয়ের ক্ষেত্রে কার্যকর ভূমিকা পালন করে। গণমাধ্যমের স্বাধীনতা সরকারের পতন ঘটায় না, বরং রাষ্ট্র, সরকার বা জনগণের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্রকারীদের মুখোশ উন্মোচন করে দেয়। ষড়যন্ত্রকারীরা ব্যর্থ হয়। যেমন ২০১৩-১৪ এবং ২০১৫-এর সন্ত্রাস পেট্রোলবোমার ষড়যন্ত্র ব্যর্থ হয়েছিল। তখন আইনশৃঙ্খলা বাহিনী পুলিশ, র‌্যাব, বিজিবি, বিভিন্ন গোয়েন্দা বাহিনীর কর্মতৎপরতার পাশাপাশি গণমাধ্যম অর্থাৎ সংবাদপত্র, টিভি, বেতার, অনলাইন সংবাদপত্র, ফেসবুক তথা সোশ্যাল মিডিয়ার অবাধ তথ্য প্রচার জনগণকে এতটাই সচেতন করে তুলেছিল যে, কোনভাবেই মানুষকে সরকারের বিরুদ্ধে রাজপথে নামাতে পারেনি। বরং গণমাধ্যমে ষড়যন্ত্রকারী বিএনপি-জামায়াত-শিবির ও তাদের সহযোগী জঙ্গীগোষ্ঠীর মুখোশ উন্মোচন করে দিয়েছিল। দেশে বর্তমানে দৈনিক পত্রিকা শত শত, টেলিভিশন-বেতার অর্ধশতাধিক, অনলাইন শত শত, হাজারও হতে পারে এবং এই টোটাল গণমাধ্যম বর্তমানে অতীতের যে কোন সময়ের তুলনায় সর্বাধিক স্বাধীনতা ভোগ করছে। শেখ হাসিনার সরকারের দেয়া প্রাইভেট টিভি চ্যানেলে বসে টকশো, ফেসটু ফেস ইত্যাদির নামে সরকারকে তুলাধোনা করা হচ্ছে, এমনকি শেখ হাসিনার বিরুদ্ধেও। সরকার সব সহজভাবে নিচ্ছে, খারাপভাবে রিএ্যাক্ট করছে না। তবে হ্যাঁ, যদি কোন গণমাধ্যমে স্বাধীনতার সুযোগে মিথ্যা তথ্য দিয়ে সমাজে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করার চেষ্টা করে তখন জনগণের সরকারকে জনগণের পক্ষে ব্যবস্থা নিতেই হয়। বর্তমান সরকার নিচ্ছেও। যেমন, যুদ্ধাপরাধী জামায়াত নেতা দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীকে চাঁদে দেখা গেছে বলে বগুড়ায় দাঙ্গা লাগানো হয়েছিল কিংবা পবিত্র কাবা শরীফের গিলাফ পাল্টানোর ছবিকে সাঈদীর মৃত্যুদ- মওকুফ ও মুক্তির দাবিতে কাবা শরীফের খতিবদের মানববন্ধনÑ এইভাবে সচিত্র প্রতিবেদন প্রকাশ করায় ‘আমার দেশ’ পত্রিকার প্রকাশনা বন্ধ এবং ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক মাহমুদুর রহমানকে গ্রেফতার করা হয়। একটি সার্বজনীন সত্য হলো স্বাধীনতা ও দায়িত্বশীলতা একটি আরেকটির পরিপূরক। এ সত্যটিই দৈনিক আমার দেশ ও এর সম্পাদক ইচ্ছাকৃতভাবে ভুলে থাকার চেষ্টা করেছেন। তেমনি ২০১৩ সালের ৫ মে (আজ বৃহস্পতিবারও সেই ৫ মে) মাওলানা শফির নেতৃত্বাধীন হেফাজতে ইসলাম সারাদেশ থেকে হাজার হাজার কর্মী-সমর্থক (সবই মাদ্রাসার ছাত্র-শিক্ষক) ঢাকায় এনে মতিঝিল শাপলা চত্বরে জমায়েত করে। তাদের টার্গেট ছিল দিনভর জমায়েত শেষে রাত্রিযাপন করবে এবং রাজধানীব্যাপী জ্বালাও-পোড়াওয়ের মাধ্যমে (এমনকি বায়তুল মোকাররম জাতীয় মসজিদেও আগুন দেয়া হয়) একটা পরিস্থিতির সৃষ্টি