ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

বৃহৎ বৃক্ষের অনুরূপ নান্দনিক সৌন্দর্যের আধার

প্রকাশিত: ০৫:৩৫, ৭ মে ২০১৬

বৃহৎ বৃক্ষের অনুরূপ নান্দনিক সৌন্দর্যের আধার

মোরসালিন মিজান ॥ ধানম-ির ডব্লিউভিএ মিলনায়তন। হ্যাঁ, বেশ পুরনো বাড়ি। তবে ঠিক এই মুহূর্তে বাড়িটিকে পুরনো বলা যাবে না। ভেতরে যেন নতুন প্রাণের সঞ্চার হয়েছে। দুটি বড় কক্ষজুড়ে চোখ জুড়ানো সবুজ। ছোট ছোট গাছ ডাল-পালা মেলে দাঁড়িয়ে আছে। গাছ ছোট বটে! বড় বৃক্ষ দেখার অনুভূতি দেয়। বিশাল বৃক্ষ যেমন দেখতে, এগুলোও তা-ই। বাড়তি আকর্ষণ নান্দনিক সৌন্দর্য। প্রবল প্রেম আর যতেœ বনসাইগুলো গড়েছেন কে এম সবুজ। তরুণ এই শিল্পীর একক প্রদর্শনী এখন মুগ্ধ করে রেখেছে বনসাই প্রেমীদের। শুক্রবার সকালে প্রদর্শনীর আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করেন অনুষ্ঠানের প্রধান অতিথি সংস্কৃতিমন্ত্রী আসাদুজ্জামান নূর। বিশেষ অতিথি ছিলেন বরেণ্য চিত্রশিল্পী মনিরুল ইসলাম। উদ্বোধনী আনুষ্ঠানিকতা শেষে সকলের জন্য উন্মুক্ত করে দেয়া হয় প্রদর্শনী। তখনই শহুরে মানুষের সবুজের তৃষ্ণাটা টের পাওয়া যায়। প্রতিটি বনসাই খুঁটিয়ে দেখছিলেন তারা। কত কত গাছ! বিশাল বৃক্ষের খর্বাকৃতি অন্যরকম আবেদন নিয়ে সামনে আসে। বনসাইয়ের জন্য উপযোগী গাছগুলোকেই বেছে নিয়েছেন শিল্পী। খুব চেনা গাছ আছে। দুর্লভ কিছু গাছেও করা হয়েছে চমৎকার বনসাই। প্রদর্শনীতে সাড়ে তিন শ’ বনসাই। বটের সংখ্যাই বেশি। ১৫ প্রজাতির বট থেকে বনসাই গড়া হয়েছে। একটি গাছের পাতা কাঁঠাল পাতার মতো দেখতে। নাম তাই কাঁঠাল বট। আমের পাতার মতো যেটি, সেটি আম বট নামে পরিচিত। কামিনীর রয়েছে তিন থেকে চারটি জাত। দেশীয়গুলোর পাশাপাশি দেখা গেল একটি ভারতীয় জাতও। জিলাপী গাছটি এখন বেশ দুর্লভ। একাধিক জাত রাখা হয়েছে প্রদর্শনীতে। জগডুমুরের একটি বনসাই বেশ নজর কাড়ে। হিজল তমাল তেঁতুল বোতলব্রাশ বক্সউড রঙ্গন ঝুমুর জুনিপারও নিজ নিজ সৌন্দর্য নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে। উঁচু টব থেকে নিচের দিকে সুন্দর নেমে এসেছে জেটপ্ল্যান। আমগাছে তো মুকুলে ভর্তি! পেয়ারার গাছটিও ছোট্ট ট্রতে নিজেকে দিব্যি মেলে ধরেছে। প্রদর্শনীতে আছে দশটির মতো ল্যান্ডস্কেপ। বেশ আকর্ষণীয়। আরও অনেকের মতো সংস্কৃতিমন্ত্রী আসাদুজ্জামান নূরও মিলনায়তনে প্রবেশ করেই মুগ্ধ চোখে চারপাশ দেখছিলেন। তিনিও বনসাইপ্রেমী। বহু আগেই শিল্পটির প্রেমে পড়েছিলেন। সে কথা উল্লেখ করে মন্ত্রী বলেন, ২০ বা ৩০ বছর আগের কথা, তখনও এদেশে বনসাই চর্চা শুরু হয়েছে কিনা জানি না, আমি ব্যাঙ্কক থেকে বনসাই নিয়ে এসেছিলাম। এত ভাল লেগেছিল দেখে। আমাকে পরিচর্যার বিভিন্ন দিক বুঝিয়ে দেয়া হয়েছিল। কিন্তু আমি সেগুলো বেশি দিন বাঁচিয়ে রাখতে পারিনি। কারণ ব্যাখ্যা করে তিনি বলেন, বনসাইয়ের জন্য শুধু প্রেম থাকলে চলে না। প্রচুর সময় দিতে হয়। নিবিড় পরিচর্যা ছাড়া একে বাঁচিয়ে রাখা যায় না। বর্তমান বাস্তবতার কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, ঢাকা শহরে জায়গা কেবলই কমছে। আমাদের বাসাবাড়ি শোবার ঘর রান্নাঘর ক্রমশ ছোট হচ্ছে। আমাদের ভাবতে হবে, এই ছোটর ভেতরে কী করে সুন্দরভাবে বাঁচা যায়। বনসাই সীমিত পরিসরে সুন্দর বেঁচে থাকায় সাহায্য করে। জীবনে সবুজের ছোঁয়া দেয়। অনেকেই সবুজের খুঁজে গ্রামে ছুটে যান। সেই তারা বনসাই ঘরে নিলে কিছুটা তো সবুজ পেতে পারেন। বনসাই যেমন সবুজ, তেমনি দৃষ্টিনন্দন। বনসাইয়ের সৌন্দর্য আরও ছড়িয়ে দিতে এর মূল্য সাধারণ মানুষের ক্রয়ক্ষমতার মধ্যে রাখারও পরামর্শ দেন মন্ত্রী। স্পেন প্রবাসী শিল্পী মনিরুল ইসলামও যারপরনাই মুগ্ধ। বললেন, বনসাই এক ধরনের আরাধনা। ধ্যানের মতো। একে ধীরে ধীরে গড়ে নিতে হয়। আমরা বড়গাছের পুরো আকার আকৃতিটা দেখি না। দেখা যায় না। বনসাইয়ের বেলায় শতভাগ দেখি। চোখের সামনে বড় হয়। ফুল দেয়। ফল দেয়। এভাবে গোটা প্রক্রিয়াটাই ভীষণ উপভোগ্য কিন্তু! শিল্পী বলেন, এখন বেশ অস্থির সময়। এ সময়ে ছোট্ট একটা গাছ ধীরস্থির ও শান্ত হতে শেখায়। আজকের পৃথিবীতে এর বড় প্রয়োজন বলে মন্তব্য করেন তিনি। শিল্পী নিজে অবশ্য বললেন সামান্যই। তার মতে, বনসাই জীবন্ত শিল্পকর্ম। অনেক যতেœ গড়া। শিল্পটিকে ছড়িয়ে দিতে বিভিন্ন উদ্যোগ নেয়ার কথা জানান তিনি। এ ব্যাপারে সকলের সহযোগিতা কামনা করেন। তিন দিনব্যাপী বনসাই প্রদর্শনী চলবে রবিবার পর্যন্ত।
×