ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

দক্ষিণ এশিয়া অঞ্চলে শক্তি বাড়াতে চায় আইএস

প্রকাশিত: ০৫:৩৭, ৭ মে ২০১৬

দক্ষিণ এশিয়া অঞ্চলে শক্তি বাড়াতে চায় আইএস

কূটনৈতিক রিপোর্টার ॥ মধ্যপ্রাচ্যের জঙ্গী সংগঠন ইসলামিক স্টেট (আইএস) আসন্ন রমজান মাসে বাংলাদেশে মনোনীত তাদের নতুন নেতার নাম ঘোষণা করার পরিকল্পনা গ্রহণ করেছে। বাংলাদেশে আইএস যে নেতার নাম ঘোষণা করতে চলেছে তিনি হবেন এখানকার স্থানীয় নেতা। দক্ষিণ এশীয় অঞ্চলে আইএস তাদের প্রভাব বিস্তার করতে এই ধরনের পরিকল্পনা নিয়েছে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক গবেষণা সংস্থা ‘ইনস্টিটিউট ফর দ্যা স্টাডি অব ওয়ার’ এক প্রতিবেদনে এ তথ্য প্রকাশ করেছে। ওয়াশিংটনভিত্তিক এই গবেষণা প্রতিষ্ঠানের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, আসন্ন রমজান মাস সামনে রেখে বিশ্বের বিভিন্ন অঞ্চলে সাংগঠিক ভিত মজবুত করার পরিকল্পনা গ্রহণ করেছে আইএস। এরই অংশ হিসেবে বিভিন্ন মুসলিম দেশে তাদের তৎপরতা বৃদ্ধি করতে চাইছে। আঞ্চলিকভাবে তারা দক্ষিণ এশিয়া অঞ্চলে শক্তি বৃদ্ধিতে জোর দিয়েছে। ‘ইনস্টিটিউট ফর দ্যা স্টাডি অব ওয়ার’ গবেষণা সংস্থাটি রাজনৈতিক প্রভাবমুক্ত অলাভজনক সংস্থাটি হিসেবে পরিচিত। সংস্থাটি বিশ্বজুড়ে সামরিক বিষয়ে নির্ভরযোগ্য গবেষণা ও বিশ্লেষণধর্মী তথ্য প্রকাশ করে আসছে। ৫ মে প্রকাশিত সংস্থাটির এই প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে, রমজান মাস সামনে রেখে আগামী ৬ জুন থেকে ৫ জুলাই বিশ্বের বিভিন্ন অঞ্চলে আইএস তাদের সাংগঠিক ভিত্তি মজবুত করার পরিকল্পনা নিয়েছে। এই সময়ে বাংলাদেশে মনোনীত তাদের নতুন নেতার নাম ঘোষণা করবে। বিশ্বের বিভিন্ন জঙ্গী সংগঠনের সামরিক কৌশল নিয়ে গবেষণা করা প্রতিষ্ঠান ইনস্টিউট ফর দ্যা স্টাডি অব ওয়ারের এই প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, রমজান মাস সামনে রেখে বিশ্বের নয়টি দেশে আইএস তাদের সাংগঠিক ভিত মজবুত করার পরিকল্পনা গ্রহণ করেছে। এসব দেশের মধ্যে রয়েছে আলজেরিয়া, নাইজেরিয়া, লিবিয়া, মিসর, তুরস্ক, সৌদি আরব, সোমালিয়া ও বাংলাদেশ। এছাড়া ইয়েমেন, পাকিস্তান, আফগানিস্তান, সিরিয়া, ইরাক, সৌদি আরবে আইএসের সাংগঠনিক তৎপরতা অব্যাহত