স্টাফ রিপোর্টার ॥ ব্যানারে ‘সহযোগিতায় সাইফুর’স কোচিং সেন্টার’ লেখা দেখে ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটির অনুষ্ঠানস্থল ত্যাগ করলেন আইনমন্ত্রী আনিসুল হক ও ঢাবি উপাচার্য অধ্যাপক ড. আ আ ম স আরেফিন সিদ্দিক। বাংলাদেশ ব্যাংকের অর্থ লোপাটের ডামাডোলের মধ্যে দক্ষ ‘হ্যাকার তৈরির বিজ্ঞাপন’ বিতর্কে জড়িয়ে পড়া সাইফুরসকে ‘বিতর্কিত’ ও ‘একটি উগ্রবাদী দলের প্রতিষ্ঠান’ উল্লেখ করে অনুষ্ঠানে থাকা সম্ভব হচ্ছে না বলে তারা চলে গেলেন। সাংবাদিক নেতারা অনুরোধ করলেও তাতে সাড়া দেননি বরং হতাশা ব্যক্ত করে বলেছেন, বিতর্কিত একটি কোচিং সেন্টারের সহযোগিতায় অনুষ্ঠান হচ্ছে জানলে তারা আসতেন না।
এদিকে দক্ষ ‘হ্যাকার তৈরির বিজ্ঞাপন’ বিতর্কে জড়িয়ে পড়ার পর শিক্ষামন্ত্রীর কঠোর আইনী ব্যবস্থা গ্রহণ, দুদক সরকারের গোয়েন্দা সংস্থার অনুসন্ধানের প্রেক্ষাপটে সাংবাদিকদের পক্ষ থেকে আগেই এ অনুষ্ঠানের বিষয়ে ডিআরইউ নেতাদের সতর্ক করা হয়েছিল। ডিআরইউ’র ভারমূর্তি নষ্ট হবে এ কথা জানিয়ে অনেক সাংবাদিক ডিআরইউ নেতাদের সঙ্গে কথা বলেছিলেন। কিন্তু অনেক আগের নির্ধারিত অনুষ্ঠান তাই পরিবর্তন করা সম্ভব হচ্ছে না বলে জানান নেতারা। এ অবস্থায় ঘোষণা অনুসারেই শুক্রবার সেগুনবাগিচায় ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটি মিলনায়তনে প্রাথমিক সমাপনী ও জেএসসির কৃতী শিক্ষার্থীদের সংবর্ধনা ও বৃত্তি প্রদান অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে আমন্ত্রিত ছিলেন আইনমন্ত্রী। নির্ধারিত সময় বেলা এগারোটার পরপরই আইনমন্ত্রী ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় উপাচার্য অনুষ্ঠানস্থলে উপস্থিত হন। এ সময় অনুষ্ঠানের ব্যানারে সহযোগিতায় ‘সাইফুরস প্রাইভেট লিমিটেড’ লেখা দেখে আপত্তি তোলেন আইনমন্ত্রী। এই প্রতিষ্ঠানটি ‘বিতর্কিত’, তাই এই অনুষ্ঠানে থাকা সম্ভব হচ্ছে না বলে অনুষ্ঠানস্থল থেকে বের হয়ে যান তিনি। এ সময় ডিআরইউ সভাপতি জামাল উদ্দীন ও সাধারণ সম্পাদক রাজু আহমেদ অনুরোধ করলেও তাতে সাড়া মেলেনি। একই কথা বলে মন্ত্রীর সঙ্গে সেখান থেকে চলে যান অনুষ্ঠানের বিশেষ অতিথি উপাচার্য অধ্যাপক আ আ ম স আরেফিন সিদ্দিক। এ সময় ডিআরইউ সভাপতি জামাল উদ্দীন ও সাধারণ সম্পাদক রাজু আহমেদসহ নেতারা বারবার অনুরোধ করলেও তাতে সাড়া মেলেনি। আইনমন্ত্রী হতাশা প্রকাশ করে বলেন, ‘দেখেন শুক্রবার আমি ঢাকায় থাকি না, সাধারণত নিজ এলাকায় যাই। আমার এলাকার অনুষ্ঠান বাতিল করে আমি সাংবাদিকদের ডাকে সাড়া