ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১

‘অল আবাহনী’ জমজমাট ফাইনাল আজ

প্রকাশিত: ০৫:৫৫, ৭ মে ২০১৬

‘অল আবাহনী’ জমজমাট ফাইনাল আজ

স্পোর্টস রিপোর্টার ॥ ম্যানচেস্টার ইউনাইটেড-ম্যানচেস্টার সিটি। রিয়াল মাদ্রিদ-এ্যাটলেটিকো মাদ্রিদ। ইন্টার মিলান-এসি মিলান। বোকা জুনিয়র্স-আর্জেন্টিনোস জুনিয়র্স। নামগুলোর মধ্যে নিশ্চয়ই মিল খুঁজে পাচ্ছেন? ইংল্যান্ড, স্পেন, ইতালি, আর্জেন্টিনার এই বিশ^খ্যাত ফুটবল ক্লাবগুলোর মধ্যে যখন লড়াই হয়, তখন ক্লাব দুটির ‘কমন’ শব্দের সঙ্গে জুড়ে দেয়া হয় ‘ডার্বি’ শব্দটি। বাংলাদেশেও আজ শনিবার এমনই এক ‘ডার্বি’ অনুষ্ঠিত হবে। আসরের নাম ‘কেএফসি স্বাধীনতা কাপ ফুটবল টুর্নামেন্ট’। ভেন্যু বঙ্গবন্ধু জাতীয় স্টেডিয়াম। সময় বিকেল সাড়ে ৫টা। জমজমাট এই ফাইনাল খেলায় মুখোমুখি হবে দুই আবাহনী। একটি ঢাকার দল, আরেকটি চট্টগ্রামের দল। অর্থাৎ ঢাকা আবাহনী লিমিটেড বনাম চট্টগ্রাম আবাহনী লিমিটেড। এই চূড়ান্ত মহারণে যেই জিতুক, শিরোপা যাচ্ছে আবাহনীর ঘরেই! শুক্রবার শিরোপা জেতার লক্ষ্যে দুই আবাহনীর ফুটবলাররা শেষবারের মতো অনুশীলনে ঘাম ঝরান। উয়েফা চ্যাম্পিয়ন্স লীগের ফাইনাল হবে ‘অল মাদ্রিদ’, তেমনি বাংলাদেশে স্বাধীনতা কাপ ফুটবলের ফাইনালও হবে ‘অল আবাহনী’। ‘আবাহনী ডার্বি’ সরাসরি সম্প্রচারিত হবে বাংলাদেশ টেলিভিশনে। স্বাধীনতা কাপে এবার অংশ নেয় ১২টি দল। টুর্নামেন্টে অংশ নেয়ার জন্য প্রতিটি দল পাবে এক লাখ টাকা করে। চ্যাম্পিয়ন দল পাবে পাঁচ লাখ টাকা ও ট্রফি। রানার্সআপ দল পাবে তিন লাখ টাকা ও ট্রফি। ২০১৪ সালের সর্বশেষ আসরে চ্যাম্পিয়ন হয়েছিল মোহামেডান। ফাইনালে তারা হারিয়েছিল ফেনী সকার ক্লাবকে। এবারের এই টুর্নামেন্টে যে দুটি দল ফাইনালে উঠেছে, তারা নিজ নিজ গ্রুপের রানার্সআপ দল (‘এ’ গ্রুপের চট্টগ্রাম আবাহনী, ‘বি’ গ্রুপের ঢাকা আবাহনী)! এক্ষেত্রে ‘এ’ এবং ‘বি’ গ্রুপের দুই চ্যাম্পিয়ন দল শেখ জামাল ধানম-ি ক্লাব লিমিটেড এবং শেখ রাসেল ক্রীড়া চক্র লিমিটেড সেমিফাইনালে হেরে বিদায় নেয়। ঢাকা আবাহনী ৬-০ গোলে হারায় শেখ জামালকে। টাইব্রেকারে চট্টগ্রাম আবাহনী ৪-২ (১-১) গোলে হারায় শেখ রাসেলকে। ফাইনালিস্ট দুইদলের রোড টু ফাইনাল হচ্ছে এরকম : গ্রুপ পর্বে ‘দ্য স্কাই ব্লু ব্রিগেড’ খ্যাত ঢাকা আবাহনী ৫ ম্যাচে ২ জয় ও ৩ ড্রয়ে ৯ পয়েন্ট সংগ্রহ করে। তারা হারায় টিম বিজেএমসিকে ৫-০ ও শেখ রাসেলকে ১-০ গোলে। ড্র করে ১-১ গোলে ফেনী সকার ক্লাব, ০-০ গোলে আরামবাগ এবং ২-২ গোলে রহমতগঞ্জের সঙ্গে। দলের ১৫ গোলের ১০টিই করেছেন নাইজিরিয়ান ফরোয়ার্ড সানডে চিজোবা (৬) এবং সেনেগালিজ ফরোয়ার্ড কামারা সাররা (৪)। সানডের ৬ গোল হচ্ছে চলমান আসরে ব্যক্তিগত সর্বোচ্চ। অবশ্য তিনি একা নন। সমান গোল করেছেন শেখ রাসেলের ইথিওপিয়ান ফরোয়ার্ড (ভারতের আইএসএল খেলে আসা) ফিকরু তেফেরাও। তবে ফিকরুর শেখ রাসেলের অভিযানের ইতি ঘটায় সানডের গোলসংখ্যা বাড়িয়ে নেয়ার সুযোগ থাকছে ফাইনালে গোল করতে পারলে। পক্ষান্তরে ‘বন্দর নগরীর দল’ খ্যাত চট্টগ্রাম আবাহনী ৫ ম্যাচে ৩ জয়, ১ ড্র ১ হারে ১০ পয়েন্ট লাভ করে। তারা ২-০ গোলে হারিয়েছিল মুক্তিযোদ্ধা সংসদকে, ২-০ গোলে উত্তর বারিধারাকে এবং ৩-০ গোলে ব্রাদার্স ইউনিয়নকে। ১-১ গোলে ড্র করে শেখ জামালের সঙ্গে। মোহামেডানের কাছে ১-৫ গোলে হেরে যায় অপ্রত্যাশিতভাবে। দলের ১০ গোলের ৩টিই করেছেন অধিনায়ক উইঙ্গার জাহিদ হোসেন। দুই আবাহনীর সাম্প্রতিক লড়াইয়ের হেড হেড টু এরকম : ২০১৪ সালে নিটল টাটা বাংলাদেশ প্রিমিয়ার ফুটবল লীগে দুবারই ঢাকা আবাহনীকে রুখে দেয় চট্টগ্রাম আবাহনী (১-১ এবং ০-০)। ২০১৫ সালের ২২ অক্টোবর সর্বশেষ দু’দল মুখোমুখি হয়েছিল চট্টগ্রামে। ‘শেখ কামাল আন্তর্জাতিক ক্লাব কাপ ফুটবল টুর্নামেন্ট’-এ গ্রুপ ম্যাচে চট্টগ্রাম ১-০ গোলে হারিয়েছিল ঢাকা আবাহনীকে। তার মানে সর্বশেষ তিনবারের মোকাবেলায় ঢাকা একবারও হারাতে পারেনি চট্টলার দলটিকে। উল্লেখ্য, এই আসরে ঢাকা আবাহনী এখনও অপরাজিত। এবারের স্বাধীনতা কাপ ফুটবল নির্ধারিত তারিখের দুদিন পর গত ১ এপ্রিল থেকে মাঠে গড়ায়। সাধারণত ফেডারেশন কাপ দিয়েই নতুন মৌসুম শুরু হয়ে থাকে। কিন্তু এবার তার ব্যত্যয় ঘটে। গত বছর অক্টোবরে অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা ছিল এই আসর। কিন্তু ওই সময়েই চট্টগ্রামে ‘শেখ কামাল আন্তর্জাতিক কাপ চ্যাম্পিয়নশিপ’ অনুষ্ঠিত হওয়ার কারণে মাঠে গড়ায়নি টুর্নামেন্টটি। এবার তাই এই টুর্নামেন্ট দিয়েই শুরু হয় নয়া মৌসুম। আট ফুটবলার নিয়ে আইনী জটিলতায় এবার স্বাধীনতা কাপ পড়েছিল অনিশ্চয়তার মুখে। তবে শেষ পর্যন্ত যে আট ফুটবলার নিয়ে জটিলতাÑ তাদের বাদ দিয়েই বাংলাদেশ ফুটবল ফেডারেশনের (বাফুফে) টুর্নামেন্টে খেলতে রাজি হয় তিন ক্লাব (চট্টগ্রাম আবাহনী, ঢাকা আবাহনী ও শেখ রাসেল)। তবে এর আগে শেখ রাসেল, ব্রাদার্স ইউনিয়ন, উত্তর বারিধারা ও ফেনী সকার জানিয়েছিলÑ স্বাধীনতার মাসে স্বাধীনতা কাপ ফুটবল না করতে পারলে তারা এই টুর্নামেন্টে নাও খেলতে পারে! পরে অবশ্য বাফুফে ‘ম্যানেজ’ করে ফেলে ক্লাব চারটিকে। বিভিন্ন ঝামেলার কারণে এবার স্বাধীনতার মাসে টুর্নামেন্টটি শুরু করতে পারেনি বাফুফে। মূলত শেখ জামালের দাবিকৃত আট ফুটবলারকে নিয়েই হয় সমস্যা। ওই আট ফুটবলার পেলেই টুর্নামেন্টে খেলতে রাজি বলে জানিয়েছিল শেখ জামাল। কিন্তু টুর্নামেন্টে অংশ নেবার আগ্রহ থাকলেও তারা বাফুফের কাছে কোন লিখিত আবেদন করেনি বলে তাদের বাদ দিয়েই মাঠে গড়ায় টুর্নামেন্ট। যদিও পরে শেখ জামাল ক্লাব এবং আরামবাগ এই দুটি ক্লাব খেলার জন্য লিখিত আবেদন জানালে তাদের এই আসরে অন্তর্ভুক্ত করা হয়। এজন্য দুই দফা ফিক্সচার পাল্টাতে হয়। এখন দেখার বিষয়, ২০১৬ সালের ফাইনালে এবার কারা পায় শিরোপার মধুর স্বাদ।
×