ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ২৩ এপ্রিল ২০২৪, ১০ বৈশাখ ১৪৩১

সংস্কৃতি সংবাদ

খুদে শিল্পীদের প্রাণের উচ্ছ্বাসে শুরু জাতীয় শিশু-কিশোর নাট্যোৎসব

প্রকাশিত: ০৫:৪০, ৭ মে ২০১৬

খুদে শিল্পীদের প্রাণের উচ্ছ্বাসে শুরু জাতীয় শিশু-কিশোর নাট্যোৎসব

স্টাফ রিপোর্টার ॥ বিশাল মঞ্চটা যেন পরিণত হলো এক গুচ্ছ ফুলের বাগানে। চারপাশে শুধুই শিশু নাট্যশিল্পীদের সরব উপস্থিতি। নিষ্পাপ মুখগুলোয় প্রকাশিত অনাবিল আনন্দের বারতা। নানা রঙের পোশাকে দলে দলে বিভক্ত ক্ষুদে নাট্যকর্মীরা গাইছে গান। সঙ্গে চলছে লাল-সবুজের খ- খ- কাপড় উড়িয়ে নাচের পরিবেশনা। একঝাঁক কচিকণ্ঠে উচ্চারিত হয়Ñ আমরা সবাই মঞ্চকুড়ি/শত নন্দনে ফুটবো ...। বৈশাখী সন্ধ্যায় শিল্পকলা একাডেমির জাতীয় নাট্যশালা এমন স্নিগ্ধ দৃশ্যের দেখা মেলে। উপলক্ষ ছিল ১৩তম জাতীয় শিশু-কিশোর নাট্যোৎসবের উদ্বোধনী অনুষ্ঠান। ‘বিকশিত শিশু, আলোকিত আগামী’ সেøাগানে সপ্তাহব্যাপী উৎসবের সূচনা হয় শুক্রবার। ৬৫টি শিশু-কিশোর নাট্যদলের অংশগ্রহণে আগামী ১২ মে পর্যন্ত চলবে উৎসব। প্রতিদিন সন্ধ্যা সাড়ে ৬টায় শিল্পকলা একাডেমির জাতীয় নাট্যশালা,্ এক্সপেরিমেন্টাল থিয়েটার হল, স্টুডিও থিয়েটার হল এবং সঙ্গীত ও নৃত্যকলা মিলনায়তনে অনুষ্ঠিত হবে শিশুদের নাট্য প্রদর্শনী। পিপল্স থিয়েটার এ্যাসোসিয়েশন (পিটিএ) আয়োজিত উৎসবে সহযোগিতা করেছে সংস্কৃতি মন্ত্রণালয় ও বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমি। বিকেল থেকেই শুরু হয় উৎসবের আনুষ্ঠানিকতার। নাট্যশালার প্রবেশদ্বার থেকে বের হয় শিশু-কিশোরদের বর্ণাঢ্য শোভাযাত্রা। এসময় ক্ষুদে নাট্যশিল্পীদের সঙ্গে যোগ দেন অনুষ্ঠানের প্রধান অতিথি সংস্কৃতিমন্ত্রী আসাদুজ্জামান নূর। এছাড়াও শোভাযাত্রায় অংশ নেন পিটিএ’র প্রতিষ্ঠাতা ও শিল্পকলা একাডেমির মহাপরিচালক লিয়াকত আলী লাকী এবং বরেণ্য চিত্রশিল্পী মুস্তাফা মনোয়ার। শোভাযাত্রা শুরুর আগে অতিথিরা বেলুন উড়িয়ে উৎসব উদ্বোধন করেন। শিল্পকলা একাডেমির বহিরাঙ্গন ঘুরে শেষ হয় শোভাযাত্রা। এরপর নাট্যশালায় লিয়াকত আলী লাকীর সভাপতিত্বে উদ্বোধনী আলোচনায় অংশ নেন অতিথিরা। নাট্য পরিবেশনার পাশাপাশি উদ্বোধনী অনুষ্ঠানজুড়ে ছিল বিভিন্ন দলের নৃত্য পরিবেশনা। উদ্বোধনী আনুষ্ঠানিকতা শেষে ৯টি নাটকের প্রদর্শনী হয়। নাট্যশালায় মঞ্চস্থ হয় মান্নান হীরা রচিত ও তৌফিকুল ইসলাম নির্দেশিত স্কলাসটিকা সিনিয়র শাখার প্রযোজনা ‘একাত্তরের ক্ষুদিরাম’। এক্সপেরিমেন্টাল থিয়েটার হলে মঞ্চস্থ হয় রংধনুর ‘রংধনু হতে চাই’, খেয়া