রয়েছে। প্রতিবেদনে বলা হয়, গত ২৩ এপ্রিল বাংলাদেশের রাজশাহীতে একজন শিক্ষককে হত্যা করা হয়েছে। আইএস ইতোমধ্যেই ওই শিক্ষক হত্যার দায় শিকার করেছে। এছাড়া ফিলিপিনে ইতোমধ্যে ১০০ জন সেনাকে হত্যা করার দাবি করেছে আইএস। আইএস দক্ষিণ ও পূর্ব এশিয়ায় এখন শক্তি বৃদ্ধি করতে চায়। সে কারণে আসন্ন রমজান মাসকেই তারা সাংগঠিনক মাস হিসেবে বেছে নিয়েছে। বিশেষজ্ঞদের অভিমত, বাংলাদেশে আইএস উত্থানের ঝুঁকি রয়েছে। এছাড়া বাংলাদেশে ইতোমধ্যেই ধর্মনিরপেক্ষ লেখক, ব্লগার, অনলাইন এ্যাক্টিভিস্ট, প্রকাশক, শিক্ষক, মানবাধিকার কর্মীকে হত্যার দায় স্বীকার করে বিবৃতি দিয়েছে আইএস। তবে সরকার থেকে সব সময় বাংলাদেশে আইএস’র অস্তিত্ব অস্বীকার করা হচ্ছে। বাংলাদেশে আইএস’র অস্তিত্ব নিয়ে আন্তর্জাতিক ষড়যন্ত্র হচ্ছে বলেও সরকারের পক্ষ থেকে অভিযোগ করা হয়। এর আগে আইএস’র মুখপত্র দাবিকে প্রকাশিত এক খবরে বলা হয়, বাংলাদেশে একজন আঞ্চলিক নেতার অধীনে আইএস জঙ্গীরা নতুন হামলার জন্য সংগঠিত হচ্ছে। তবে সেই আইএস নেতার নাম দাবিক প্রকাশ করেনি। তিনি কে হতে পারেন- তার কোন আভাসও সেখানে দেয়া হয়নি। দাবিকে বলা হয়, বাংলাদেশে খিলাফতের সৈনিকরা খলিফা ইব্রাহিমের আনুগত্যে সমবেত হয়েছেন। পুরনো বিভাজন ভুলে একজন আঞ্চলিক নেতা নির্বাচন করেছেন তারা, তার অধীনে প্রয়োজনীয় সামরিক প্রস্তুতি নিয়েছেন, বাস্তবায়ন করছেন ইসলামিক স্টেট নেতার দেয়া আদেশ। প্রায় তিন বছর আগে ইরাক ও সিরিয়ার বড় একটি এলাকা দখলে নিয়ে খিলাফত কায়েমের ঘোষণা দেয় আইএস। এ দলের নেতা ইব্রাহিম আল বাগদাদি নিজেকে ঘোষণা করেন খলিফা। নৃশংস হত্যা ও উগ্রবাদী হামলার বিভিন্ন ঘটনার মধ্য দিয়ে সাম্প্রতিক সময়ে মধ্যপ্রাচ্যের পাশাপাশি পশ্চিমা দেশগুলোতেও আতঙ্ক ছড়িয়ে দিয়েছে আইএস। এছাড়া দাবিকে প্রকাশিত ‘দি রিভাইভাল অব জিহাদ ইন বেঙ্গল’ শিরোনামে এক প্রতিবেদনে বলা হয়, গত শতকের আশির দশকে আফগানিস্তানে কমিউনিস্টবিরোধী জিহাদ শেষ হওয়ার পর মুজাহিদরা নতুন জিহাদের ফ্রন্ট খোলার লক্ষ্য নিয়ে যার যার বাড়িতে ফিরে যান; তাদের মধ্যে বাংলার যোদ্ধারাও ছিলেন। ২০০৫ সালের ২১ আগস্ট দেশব্যাপী জেএমবির বোমা হামলার কথা উল্লেখ করে শায়খ রহমানকে উপমহাদেশের ১৯তম জিহাদি নেতা বলা হয়েছে ওই নিবন্ধে।
×