ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

সিন্ডিকেটের কারসাজিতে ভোগ্যপণ্যের বাজার অস্থির

প্রকাশিত: ০৫:৩৫, ৭ মে ২০১৬

সিন্ডিকেটের কারসাজিতে ভোগ্যপণ্যের বাজার অস্থির

এম শাহজাহান ॥ কৃত্রিম সঙ্কট তৈরি করে শব-ই-বরাতের আগে অস্থির করে তোলা হচ্ছে ভোগ্যপণ্যের বাজার। বাড়ছে ছোলা, চিনি, ডাল, রসুন ও পেঁয়াজের মতো নিত্যপণ্যের দাম। বাড়তি দামে বিক্রি হচ্ছে ব্রয়লার মুরগিসহ সব ধরনের মাংস। তবে অতি মুনাফাখোর ব্যবসায়ীদের দৌরাত্ম্য নিয়ন্ত্রণে রমজানের আগে কার্যকর করা হচ্ছে বহুল আলোচিত প্রতিযোগিতা আইন। আগামী সপ্তাহ নাগাদ প্রতিযোগিতা কমিশনের তিন সদস্য নিয়োগ করতে যাচ্ছে সরকার। কমিশনের কাজ দ্রুত শুরু করতে ইতোমধ্যে একজন চেয়ারম্যান নিয়োগ দেয়া হয়েছে। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, দেশে খাদ্যদ্রব্যের মূল্য লাগামহীনভাবে বাড়ার প্রধান কারণ ব্যবসায়ী সিন্ডিকেটের কারসাজি এবং যথাযথ নীতি ও প্রাতিষ্ঠানিক ব্যবস্থাপনার অভাব। তাই মূল্যসন্ত্রাস নিয়ন্ত্রণে প্রতিযোগিতা আইন কার্যকর করতে হবে। চালু করতে হবে পণ্যমূল্য নিয়ন্ত্রণ তদারকি এবং ফোরকাস্টিং সেল। একই সঙ্গে ব্যবসায়ী সিন্ডিকেট ভাঙতে সরকারী বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠান টিসিবিকে শক্তিশালী করতে হবে। জানা গেছে, গত ২০০৫ সাল থেকে প্রতি বছর খাদ্য উদ্বৃত্ত থাকছে। গত এক বছরে মূল্যস্ফীতি কমেছে। কিন্তু রোজা এলে জিনিসপত্রের দাম বেড়ে যায়। শুধু তাই নয়, এক পর্যবেক্ষণে দেখা গেছে, বিশ্ববাজারে খাদ্যপণ্যের দাম বাড়লে বাংলাদেশে বাড়ে। তবে বিশ্ববাজারে যে পরিমাণ বাড়ে তারচেয়ে ১০ থেকে ২৫ শতাংশ দাম বেশি বাড়ে বাংলাদেশে। কিন্তু পরে বিশ্ববাজারে দাম কমলেও বাংলাদেশে আর তা কমে না। এখন বহির্বিশ্বে ভোজ্যতেল, চিনি, ছোলা এবং পেঁয়াজের দাম কম হলেও শুধুমাত্র শব-ই-বরাত ও রোজা সামনে রেখে জিনিসপত্রের দাম বেড়ে যাচ্ছে। আর এ কারণে প্রতিযোগিতা আইন দ্রুত কার্যকর করার উদ্যোগ নেয়া হচ্ছে। এ প্রসঙ্গে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব হেদায়েতুল্লাহ আল মামুন জনকণ্ঠকে বলেন, ভোক্তাদের স্বার্থ বিবেচনায় নিয়ে প্রতিযোগিতা আইন কার্যকর করা হবে। এ লক্ষ্যে কমিশনের চেয়ারম্যান নিয়োগ করা হয়েছে। এবার সদস্যদেরও নিয়োগ দেবে সরকার। আগামী রমজানের আগে আইনটি দেশে কার্যকর করার পরিকল্পনা রয়েছে। তিনি বলেন, মূলত এ ধরনের আইন উন্নত রাষ্ট্র বিশেষ করে যুক্তরাষ্ট্র এবং ইউরোপের মতো দেশগুলোতে রয়েছে। বাংলাদেশে এটি প্রথমবারের মতো করা হলো। এটি একটি বড় ব্যাপার। বাণিজ্য সচিব বলেন, দেশে ভোজ্যতেল, চিনি এবং পেঁয়াজের মতো পণ্য নিয়ে সিন্ডিকেশন হয়ে থাকে। এসব পণ্যের বাজার নিয়ন্ত্রণ করছেন গুটিকয়েক ব্যবসায়ী। এসব পণ্যের প্রতিযোগিতা ঠিকমতো হচ্ছে কি-না সেটাই কমিশন যাচাই-বাছাই করে দেখবে। দেশে মোবাইল ফোন কোম্পানির সেবা নিচ্ছে কোটি কোটি গ্রাহক। এক্ষেত্রে গ্রাহকরা কোন ধরনের প্রতারণার শিকার বা আর্থিক ক্ষতির সম্মুখীন হচ্ছেন কি-না সেটাও দেখা হবে। অর্থাৎ যেখানে ব্যবসায়ী সিন্ডিকেটের কারসাজি হচ্ছে সেখানেই হাত বাড়াবে কমিশন। প্রসঙ্গত, দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণ ও বাজারে সুস্থ প্রতিযোগিতা রক্ষায় ‘প্রতিযোগিতা বিল-২০১২’ জাতীয় সংসদে পাস করানো হয়েছে। ওই আইনে প্রতিযোগিতা কমিশন গঠনের বিধান রাখা রয়েছে। প্রাইস ফিক্সিং রোধ এবং বাজার সিন্ডিকেট ভাঙতে ব্যবসায়ীদের ওপর চাপ সৃষ্টি করার জন্য সরকার এ আইনটি তৈরি করে। এ আইনে ব্যবসায়ীদের বিরুদ্ধে অভিযোগ পাওয়া গেলেই তাকে তলব করে জিজ্ঞাসাবাদ করার বিধান রয়েছে। অভিযুক্ত ব্যবসায়ীর বিরুদ্ধে মামলা করাসহ যে কোন ধরনের সিদ্ধান্ত নিতে পারবে প্রতিযোগিতা কমিশন। এছাড়া আইনে সিন্ডিকেট করে দাম নিয়ন্ত্রণ করলে এক বছরের কারাদ- অথবা সর্বোচ্চ এক লাখ টাকা জরিমানারও বিধান রাখা হয়েছে। এছাড়া ওই আইনে বলা হয়েছে, দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) মতো প্রতিযোগিতা কমিশন হবে একটি স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠান। বিলে আরও বলা হয়েছে, কোন ব্যক্তির বয়স ৬৫ বছর হলে তাকে কমিশনের চেয়ারপার্সন বা সদস্য হিসেবে নিয়োগ দেয়া যাবে না। বিলে বলা হয়েছে, কমিশনের চেয়ারপার্সন ও সদস্যদের মেয়াদ তিন বছর হবে। এছাড়া বিলের ৮ ধারায় কমিশনের কার্যাবালী ও ক্ষমতা সম্পর্কে বলা হয়েছে। তাতে বলা হয়েছে, বাজারে প্রতিযোগিতায় বিরূপ প্রভাব ফেলতে পারে এমন বিষয় নির্মূল করা কমিশনের কাজ। বাজারে প্রতিযোগিতাকে উৎসাহিত করা এবং ব্যবসা-বাণিজ্যের স্বাধীনতা নিশ্চিত করতে কাজ করবে কমিশন। এদিকে অভিযোগ রয়েছে, প্রতিযোগিতা আইন কার্যকর হওয়ার আগেই রোজা সামনে রেখে কিছু অসাধু ব্যবসা প্রতিষ্ঠান লিখিত বা অলিখিত চুক্তির মাধ্যমে জোটবেঁধে দাম নিয়ন্ত্রণ করে পণ্যের স্বাভাবিক সরবরাহ ব্যাহত করে বাজার নিয়ন্ত্রণ করার অপচেষ্টা করে যাচ্ছে। গত কয়েক বছর বাজারে পণ্যের অযৌক্তিক দাম বাড়ানো ও অস্থিরতার জন্য এ ধরনের অসাধু ব্যবসায়িক কর্মকা-ই দায়ী বলে মনে করা হচ্ছে। শুধু তাই নয়, রাজধানীর মৌলভীবাজার ও চট্টগ্রামের খাতুনগঞ্জকে কেন্দ্র দেশের সবচেয়ে বড় ব্যবসায়ী সিন্ডিকেট গড়ে উঠেছে বলে অভিযোগ রয়েছে। বেড়ে যাচ্ছে নিত্যপণ্যের দাম ॥ শব-ই-বরাত ও রোজা সামনে রেখে নিত্যপণ্যের দাম বেড়ে যাচ্ছে। প্রতি কেজি ছোলা বিক্রি হচ্ছে ৭৮-৮৪ টাকায়। দাম বাড়ার তালিকায় রয়েছেÑ মসুর ডাল, ব্রয়লার মুরগি, রসুন এবং চিনি। প্রতি কেজি রসুন বিক্রি হচ্ছে ৯০-২২০ টাকা, পেঁয়াজ ২৫-৪৫ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। এছাড়া ব্রয়লার মুরগি ১৫৫-১৬৫, মসুর ডাল ১০০-১৫০, সয়াবিন খোলা প্রতি লিটার ৭৯-৮৪, পামঅয়েল খোলা প্রতি লিটার ৬৪-৬৬ টাকায় বিক্রি হচ্ছে খুচরা বাজারে। রোজা সামনে রেখে গরুর মাংসের দাম বেড়ে যাচ্ছে। প্রতি কেজি গরুর মাংস বিক্রি হচ্ছে ৪৪০-৪৫০ টাকায়। বাড়তির দিকে রয়েছে মাছের দামও। এছাড়া বাজারে গ্রীষ্মকালীন সবজির সরবরাহ ভাল থাকলেও শুধুমাত্র রোজা সামনে রেখে আগেভাগে দাম বাড়িয়ে দেয়া হচ্ছে। গত সপ্তাহের থেকে হালিতে দুই টাকা দাম বৃদ্ধি পেয়েছে ফার্মের মুরগির ডিমের। ফার্মের মুরগির ডিমের হালি ৩২ টাকা ও ডজন ৯৬ টাকা। হাঁসের ডিমের হালি ৩৪ টাকা ও ডজন ১০২ টাকা। দেশি মুরগির ডিমের হালি ৫০ টাকা ও ডজন ১৫০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে।
×