সাংস্কৃতিক সংস্থার ‘রূপবানের বয়স ১২ বছর’ ও হীরণ-কিরণ শিশু থিয়েটারের ‘নক্তের বাসিন্দা’। স্টুডিও থিয়েটার হলে পরিবেশিত হয় সন্ধান লিটল থিয়েটারের ‘পাচার’ ও দৌড় শিশু নাট্যদলের ‘ছুটি’। সঙ্গীত ও নৃত্যকলা মিলনায়তনে মঞ্চস্থ হয় নাট্যনিকেতনের ‘কালচক্র’, শিশু-কিশোর নাট্য নিকেতনের ‘পুতুল নামের একটি মেয়ে’ ও কাব্য বিলাসের ‘ছ্যাছড়া চোর’ । প্রদর্শনী শেষে প্রতিটি দলের নির্বাচিত একজন শিশু শিল্পীর হাতে তুলে দেয়া হয় ‘মঞ্চকুঁড়ি পদক ২০১৬’। এছাড়া নাটক শুরুর পূর্বে প্রতিটি হলে অংশগ্রহণকারী দলের শিল্পীরা একক অভিনয় পরিবেশন করেন। ‘রবীন্দ্র রচনায় নারীরা সাহসী ও স্বাধীনচেতা’ ॥ কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ১৫৫তম জন্মবার্ষিকী উপলক্ষে শুক্রবার সন্ধ্যায় আলোচনা অনুষ্ঠানের আয়োজন ইন্দিরা গান্ধী সাংস্কৃতিক কেন্দ্র (আইজিসিসি)। এতে ভারতীয় গবেষক হিমেল শ্রিংলা বলেছেন, ‘নারীর অধিকার যখন অনেকটাই অকল্পনীয়, তখন রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর তাঁর রচনায় নারীকে তুলে এনেছেন কেন্দ্রীয় চরিত্রে। তিনি নারীকে উপস্থাপন করেছেন স্বাধীনচেতা, সিদ্ধান্ত দেয়ার ক্ষমতা সম্পন্ন ও সাহসী হিসাবে। তাঁর রচনায় নারীরা সাহসী ও স্বাধীনচেতা মানুষ।’ ভারতীয় হাইকমিশনের উদ্যোগে আইজিসিসিতে আয়োজিত বক্তৃতা অনুষ্ঠানে তিনি এসব কথা বলেন। অনুষ্ঠানে ‘অসীমের পানে রবীন্দ্র মানস’ শীর্ষক বক্তৃতা করেন তিনজন রবীন্দ্র বিশেষজ্ঞ। এরা হলেন ভারতের রবীন্দ্র বিশেষজ্ঞ হিমেল শ্রিংলা, বাংলাদেশের স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্রের শিল্পী বুলবুল মহলানবীশ এবং কলকাতার সাহিত্য ও শিল্প সমালোচক এম এন কু-ু। মঙ্গলপ্রদীপ জ¦ালিয়ে অনুষ্ঠানের সূচনা করেন এই তিন আলোচক। এ সময় দর্শক সারিতে উপস্থিত ছিলেন ভারতীয় হাইকমিশনার হর্ষ বর্ধন শ্রিংলা, সাবেক সচিব রণজিৎ বিশ^াস প্রমুখ। এর আগে রবীন্দ্র একাডেমির পক্ষ থেকে ভারতীয় হাইকমিশনার হর্ষ বর্ধন শ্রিংলা, হিমেল শ্রিংলা এবং এমএন কু-ুকে উত্তরীয় পরিয়ে দেন বুলবুল মহলানবীশ। হিমেল শ্রিংলা বক্তৃতার বিষয় ছিল ‘রবীন্দ্রনাথের উপন্যাসে নারীপ্রধান চরিত্র’। এ সম্পর্কে তিনি বলেন, মানবতাবাদী রবীন্দ্রনাথ তৎকালীন পুরুষশাসিত কুসংস্কারাচ্ছন্ন সমাজে নারীকে আধুনিকতার প্রতীক, প্রতিবাদী ও বুদ্ধিদীপ্ত হিসাবে উপস্থাপন করেছেন। নারী শিক্ষা প্রসারের কথা গভীরভাবে অনুধাবন করেছিলেন রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর। যার প্রকাশ আমরা দেখতে পেয়েছি নারী চরিত্রগুলোর মধ্য