ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

সতেরো বছরেও নীতিমালা হালনাগাদ করতে পারেনি বিটিআরসি

প্রকাশিত: ০৫:৩৮, ৭ মে ২০১৬

সতেরো বছরেও নীতিমালা হালনাগাদ করতে পারেনি বিটিআরসি

ফিরোজ মান্না ॥ দীর্ঘ ১৭ বছরেও জাতীয় টেলিযোগাযোগ নীতিমালা হালনাগাদ করতে পারেনি বিটিআরসি। যতবারই পূর্ণাঙ্গ নীতিমালা করার উদ্যোগ নেয়া হয়, ততবারই কোন না কোন কারণে তা পিছিয়ে যায়। এর আগে বেশ কয়েক দফা টেলিযোগাযোগ নীতিমালার খসড়া জনসাধারণের মতামত নেয়ার জন্য তাদের ওয়েবসাইটে দেয়া হয়েছে। মতামতও নেয়া হয়েছে কিন্তু পরে আর বিটিআরসি নীতিমালা চূড়ান্ত করতে পারেনি। অথচ বিটিআরসি বলছে, খুব দ্রুতই টেলিযোগাযোগ নীতিমালা চূড়ান্ত করা হবে। সূত্র জানিয়েছে, ১৯৯৮ সালে প্রথম জাতীয় টেলিযোগাযোগ নীতিমালা প্রণয়ন করা হয়। ওই নীতিমালার ওপর ভিত্তি করেই টেলিকম সেক্টর চালানো হচ্ছে। প্রায় দেড় যুগ ধরে টেলিযোগাযোগ খাতে বিভিন্ন ধরনের সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। কোন সিদ্ধান্তই নীতিমালার মাধ্যমে নেয়া হয়নি। আদেশ বলে এসব সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। সময় বদল হয়েছে। টেলিযোগাযোগ খাতেও কর্মপরিধি বেড়েছে। পুরনো নীতিমালায় বতর্মান সময়ের অনেক কিছুই নেই যে, তা দিয়ে সিদ্ধান্ত নেয়া যায়। টেলিযোগাযোগ সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানগুলো দীর্ঘদিন ধরে টেলিযোগাযোগ নীতিমালা তৈরি করার জন্য দাবি জানিয়ে এলেও বিটিআরসি তা করতে পারছে না। বিটিআরসি টেলিযোগাযোগ নীতিমালা প্রণয়ন না করায় অনেক সিদ্ধান্তও বাস্তবায়ন করা যাচ্ছে না। আবার অপারেটররা চলছে তাদের ইচ্ছামতো। বিটিআরসি জানিয়েছে, স্বল্প, মধ্য ও দীর্ঘমেয়াদী নীতিমালা চূড়ান্ত করা হচ্ছে। স্বল্পমেয়াদী হবে ২০১৮ সালের মধ্যে। এই মেয়াদে টেলিযোগাযোগ ব্যবস্থা ৮০ থেকে বাড়িয়ে ৯০ শতাংশে উন্নীতকরণ, ইন্টারনেট ব্যবহারের হার ৩৫ শতাংশের বেশি করা। ফিক্সড ব্রডব্যান্ডের ব্যবহার ১৪ শতাংশে উন্নীতকরণ। এছাড়া দেশের উপজেলা ও জেলা সদরে ইন্টারনেট বৃদ্ধি করা। এক হাজার ২শ’ ইউনিয়নে অপটিক্যাল ফাইবার সংযোগ স্থাপনের মাধ্যমে ইন্টারনেটসেবা দেয়া। মধ্যমেয়াদী নীতিমালা হবে ২০২১ সালের মধ্যে। এ সময় দেশে শতভাগ টেলি-ঘনত্ব অর্জন হবে। ইন্টারনেট ব্যবহারের হার ৫০ শতাংশের ওপরে যাবে। দেশের সব ইউনিয়নে অপটিক্যাল ফাইবারের মাধ্যমে ইন্টারনেটসেবা নিশ্চিত হবে। দেশ পুরোপুরি ইনফর্মেশন হাইওয়ের সঙ্গে যুক্ত হবে। বাসস্থান ও বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে উচ্চগতির ইন্টারনেট ব্যবহার হবে। দীর্ঘমেয়াদী নীতিমালা হবে দেশে যখন শতকরা ৯০ ভাগ মানুষ ইন্টারনেট সুবিধা পাবে তখন। এটার কাজ হবে মোট জনসংখ্যার ৬০ শতাংশকে ব্রডব্যান্ড সেবার আওতায় আনা। জানা গেছে, সরকার ১৯৯৮ সালে প্রথম টেলিযোগাযোগ নীতিমালা তৈরি করেছিল। তারপর থেকে সেই পুরনো নীতিমালা দিয়েই কাজ চালিয়ে যাচ্ছে বিটিআরসি। যদিও মোবাইল ফোন অপারেটররা দীর্ঘদিন ধরে টেলিযোগাযোগ নীতিমালা হালনাগাদ করার দাবি জানিয়ে আসছে। সর্বশেষ ২০১২ সালে থ্রিজির লাইসেন্স দেয়ার সময় অপারেটররা বিটিআরসিকে শর্ত দিয়েছিলÑ টেলিযোগাযোগ নীতিমালায় আমূল পরিবর্তন আনতে হবে। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে অনেক কিছুর পরিবর্তন ঘটেছে। তাই পুরনো নীতিমালা দিয়ে এই সময়ে কোন সিদ্ধান্ত নেয়া উচিত হবে না। বিটিআরসি বার বার নীতিমালা সংশোধনের উদ্যোগ নিলেও বিদ্যমান টেলিযোগাযোগ নীতিমালার নতুন খসড়া চূড়ান্ত করতে পারেনি। বিটিআরসির বেশ কয়েকজন চেয়ারম্যানই নীতিমালা হালনাগাদ করার উদ্যোগ নিয়েছেন। কিন্তু কোন চেয়ারম্যানই নীতিমালা প্রণয়ন করতে পারেননি। বর্তমান চেয়ারম্যান নীতিমালার বিষয়টি গুরুত্ব দিয়ে দেখছেন। তিনি টেলিযোগাযোগ নীতিমালা সবার জন্য গ্রহণযোগ্য এমন একটি নীতিমালা তৈরি করার কথা ভাবছেন। দেশে ১৯৯৮ সাল থেকে টেলিযোগাযোগ নীতিমালা প্রণয়নের পর এ খাতে অনেক পরিবর্তন এলেও দীর্ঘ ১৭ বছর পুরনো নীতিমালাটি আর সংশোধন করা হয়নি। সরকারের অনুরোধে আন্তর্জাতিক টেলিযোগাযোগ ইউনিয়ন (আইটিইউ) ২০১২ সালে টেলিযোগাযোগ নীতিমালার একটি খসড়া তৈরি করে দিয়েছিল। কিন্তু এর পর চার বছর পার হলেও সেটি আর আলোর মুখ দেখেনি। ২০১২ সালের আগে আরও একবার নীতিমালাটি সংশোধনের উদ্যোগ নেয়া হয়েছিল। সেটিও করা সম্ভব হয়নি। কবে টেলিযোগাযোগ নীতিমালা চূড়ান্ত হবে সেটা বলা মুশকিল। যদিও অপারেটররা বলছে, নীতিমালায় পরিবর্তন না এনে ফোরজি (চতুর্থ প্রজন্মের) ফোন লাইসেন্স দেয়া ঠিক হবে না। কারণ বর্তমান সময় অনেক বেশি আধুনিক। পুরনো নীতিমালায় ফোরজি লাইসেন্স দিলে গ্রাহকসেবা যথাযথ হবে না।
×