দিলাম, কিন্তু তারা আমাকে সেখানে নিয়ে এক বিব্রতকর অবস্থায় ফেলে দিলো! ওখানে সাইফুর’স কোচিং সেন্টারের অর্থায়নে অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়েছে। এটি একটি মৌলবাদী দলের কোচিং সেন্টার। আর দেশে কোচিং সেন্টার বেআইনী ঘোষণা করা হয়েছে, তাই আইনমন্ত্রী হিসেবে আমি সেখানে থাকতে পারি না। ঢাবি উপাচার্য হিসেবে আরেফিন সিদ্দিকিও সেখানে থাকতে পারেন না। সেজন্য আমরা দু’জনই বের হয়ে এসেছি।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি আ আ ম স আরেফিন সিদ্দিক বলেন, আমরা কোচিং বাণিজ্যের বিরুদ্ধে সবসময় সোচ্চার। তাই যে অনুষ্ঠানের পৃষ্ঠপোষকতায় সাইফুর’স-এর মতো বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠান সেখানে থাকার প্রশ্নই ওঠে না। তিনি আরও বলেন, ‘আজ বেলা এগারোটার দিকে একটি সংবাদ সম্মেলন ছিল আমার। সেটা বাতিল করে আমি ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটির অনুষ্ঠানে আসি। কিন্তু আমাকে যদি আগে বলা হতো- ওই অনুষ্ঠানের পৃষ্ঠপোষক সাইফুর’স, তাহলে আমি সেখানে থাকতাম না। আমি অনুষ্ঠানটি আগেই বাতিল করতাম।
অতিথিরা চলে যাওয়ার পর সাইফুরস চেয়ারম্যান শামস আর খান ও ব্যবস্থাপনা পরিচালক সাইফুর রহমান খানকে নিয়ে অনুষ্ঠান শেষ করেন ডিআরইউ নেতারা। উল্লেখ্য, বাংলাদেশ ব্যাংকের অর্থ লোপাটের ঘটনার মধ্যেই দক্ষ ‘হ্যাকার তৈরির বিজ্ঞাপন’ দিয়ে গত মার্চে আলোচনায় আসে সাইফুরস কোচিং সেন্টার। এরপর গণমাধ্যম ও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ব্যাপক সমালোচনা শুরু হলে তারা ‘চোর বানানোর বিজ্ঞাপন’ দিয়ে মানুষকে বিভ্রান্ত করেছে দাবি করে শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ কোচিং সেন্টারটির বিরুদ্ধে আইনী ব্যবস্থা নেয়ার হুঁশিয়ারি দেন।
এর শিক্ষা মন্ত্রণালয় রমনা থানায় এই কোচিং সেন্টারের বিরুদ্ধে জিডি করে এবং বিষয়টি তদন্ত করতে দুর্নীতি দমন কমিশনকে চিঠি দেয়। উল্লেখ্য, হ্যাকিংয়ের মাধ্যমে বাংলাদেশ ব্যাংকের অর্থ লোপাট এবং একটি শব্দের বানান ভুলে ২ কোটি ডলার রক্ষা পাওয়ার ঘটনা বাংলাদেশের গণমাধ্যমে প্রকাশের পর একটি জাতীয় দৈনিকে বিজ্ঞাপন দেয় সাইফুরস। ওই বিজ্ঞাপনের শিরোনামে বলা হয়, “ঊহমষরংয-এর ভুলে বাংলাদেশ ব্যাংকের ১৬০ কোটি টাকা হ্যাকারদের হাতছাড়া!” একইভাবে ইংরেজীতে দুর্বলতার কারণে গইঅ, অফিসার, খধুিবৎ (এমনকি দক্ষ হ্যাকার!) প্রভৃতি হতে হলে ৎবধফরহম, রাইটিং, ঝঢ়বধশরহম, লিসেনিং ও ংঢ়বষষরহম সবকিছুতেই ভাল হওয়া জরুরি!”