ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

সৃজনশীল কাজের জয় হলো ॥ মাসুদ পথিক

প্রকাশিত: ০৬:১০, ৭ মে ২০১৬

সৃজনশীল কাজের জয় হলো ॥ মাসুদ পথিক

কবি ও চলচ্চিত্র নির্মাতা মাসুদ পথিক। কবিতার সঙ্গে বসবাস আর একই সঙ্গে চলচ্চিত্র নিয়ে পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে চলেছেন তরুণ এ প্রতিভা। ১২টিরও অধিক কবিতার বই প্রকাশ হয়েছে, পুরস্কারও পেয়েছেন। কাব্য সাধনার পাশাপাশি চলচ্চিত্র শিল্প-সাধনায় নির্মাণ করেছেন ‘নেকাব্বরের মহাপ্রয়াণ’। যার নির্যাস নেয়া হয়েছে দেশের খ্যাতিমান কবি নির্মলেন্দু গুণের কবিতা থেকে। প্রথম নির্মিত এ চলচ্চিত্র দর্শকপ্রিয়তা পাওয়ার পাশাপাশি অর্জন করেছে ‘জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার ২০১৪’। চলচ্চিত্রটি ছয়টি বিভাগে পুরস্কার পাচ্ছে এবার। আগামী ১১ মে এ পুরস্কার প্রদান করা হবে। এ প্রসঙ্গে তার সঙ্গে কথা হয়। আপনার চলচ্চিত্র প্রথম হলো, অনুভূতি কেমন? মাসুদ পথিক : অবশ্যই ভাল লাগছে। আত্মপরিচয়ের জায়গা তৈরি হলো। অসাম্প্রদায়িক বাঙালী চেতনার চৈতন্যের জয় হলো। সর্বোপরি বলা যায়, সৃজনশীল কাজের জয় হলো। একজন শিল্পী বা নির্মাতার জন্য যেকোন পুরস্কার তার কাজের দায়িত্ববোধকে আরও একধাপ বাড়িয়ে দেয়। এটি জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার পাওয়ার কারণগুলো কী মনে হয়? মাসুদ পথিক : কোন সৃজনশীল কাজের মধ্যে লড়াই-সংগ্রাম থাকে। আমার কমিটমেন্ট ছিল, এটা কোন গতানুগতিক চলচ্চিত্র হবে না, ফিকশনও হবে না। বায়োপিক আমেজ বা ইমেজ এতে ঢুকে গেছে। আমি মুক্তিযুদ্ধের প্রেক্ষাপটে বর্গাচাষীর চরিত্রগুলো এতে হাজির করেছি। আবহমান বাংলার সত্যিকারের রূপ, গ্রাম্য সংস্কৃতি তুলে ধরার চেষ্টা ছিল সব সময়। লোকজ ঐতিহ্য যেমন- লাঠিখেলা, কীর্তনসহ বিভিন্ন নতুন নতুন বিষয়ের প্রাধান্য দেয়া হয়েছে। সবচেয়ে বড় বিষয় হলো কবি নির্মলেন্দু গুণ নিজেও অভিনয় করেছেন এতে। এছাড়া দেশের খ্যাতিমান ১৫ জন কবিও অভিনয় করেছেন। এই প্রথম কবিতা থেকে দেশে পূর্ণদৈর্ঘ্য ডকু ফিচার ফিল্ম তৈরি হলো। এসব কারণেই আমার মনে হয় চলচ্চিত্রটি জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার পাওয়ার যোগ্য বলে মনে হয়েছে। কবিতা দিয়ে চলচ্চিত্র বানানোর বিষয় কিভাবে মাথায় এলো? মাসুদ পথিক : আমি একজন কবিতা কর্মী। আমার পরিচয় প্রথমত আমি