দিয়ে। বুলবুল মহলানবীশের বক্তৃতার বিষয় ছিল ‘রবীন্দ্রনাথ ও বিশ^ মানবতা’। এম এন কু-ুর বক্তৃতার বিষয় ছিল ‘কবি রবীন্দ্রনাথ’। সিজন নাহিয়ানের কাব্যগ্রন্থ ‘একাকিত্বের রঙ’ : শুক্রবার বিকেলে মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘর প্রাঙ্গণে উন্মোচিত হলো তরুণ কবি সিজন নাহিয়ানের তৃতীয় কাব্যগ্রন্থ ‘একাকিত্বের রঙ’। প্রকাশনা উৎসবটির আয়োজন করে সাহিত্যপত্রিকা ‘অমিত্রাক্ষর’। প্রকাশনা উৎসবে প্রধান অতিথি ছিলেন কবি আসাদ চৌধুরী। বিশেষ অতিথি ছিলেন রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগ এ্যালামনাইয়ের সভাপতি কবি আপেল আবদুল্লাহ এবং ইস্ট ওয়েস্ট ইউনিভার্সিটির প্রভাষক কবি ও কথাশিল্পী সহিদুল ইসলাম সরকার। বাংলাদেশ কমিউনিস্ট পার্টির প্রেসিডিয়াম সদস্য হায়দার আকবর খান রনোর সভাপতিত্বে বইটি নিয়ে আলোচনা করেন কবি জামিল রায়হান এবং রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের চিহ্ন’র সম্পাদক ও প্রাবন্ধিক অধ্যাপক শহীদ ইকবাল। অনুভূতি প্রকাশ করেন কবি সিজান নাহিয়ান। কাব্যগ্রন্থ থেকে আবৃত্তি করেন বাক্শিল্পী জয়ন্ত রায় ও রফিকুল ইসলাম। প্রধান অতিথির বক্তব্যের আসাদ চৌধুরী বলেন, কবি শব্দের আগে ও পরে আমি কোন বিশেষণ দেয়ার পক্ষপাতি না। তাই, বয়স কম হওয়া সত্ত্বেও আমি সিজন নাহিয়ানকে তরুণ কবি বলতে চাইছি না। ওর বোধের উপস্থাপন দেখে আমার মনে হয়েছে সিজন নাহিয়ান মূলত কবি। হায়দার আকবর খান রনো বলেন, সিজন ব্যক্তিগত জীবনে শারীরিক প্রতিবন্ধী কিন্তু তার কবিতা পড়ে মনে হয়েছে এই পুঙ্গত্ব কোনভাবেই তার মেধা ও মননে প্রভাব ফেলছে না। কাব্যগ্রন্থটি প্রসঙ্গে বলেন, তাঁর বইয়ের নাম দিয়েছেন ‘একাকিত্বের রঙ’। বইটি পাঠ করে মনে হয়েছে তার এই রঙ বিবর্ণ নয় বরঞ্চ নানা রঙে বিচিত্রতা পেয়েছে। অনুভূতি প্রকাশে সিজন নাহিয়ান বলেন, আমি নিজেকে শারীরিক প্রতিবন্ধী বলতে কখনো দ্বিধাবোধ করি না। বরঞ্চ প্রতিবন্ধকতাই আমার লেখালেখির প্রধান উপকরণ। এশিয়ান ঘুড়ি প্রদর্শনী ॥ ঢাকাবাসীর আয়োজনে শুক্রবার থেকে শিল্পকলা একাডেমির চিত্রশালা প্লাজায় শুরু হয়েছে চারদিনের এশিয়ান ঘুড়ি প্রদর্শনী। এতে বাংলাদেশ ছাড়াও চীন, মালয়েশিয়া, জাপান, থাইল্যান্ড, ইন্দোনেশিয়াসহ এশিয়ার বিভিন্ন দেশের ঐতিহ্যবাহী ঘুড়ি প্রদর্শিত হচ্ছে। প্রদর্শনীর উদ্বোধন করে খাদ্যমন্ত্রী এ্যাডভোকেট কামরুল ইসলাম বলেন, ঢাকাকে রক্ষা করতে হলে পুরনো ঢাকার ঐতিহ্যগুলোকে বাঁচিয়ে রাখতে হবে। সে সঙ্গে তিনি বুড়িগঙ্গা নদীকে আগের রূপে ফিরিয়ে আনতে ব্যবস্থা গ্রহণের আহ্বান জানান।
×