করে, বিএনপি নেত্রী খালেদা জিয়া তার কয়েকজন নেতাকে সমাবেশে পাঠিয়ে সমর্থন দেন এবং সেইসঙ্গে দলীয় নেতাকর্মীদের হেফাজতকে সহায়তা দেয়ার নির্দেশ প্রদান করেন। এতে তারা আরও উৎসাহিত হয় এবং সিদ্ধান্ত নেয় পরদিন ভোরে বঙ্গভবন দখল করবে- এমন উদ্ভট চিন্তা থেকে তারা রাতে শাপলা চত্বরে থেকে যায়। কিন্তু জনগণ কর্তৃক নির্বাচিত সরকার জনগণের পক্ষে মধ্যরাতে মাত্র ২০ মিনিটের পুলিশ-র‌্যাব অভিযানে তাদের শাপলা চত্বর ছেড়ে চলে যেতে বাধ্য করে। দক্ষিণ দিক খোলা রেখে পশ্চিম-উত্তর-পূর্ব দিক থেকে অভিযান চালানো হয় এবং হেফাজতিরা বাধাহীন দক্ষিণ দিক দিয়ে চলে যেতে বাধ্য হয়। মিডিয়ার সামনে অভিযান চলে। ঐ সময় একটি টিভি চ্যানেল মিথ্যা তথ্য দিয়ে খবর প্রচার শুরু করলে সেই মিডিয়া দিগন্ত টিভির সম্প্রচার বন্ধ করে দেয়া হয়। একটি এনজিও কয়েক হাজার হেফাজত কর্মী নিহত বলে প্রচার করলে এর প্রধানকে গ্রেফতার করা হয়। সরকারের পক্ষ থেকে নিহতদের নামধাম দেয়ার জন্য চ্যালেঞ্জ করলে নিহতের সংখ্যা হাজার থেকে শ’র নিচে নেমে আসে। তাও অনুসন্ধান করে দেখা গেছে তালিকার মৃত লোক মাদ্রাসায় শিক্ষকতা করছে বা লেখাপড়া করছে। বস্তুত আমরা সাংবাদিকরা এখনও সামাজিক দায়বদ্ধতা বা নাগরিক সচেতনতা অর্জন করতে পারিনি বলে মিডিয়ার সীমাহীন স্বাধীনতার মর্যাদাও বুঝি না, দায়িত্ববোধের ব্যাপারটি তো আমাদের মধ্যে নেই বললেই চলে। এর অবশ্য একটা কারণও রয়েছে। আমরা যাদের দেখেছি বা যেসব সিনিয়রের কাছে সাংবাদিকতার পাঠ নিয়েছি সেসব ব্যক্তি- যেমন শহীদ সিরাজ উদ্দিন হোসেন, শহীদ শহীদুল্লাহ কায়সার, ফয়েজ আহমেদ, আবদুল গাফ্ফার চৌধুরী, এবিএম মূসা, আসফ-উদ-দৌলা রেজা, সন্তোষ গুপ্ত, সত্যেন সেন প্রমুখের নাম নিতে পারি, যারা বেশিরভাগ সময় রাতে বাড়ি যেতেন না, কাজ করতে করতে মধ্যরাত অতিক্রম করে অফিসের টেবিলে ঘুমাতেন। ভোরে পত্রিকা হাতে করে বাসায় বা মেসে ফিরতেন। আমরাও অনেকদিন রাত ৩/৪টায় পত্রিকা নিয়ে বাসায় ফিরেছি। আজকের পরিস্থিতি ভিন্ন। আজ যেমন রাত ৮টার পর ২/১ জন ছাড়া অফিসে থাকতে হয় না, তেমনি প্রযুক্তি এমন পর্যায়ে পৌঁছেছে যে, অনেক ক্ষেত্রে অফিসে যাবার দরকার পড়ে না, গাড়ি থেকে সেলফোন বা ট্যাবের মাধ্যম অফিসে পাঠিয়ে দিচ্ছেন কিংবা প্রেসক্লাব মিডিয়া কক্ষ থেকে পাঠিয়ে দিচ্ছেন। যে কারণে অধিকাংশ রিপোর্টই হয় গণ্ড. নয়ত একই কথা বারবার আসছে বা স্টোরির অবয়ব বলতে কিছু থাকছে না। দু’একটি বাদে বাকি সব গণমাধ্যমের একই অবস্থা। সিনিয়র সাংবাদিক-কলামিস্ট স্বদেশ রায় তার গত বৃহস্পতিবারের কলামে উল্লেখ করেছেন, দেশের প্রখ্যাত কবি নির্মলেন্দু গুণকে জিজ্ঞেস করেছিলেন সাম্প্রতিককালে কবিতা কম লেখা হচ্ছে। কবি গুণ উত্তরে বলেছিলেন ‘কবিরা এখন বাড়ি বানাতে ব্যস্ত’। আমার মনে হয় মিডিয়া জগৎ সম্পর্কেও কবি নির্মলেন্দু গুণের মূল্যায়নটি যথার্থ। কারণ আজকাল সাংবাদিকরা, বিশেষ করে সাংবাদিক নেতৃবৃন্দ সাংবাদিকতার চেয়ে রাজউকের প্লট, বিদেশে প্রেস মিনিস্টার বা এজেন্সির ব্যুরো চীফ কিংবা তদ্বির বাণিজ্যের ওপরই বেশি গুরুত্ব দেন। একটা টিভি চ্যানেল বা বেতারের লাইসেন্স নিয়ে দিতে পারলে কোটির অঙ্ক পকেটে ঢুকবে। লিখবেনইবা কি, লেখাপড়ার দৌড় তো বেশিরভাগ ক্ষেত্রে বড় বড় রাজনৈতিক নেতার মতো ‘আন্ডার-ম্যাট্রিক-গ্র্যাজুয়েট’। আর কোনরকমে সাংবাদিক ইউনিয়ন বা প্রেসক্লাবের নেতা হতে পারলে দুই-চার বছরেই গাড়ি বাড়ি ব্যাংক ব্যালান্স করা কিছু কঠিন কাজ নয়। এমন বড় নেতাও আছেন যার লেখা প্রকাশিত হয়েছে এমন তথ্য একেবারেই কম। বিশ্ব মুক্ত গণমাধ্যম দিবস উপলক্ষে এই আত্মসমালোচনায় কেউ নাখোশ হলেও বাস্তবতা স্বীকার করতে হবে। এখন সময় বলবার। শেখ হাসিনার নেতৃত্বে আমাদের জনগণ বাংলাদেশকে মধ্যম আয়ের দেশ হিসেবে গড়ে তুলেছে, এগিয়ে যাচ্ছে উন্নত অর্থনীতির দিকে। এ অবস্থায় গণমাধ্যম কর্মীরা পেছনে থাকবে কেন? সর্বশেষ গণমাধ্যমের একটি স্পর্শকাতর দিকের প্রতি সরকারের দৃষ্টি আকর্ষণ করতে চাই। তা হলো অনলাইন এবং ফেসবুক তথা সোশ্যাল মিডিয়া। আগেই বলেছি, একটি স্মার্ট ফোন দিয়েও একটি অনলাইন চালানো যায়। লাগামহীনভাবে। আর ফেসবুকের তো কোন মা-বাপ নেই। যা-তা যখন-তখন লিখে ছেড়ে দেয়া হচ্ছে এবং মুহূর্তের মধ্যে তা লাখ লাখ মানুষের কাছে চলে যাচ্ছে। বাংলাদেশে এখন সেলফোনের গ্রাহক ১০ কোটির ওপরে। আমি কোন ফেসবুক এ্যাকাউন্ট পরিচালনা করি না। মাঝে মধ্যে কারও মোবাইলে দেখি সামাজিকভাবে মর্যাদাবান মানুষদের কি নোংরাভাবে চরিত্র হনন করা হয়। তা কোন সভ্য সমাজে চলতে পারে না। এই অনলাইন বা ফেসবুকের একটা নীতিমালা থাকা দরকার। তবে এটাও ঠিক, আমাদের মিডিয়ার অনেক পজিটিভ দিক রয়েছে। যেমন মিডিয়া আমাদের বর্তমান সমৃদ্ধ বাংলাদেশের বিরুদ্ধে দেশী-বিদেশী শত্রুদের মুখোশ উন্মোচন করে দিচ্ছে। মিডিয়ার চোখ থেকে কিছুই লুকানো যাচ্ছে না। পেট্রোলবোমা, হেফাজত, জঙ্গী হিযবুল মুজাহিদীন, হিযবুত তাহরীর, আনসারুল্লাহ বাংলা টিম, হামজা ব্রিগেডÑ এদের চেহারা জাতির সামনে তুলে ধরে মিডিয়া রাষ্ট্রের সহযোগী হিসেবে কাজ করছে (দু’একটা বাদে, তারা প্রতিক্রিয়াপন্থী)। এমনকি লন্ডনে বসে তারেক রহমান বা নিউইয়র্কে বসে কোন্ নেতা কি করছেন সবই মিডিয়ার মাধ্যমে জনগণ জানতে পারছে। মিডিয়াই তনু হত্যা হজম করতে দেয়নি। আত্মসমালোচনার পাশাপাশি এই আত্মতুষ্টি- এ দাবি গণমাধ্যম করতে পারে। ঢাকা ॥ ৫ মে ২০১৬ লেখক : সিনিয়র সাংবাদিক ও সভাপতি, জাতীয় প্রেসক্লাব [email protected]
×