কবি, দ্বিতীয়ত কবি এবং তৃতীয়ত একজন চলচ্চিত্র কর্মী। কবিতা আমার রক্তের সঙ্গে মিশে আছে। আমি কবিতা আর চলচ্চিত্রকে এক চোখে দেখি। কবিতাকে ঘিরে আমার ধ্যান-জ্ঞান। কবিতার মাধ্যমে সুন্দর সুন্দর গল্প বলা যায়। এ কারণে কবিতাকে প্রাধান্য দিয়েছি। চলচ্চিত্রটি নির্মাণ করতে কোন ধরনের প্রতিকূলতার সম্মুখীন হয়েছেন? মাসুদ পথিক : কবিতা থেকে চলচ্চিত্র বানানো সহজ কাজ নয়। এতে সাপ, কেঁচো, কুকুর, বেড়ালসহ ১৭টি প্রাণীকে দেখিয়েছি। এগুলো মেলাতে গিয়ে অনেক বেগ পেতে হয়েছে। সবচেয়ে বড় সমস্যা ছিল বাজেট। চলচ্চিত্রের জন্য সরকারী অনুদান হিসেবে যে টাকা দেয়া হয়েছিল তারচেয়ে অনেক বেশি টাকা ব্যয় হয়েছে। যে কারণে আমার পৈত্রিক সম্পত্তি বিক্রি করতে হয়েছে। এটাকে আপনি একটি দার্শনিক চলচ্চিত্র বলেছেন? মাসুদ পথিক : গ্রামবাংলার মানুষের কোন পড়াশোনা নেই, কিন্তু তারা জানে কোন ফসল কখন বুনতে হয়। ভাল ফসলের জন্য কী করা প্রয়োজন। মানুষ ও প্রকৃতির নিবিড় এ সম্পর্ক হলো দর্শনের বিষয়। এতে বুড়ো নেকাব্বর প্রতিদিন লেবুগাছকে ধরে চুমু খায়। গাছটিকে তিনি মা মনে করেন। কারণ গাছের গোড়ায় তার মায়ের কবর। চলচ্চিত্রে এমন অনেক দার্শনিক বিষয় ও সংলাপ ব্যবহার করা হয়েছে। আমাদের দেশে চলচ্চিত্রের বর্তমান প্রেক্ষাপট সম্পর্কে বলুন মাসুদ পথিক : এখন চলচ্চিত্র করা হয় ডিজিটালে, পুরনো প্রযুক্তি বিলপ্তির পথে। ঘরে ঘরে টেলিভিশন, ইন্টারনেটের ফলে এবং মার্কেটিংয়ের দুর্বলতার কারণে আমাদের দেশের চলচ্চিত্র হুমকির সম্মুখীন। হলের দুরাবস্থাও এর জন্য অনেকাংশে দায়ী। জীবনমুখী চলচ্চিত্রের অভাব। অবাস্তব ফ্যান্টাসিনির্ভর বিনোদন কখনই চলচ্চিত্রের জন্য ভাল সুফল বয়ে আনতে পারে না। আপনার কাব্যচর্চার খবর কী? মাসুদ পথিক : আমার চিন্তা-চেতনা কাব্যচর্চার মধ্যে। গেল বইমেলায় প্রকাশ হয়েছে ‘রোল কলের বাইরে থেকে জেনেছি এই কৃষক জন্মের কারিকুলাম।’ আপনার পরবর্তী চলচ্চিত্রের খবর কী? মাসুদ পথিক : দুটি চলচ্চিত্রের কাজ শুরু করেছি। এর মধ্যে ‘মায়া; দ্য লস্ট মাদার’ নির্মাণ করছি কামাল চৌধুরীর ‘যুদ্ধশিশু’ কবিতা ও শিল্পী শাহাবুদ্দিনের ‘নারী’ নামে একটি চিত্রকর্ম অবলম্বনে। এ চলচ্চিত্রটিও সরকারী অনুদানে নির্মিত হচ্ছে। এছাড়া নীরেন্দ্রনাথ চক্রবর্তীর ‘অমলকান্তি’ ও নির্মলেন্দু গুণের ‘মায়া’ কবিতা অবলম্বনে ‘দ্য পয়েট্রি’ নামের একটি চলচ্চিত্র তৈরি করছি। -গৌতম পা-ে
×