ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪৩১

চতুর্থ দফায় ৭০৯ ইউপিতে ভোট আজ

প্রকাশিত: ০৫:২৭, ৭ মে ২০১৬

চতুর্থ দফায় ৭০৯ ইউপিতে ভোট আজ

শাহীন রহমান ॥ ইউনিয়ন পরিষদের চতুর্থ দফায় ভোটগ্রহণ করা হচ্ছে আজ শনিবার। এক কোটি ১০ লাখের বেশি ভোটার ভোট দিয়ে পছন্দের প্রার্থীকে নির্বাচিত করবেন। সকাল ৮টা থেকে ভোটগ্রহণ শুরু হবে। একটানা ভোটগ্রহণ করা হবে বিকেল ৪টা পর্যন্ত। ইতোমধ্যে নির্বাচনের যাবতীয় প্রস্তুতি সম্পন্ন হয়েছে। কেন্দ্রে কেন্দ্রে পৌঁছে গেছে ভোটার সরঞ্জাম। নির্বাচন কমিশন জানিয়েছে, এ দফায় ৭ হাজার ৬২ কেন্দ্রে ভোটগ্রহণ করা হবে। এ দফায় ৭২৫ ইউপিতে ভোটগ্রহণের কথা থাকলেও শেষ মুহূর্তে এসে রাজশাহীর বাগমারায় ১৬ ইউপির ভোটগ্রহণ স্থগিত করা হয়েছে। ফলে ভোট হবে ৭০৯ ইউপিতে। ক্ষমতাসীন দলের এক সাংসদের প্রভাব খাটানোর অভিযোগে ভোটগ্রহণ স্থগিত করা হয়েছে বলে জানায় ইসি। কমিশনের চূড়ান্ত হিসাব অনুযায়ী চতুর্থ দফায় চেয়ারম্যান সাধারণ সদস্য ও সংরক্ষিত সদস্যসহ মোট ৩৪ হাজার ৫৯১ প্রার্থী নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। এর মধ্যে চেয়ারম্যান পদে মোট প্রার্থী রয়েছে ৩ হাজার ২৪৫ জন। সাধারণ সদস্য পদে ২৪ হাজার ১৮৭ জন, সংরক্ষিত মহিলা সদস্য পদে ৭ হাজার ১৫৯ জন প্রার্থী রয়েছে। এছাড়াও নির্বাচনের আগেই একক প্রার্থী থাকায় এ দফায় ৩৫৮ প্রার্থী ইতোমধ্যে বিনাপ্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হয়েছেন। এর মধ্যে চেয়ারম্যান পদে রয়েছেন ৩৩ জন। যাদের সবাই আওয়ামী লীগের দলীয় প্রার্থী। এ ছাড়া সাধারণ সদস্য পদে ভোটের আগেই নির্বাচিত হয়েছেন ২২৭ প্রার্থী। সংরক্ষিত আসনের এ সংখ্যা রয়েছে ৯৮ জন। এ দফায় ইসির নিবন্ধিত ১৭ রাজনৈতিক দলের প্রার্থীরা অংশ নিয়েছেন। এর বাইরের চেয়ারম্যান পদে স্বতন্ত্র প্রার্থীরা লড়ছেন। তবে সদস্য ও সংরক্ষিত সদস্য পদে ভোট হচ্ছে নির্দলীয়ভাবে। চতুর্থধাপে চেয়ারম্যান পদে মোট ৩ হাজার ২৪৫ প্রার্থীর মধ্যে ইসির নিবন্ধিত ১৭ রাজনৈতিক দলের প্রার্থী রয়েছে ১ হাজার ৭২৩ জন। স্বতন্ত্র প্রার্থীর সংখ্যা রয়েছে ১ হাজার ৫২২ জন। এ দফায় ৭২৫ ইউপিতে ভোটগ্রহণ করা হলেও বিএনপির প্রার্থী নেই ১০৬ ইউপিতে। অপরদিকে আওয়ামী লীগের প্রার্থী নেই মাত্র ১ ইউপিতে। ১৭ রাজনৈতিক দলের মধ্যে এ দফায় আওয়ামী লীগের প্রার্থী রয়েছে ৭২৪ ইউপিতে, বিএনপির ৬১৯ ইউপিতে, জাতীয় ১৫৬, জাসদ ৪২, জেপি ৩, ওয়ার্কার্স পার্টি ৯, ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ ১৫৪, বাংলাদেশ তরিকত ফেডারেশন২, ন্যাশনাল পিপলস পার্টি ১, সিপিবি ১, জমিয়তে উলামায়ে ইসলাম ৪, বাংলাদেশ ইসলামী ফ্রন্ট ২, বিএনএফ ২, কৃষক শ্রমিক জনতা লীগ২, ইসলামী ঐক্যজোট ১ ও অন্যান্য ১ ইউপিতে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছে। কমিশন জানিয়েছে সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণ পরিবেশে অনুষ্ঠানের জন্য সব প্রস্তুতি সম্পন্ন হয়েছে। নির্বাচনী এলাকায় মোতায়েন করা হয়েছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। ব্যালট পেপার, ব্যালট বাক্স, ভোটার সিলমোহরসহ সব নির্বাচনী সরঞ্জাম সংশ্লিষ্ট সব ভোট কেন্দ্রে পৌঁছানো হয়েছে। নির্বাচন শেষ না হওয়া পর্যন্ত সংশ্লিষ্ট এলাকায় সব ধরনের প্রচার, মিছিল-মিটিং, পথসভা নিষিদ্ধ থাকবে। এ দফায় দেশের ৪৭ জেলার ৮৮টি উপজেলার ৭০৯ ইউপিতে ভোটগ্রহণ করা হচ্ছে। এ কারণে প্রত্যেক উপজেলায় অবাধ সুষ্ঠু নির্বাচন অনুষ্ঠানের লক্ষ্যে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণসহ নির্বাচনী অনিয়ম রোধ এবং তাৎক্ষণিক বিচার ব্যবস্থার জন্য নির্বাহী ও বিচারিক হাকিম নিয়োগ দেয়া হয়েছে। নির্বাচনে দায়িত্বে নিয়োজিত কোন কর্মকর্তার বিরুদ্ধে পক্ষপাতিত্বের অভিযোগ উঠলে তাৎক্ষণিকভাবে তাকে দায়িত্ব থেকে অব্যাহতি দেয়ার নির্দেশ দেয়া হয়েছে। তিন ধাপের ভোটের পর আগামীতে আরও সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণ নির্বাচনের প্রত্যাশা করছেন নির্বাচন কমিশন। ইসি সচিব সিরাজুল ইসলাম বলেন, আশা করি এ দফায়ও সুষ্ঠু ভোট হবে। সবাইকে নির্বিঘেœ ভোট দেয়ার আহ্বান জানাচ্ছি। আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ও ভোটগ্রহণ কর্মকর্তাদের অনিয়মের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে বলা হয়েছে। নির্বাচনে পক্ষপাতিত্বের অভিযোগে শেরপুর সদর উপজেলার ওসিকে প্রত্যাহার করে উপযুক্ত কর্মকর্তা পদায়নের জন্যও চিঠি দেয়া হয়েছে। আজ শনিবার অবাধ সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণ নির্বাচনের জন্য সব ধরনের প্রস্তুতি শেষ হয়েছে। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীসহ নির্বাচনী কর্মকর্তারা মাঠে রয়েছেন। কেন্দ্রে কেন্দ্রে পৌঁছে গেছে নির্বাচন সামগ্রী। এ অবস্থায় ইসির করণীয় সব ব্যবস্থার পাশাপাশি অন্যদের সহযোগিতা ও প্রত্যাশা রয়েছে। রাজনৈতিক দলগুলোকে সহিষ্ণু মনোভাব নিয়ে ভোটের আয়োজনকে সফল করার আহ্বান জানান তিনি। নির্বাচন কমিশন জানিয়েছেন চতুর্থ দফায় ভোট প্রয়োগ করবেন ১ কোটি ১০ লাখ ভোটার। এছাড়া ৪৭ জেলার ৮৮ উপজেলায় ৭০৯ ইউপিতে ভোটগ্রহণের জন্য কেন্দ্র তৈরি করা হয়েছে ৭ হাজার ৬২টি। প্রত্যেক কেন্দ্রে একজন করে প্রিসাইডিং অফিসার দায়িত্ব পালন করবেন। এছাড়া এসব কেন্দ্রে ভোট প্রদানের জন্য ভোট কক্ষ বা বুথ তৈরি করা হয়েছে ৩৭ হাজার ৫৪টি। প্রত্যেক কক্ষের জন্য দায়িত্বে থাকবেন একজন করে সহকারী প্রিসাইডিং অফিসার। নির্বাচনী এলাকায় দেড় লাখের বেশি আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্য নিরাপত্তার দায়িত্ব পালন করছেন। শেষ মুহূর্তে ১৬ ইউপির ভোট স্থগিত ॥ নির্বাচন কমিশন জানিয়েছে, ক্ষমতাসীন দলের এক সাংসদের কারণে শেষ মুহূর্তে এসে রাজশাহীর বাগমারার ১৬ ইউপিতে ভোটগ্রহণ স্থগিত করা হয়েছে। চতুর্থ ধাপের ভোটের একদিন আগে সুষ্ঠু নির্বাচনের স্বার্থে ক্ষমতাসীন দলের ওই সংসদ সদস্যের প্রভাব খাটানোর অভিযোগে ভোটগ্রহণ স্থগিত করা হয়েছে। সেই সঙ্গে রাজশাহী-৪ আসনের সাংসদ এনামুল হককে আচরণবিধি লঙ্ঘনের বিষয়ে কারণ দর্শানো নোটিস দেয়া হচ্ছে। ইসি সচিব মোঃ সিরাজুল ইসলাম বলেন, রাজশাহী-৪ আসনের সাংসদ এলাকায় অবস্থান করছেন। আচরণবিধি লঙ্ঘন করছেন। তাকে কর্মকর্তারা এলাকা ছাড়তে বলেছেন। তবুও তিনি শুনছেন না। এ কারণে ওই বাগমারা উপজেলার ১৬টি ইউপি স্থগিত করে দেয়া হয়েছে। সেই সঙ্গে বিধিলঙ্ঘনের বিষয়ে কারণ দর্শাতেও ক্ষমতাসীন দলের সাংসদকে চিঠি দেয়া হবে। ভোটগ্রহণ সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন করতে ইসির পক্ষে যে ব্যবস্থা নেয়ার সব করা হয়েছে। তবে এ নির্বাচন শুধু একার পক্ষে সুষ্ঠুভাবে করা সম্ভব নয়। রাজনৈতিক দলসহ সবার সহযোগিতা দরকার। এ বিষয়ে ইসির চেষ্টার কোন ত্রুটি নেই। হুইপ আতিকুর রহমানকে এলাকা ছাড়ার নির্দেশ ॥ এদিকে চতুর্থ ধাপের নির্বাচনে আগে সরকারদলীয় হুইপ আতিকুর রহমানকে নির্বাচনী এলাকা ছেড়ে যেতে নির্দেশ দিয়েছে নির্বাচন কমিশন। তার বিরুদ্ধে নির্বাচনে আচরণবিধি লঙ্ঘনের অভিযোগ রয়েছে। হুইপ আতিকুর রহমান শেরপুর-১ আসনের সরকারদলীয় সংসদ সদস্য। শুক্রবার দুপুরে কমিশনের উপসচিব ফরহাদ আহমেদ খান এ নির্দেশনা পাঠান। আইনানুযায়ী ইউপি নির্র্বাচনে সংসদ সদস্যদের নির্বাচনী প্রচারে অংশ নেয়ার সুযোগ নেই। ইসির উপসচিব ফরহাদ আহমেদ খান বলেন, ইউপি নির্বাচনে শনিবারের ভোট সামনে রেখে সুষ্ঠু নির্বাচনের স্বার্থে হুইপকে এ নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। ইতোমধ্যে এ সংক্রান্ত চিঠি রিটার্নিং কর্মকর্তা এবং ওই সাংসদের কাছে পাঠানো হয়েছে। হুইপ আতিকুর রহমানের বিরুদ্ধে অভিযোগ গত ৩ মে শেরপুর সদর উপজেলার গাজীরখামার ইউনিয়নের গাজীরখামার উচ্চ বিদ্যালয় পরিদর্শন শেষে আওয়ামী লীগ মনোনীত চেয়ারম্যান প্রার্থী আওলাদুল ইসলামের পক্ষে স্থানীয়দের কাছে ভোট চান। যা নির্বাচনের আচরণবিধির সুস্পষ্ট লঙ্ঘন। বিষয়টি কমিশনের নজরে আসায় এই পদক্ষেপ নেয়া হয়েছে বলে জানানো হয়েছে। এর আগে নির্বাচনী অনিয়মের কারণে বৃহস্পতিবার শেরপুর সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তাকে প্রত্যাহারে পুলিশ মহাপরিদর্শকের বরাবর নির্দেশনা দিয়ে চিঠি পাঠানো হয়।
×